রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?

[পরিমার্জিত সংকলন ৪৩-৪৭তম পর্ব]

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(৪৩ম পর্ব)

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

💟এ পর্যায় ইন-শা-আল্লাহ আলোচনা করার চেষ্টা করবো হযরত আদম (عليه السلام) হলেন মাটির তৈরি,আর আমরা হলাম নুতফার তৈরি[1st part] 😍😍১ম দলিল😍😍

★২৪৪. হযরত আদম (عليه السلام) কে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে:
⬇️⬇️
*১. সূরা মু’মিনুন আয়াত নং ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬।
*২. সূরা ছোয়াদ,আয়াত নং ৭১,৭৫
*৩.সূরা হিজর,আয়াত নং ২৬, ২৮
*৪.সূরা নূহ্‌,আয়াত নং ১৭
*৫.সূরা আর রাহ্‌মান,আয়াত নং ১৪
*৬. সূরা ত্বো-হা,আয়াত নং ৫৫
*৭. সূরা হজ্ব,আয়াত নং ৫
*৮. সূরা আস-সেজদাহ,আয়াত নং ৭
*৯. সূরা রুম,আয়াত নং ২০
*১০.সুরা আন’আম,আয়াত নং ২

👊আদম (عليه السلام) একাই মাত্র মাটি থেকে সৃষ্ট।বাকী সবাই পিতা-মাতার মাধ্যমে সৃষ্ট।
[সূরা আস সাজদাহ,আয়াত নং ৭-৯]

✌তিঁনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে।
[সূরা আর-রাহমান-আয়াত নং১৪]

👆এখানে ইনসান বলতে আমি আপনি না। এই ইনসান হলেন আমাদের আদি পিতা আদম (عليه السلام)।[তাফসীরে রুহুল মানী, তাফসীরে জালালাঈন শরীফ,বায়জাভী,তাফসীরে কাশশাফ,তাফসীরে খাজেন,তাফসীরে কবির ইত্যাদী]

👊আল্লাহ তাঁকে [আদম (عليه السلام)] নিঁজ দু’হাতে সৃষ্টি করেছেন।
[সূরা ছোয়াদ,আায়ত নং ৭৫]

👆মাটির সকল উপাদানের সার-নির্যাস একত্রিত করে আঠালো ও পোড়ামাটির ন্যায় শুষ্ক মাটির তৈরী সুন্দরতম অবয়বে রূহ ফুঁকে দিয়ে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছেন।অতঃপর আদমের পাঁজর থেকে তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করার পরবর্তী পর্যায়ে আল্লাহ আদম সন্তানদের মাধ্যমে বনু আদমের বংশ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করেছেন।

👍এখানেও রয়েছে সাতটি স্তর।যেমন: মৃত্তিকার সারাংশ তথা প্রোটোপ্লাজম, বীর্য বা শুক্রকীট, জমাট রক্ত, মাংসপিন্ড, অস্থিমজ্জা,অস্থি পরিবেষ্টনকারী মাংস এবং সবশেষে রূহ সঞ্চারণ।
⬇️⬇️
*(ক.) সূরা মু’মিনুন আয়াত নং ১২, ১৩, ১৪, ১৫
*(খ.) সূরা মুমিন,আয়াত নং ৬৭
*(গ.) সূরা ফুরক্বান,আয়াত নং ৪৪
*(ঘ).সূরা আত তারিক্ব,আয়াত নং ৫-৭।
*(ঙ). সূরা আস-ছাফফাত, আয়াত নং ১১।
*(চ).সূরা আর-রহমান,আয়াত নং ১৪।
*(ছ). সূরা ত্বীন,আয়াত নং ৪।
*(জ). সূরা আন-নিসা,আয়াত নং ১।
*(ঝ).সূরা বাক্বারাহ,আয়াত নং ৩৫।
*(ঞ). মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাতঃ হা:/৩২৩৮ ‘বিবাহ’ অধ্যায় ‘নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার’ অনুচ্ছেদ।

▶️হযরত আদম (عليه السلام) এঁর মূল উপাদান হ’ল মাটি, তাই তাকে ‘আদম’ বলা হয়।পক্ষান্তরে হাওয়ার মূল হ’লেন আদম, যিনি তখন জীবন্ত ব্যক্তি।তাই তাকে ‘হাওয়া’ বলা হয়, যা ‘হাই’ (জীবন্ত) থেকে উৎপন্ন।
[কুরতুবী,আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১/৬২ পৃঃ ইত্যাদি] 💠💠২য় দলিল💠💠

★২৪৫. হযরত হাওয়া (عليه السلام) কে আদম (عليه السلام) এর পাঁজর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে:

*১. হযরত আদম (عليه السلام) এঁর মূল উপাদান হ’ল মাটি, তাই তাকে ‘আদম’ বলা হয়।পক্ষান্তরে হাওয়ার মূল হ’লেন আদম, যিনি তখন জীবন্ত ব্যক্তি। তাই তাকে ‘হাওয়া’ বলা হয়, যা ‘হাই’ (জীবন্ত) থেকে উৎপন্ন।
[কুরতুবী,আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১/৬২ পৃঃ ইত্যাদি]
⬇️⬇️
*(ক.) সূরা নিসা,আয়াত নং ১
*(খ.) সূরা যুমার,আয়াত নং ৬

*২. নবী করীম (ﷺ) বলেনঃ “নারী জাতিকে পাঁজরের বাঁকা হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের মধ্যে একেবারে উপরের হাড়টি অধিক বাঁকা। যদি তা সোজা করতে যাও, ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তা ছেড়ে দাও, তবে সব সময় বাকাই থাকবে।সুতরাং তোমরা নারীদের সাথে উত্তম আচরণ করবে।”
[বুখারীঃ ৩০৮৫; মিশকাতঃ ৩২৩৮]

✌“হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তাঁর (আদম) থেকে তাঁর সঙ্গীনীকে (বিবি হাওয়া) সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী।”
[সূরা নিসা,আয়াত নং ১]

✌“অতঃপর তিনি তাঁর (আদম) থেকে তাঁর যুগল (হাওয়া) সৃষ্টি করেছেন”।
[সূরা আজ-যুমার,আয়াত নং ৬] *****৩য় দলিল*****

★২৪৬. (আমরা) সাধারণ মানুষকে মা-বাবার নুতফা বা বীর্য থেকে সৃস্টি করা হয়েছে:

*১. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘উদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে রাসূল (ﷺ) হাদিস বর্ণনা করেছেন-
إِنَّ خَلْقَ أَحَدِكُمْ يُجْمَعُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا نُطْفَةً، ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَبْعَثُ اللَّهُ إِلَيْهِ مَلَكًا بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ: فَيَكْتُبُ عَمَلَهُ، وَأَجَلَهُ، وَرِزْقَهُ، وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدٌ، ثُمَّ يَنْفُخُ فِيهِ الرُّوحَ

‘‘তোমাদের সৃষ্টি (অর্থাৎ মূল উপাদান প্রথমে) চল্লিশ দিন তার মাতৃজঠরে নুতফা বা শুক্ররূপে অবস্থান করে।তারপর চল্লিশ দিন লাল জমাট রক্তপিণ্ডরূপে থাকে। তারপর ৪০ দিনে তা মাংসপিণ্ডে পরিনত হয়। তারপর আল্লাহ পাক চারটি বিষয় নিয়ে একজন ফিরিশতাকে তার নিকট প্রেরণ করেন।ফিরিশতা এসে লিখেন, ক. তার আমল, খ. তার মৃত্যু, গ. তার রিযিক, ঘ. সে নেককার হবে না বদকার হবে। অতঃপর তার মধ্যে রূহ প্রবিষ্ট করানো হয়।’’
⬇️⬇️
*(ক.) ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৪/১১১ পৃ. হা/৩২০৮
*(খ.) খতিব তিবরিযি, মিশকাত, হা/৮২ *(গ.) সুনানে ইবনে মাযাহ, হা/৭৬
*(ঘ.) সুনানে তিরমিযি, হা/২১৩৭
*(ঙ.) সুনানে আবি দাউদ, ৪/২২৮ পৃ. হা/৪৭০৮
*(চ.) ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, হা/৭১

*২. পবিত্র কোরআনে সাধারণ মানুষকে মা-বাবার নুতফা বা বীর্য থেকে সৃস্টি করা হয়েছে:

*১. সূরা আন-নাজম,আয়াত নং ৪৫-৪৬
*২. সূরা আন-নুর, আয়াত নং ৪৫
*৩. সূরা ফুরক্বান,আয়াত নং ৫৪
*৪. সূরা দাহর,আয়াত নং ২
*৫. সূরা আত-তারেক,আয়াত নং ৫-৭
*৬. সূরা মুরছালাত,আয়াত নং ২০-২৩
*৭.সূরা নাহল,আয়াত নং ৪
*৮.সূরা আম্বিয়া,আয়াত নং ৩০
*৯. সূরা সেজদা,আয়াত নং ৭-৯
*১০. সূরা ইয়াছিন,আয়াত নং ৭৭-৭৮
*১১. সূরা আবাসা,আয়াত নং ১৮-১৯
*১২. সূরা আলাক্ব,আয়াত নং ২
*১৩. সূরা কিয়ামা,আয়াত নং ৩৬-৩৯
⬇️⬇️
১. পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে

وَأَنَّهُۥ خَلَقَ ٱلزَّوْجَيْنِ ٱلذَّكَرَ وَٱلْأُنثَىٰ
مِن نُّطْفَةٍ إِذَا تُمْنَىٰ
অর্থঃ এবং তিঁনিই সৃষ্টি করেন যুগল-পুরুষ ও নারী।একবিন্দু বীর্য থেকে যখন স্খলিত করা হয়।
[সূরা আন-নাজম,আয়াত নং ৪৫-৪৬]

★আল্লাহ মানুষকে সৃস্টি করেছেন একফোঁটা স্থলিত শুক্রানু বা নুতফা বা স্বামী-স্ত্রীর মিলনে যে বীর্য উৎপন্ন হয় তা হতে।
[সূরা আন-নাজম,আয়াত ৪৬]

২. পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে

وَٱللَّهُ خَلَقَ كُلَّ دَآبَّةٍ مِّن مَّآءٍ فَمِنْهُم مَّن يَمْشِى عَلَىٰ بَطْنِهِۦ وَمِنْهُم مَّن يَمْشِى عَلَىٰ رِجْلَيْنِ وَمِنْهُم مَّن يَمْشِى عَلَىٰٓ أَرْبَعٍ يَخْلُقُ ٱللَّهُ مَا يَشَآءُ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ

অর্থঃ আল্লাহ প্রত্যেক চলন্ত জীবকে পানি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তাদের কতক বুকে ভয় দিয়ে চলে, কতক দুই পায়ে ভর দিয়ে চলে এবং কতক চার পায়ে ভর দিয়ে চলে; আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।
[সূরা আন নূর,আয়াত নং ৪৫]

★আল্লাহ সকল জীব সৃস্টি করেছেন পানি হতে।
[সূরা আন-নুর, আয়াত নং ৪৫]

৩. পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে

وَهُوَ ٱلَّذِى خَلَقَ مِنَ ٱلْمَآءِ بَشَرًا فَجَعَلَهُۥ نَسَبًا وَصِهْرًا وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيرًا

অর্থঃ তিনিই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে, অতঃপর তাকে রক্তগত, বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন।তোমার পালনকর্তা সবকিছু করতে সক্ষম।
[সূরা আল ফুরকান,আয়াত নং ৫৪]

★শুধু মানুষ নয়, উদ্ভিদরাজি, জীবজন্তু ও প্রাণীকুলের সৃষ্টি হয়েছে মাটি থেকে।আর মাটি সৃষ্টি হয়েছে পানি থেকে।পানিই হ’ল সকল জীবন্ত বস্ত্তর মূল।
[সূরা ফুরক্বান,আয়াত নং ৫৪]

৪. পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে

إِنَّا خَلَقْنَا ٱلْإِنسَٰنَ مِن نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَٰهُ سَمِيعًۢا بَصِيرًا

অর্থঃ আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।
[সূরা আদ-দাহর, আয়াত নং ২]

★স্বামীর শুক্রকীট স্ত্রীর জরায়ুতে রক্ষিত ডিম্বকোষে প্রবেশ করার পর উভয়ের সংমিশ্রিত বীর্যে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে
[সূরা দাহর,আয়াত নং ২]

৫. পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে

فَلْيَنظُرِ ٱلْإِنسَٰنُ مِمَّ خُلِقَ
خُلِقَ مِن مَّآءٍ دَافِقٍ
يَخْرُجُ مِنۢ بَيْنِ ٱلصُّلْبِ وَٱلتَّرَآئِبِ

অর্থঃ অতএব, মানুষের দেখা উচিত কি বস্তু থেকে সে সৃজিত হয়েছে।সে সৃজিত হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে।এটা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মধ্য থেকে।
[সূরা আত-তারিক্ব,আয়াত নং ৫-৭]

৬. পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে

أَلَمْ نَخْلُقكُّم مِّن مَّآءٍ مَّهِينٍ
فَجَعَلْنَٰهُ فِى قَرَارٍ مَّكِينٍ
إِلَىٰ قَدَرٍ مَّعْلُومٍ
فَقَدَرْنَا فَنِعْمَ ٱلْقَٰدِرُونَ

অর্থঃ আমি কি তোমাদেরকে তুচ্ছ পানি থেকে সৃষ্টি করিনি? অতঃপর আমি তা রেখেছি এক সংরক্ষিত আধারে,এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত,অতঃপর আমি পরিমিত আকারে সৃষ্টি করেছি, আমি কত সক্ষম স্রষ্টা?
[সূরা আল-মুরসালাত,আয়াত নং ২০-২৩]

৭. পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে

خَلَقَ ٱلْإِنسَٰنَ مِن نُّطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُّبِينٌ

অর্থঃ তিনি মানবকে এক ফোটা বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছেন। এতদসত্বেও সে প্রকাশ্য বিতন্ডাকারী হয়ে গেছে।
[সূরা আন নাহল,আয়াত নং ৪]

৮. পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে

أَوَلَمْ يَرَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ أَنَّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَٰهُمَا وَجَعَلْنَا مِنَ ٱلْمَآءِ كُلَّ شَىْءٍ حَىٍّ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ
অর্থঃ কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?
[সূরা আল আম্বিয়া, আয়াত নং ৩০]

৯. পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে

ٱلَّذِىٓ أَحْسَنَ كُلَّ شَىْءٍ خَلَقَهُۥ وَبَدَأَ خَلْقَ ٱلْإِنسَٰنِ مِن طِينٍ
ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُۥ مِن سُلَٰلَةٍ مِّن مَّآءٍ مَّهِينٍ
ثُمَّ سَوَّىٰهُ وَنَفَخَ فِيهِ مِن رُّوحِهِۦ وَجَعَلَ لَكُمُ ٱلسَّمْعَ وَٱلْأَبْصَٰرَ وَٱلْأَفْـِٔدَةَ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ

অর্থঃ যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
[সূরা আস সেজদাহ্,আয়াত নং ৭-৯]

১০.পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে

أَوَلَمْ يَرَ ٱلْإِنسَٰنُ أَنَّا خَلَقْنَٰهُ مِن نُّطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُّبِينٌ
وَضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَنَسِىَ خَلْقَهُۥ قَالَ مَن يُحْىِ ٱلْعِظَٰمَ وَهِىَ رَمِيمٌ

অর্থঃ মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি বীর্য থেকে? অতঃপর তখনই সে হয়ে গেল প্রকাশ্য বাকবিতন্ডাকারী।
সে আমার সম্পর্কে এক অদ্ভূত কথা বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টি ভুলে যায়। সে বলে কে জীবিত করবে অস্থিসমূহকে যখন সেগুলো পচে গলে যাবে?
[সূরা ইয়াসীন,আয়াত নং ৭৭-৭৮]

★আল্লাহ অহংকারী মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘মানুষ কি দেখে না যে, আঁমি তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু(বীর্য) থেকে? অতঃপর সে হয়ে গেল প্রকাশ্যে বাক বিতন্ডাকারী’। ‘সে আঁমার সম্পর্কে নানারূপ অদ্ভুত কথা বলে। অথচ সে নিজের সৃষ্টি সম্পর্কে ভুলে যায়, আর বলে যে, কে জীবিত করবে এসব হাড়গোড় সমূহকে, যখন সেগুলো পঁচে গলে যাবে?
[সূরা ইয়াসীন,আয়াত নং ৭৭-৭৮]

১১.পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে

مِنْ أَىِّ شَىْءٍ خَلَقَهُۥ
مِن نُّطْفَةٍ خَلَقَهُۥ فَقَدَّرَهُۥ
অর্থঃ তিনি তাকে কি বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছেন? শুক্র থেকে তাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাকে সুপরিমিত করেছেন।
[সূরা আবাসা,আয়াত নং ১৮-১৯]

১২.পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে

خَلَقَ ٱلْإِنسَٰنَ مِنْ عَلَقٍ

অর্থঃ সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।
[সূরা আলাক্ব,আয়াত নং ২]

★আল্লাহ মানুষকে সৃস্টি করেছেন রক্ত পিণ্ড (জমাট রক্ত) হতে।
[সূরা আলাক্ব, আয়াত নং ২]

১৩.পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে

أَيَحْسَبُ ٱلْإِنسَٰنُ أَن يُتْرَكَ سُدًى
أَلَمْ يَكُ نُطْفَةً مِّن مَّنِىٍّ يُمْنَىٰ
ثُمَّ كَانَ عَلَقَةً فَخَلَقَ فَسَوَّىٰ
فَجَعَلَ مِنْهُ ٱلزَّوْجَيْنِ ٱلذَّكَرَ وَٱلْأُنثَىٰٓ
অর্থঃ মানুষ কি মনে করে যে, তাকে এমনি ছেড়ে দেয়া হবে?
সে কি স্খলিত বীর্য ছিল না?
অতঃপর সে ছিল রক্তপিন্ড, অতঃপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন।
অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন যুগল নর ও নারী।
[সূরা আল-ক্বিয়ামাহ,আয়াত নং ৩৬-৩৯]

🔄এ ব্যপারে মওলা আলী (عليه السلام) বলেন! চিন্তা কর মানুষের কথা, যাদের আল্লাহ্ বেগে স্খলিত বীর্য হতে অন্ধকার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন।
[নাহাজ আল বালাঘা,পৃঃ ৯৬]
⬇️
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে

هُوَ ٱلَّذِى يُصَوِّرُكُمْ فِى ٱلْأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَآءُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ

অর্থঃ তিনিই সেই আল্লাহ, যিনি তোমাদের আকৃতি গঠন করেন মায়ের গর্ভে, যেমন তিনি চেয়েছেন। তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তিনি প্রবল পরাক্রমশীল, প্রজ্ঞাময়।

★তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে মাতৃগর্ভে আকার-আকৃতি দান করেছেন যেমন তিনি চেয়েছেন। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি মহা পরাক্রান্ত ও মহা বিজ্ঞানী’।
[সূরা আলে ইমরান,আয়াত নং ৬]
⬇️
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে

خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَٰحِدَةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَأَنزَلَ لَكُم مِّنَ ٱلْأَنْعَٰمِ ثَمَٰنِيَةَ أَزْوَٰجٍ يَخْلُقُكُمْ فِى بُطُونِ أُمَّهَٰتِكُمْ خَلْقًا مِّنۢ بَعْدِ خَلْقٍ فِى ظُلُمَٰتٍ ثَلَٰثٍ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ ٱلْمُلْكُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ فَأَنَّىٰ تُصْرَفُونَ
অর্থঃ তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে।অতঃপর তা থেকে তার যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তোমাদের জন্যে আট প্রকার চতুষ্পদ জন্তু অবতীর্ণ করেছেন।তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে।তিনি আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা, সাম্রাজ্য তাঁরই। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব, তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছ?

★তিনি তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভে সৃষ্টি করেন একের পর এক স্তরে তিনটি অন্ধকারাচ্ছন্ন আবরণের মধ্যে’।
[সূরা যুমার,আয়াত নং ৬]
⬇️
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে

هُوَ ٱلَّذِى خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَٰحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا فَلَمَّا تَغَشَّىٰهَا حَمَلَتْ حَمْلًا خَفِيفًا فَمَرَّتْ بِهِۦ فَلَمَّآ أَثْقَلَت دَّعَوَا ٱللَّهَ رَبَّهُمَا لَئِنْ ءَاتَيْتَنَا صَٰلِحًا لَّنَكُونَنَّ مِنَ ٱلشَّٰكِرِينَ

অর্থঃ তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদিগকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র সত্তা থেকে; আর তার থেকেই তৈরী করেছেন তার জোড়া, যাতে তার কাছে স্বস্তি পেতে পারে। অতঃপর পুরুষ যখন নারীকে আবৃত করল, তখন, সে গর্ভবতী হল। অতি হালকা গর্ভ।সে তাই নিয়ে চলাফেরা করতে থাকল।তারপর যখন বোঝা হয়ে গেল, তখন উভয়েই আল্লাহকে ডাকল যিনি তাদের পালনকর্তা যে, তুমি যদি আমাদিগকে সুস্থ ও ভাল দান কর তবে আমরা তোমার শুকরিয়া আদায় করব।
[সূরা আল আরাফ,আয়াত নং ১৮৯]

★তিনটি আবরণ হ’ল-পেট,রেহেম বা জরায়ু এবং জরায়ুর ফুল বা গর্ভাধার।

🔄পুরুষের একবার নির্গত বীর্যে লক্ষ-কোটি শুক্রাণু থাকে।আল্লাহর হুকুমে তন্মধ্যকার একটি মাত্র শুক্রকীট স্ত্রীর জরায়ুতে প্রবেশ করে।এই শুক্রকীট পুরুষ ক্রোমোজম Y অথবা স্ত্রী ক্রোমোজম X হয়ে থাকে। এর মধ্যে যেটি স্ত্রীর ডিম্বের X ক্রোমোজমের সাথে মিলিত হয়, সেভাবেই পুত্র বা কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে আল্লাহর হুকুমে।যেটা বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত।[সংক্ষিপ্ত] 💠💠💠৪র্থ দলিল💠💠💠

★২৪৭. হযরত ঈসা (عليه السلام) কে শুধু মাত্র জিবরাঈল (عليه السلام)-এর “ফুঁ” থেকে সৃস্টি করা হয়েছে:

*১. হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) মারিয়াম (عليه السلام) এর মুখে অথবা তাঁর পরিহিত জামায় ফুঁক মারলেন এবং তাতেই তাঁর গর্ভ সঞ্চার হ’ল।
[সূরা আম্বিয়া,আয়াত নং ৯১,সূরা তাহরীম,আয়াত নং ১২]

*২.হযরত ঈসা(عليه السلام) এঁর সৃস্টি প্রসংগে অন্য আয়াতে একে ‘আল্লাহর কলেমা’ (بِكَلِمَةٍ مِنْهُ) অর্থাৎ ‘কুন্’ (হও) বলা হয়েছে।
[সূরা আলে ইমরান,আয়াত নং ৪৫]

*৩. হযরত ঈসা (عليه السلام) বাবা ছাড়া কেবল রূহের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছেন যার উপাধি হল, রূহুল্লাহ।
[সূরা মারইয়াম,আয়াত নং ১৭-২১]
(অর্থাৎ আল্লাহ মাটি, পানি ও রূহকে মানব আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।

✌ঈসা (عليه السلام) কে ঈসা রুহুল্লাহ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রেরিত রুহের মাধ্যমে মানব সৃষ্টির নিয়মের ব্যতিক্রম হিসেবে বিবি মরিয়ম (عليه السلام) এর গর্ভে সৃষ্ট হন। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেনঃ

“তিনি (বিবি মরিয়ম) বললেন, পরওয়ারদেগার! কেমন করে আমার সন্তান হবে; আমাকে তো কোন মানুষ স্পর্শ করেনি। বললেন এ ভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যখন কোন কাজ করার জন্য ইচ্ছা করেন তখন বলেন যে, ‘হয়ে যাও’ অমনি তা হয়ে যায়।”

“অতঃপর আমি তার কাছে আমার রূহ (হযরত জিব্রাঈল) প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পুর্ণ মানবাকৃতিতে আত্নপ্রকাশ করল।মারইয়াম বললঃ আমি তোমা থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করি যদি তুমি আল্লাহভীরু হও। সে বললঃ আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব। মরিইয়াম বললঃ কিরূপে আমার পুত্র হবে, যখন কোন মানব আমাকে স্পর্শ করেনি এবং আমি কখনো ব্যভিচারিণীও ছিলাম না ? সে বললঃ এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলেছেন, এটা আমার জন্যে সহজ সাধ্য এবং আমি তাকে মানুষের জন্যে একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ করতে চাই। এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার। অতঃপর তিনি গর্ভে সন্তান ধারণ করলেন এবং তৎসহ এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেলেন।”
[সূরা মারইয়াম]

⏺️আজকের আলোচনা স্পষ্ট থেকে প্রমাণ হলো একমাত্র আদম (عليه السلام) ব্যতিত কেহই সরাসরি মাটির সৃষ্টি নন, বরং আমরা সকলেই [আল্লাহর রাসূল (ﷺ), হজরত ঈসা (عليه السلام), মা হাওয়া (عليه السلام) ব্যতিত] নুতফার সৃষ্টি। আর এটাই কোরআন, সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণি এবং সাহাবায়ে কেরামের আক্বিদা। এ বিষয়ে কোরআনে মহান রব ইরশাদ করেছেন।তাই এ বিষয়টিকে কেউ হেয় করে দেখলে সে কাফির হয়ে যাবেন।
[ইন-শা-আল্লাহ আলোচনা চলবে……]

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(৪৪ম পর্ব)

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

★২৪৮. এ পর্যায় ইন-শা-আল্লাহ আলোচনা করার চেষ্টা করবো হযরত আদম (عليه السلام) হলেন মাটির তৈরি,আর আমরা হলাম নুতফার তৈরি[2nd part]

       ১ম আয়াত শরীফ

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে

واذ قال ربك للملءكة اني خالق بشرا من طين

অর্থ: যখন আঁপনার পালনকর্তা ফেরেশতাগনকে বললেন,আঁমি মাটির মানুষ সৃষ্টি করবো।’”
[সূরা ছোয়াদ,আয়াত নং ৭১ ]

এখানে “মাটির মানুষ সৃষ্টি” বলতে হযরত আদম ((عليه السلام) কে বুঝানো হয়েছে।
           ****দলিল****
*(ক) বিখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন, আল্লামা আবু লাইছ সমারকান্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন–
( ﺍﻧﻲ ﺧﺎﻟﻖ ﺑﺸﺮﺍ ﻣﻦ ﻃﻴﻦ ( ﻳﻌﻨﻲ ﺍﺩﻡ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ

অর্থ: (নিশ্চয়ই আঁমি সৃষ্টি করবো মাটি থেকে বাশার) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে।“
[তাফসীরে সামারকান্দী,৩য় খন্ড,১৪১ পৃষ্ঠা]

*(খ.) আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন
(إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِن طِينٍ) يعنى حضرت ادم عليه السلام

অর্থ : “নিশ্চয়ই আঁমি মাটি থেকে “বাশার” অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে সৃষ্টি করবো।”
[তাফসীরে খাযেন,৪র্থ খণ্ড,৪৭ পৃষ্ঠা]

*(গ.)“তাফসীরে ক্বাদেরী”-এর ২য় খণ্ডের ৩২৩ পৃষ্ঠায় লিখেন,

” إِنِّي خَالِقٌ” میں پیدا کرنے والاهو ” بَشَرًا” بشر كو “مِن طِينٍ” مٹی سے

অর্থ : “নিশ্চয় আঁমি মাটি থেকে “বাশার” সৃষ্টি করবো। এখানে “বাশার” দ্বারা উদ্দেশ্যে হলো-হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিঁনি।”
⬇️
এছাড়াও দেখতে পারেন-
*মুদ্বিহুল কুরআন, ৪৮১ পৃ:
*তাফসীরে বাগবী।
*তাফসীরে মাযহারী।
*তাফসীরে রুহুল বয়ান।
*তাফসীরে রুহুল মায়ানী।
*তাফসীরে কবীর।
*তাফসীরে কুরতুবী।

       ২য় আয়াত শরীফ

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে
                    
ولقد خلقنا الانسان من سلالة من طين

অর্থ: আঁমি মানুষ মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।
[সূরা মু’মিনুন,আয়াত নং ১২]

এখানে “ইনসান” বা মানুষ দ্বারা হযরত আদম (عليه السلام) কে বুঝানো হয়েছে।
         ****দলিল****
*(ক.) আল্লামা আবুল লাইছ সামরকান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

(وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن سُلَالَةٍ مِّن طِين) حضرت يعنى حضرت ادم عليه السلام قال الكبى ومقاتل

অর্থ : “(নিঃসন্দেহে আঁমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে (মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি)।ক্বালবী ও মাকাতিল রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উঁনাদের অভিমত এটাই।”
[তাফসীরে সামারকান্দী,২য় খণ্ড,৪০৯ পৃষ্ঠা]

*(খ.) আল্লামা ক্বাজী ছানাউল্লাহ্ পানীপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

(وَلَقَدْ خَلَقْنَا) الجنس (الْإِنسَانَ) او حضرت ادم عليه السلام (سُلَالَةٍ مِّن طِينٍ)

অর্থ :“নিঃসন্দেহে আঁমি মানুষের জিন্স অথবা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।”
[তাফসীরে মাযহারী,৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৬৭ পৃষ্ঠা]

*(গ.) আল্লামা আবু আব্দুল্লাহ্ মুহম্মদ ইবনে আহমদ আনছারী আল কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

(وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ) الانسان هنا ادم عليه الصلاة والسلام قاله قتادة وغيره

অর্থ : “(নিঃসন্দেহে আঁমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি) এখানে “اِنْسَانَ” ‘মানুষ’ দ্বারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে বুঝানো হয়েছে। হযরত ক্বাতাদা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিঁনি এবং অন্যান্য মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উঁনারা এরূপই বলেছেন।”
[তাফসীরে কুরতুবী,৬ষ্ঠ খণ্ড, ১০৯ পৃষ্ঠা]

*(ঘ.) আল্লামা ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

(وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ) اى ادم عليه السلام

অর্থ : “(নিঃসন্দেহে আঁমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে সৃষ্টি করেছি (মাটির সারাংশ থেকে)।”
[তাফসীরে বাগবী,৩য় খণ্ড, ৩০১ পৃষ্ঠা]
⬇️
এছাড়াও দেখতে পারেনঃ
*তাফসীরে খাযেন,৩য় খন্ড,৩০১ পৃ:
*তাফসীরে মুদ্বিহুল কুরআন, ৩৫১ পৃ:

সূরা মু’মিনুন-এর উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও তার ব্যাখ্যা এটাই প্রমাণ করে যে,সকল মানুষের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিঁনিই সরাসরি মাটির সৃষ্টি।উঁনার সন্তানগণ মাটির সৃষ্টি নয়। যার কারণে মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উঁনারা উক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত “اِنْسَانَ” শব্দ দ্বারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকেই বুঝিয়েছেন।

     ৩য় আয়াত শরীফ

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে

ان خلقكم من تراب ثم اذا انتم بشر تنتشرون

অর্থ: তাঁর (আল্লাহ পাক) উঁনার নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে,তিঁনি মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন।এখন তোমরা মানুষ পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছো।”
[সূরা রুম,আয়াত নং ২০]

          ****দলিল****
*(ক) ইমাম বাগাবী (রহঃ) বলেন

(ان خلقكم) اي اباكم (من تراب ثم اذا انتم بشر) اي ادم وذريته (تنتشرون)

অর্থ: তিঁনি তোমাদেরকে অর্থাৎ তোমাদের পিঁতাকে (আদম আলাইহিস সালাম ) সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। অতঃপর তোমরা অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও উঁনার সন্তান জমীনে ছড়িয়ে পড়েছে।
[তাফসীরে বাগবী,৩য় খন্ড, ৪৩১ পৃ:]

*(খ)আল্লামা ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেনঃ

قوله تعالي (ومن اياته ان خلق كم من تراب) اي من علامته رب بيته و وحدا نيته ان من تراب اي خلق اباكم منه

অর্থ: (আল্লাহ পাক উঁনার নিদর্শন সমূহের মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, আল্লাহ পাক তোমাদেরকে মাটির থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ আল্লাহ পাক উঁনার রবুবিয়্যাত ও অাহদানিয়্যাত এর নিদর্শন এই যে,তিঁনি তোমাদের পিতা (হযরত আদম আলাইহিস সালাম ) উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
[তাফসীরে কুরতুবী]

*(গ.) আল্লামা কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথী (রহঃ) বলেন:
ان خلقكم اي خلق اصلكم ادم من تراب

অর্থ: তিঁনি (আল্লাহ পাক) তোমাদেরকে অর্থাৎ তোমাদের আছল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
[তাফসীরে মাজহারী,৭ম খন্ড,২২৯ পৃ:]

*(ঘ)আল্লামা আবুল লাইছ সমরকান্দী (রহঃ) বলেন:

(ان خلقكم من تراب) يعني خلق ادم من تراب وانتم ولده (ثم اذا انتم) ذريته من بعده (بشر تنتشرون) يعني تبسطون

অর্থ: (তিঁনি মাটি থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মহান আল্লাহ পাক মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর তোমরা হলে উঁনার সন্তান উঁনার পরে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছো।”
[তাফসীরে সামারকান্দী,৩য় খন্ড,৯ পৃ:]

*(ঙ.)বিখ্যাত মুফাসসির, আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইব্রাহিম বাগদাদী(রহঃ) বলেন:
(ان خلقكم من تراب) اي خلق اصلكم وهو ادم من تراب -(ثم اذا انتم بشر تنتشرون) اي تبسطون في الارض
অর্থ: (তিঁনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ তোমাদের আছল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।অতঃপর তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড়েছ মানুষ হিসেবে।”
[তাফসীরে খাযেন,৩য় খন্ড, ৪৩১পৃ:]

*(চ.) হাফিজ ইমাম ইবনে কাসির রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন “আল্লাহ তা’আলা বলেন যে,তাঁর ক্ষমতার নিদর্শন অনেক রয়েছে।নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, তিঁনি মানব জাতির পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম কে মৃত্তিকা দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।
[তাফসির ইবনে কাসির,পারা ২১,পৃঃ ৬৩১, ইঃফাঃ বাঃ]

*(ছ.) কানযুল ঈমানেও বলা আছে “তোমাদের সর্বোচ্চ পিতৃপুরুষ ও তোমাদের মূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম কে তা থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
[কানযুল ঈমান,পারা ২১,টীকা ৩৭]

      ৪নং আয়াত শরীফ

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে

الذي احسن كل شءي خلقه وبدأ خلق الانسان من طين

অর্থ: যিঁনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।”
[সূরা সিজদাহ,আয়াত নং ৭]

এখানে কাদামাটি থেকে মানুষ সৃষ্টির সূচনা বলতে  হযরত আদম (عليه السلام) কে বুঝানো হয়েছে।
        ****দলিল*****
*(ক.) আল্লামা আবুল লাইছ সামারকান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

(وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ مِن طِينٍ) يعنى خلق ادم عليه السلام من طين من اديم الارض

অর্থ : “(তিঁনি কাদামাটি থেকে মানুষ সৃষ্টির সূচনা) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে যমীনের কাদামাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
[তাফসীরে সামারকান্দী,৩য় খণ্ড,২৯ পৃষ্ঠা]

*(খ.) আল্লামা ছানাউল্লাহ্ পানিপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ يعنى حضرت ادم عليه السلام مِن طِينٍ

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিঁনি কাদামাটি দ্বারা মানুষ অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে সৃষ্টি করা শুরু করেন।”
[তাফসীরে মাযহারী,৭ম খণ্ড, ২৬৯ পৃষ্ঠা]

*(গ.) আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি

(وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ مِن طِينٍ) يعنى ادم عليه السلام
অর্থ : “তিঁনি কাদামাটি থেকে মানুষ।অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনার সৃষ্টির সূচনা করেন।”
[তাফসীরে খাযিন,৩য় খণ্ড, ৪৪৫ পৃষ্ঠা]

*(ঘ.) আল্লামা ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

(وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ مِن طِينٍ) يعنى حضرت ادم عليه السلام

অর্থ: “(তিঁনি কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেন) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে কাদামাটি থেকে সৃষ্টি করা শুরু করেন।”
[তাফসীরে কুরতুবী,৭ম খণ্ড, ৯০ পৃষ্ঠা]

*(ঙ.) আল্লামা ইমাম আবুল ফাররা আল বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

(وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ) حضرت ادم عليه السلام (مِن طِينٍ)

অর্থ: “তিঁনি কাদামাটি দ্বারা মানুষ অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে সৃষ্টির সূচনা করেন।”
[তাফসীরে বাগবী,৩য় খণ্ড,৪৪৫ পৃষ্ঠা]

*(চ.) আল্লামা আলুসী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

(وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ) اى حضرت ادم عليه السلام (مِن طِينٍ)

অর্থ: “(তিঁনি মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেন) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিসি সালাম উঁনাকে সৃষ্টি করা শুরু করেন কাদামাটি থেকে।”
[তাফসীরে রুহুল মায়ানী,১১তম খণ্ড,১২৩ পৃষ্ঠা]

*(ছ.) আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

(وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ) ………………… هو حضرت ادم ابو البشر عليه السلام

অর্থ : “(তিঁনি কাদামাটি থেকে মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেন) ………………. (উক্ত মানুষ হলেন) সকলেরই পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম।”
[তাফসীরে রুহুল বয়ান,৭ম খণ্ড,১১১ পৃষ্ঠা]

★তাছাড়া তাফসীরে কাদেরী,২য় খন্ড,২৩৬ পৃ: দেখতে পারেন।

     ৫নং আয়াত শরীফ

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে

قال له صاحبه وهو يحاوره اكفرت بالذي خلقك من تراب ثم من نطفة ثم سواك رجلا

অর্থ: তাঁর সঙ্গী তাকে কথা প্রসঙ্গে বললো,তুমি তাকে অস্বীকার করছো যিঁনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে,অতঃপর বীর্য থেকে অতঃপর পূর্নাঙ্গ করেছেন তোমাকে মানব আকৃতিতে।
[সূরা কাহাফ,আয়াত নং ৩৭]

উক্ত আয়াত শরীফে ‘খলাক্কা মিন তুরাব” বা সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে,এখানে মাটি থেকে  সৃষ্টি করা হয়েছে বলতে আদম (عليه السلام) বুঝানো হয়েছে।
                ****দলিল****
*(ক.) মুহিয়্যুস্ সুন্নাহ্ আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

(خَلَقَكَ مِن تُرَابٍ) اى خلق اصلك من تراب لان خلق اصله سبب فى خلقه

অর্থ : “(তোমাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ তোমার আছল (হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। কেননা উঁনার আছলের সৃষ্টি উঁনার সৃষ্টির কারণ।”
[তাফসীরে খাযিন,৩য় খণ্ড, ১৯৯ পৃষ্ঠা]

*(খ.) তাজুল মুফাসসিরীন আল্লামা আবুল ফজল শিহাবুদ্দীন সাইয়্যিদ মাহমুদ আলুসী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

خَلَقَكَ مِن تُرَابٍ) اى فى ضمن خلق اصلك منه وهو ادم عليه السلام

অর্থ : “(তিঁনি তোমাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ তোমার আছল উঁনাকে আর তিঁনি হলেন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
[তাফসীরে রুহুল মায়ানী,৮ম খণ্ড,২৭৬ পৃষ্ঠা]

*(গ.) প্রখ্যাত মুফাসসির ফক্বীহুল আছর, আল্লামা ছানাউল্লাহ্ পানীপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

(خَلَقَكَ مِن تُرَابٍ) لانه اصل ماد نك اومادة اصلك ادم عليه السلام

অর্থ : “(তিঁনি তোমাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) কেননা তোমার মাদ্দার আছল অথবা তোমার আছলের মাদ্দাহ্ হলেন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিঁনি।”
[তাফসীরে মাযহারী,৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৫ পৃষ্ঠা]

*(ঘ.) শাইখুল মুফাসসিরীন আল্লামা আবুল লাইছ সামারকান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

(قَالَ لَهُ صَاحِبُهُ) اى اخاه المسلم (وَهُوَ يُحَاوِرُهُ) اى يكلمه ويعظه فى الله تعالى (اَكَفَرْتَ بِالَّذِي خَلَقَكَ مِن تُرَابٍ) يعنى ادم عليه السلام

অর্থ : “(তাকে তার সাথী বলেন) অর্থাৎ তার মুসলমান ভাই বলেন। তিনি তার সাথে মহান আল্লাহ পাক উঁনার সম্পর্কে নছীহত করছিলেন।যিঁনি তোমাকে অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
[তাফসীরে সামারকান্দী,২য় খণ্ড,২৯৯ পৃষ্ঠা]

*(ঙ.)তাজুল মুফাসসিরীন আল্লামা ইমাম ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

(بِالَّذِي خَلَقَكَ) اى فى ضمن خلق اصلك ادم عليه السلام (مِن تُرَابٍ)

অর্থ : “(যিঁনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ তোমার আছল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”
[তাফসীরে রুহুল বয়ান,৫ম খণ্ড,২৪৭ পৃষ্ঠা]

⏺️সূরা কাহাফ-এর উক্ত আয়াত শরীফ ও তাফসীর দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, “মহান আল্লাহ পাক তো তিঁনি শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকেই মূলত মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।তাই মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাও আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত “خَلَقَكَ” “তোমাকে সৃষ্টি করেছেন” এ বাক্যের অর্থ করেছেন-“হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে” যেহেতু শুধুমাত্র আদম আলাইহিস সালাম তিঁনিই মাটির সৃষ্টি।

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(৪৫ম পর্ব)

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

★২৪৮. এ পর্যায় ইন-শা-আল্লাহ আলোচনা করার চেষ্টা করবো হযরত আদম (عليه السلام) হলেন মাটির তৈরি,আর আমরা হলাম নুতফার তৈরি[3rd part]

      ৬নং আয়াত শরীফ

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে

اِنَّ مَثَلَ عِيسَى عِندَ اللّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ ثِمَّ قَالَ لَهُ كُن فَيَكُونُ

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার দৃষ্টান্ত হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনারই ন্যায়,তিঁনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।অতঃপর বলেছেন,হয়ে যাও সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন।”
[সূরা আলে ইমরান,আয়াত নং ৫৯]

এখানেও হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকেই মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্য কাউকে নয় একথা বলা হয়েছে
        ****দলিল*****
*(ক.) বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

قوله تعالى (اِنَّ مَثَلَ عِيسَى …………..) دليل على صحة القياس – والتشبيه واقع على ان عيس خلق من غيراب كادم لا على انه خلق من تراب ……………… فان ادم خلق من تراب ولم يخلق عيس من تراب فكان بينهما انها خلقهما من غيرأب ………….
অর্থ : “উক্ত আয়াত শরীফখানা ক্বিয়াস সহীহ্ হওয়ার দলীল।আর উক্ত আয়াত শরীফে যে তাশবীহ বা সাদৃশ্যতা বর্ণনা করা হয়েছে তা এই যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিঁনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনার মতই পিতা ছাড়া তৈরী হয়েছেন।একথা বুঝানো হয় নাই যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিঁনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনার মতই মাটির তৈরী। ……… হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিঁনি মাটির তৈরী আর হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিঁনি মাটির তৈরী নন এদিক থেকে উভয়ের মাঝে যদিও পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু পিতা ছাড়া তৈরী হওয়ার দিক থেকে উভয়ের মধ্যেই সাদৃশ্যতা বা মিল রয়েছে। ………..”
[তাফসীরে কুরতুবী,২য় খণ্ড, ১০২ পৃষ্ঠা]

*(খ.) ইমামুল মুহাদ্দিছীন, আল্লামা ফখরুদ্দীন রাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

قوله تعالى (اِنَّ مَثَلَ عِيسَى عِندَ اللّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ) ……………………… اذا جاز ان يخلق الله تعالى ادم من التراب فلم لايجوز ان يخلق عيس من دم مريم؟ (مَثَلَ عِيسَى عِندَ اللّهِ كَمَثَلِ آدَمَ) اى صفته كصفة ادم ……………… (خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ) ………………………. الضمير فى قوله خلقه راجع الى ادم.

অর্থ: “(নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ পাক উঁনার নিকট হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উঁনার সৃষ্টি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনার সৃষ্টির ন্যায়। মহান আল্লাহ পাক তিঁনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।) ….. হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে যদি মহান আল্লাহ পাক তিঁনি মাটি থেকে সৃষ্টি করতে পারেন তবে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উঁনাকে কেন হযরত মরিয়ম আলাইহাস সালাম উঁনার রক্ত থেকে সৃষ্টি করতে পারবেন না? ….. (হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উঁনার মেছাল মহান আল্লাহ পাক উঁনার নিকট হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনার ন্যায়) অর্থাৎ হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উঁনার ছিফত হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনার ছিফতের ন্যায়। …… (উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে) …. উক্ত আয়াত শরীফ-এ যে সর্বনাম রয়েছে তা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনার দিকে রুজু হয়েছে বা ফিরেছে। অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে,হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উঁনাকে নয়।”
[তাফসীরে কবীর,৮ম খণ্ড, ৭৯-৮১ পৃষ্ঠা]

*(গ.) শায়খুল মুফাসসিরীন, ফক্বীহুল উম্মত আল্লামা ছানাউল্লাহ পানীপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন

(اِنَّ مَثَلَ عِيسَى) يعنى شانه الغريب عند الله كمثل ادم كشانه ثم فسره وبين وجه التشبيه – فقال خلقه اى صور قالبه يعنى ادم من تراب.

অর্থ: “নিঃসন্দেহে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উঁনার শান মহান আল্লাহ পাক উঁনার নিকট হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনার শানের ন্যায়। অতঃপর তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ও সাদৃশ্যতার কারণ বর্ণনা করেছেন। সুতরাং বলেন, মহান আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনার ছূরত সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।”
[তাফসীরে মাযহারী,২য় খণ্ড, ৫৯ পৃষ্ঠা]

সূরা আলে ইমরান-এর উক্ত আয়াত শরীফ ও তাফসীর দ্বারা এটাই ছাবিত হলো যে, শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকেই মাটি দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্য কাউকে নয়। যদি হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিঁনি ছাড়া অন্য কেউ মাটির সৃষ্টি হতো তবে উক্ত আয়াত শরীফে “হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উঁনার সৃষ্টি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার ন্যায়” একথা বলার পর “خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ” “আঁমি উনাকে (হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে) সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে” বলতেন না। বলতেন- “আঁমি উনাদের উভয়কে সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে।” সুতরাং এখানে সর্বনাম একবচন এনে এটাই বুঝিয়েছেন যে, শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিঁনিই মাটির সৃষ্টি অন্য কোন মানুষ নয়।
⬇️
এখানে ঈসা আলাইহিস সালামকে আদম আলাইহিস সালাম-এর সাথে উপমা দেয়া হয়েছে এ অর্থে যে, আদম আলাইহিস সালাম যেমন পিতা-মাতা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছেন অনুরূপ ঈসা আলাইহিস সালামও সৃষ্টি হয়েছেন পিতা ছাড়াই জিব্রাইল আলাইহিস সালাম-এর ফুঁক দ্বারা। এখানে ঈসা আলাইহিস সালামকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি বলা হয়নি, বরং তাঁকে যেন খোদার পূত্র বলা না হয়- এরই প্রতিবাদ করা হয়েছে।

     ৭নং আয়াত শরীফ

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে

فانا خلقناكم من تراب ثم من نطفة ثم من علقة ثم من مضغة مخلقة و غير مخلقة لنبين لكم

অর্থ: (হে লোক সকল! তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দীহান হও, তবে ভেবে দেখ) আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি।এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে এরপর পূর্নাকৃতি বিশিষ্ট ও অপূর্নাকৃতি বিশিষ্ট গোশতপিন্ড থেকে।তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্য।”
[সূরা হজ্জ,আয়াত নং ৫]

এখানেও আদম আলাইহিস সালাম মাটি দ্বারা সৃষ্ট,আদম সন্তানগন মাটি থেকে সৃষ্টি নয় বলা হয়েছে ।
      *****দলিল*****
*(ক.) ফক্বীহুল আছর, প্রখ্যাত মুফাসসির, আল্লামা আবু লাইছ সামারকান্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার তাফসীরের কিতাবে উল্লেখ করেন–

(فانا خلقناكم….) اي خلقنا اباكم الذي هم اصل البشر يعني ادم عليه السلام (مم تراب) (ثم) خلقنا ذريته (من نطفة) وهو المني

অর্থ: (আর নিঃসন্দেহে আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ তোমাদের পিতা যিঁনি মানব জাতির মূল অর্থাৎ আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর উঁনার সন্তানদেরকে “নুতফা” অর্থাৎ বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছি।”
[তাফসীরে সামারকান্দী ২য় খন্ড ৩৮০ পৃষ্ঠা]

*(খ.) ইমামুল মুফাসসিরীন,আল্লামা, ইমাম কুরতুবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে বলেন-

(فانا خلقناكك من تراب) يعني ادم عليه السلام من تراب

অর্থ: (নিঃসন্দেহে আঁমি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ আঁমি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি।”
[তাফসীরে কুরতুবী ৬ষ্ঠ খন্ড ৬ পৃষ্ঠা]

*(গ.) বিখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন, আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইব্রাহিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

(فانا خلقناكم من تراب) يعني اباكم ادم الذي هم اصل البشر (ثم من نطفة) يعني ذريته المي

অর্থ: (আঁমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। যিনি মানব জাতির মূল। (অতঃপর নুত্ফা থেকে) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তানদের বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছি।”
[তাফসীরে খাযেন ৩য় খন্ড ২৮১ পৃষ্ঠা]

*(ঘ.) প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা হুসাইন ইবনে মাসউদ আল ফাররা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

(فانا خلقناكم) اي اباكم (من تراب ثم) خلقتم (من نطفة ثم من علقة) اي قطعة دم جامدة (ثم من مضغة) اي لحمة صغيرة قدر مايمضع

অর্থ: আমি তোমাদের অর্থাৎ তোমাদের পিতাকে (আদম আলাইহিস সালাম ) মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তোমাদের সৃষ্টি করেছি নুতফা ও ছোট গোশত পিন্ড থেকে।”
[তাফসীরে বাগবী ৩য় খন্ড ২৮২ পৃষ্ঠা]

*(ঙ.) হাফিজ ইমাম ইবন কাসির রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি তোমাদের মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি অর্থাৎ তোমাদের পিতা আদম আলাইহিস সালাম কে সৃষ্টি করেছি মাটি দ্বারা তোমরা হল তারই বংশধর। অতঃপর আমি তোমাদের তুচ্ছ পানি ফোঁটার মাধ্যমে সৃষ্টি করেছি।
[তাফসীর ইবন কাসির পারা ১৭, পৃ ৪১৯, প্রকাশনীঃ বাংলাদেশ ইসলামি ফাউন্ডেশন]

*(চ.) উক্ত আয়াতের তাফসীরে কানযুল ঈমানে উল্লেখ করা হয়েছে”তোমাদের বংশের মূল অর্থাৎ তোমাদের সর্বপ্রথম পিতামহ হযরত আদম আলাইহিস সালাম কে তা থেকে সৃষ্টি করে।”
[কানযুল ঈমান, পারা ১৭, টীকা ১০]

সূতরাং ‘সূরা হজ্জের ৫ নং আয়াত শরীফ” এর তাফসীর শরীফ থেকে আমরা দেখতে পেলাম মানুষ মাটির সৃষ্টি তাদ্বারা মূলত হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকেই বুঝানো হয়েছে। শুধুমাত্র আদম আলাইহিস সালাম মাটি দ্বারা সৃষ্ট,আদম সন্তানগন মাটি থেকে সৃষ্টি নয়।

৮নং আয়াত শরীফ

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে

وَاللَّهُ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ جَعَلَكُمْ اَزْوَاجًا

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিঁনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে,অতঃপর বীর্য থেকে, তারপর করেছেন তোমাদেরকে যুগল।”
[সূরা ফাতির,আয়াত নং ১১]

এখানেও হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনিই শুধুমাত্র মাটি থেকে সৃষ্টি আর উনার সন্তানগণ নুতফা থেকে কুদরতীভাবে সৃষ্টি হয়েছেন বলা হয়েছে
        *****দলিল*****
*(ক.) আল্লামা আবু আব্দুল্লাহ্ মুহম্মদ ইবনে আহ্মদ আনছারী কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে কুরতুবী”-এর ৭ম খণ্ডের ৩৩২ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(وَاللَّهُ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ) قال سعيد عن قتادة قال- يعنى ادم عليه السلام والتقدير على هذا خلق اصلكم من تراب

অর্থ: “(মহান আল্লাহ্ পাক তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) হযরত সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উঁনার থেকে বর্ণনা করে বলেন, অর্থাৎ (মহান আল্লাহ পাক তিঁনি) হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে (মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন)। আয়াত শরীফে اصل “আছল” শব্দ উহ্য রয়েছে।”

*(খ.) আল্লামা আবুল লাইছ সামারকান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে সামারকান্দী”-এর ৩য় খণ্ডের ৮২ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(وَاللَّهُ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ) يعنى ادم عليه السلام وهو اصل الخلق (ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ) يعنى خلقكم من نطفة (ثُمَّ جَعَلَكُمْ اَزْوَاجًا) يعنى اصنافا ذكرا وانثى

অর্থ: “(মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর তিঁনিই হলেন মানব সৃষ্টির মূল। অতঃপর তোমাদেরকে (হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনার সন্তানদেরকে) নুতফা থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তোমাদেরকে পুরুষ-মহিলায় বিভক্ত করেছেন।”

*(গ.) আল্লামা ছহিবে খাযিন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে খাযিন”-এর ৩য় খণ্ডের ৪৯৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(وَاللَّهُ خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ) يعنى ادم عليه السلام (ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ) يعنى ذريته

অর্থ: (মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।অতঃপর হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনার সন্তানদেরকে নুতফা থেকে সৃষ্টি করেছেন।”

*(ঘ.) আল্লামা বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি “তাফসীরে বাগবী”-এর ৩য় খণ্ডের ৪৯৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(وَاللَّهُ خَلَقَكُم) اى اباكم من تراب

অর্থ : মহান আল্লাহ পাক তিঁনি তোমাদেরকে অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।

*(ঙ.) “তাফসীরে কাদেরী”-এর ২য় খণ্ডের ২৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

(وَاللَّهُ خَلَقَكُم) اور اللہ نے پیدا کیا تم تم کویعنی تمھارے باپ ادم علیہ السلام کو (مِّن تُرَابٍ) مٹی سے-

অর্থ : “….. আর মহান আল্লাহ পাক তিঁনি তোমাদেরকে অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”

সূরা ফাতির-এ উল্লিখিত উক্ত আয়াত শরীফ ও  তার তাফসীর বা ব্যাখ্যা দ্বারাও বুঝা গেল যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিঁনিই শুধুমাত্র মাটি থেকে সৃষ্টি আর উনার সন্তানগণ নুতফা থেকে কুদরতীভাবে সৃষ্টি হয়েছেন।তাই মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উঁনারা “خَلَقَكُمْ” শব্দের ব্যাখ্যায় “اَبِاكُمْ” অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে সৃষ্টি করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন।

৯ নং আয়াত শরীফ

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে

هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ يُخْرِجُكُمْ طِفْلً

অর্থ: “ঐ মহান আল্লাহ পাক যিঁনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে,অতঃপর নুতফা (বীর্য) থেকে, অতঃপর জমাট রক্ত থেকে, অতঃপর তোমাদেরকে বের করেন শিশুরূপে।”
[সূরা মু’মিন,আয়াত নং ৬৭]

এখানেও হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকেই শুধুমাত্র সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্য কাউকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়নি বলা হয়েছে
       *****দলিল***‌**
*(ক.) আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে রুহুল বয়ান”-এর ৮ম খণ্ডের ২০৭ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ) المعنى خلق اصلكم حضرت ادم عليه السلام من تراب

অর্থ: “(ঐ মহান আল্লাহ যিঁনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) ….এ আয়াত শরীফের সঠিক অর্থ হলো মহান আল্লাহ পাক তিঁনি তোমাদের আছল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”

*(খ.) আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে খাযিন”-এর ৪র্থ খণ্ডের ৭৭ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ) يعنى اصلكم حضرت ادم عليه السلام

অর্থ: “(যিঁনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ তোমাদের ‘আছল’ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”

*(গ.) “তাফসীরে কাদেরী”-এর ২য় খণ্ডের ৩৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

(هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن تُرَابٍ) وہ ھے جسے “خلقکم” پیدا کیا تمھارے دادا ادم کو من تراب “خاک سے”

অর্থ : “……… ঐ মহান আল্লাহ পাক তিঁনি তোমাদের দাদা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”

সূরা মু’মিন-এর উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও উনার ব্যাখ্যা দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকেই শুধুমাত্র সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্য কাউকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়নি।

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(৪৬ম পর্ব)

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

★২৪৮. এ পর্যায় ইন-শা-আল্লাহ আলোচনা করার চেষ্টা করবো হযরত আদম (عليه السلام) হলেন মাটির তৈরি,আর আমরা হলাম নুতফার তৈরি[4th part]

   ১০ নং আয়াত শরীফ

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে

هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ طِينٍ ثُمَّ قَضَىٰ أَجَلًا ۖ وَأَجَلٌ مُسَمًّى عِنْدَهُ ۖ ثُمَّ أَنْتُمْ تَمْتَرُونَ

অর্থঃ অথচ তিঁনি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের জীবনের জন্য একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ নির্ধারন করেছেন,এছাড়াও আর একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ তাঁর নিকট নির্ধারিত রয়েছে,কিন্তু এরপরও তোমরা সন্দেহ করে থাক।
[সুরা আল-আন’আম,আয়াত নং ২]

এখানেও হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতীত অন্য কোন মানুষই মাটির সৃষ্টি নয় বলা হয়েছে।
              ****দলিল***
*(ক.)  هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ طِينٍ

“এর মানে হল “তিঁনি সেই প্রভু যিঁনি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃস্টি করেছেন অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম (عليه السلام) কে মাটি দ্বারা সৃস্টি করা হয়েছিল এবং  মাটিই তাঁর গোশত ও চামড়ার আকার ধারন করেছিল।অতঃপর তাঁরই মাধ্যমে মানবকে সৃস্টি করে পূর্ব ও পশ্চিমে ছড়ীয়ে দেয়া হয়।

[তাফসীরে ইবনে কাসীর,৮ম খন্ড,৩৫পৃঃ,অনুবাদ:(ড: মুহাম্মদ মুজিবুর রাহমান]

*(খ.)  هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ طِينٍ

(তিঁনি তোমাদের সৃস্টি করেছেন মাটি হতে)-এর ব্যাখ্যা: ঈমাম আবু জাফর তাবারী (রহঃ) বলেন আয়াতাংশ দ্বারা আল্লাহ তাআলা ঘোষনা করেছেন যে “আল্লাহ যমিন সৃস্টি করেছেন, এ দু’য়ের রাতকে অন্ধকার করেছেন এবং দিনকে আলোকিত করেছেন।এরূপ অনুগ্রহ স্বত্ত্বেও কাফিররা তাঁর সংগে কুফুরী করছে এবং তাদের কল্যাণ -অকল্যাণ কিছুই করতে পারে না এমন বস্তুকে তারা সমকক্ষ দাঁড় করিয়েছে।

হে লোকসকল! সেই আল্লাহই তোমাদের কে সৃস্টি করেছেন মাটি থেকে।মাটি হতে (مِنْ طِينٍ) আয়াতাংশের উদ্দেশ্য এই যে,সকল মানুষতো আদি মানুষেরই বংশধর,যাঁকে আল্লাহ তাআলা মাটি হতে সৃস্টি করেছেন।যেহেতু তারা মাটির তৈরী ঐ আদি মানুষের সন্তান,সেহেতু তাদের সবাইকে এভাবে সম্বোধন করেছেন।

➡️এ ব্যপারে যারা একমত পোষন করেছেন: কাতাদা(রঃ) থেকে বর্নিত।                
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ طِينٍ
এ সম্পর্কে তিনি বলেন, “আয়াতে সৃস্টির সূচনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।আল্লাহ তা’আলা আদম (عليه السلام) কে মাটি হতে তৈরী করেছেন।

*মুজাহিদ (রঃ) থেকে বর্নিত।                   
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ طِينٍ
এ সম্পর্কে তিনি বলেন “এই সৃস্টি হযরত আদম(আঃ)।

*সূদ্দী(রঃ) থেকে বর্নিত।
خَلَقَكُمْ مِنْ طِينٍ
তোমাদেরকে মাটি হতে সৃস্টি করেছেন অর্থাৎ আদম (عليه السلام) কে সৃস্টি করেছেন।

*দাহ্হাক ইবনে মুজাহিম (রঃ) থেকে বর্নিত।তিনি বলেন হযরত আদম (عليه السلام) কে সৃস্টি করা হয়েছে মাটি হতে আর সকল মানুষ সৃস্টি করেছেন তুচ্ছ তরল পর্দার্থের নির্যাস হতে।

*ইবনে যায়দ (রঃ) বলেন” আল্লাহ তা’আলা হযরত আদম (عليه السلام) কে সৃস্টি করেছেন মাটি হতে আর আমাদেরকে সৃস্টি করেছেন,তখন তাঁর পিঠ হতে যখন আমাদেরকে বের করেছিলেন।

*ইবনে ওয়াহব (রঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন এই আয়াতের অর্থ হযরত আদম (عليه السلام) কে মাটি থেকে সৃস্টি করা হয়েছে।তারপর আদম (عليه السلام) হতে আমাদের সৃস্টি করা হয়েছে।তারপর মৃত্যু ও  অংগীকারকে ইহজগতে একই সময়ে নির্ধারন করা হয়েছে।(অংগীকার হল-মহান আল্লাহ একমাত্র প্রতিপালক এ স্বীকারোক্তি নেওয়া]
[তাফসীরে তাবারী,৯ম খন্ড,২৯১-২৯৪পৃঃ,ইঃফাঃবাঃ]

*(গ.)আ’লা হযরত শাহ্ ইমাম আহমাদ রেজা খাঁন(রঃ) তাফসীর করতে গিয়ে বলেন “তিঁনিই হন,যিঁনি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃস্টি করেছেন অর্থাৎ তোমাদের আদি পুরুষ হযরত আদম (عليه السلام) কে,যার বংশ হতে তোমরা জন্ম লাভ করেছ।আরও সুন্দরভাবে বলা হয়েছে”এতে মুশরিকদের দাবির খন্ডন করা হয়েছে,যারা বলতো “আমরা যখন বিগলিত হয়ে মাটি হয়ে যাবো,তখন কিভাবে জীবিত করা হবে? তাদেরকে বলে দেওয়া হয়েছে”তোমাদের মূল তো মাটি থেকেই।সুতরাং পূ্নর্বার সৃস্ট হবার উপর আশ্চর্য কিসের?যেই সর্বশক্তিমান (খোদা) প্রথমবার সৃস্টি করেছেন মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করাকে তাঁরই ক্ষমতার অতীত মনে করা মূর্খতাই।”
[কানযুল ঈমান,সূরা আন-আমের ২নং আয়াতের তাফসীর]

*(ঘ.) هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ طِينٍ 

অর্থ: তিঁনি তোমাদেরকে  মাটি থেকে সৃজন করেছেন।এখানে, কুম,শব্দটির পূর্বে “আবুন” (পিতা) শব্দটি অনুক্ত রয়েছে।এই অনুক্ত শব্দটিসহ বাক্যটির অর্থ দাঁড়াবে এরকম-তিঁনিই তোমাদের পিতা(হযরত আদম) কে মৃত্তিকা থেকে সৃজন করেছেন।
[তাফসীরে মাযহারী/১৩২, ৪নং খন্ড]

⬇️আল্লামা ছানাউল্লাহ পানিপথি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে মাযহারী”তে লিখেন,

(هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن طِينٍ) يعنى ابتدأ خلقكم منه حيث خلق منه اصلكم حضرت ادم عليه السلام او المعنى خلق اباكم ادم بحذف المضاف

অর্থ : “(মহান আল্লাহ পাক তিঁনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টির সূচনা করেছেন তোমাদের আছল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করার মাধ্যমে।অথবা উক্ত আয়াত শরীফের অর্থ হলো তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। এখানে ‘মোজাফ’ উহ্য রয়েছে।”

*(ঙ.)আবার তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআনে ও বলা হয়েছে “আল্লাহ তা’আলা সেই সত্বা,যিঁনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃজন করেছেন।আল্লাহ তা’আলা আদম (عليه السلام) কে এক বিশেষ পরিমান মাটি থেকে সৃস্টি করেছেন।(সংক্ষিপ্ত) আবার মানব সৃস্টির সূচনার কথা বলা হয়েছে।
[তাফসীরে মা’আরেফুল কোরআন,৩নং খন্ড,২৫৮ পৃঃ,ই:ফা:বা:]

*(চ.) আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে খাযিন”-এর ২য় খণ্ডের ৩য় পৃষ্ঠায় লিখেন,

(هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن طِينٍ) يعنى انه تعالى خلق حضرت ادم من طين وانما خاطب ذريته بذالك لانه اصلهم وهم من نسله

অর্থ : “…….. (মহান আল্লাহ পাক তিঁনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিঁনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।আর এ কারণেই উঁনার সন্তানদেরকে মাটির সৃষ্টি বলা হয়েছে, কেননা হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিঁনিই হচ্ছেন তাদের আছল, আর তারা উঁনার ‘আছল’ থেকে সৃষ্টি হয়েছে।”

সূরা আনয়াম-এর উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর বা ব্যাখ্যাও প্রমাণ করে যে, আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিঁনি ব্যতীত অন্য কোন মানুষই মাটির সৃষ্টি নয়।

     ১১ নং আয়াত শরীফ

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে

اِنَّا خَلَقْنَاهُم مِّن طِينٍ لَّازِبٍ

অর্থ : “নিঃসন্দেহে আঁমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এঁটেল মাটি থেকে।”
[সূরা সাফফাত,আয়াত নং ১১]

এখানেও হযরত আদম  আলাইহিস সালাম উঁনাকে এঁটেল মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি বলা হয়েছে
               *****দলিল******
*(ক.) আল্লামা আবুল লাইছ সামারকান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে সামারকান্দী”-এর ৩য় খণ্ডের ১১২ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(اِنَّا خَلَقْنَاهُم مِّن طِينٍ لَّازِبٍ) يعنى خلقنا حضرت ادم عليه السلام

অর্থ : “(নিঃসন্দেহে আঁমিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এঁটেল মাটি থেকে) অর্থাৎ আঁমি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে সৃষ্টি করেছি এঁটেল মাটি থেকে।”

*(খ.) আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে খাযিন”-এর ৪র্থ খণ্ডের ১৫ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(اِنَّا خَلَقْنَاهُم مِّن طِينٍ لَّازِبٍ) يعنى حضرت ادم عليه السلام من طين جديد

অর্থ : “নিঃসন্দেহে আঁমি আল্লাহ পাকই তাদেরকে অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে সৃষ্টি করেছি এঁটেল মাটি থেকে।”

*(গ.) আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে রুহুল বয়ান”-এর ৭ম খণ্ডের ৪৫১ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(اِنَّا خَلَقْنَاهُمْ) اى خلقنا اصلهم هو حضرت ادم عليه السلام (مِنْ طِينٍ لَّازِبٍ)

অর্থ : “নিঃসন্দেহে আঁমি তাদের ‘আছল’ অর্থাৎ হযরত আদম  আলাইহিস সালাম উঁনাকে এঁটেল মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি।”

    ১২ নং আয়াত শরীফ

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ

অর্থ : “আঁমি মানুষকে পঁচা কাঁদা থেকে তৈরী শুকনো ঠন ঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি।”
[সূরা হিজর,আয়াত নং ২৬]

এখানেও হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি বলা হয়েছে
               *****দলিল******
*(ক.) আল্লামা আবুল লাইছ সামারকান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে সামারকান্দী”-এর ২য় খণ্ডের ২১৮ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ) اى حضرت ادم عليه السلام

অর্থ : “নিঃসন্দেহে আঁমি ইনসান অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে ঠনঠনে শুকনো মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি।”

*(খ.) আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে খাযিন”-এর ৩য় খণ্ডের ৯৪ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإِنسَانَ) يعنى ادم عليه السلام فى قول جميع المفسرين ……. “مِن صَلْصَالٍ” يعنى من الطين اليابس.

অর্থ : “নিঃসন্দেহে আঁমি মানুষকে অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে ঠনঠনে শুকনো মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি।এটা সকল মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ক্বওল।”

*(গ.) আল্লামা ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে বাগবী”-এর ৩য় খণ্ডের ৯৪ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإِنسَانَ) اى حضرت ادم عليه السلام (مِن صَلْصَالٍ) طين يابس

অর্থ : “নিঃসন্দেহে আঁমি ইনসানকে অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে শুকনো মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি।”

*(ঘ.) আল্লামা ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে কুরতুবী”-এর ৫ম খণ্ডের ২১ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإِنسَانَ) يعنى حضرت ادم عليه السلام (مِن صَلْصَالٍ) اى طين يابس عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه وغيره

অর্থ : “(নিঃসন্দেহে আঁমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে সৃষ্টি করেছি শুকনো মাটি থেকে। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিঁনি ও অন্যান্য মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উঁনাদের থেকে এরূপ ব্যাখ্যাই বর্ণিত হয়েছে।”

*(ঙ.) “তাফসীরে ক্বাদেরী”-এর ১ম খণ্ডের ৫০০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وَلَقَدْ خَلَقْنَا- اور ہے شبه كيا همنے الانسان انسان كو يعنى حضرت ادم عليه السلام  كو “مِن صَلْصَالٍ” خشك مٹى سے

অর্থ : “নিঃসন্দেহে আঁমি ইনসানকে অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে সৃষ্টি করেছি শুকনো মাটি থেকে।”

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(৪৭ম পর্ব)

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

★২৪৮. এ পর্যায় ইন-শা-আল্লাহ আলোচনা করার চেষ্টা করবো হযরত আদম (عليه السلام) হলেন মাটির তৈরি,আর আমরা হলাম নুতফার তৈরি[5th part]

       ১৩ নং আয়াত শরীফ

পবিত্র কেরআনে ইরশাদ হয়েছে

خَلَقَ الْإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ

অর্থ: “তিঁনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুকনো মাটি দ্বারা।”
[সূরা আর রহমান,আয়াত নং ১৪]

        ****দলিল*****
*(ক.) আল্লামা আবুল লাইছ সামারকান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে সামারকান্দী”-এর ৩য় খণ্ডের ৩০৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(خَلَقَ الْإِنسَانَ) يعنى حضرت ادم عليه السلام (مِن صَلْصَالٍ) يعنى الطين اليابس

অর্থ: “(তিনি ইনসান) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে সৃষ্টি করেছেন (ছালছাল) অর্থাৎ শুকনো মাটি থেকে।”

*(খ.) আল্লামা ছানাউল্লাহ্ পানীপথী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে মাযহারী”-এর ৯ম খণ্ডের ১৪৮ পৃষ্ঠায় লিখেন,

“خَلَقَ الْإِنسَانَ” يعنى حضرت ادم عليه السلام “مِن صَلْصَالٍ” اى طين يابس

অর্থ : “তিঁনি ইনসানকে অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে “ছালছাল” অর্থাৎ শুকনো মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।”

       ১৪ নং আয়াত শরীফ

সব মানুষই মাটির তৈরি প্রমাণ করার জন্যে অনেকেই সূরা তোয়া-হা এর ৫৫ নং আয়াতটি উল্লেখ করে থাকেন।এই আয়াতে আল্লাহ পাক সমগ্র মানব জাতিকে সম্বোধন করে মানব সৃষ্টির কথা ঘোষণা করেন।দেখা যাক এর ব্যাখ্যায় মুফাসসীরগণ কী বলেন!

মহান আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন, “এ মাটি থেকেই আঁমি তোমাদেরকে সৃজন করেছি, এতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং পুনরায় এ থেকেই আঁমি তোমাদেরকে উত্থিত করব।”
[সূরা তোয়া-হা,আয়াত নং ৫৫]
⬇️
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে

مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى

অর্থ: “মাটি থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি।তাতেই তোমাদেরকে ফিরাবো এবং তা থেকে পুনরায় উঠাবো।”
[সূরা ত্ব-হা,আয়াত নং ৫৫]

এখানে মাটি থেকে সৃজন করা বলতে কি সব মানুষকে বুঝানো হয়েছে নাকি কেবল আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (عليه السلام) কে বুঝানো হয়েছে।তা আবারও আলোচনা করা যাকঃ

*(ক.) আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে রুহুল বয়ান”-এর ৫ম খণ্ডের ৩৯৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(مِنْهَا) اى من الارض (خَلَقْنَاكُمْ) بواسطة اصلكم حضرت ادم عليه السلام والافمن عدا حضرت ادم و حضرت حواء عليهما السلام مخلوق من النطفة

অর্থ: “(তা থেকে) অর্থাৎ যমীন থেকে (তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি) তোমাদের মূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে সৃষ্টি করার মাধ্যমে। আর হযরত আদম আলাইহিস সালাম ও হযরত হাওয়া আলাইহিস সালাম উঁনারা ব্যতীত সকলেই ‘নুতফা’ থেকে সৃষ্ট।”

*(খ.) আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইবরাহীম বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে খাযিন”-এর ৩য় খণ্ডের ২৪০ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ) اى من الارض خلقنا حضرت ادم عليه السلام

অর্থ: “(তোমাদেরকে তা থেকে) অর্থাৎ যমীন থেকে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে সৃষ্টি করেছি।”

*(গ.) আল্লামা আবুল ফাররা আল বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে বাগবী”-এর ৩য় খণ্ডের ২৪০ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(مِنْهَا) من الارض (خَلَقْنَاكُمْ) اى اباكم ادم عليه السلام

অর্থ: (তা থেকে) অর্থাৎ যমীন থেকে (তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে সৃষ্টি করেছি।”

*(ঘ.) আল্লামা আবুল লাইছ সামারকান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে সামারকান্দী”-এর ২য় খণ্ডের ৩৪৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ) يعنى ادم خلقناه من الارض (فِيهَا نُعِيدُكُمْ) اى بعد موتكم (وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ) يعنى نعيكم ونخر جكم من الارض (تَارَةً أُخْرَى)

অর্থ: (তা থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ আমি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। (সেখানেই প্রত্যাবর্তন করবে) মৃত্যুর পর (সেখান থেকে) তোমাদের পুনরায় উঠানো হবে, অর্থাৎ জীবিত করা হবে।”

*(ঙ.) আল্লামা ইমাম কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে কুরতুবী”-এর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ২১০ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ) يعنى حضرت ادم عليه السلام لانه خلق من الارض قاله ابو اسحاق الزجاج وغيره
অর্থ: “(তা থেকে তোমাদেরকে) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। কেননা হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিঁনি মাটি থেকে সৃষ্ট।”

*(চ.) আল্লামা আলুসী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে রুহুল মায়ানী”-এর ৯ম খণ্ডের ২০৭ পৃষ্ঠায় লিখেন,
(مِنْهَا) اى من الارض (خَلَقْنَاكُمْ) اى فى ضمن خلق ابيكم حضرت ادم عليه السلام منها

অর্থ: “(তা থেকে) অর্থাৎ মাটি থেকে (তোমাদেরকে) অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে সৃষ্টি করার মাধ্যমে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি।”

*(ছ.) তাফসীরে জালালাইন শরীফ থেকে (বাংলা ভার্সনের ৪র্থ খণ্ডের ২৩১ নং পৃষ্ঠায়) আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহঃ) লিখেন, “আঁমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা দ্বারা সৃষ্টি করেছি।এখানে সব মানুষকেই সম্বোধন করা হয়েছে। অথচ এক হযরত আদম (عليه السلام) ছাড়া সাধারণ মানুষ মৃত্তিকা দ্বারা নয়, বীর্য দ্বারা সৃজিত হয়েছে। হযরত আদম (عليه السلام) -এঁর সৃষ্টিই কেবল সরাসরি মৃত্তিকা দ্বারা সম্পন্ন হয়েছে। তবে ‘তোমাদেরকে মৃত্তিকা দ্বারা সৃজন করেছি’ বলার কারণ এরূপ হতে পারে যে, মানুষের মূল এবং সবার পিতা হলেন হযরত আদম (عليه السلام), তাঁর মধ্যস্থতায় সবার সৃষ্টিকে মাটির সাথে সম্বন্ধযুক্ত করে দেয়া মোটেই অযৌক্তিক নয়।”

*(জ.) তাফসীর ইবনে কাসীরে, আল্লামা ইবনে কাসীর (রহঃ) লিখেন,“মহান আল্লাহ বলেনঃ আঁমি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছি। এর থেকেই তোমাদের সূচনা।কেননা, তোমাদের পিতা আদমের (عليه السلام) সৃষ্টি এই মাটি থেকেই।”

*(ঝ.) কানযুল ঈমানে ইমাম আহমাদ রেজা (রহঃ) এই আয়াতের পাদটীকায় লিখেন, তোমাদের আদি পিতামহ হযরত আদম (عليه السلام) কে তা থেকে সৃষ্টি করেছি।
⬇️
নবী করীম (ﷺ)এঁর একটি হাদিসও এই দাবীকে সমর্থন করে।তিঁনি বলেনঃ “তোমরা সকলেই আদমের সন্তান,আর আদম মাটি থেকে সৃষ্টি।” (হাদীসটি সহীহ হিসেবে লা-মাজহাবী আলবানীর ‘সহীহুল জামে’ কিতাবে স্থান পেয়েছেঃ হাদিস নম্বর ৪৫৬৮)
⬇️
বিশ্ববিখ্যাত “তাফসীরগ্রন্থ” সমূহের বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়।সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিঁনি ব্যতীত অন্য কেউ সরাসরি মাটি থেকে তৈরী নয়, বরং মহান আল্লাহ পাক উঁনার কুদরতে তৈরী। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক উঁনার কুদরতে প্রত্যেকেই তার মা-এর রেহেম শরীফে কুদরতীভাবে তৈরী।

আর সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,

ذَلِكَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ. الَّذِي أَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنسَانِ مِن طِينٍ. ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِن سُلَالَةٍ مِّن مَّاء مَّهِينٍ.

অর্থ: “তিনিই দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী, পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু যিঁনি উঁনার প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন।অতঃপর তিঁনি (মহান আল্লাহ পাক) উনার বংশধর সৃষ্টি করেন সম্মানিত পানির নির্যাস থেকে।”
[সূরা সাজদা আয়াত নং ৬-৮]
⬇️
অপর আয়াতে কারীমায় ইরশাদ হয়েছে

هُوَ الَّذِي خَلَقَ مِنَ الْمَاء بَشَرًا فَجَعَلَهُ نَسَبًا وَصِهْرًا وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيرًا.

অর্থ: “তিঁনি পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে অতঃপর তাকে রক্তগত, বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। আঁপনার পালনকর্তা তিনি সবকিছু করতে সক্ষম।” [সূরা ফুরক্বান আয়াত নং ৫৪]
⬇️
আরও ইরশাদ হয়েছে
أَلَمْ نَخْلُقكُّم مِّن مَّاء مَّهِينٍ.

অর্থ : “আঁমি কি তোমাদেরকে সম্মানিত পানি হতে সৃষ্টি করিনি।”
[সূরা মুরসালাত আয়াত নং ২০]
⬇️
আরেক আয়াতে বলা হয়েছে
فَلْيَنظُرِ الْإِنسَانُ مِمَّ خُلِقَ. خُلِقَ مِن مَّاء دَافِقٍ.

অর্থ: “অতএব, মানুষের দেখা উচিত,সে কি বস্তু হতে সৃষ্টি হয়েছে।সে সৃষ্টি হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে।”
[সূরা ত্বারিক্ব,আয়াত নং ৫-৬]
⬇️
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে
هُوَ الَّذِي يُصَوِّرُكُمْ فِي الأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَاء.

অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিঁনি তোমাদের আকৃতি গঠন করে থাকেন মায়ের রেহেম শরীফে যেভাবে ইচ্ছা।”
[সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ৬]

⏺️সূরা ত্ব-হা-এর উক্ত আয়াত শরীফ ও তার তাফসীর দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে,শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম সরাসরি মাটির তৈরী।আর কোন মানুষই মাটির তৈরী নয়।উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, যারা বলে থাকে,“কুরআন শরীফের বহুস্থানে বলা হয়েছে সকল মানুষ মাটির তৈরী।তাই সকল মানুষ মাটির তৈরী” তাদের একথা সম্পূর্ণই ভুল। কারণ বিশ্বখ্যাত ও অনুসরণীয় মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সর্বসম্মত অভিমত হলো- “কুরআন শরীফের যেসব আয়াত শরীফ-এ ‘মানুষ’ মাটির তৈরী বলা হয়েছে” সেসব আয়াত শরীফ-এ উল্লিখিত “মানুষ” দ্বারা উদ্দেশ্যে হলো “হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিঁনি।” কারণ শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকেই মহান আল্লাহ পাক তিঁনি সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।

একইভাবে হাদীস শরীফ-এ “তোমরা সকলেই হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনার সন্তান” বলার পরে আবার “আর আদম আলাইহিস সালাম তিঁনি মাটি হতে সৃষ্ট” বলার উদ্দেশ্য একই। অর্থাৎ শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিঁনিই মাটির সৃষ্টি অন্য কোন মানুষ নয়।

✊যদি ঢালাও ভাবে বলে হ্যাঁ, সব মানুষ মাটির তৈরি।তাহলে প্রশ্ন আসে হযরত মা হাওয়া (عليه السلام) কি মাটির তৈরি? হযরত ঈসা রুহুল্লাহ (عليه السلام) মাটির তৈরি? হযরত আদম (عليه السلام) এঁর ক্ষেত্রে যেমন সব আয়াত প্রযোজ্য নয়,তেমনি সব মানুষের ক্ষেত্রে ‘মাটির তৈরি’ কথাটিও প্রযোজ্য নয়।গৎবাঁধা ‘মানুষ মাটি থেকে সৃষ্ট’ বললে কিছু আয়াতকে অস্বীকার করা হয় আবার সব আয়াতকে শাব্দিক অর্থে হযরত আদম (عليه السلام) এঁর ক্ষেত্রে ব্যবহার করলে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করা হয়, নাউজুবিল্লাহ।

★আর এ ব্যাপারে নবী করীম (ﷺ) কঠোর সতর্কবাণী করেছেন। তিঁনি বলেন,“যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের ব্যাখ্যায় মনগড়া কিছু বলে,সে যেন জাহান্নামে নিজ ঠিকানা বানিয়ে নেয়।”
[তিরমীযি শরীফ–২৯৫১]
⬇️
মহান আল্লাহ পাক অতি চমৎকারভাবে মানব জাতির সৃষ্টির কথা একটি মাত্র আয়াতে তুলে ধরেন এভাবেঃ“হে লোকসকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হও, তবে (ভেবে দেখ-) আঁমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি।এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতি বিশিষ্ট মাংসপিন্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে।আর আঁমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই,এরপর আঁমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করি; তারপর যাতে তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌছানো হয়, যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান না থাকে।”
[সূরা হাজ্জ,আয়াত নং ৫]

➡️এই আয়াতের প্রথম অংশে বলা হচ্ছে আল্লাহ পাক মানুষ সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। এরপর আবার বলা হচ্ছে বীর্য থেকে,এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন অবস্থা পেরিয়ে পূর্ণাঙ্গ কিংবা অপূর্ণাঙ্গ শিশু হিসেবে পৃথিবীতে আনয়নের কথা। এখানে স্পষ্টতঃই বোঝা যাচ্ছে যে পরের ধাপগুলো কেবল আদম সন্তানদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত। ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর মিলন থেকে পুরো সময়টাকে বোঝানো হয়েছে। হযরত আদম (عليه السلام) কে যেমন বীর্য বা জমাট রক্ত থেকে তৈরি করা হয়নি, ঠিক তেমনি অন্য সব মানুষকে মাটি থেকে তৈরি করা হয়নি। অথচ আল্লাহ পাক কিন্তু আলোচ্য উক্ত আয়াতে পুরো মানব জাতিকে উদ্দেশ্য করে এ ঘোষণা দিচ্ছেন। প্রায় সব তাফসীরকারগণ এব্যাপারে একমত হয়েছেন।দেখুন তাফসীর-এ আল্লামা আবু লাইছ সামারকান্দী, ইবনে কাসীর, ইমাম কুরতুবী, কাঞ্জুল ঈমান (আ’লা হযরত ইমাম আহমেদ রেজা খান রাহমাতুল্লাহ আলাহুম আজমাঈন)।

সূরা নিসায় আল্লাহ পাক আরও পরিষ্কার করে ঘোষণা করছেনঃ “হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালন কর্তাকে ভয় কর,যিঁনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিঁনি তাঁর (আদম) থেকে তাঁর সঙ্গীনীকে (বিবি হাওয়া) সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী।”
[সূরা নিসা,আয়াত নং ১]

✌এই আয়াতের পর আর সন্দেহ রইলো না যে,আল্লাহ এক ব্যাক্তিকেই মাটি থেকে তৈরি করেছেন।আর তাঁর থেকে তাঁর সঙ্গিনীকে এবং তাঁদের দু’জন থেকে সমগ্র মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। সব মানুষ মাটির তৈরি একথা বলা বা এধরণের বিশ্বাস পোষণের দ্বারা সূরা হাজ্জের ৫ নং আয়াতের শেষের অংশকে অস্বীকার করা হয়। সমগ্র মানব জাতির মূল অর্থাৎ আদি পিতা হলেন মাটির তৈরি। সবাই মাটি থেকে সৃষ্ট নয়। কুরআনের কোন একটি আয়াত বা কোন আয়াতের কিছু অংশকে অস্বীকার করার ব্যাপারে আল্লাহ পাক কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন-“তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর?”
[সূরা বাকারা,আয়াত নং ৮৫]
⬇️
“এবং যাদেরকে আমি গ্রন্থ দিয়েছি,তারা আঁপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে,তজ্জন্যে আনন্দিত হয় এবং কোন কোন দল এর কোন কোন বিষয় অস্বীকার করে।”
[সূরা আর-রাদ,আয়াত নং ৩৬]

অতএব প্রমাণিত হলো যে, সমস্ত মানুষ কুদরতীভাবে মা-এর রেহেম শরীফে সৃষ্টি হয়ে থাকেন।কেউই সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি হননা। যারা বলে, ‘সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি হয়’ তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ-এর খিলাফ যা তাফসীর বিরুদ্ধ রায় হওয়ার কারণে সম্পূর্ণরূপে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

Leave a comment