রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?

[পরিমার্জিত সংকলন ৪০-৪২তম পর্ব]

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(৪০ম পর্ব)

🌀অনেকে বলেন কোরআনে নূর বলা হয়েছে কিন্তু নূরের তৈরী বলা হয়নি, আবার কেউ বলেন শুধু রুহ মোবারক নূর কিন্তু দেহমোবারক নয়,আবার কেউ বলেন সাদা মাটির তৈরী (নাউযুবিল্লাহ!) আজকে ইন-শা-আল্লাহ সে বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো-[৩২ম অংশ]

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

💟এপর্যায়ে আলোচনা করবো নূরে মোহাম্মদী (ﷺ) স্থানান্তর ও মায়ের গর্ভেও নূর ছিলেন এবং পৃথিবীতে আগমনের ধরন 1st part:💝💝💝💝

★২০৭. হযরত আদম (আঃ)-এঁর অন্ধকার দেহে রুহ প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁর ললাটে হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ)-এঁর নূর মোবারকের অংশবিশেষ স্থাপন করা হয় এবং এতে দেহের ভেতরে আলোর সৃষ্টি হয়। তখনই হযরত আদম (আঃ) মানবরূপ ধারণ করেন এবং হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করেন।আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) সৃষ্টি হয়েই প্রথমে পাঠ করেছিলেন আলহামদুলিল্লাহ।তাই আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির প্রথম প্রতিনিধি হযরত আদম (আঃ) এবং সমগ্র বিশ্ব জগতের প্রতিনিধি হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা(ﷺ)-এঁর প্রথম কালাম ‘আলহামদুলিল্লাহ’ দিয়ে কোরআন মাজিদ শুরু করেছেন(তাফসীরে নঈমী)।

এভাবে ঐ জগতের একহাজার আট কোটি বছর পর মোহাম্মদী নূর হযরত আদম (আঃ)-এঁর দেহে স্থানান্তরিত হয়। প্রথমে ললাটে, তারপর ডান হাতের শাহাদত অঙ্গুলিতে এবং পরে পৃষ্ঠদেশে সেই নূরে মোহাম্মদীকে (ﷺ) স্থাপন করা হয়।এরপর জান্নাতে, তারপর দুনিয়াতে পাঠানো হয় সে নূরকে।১০৬ মোকাম পাড়ি দিয়ে তিনি অবশেষে মা আমেনার উদর হতে মানব সূরতে ধরাধামে আত্মপ্রকাশ করেন।
[১০৬ মাকামের বর্ণনা সুন্নীবার্তা মিলাদুন্নবী সংখ্যায় দেখুন]

★২০৮. হযরত আদম (আঃ) কে বলা হয় প্রথম বশর অর্থাৎ প্রকাশ্য দেহধারী মানুষ।এঁর পূর্বে কোন বশর ছিল না।রাসূল (ﷺ) তো আদম নবী (আঃ) এঁরও লক্ষ কোটি বছর পূর্বে পয়দা হয়েছিলেন।তখন তিঁনি বশরী সূরতে ছিলেন না এবং তাঁর নামও বশর ছিলনা।বশরী সূরত তো দুনিয়ায় এসে প্রকাশ পেয়ে ছিল।এটা অনুধাবন করা ঈমানদারের কাজ (জা’আল হক বশর প্রসংগ)।তাই রাসূল(ﷺ) কে “ইয়া বাশারু “বলে ডাকা হারাম।(১৮ পারা)।হযরত আদম (আঃ) সৃস্টির পূর্বে নবিজী ছিলেন নূরে মোজাররাদ এবং নবী খেতাবে ভূষিত।মৌলুদে বরজিঞ্জি নামক বিখ্যাত আরবী কিতাবের লেখক ইমাম ও মোজতাহেদ আল্লামা জাফর বরজিঞ্জি মাদানী (رحمة الله عليه)লিখেন- “যখন আল্লাহ তায়ালা হাকিকতে মোহাম্মদী প্রকাশ করার ইচ্ছে করলেন- তখন হযরত আদম (عليه السلام) কে পয়দা করলেন এবং তাঁর ললাটে হযরত মোহাম্মদ [ﷺ]-এঁর পবিত্র নূর স্থাপন করলেন।”

★২০৯. আহ্‌সানুল মাওয়ায়েয কিতাবে উল্লেখ আছে, একদিন আল্লাহর কাছে হযরত আদম (عليه السلام) নূরে মোহাম্মদী [ﷺ] দর্শনের জন্য প্রার্থনা করলেন।তখন আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (عليه السلام)-এঁর ডান হাতের শাহাদাত অঙ্গুলীর মাথায় নূরে মোহাম্মদী প্রদর্শন করালেন।মধ্যমা অঙ্গুলীতে হযরত আবু-বকর, অনামিকায় হযরত ওমর,কনিষ্ঠায় হযরত ওসমান ও বৃদ্ধাঙ্গুলীতে হযরত আলী (رضي الله عنهم) এই সাহাবী চতুষ্ঠয়ের দেদীপ্যমান নূর ও প্রদর্শন করালেন। অতঃপর সেই নূর স্থাপন করলেন হযরত আদম (عليه السلام)-এঁর পৃষ্ঠদেশে,যাঁর দেদীপ্যমান ঝলক চমকাতো তাঁর ললাটে।

★আল্লামা ইউসুফ নাবহানীর আনওয়ারে মোহাম্মদী নামক জীবনী গ্রন্থের ১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।
لَمَّا خَلَقَ اللهُ ﺁدَمَ جَعَلَ ذَالِكَ النُّوْرُ فِى ظَهْرِه فَكَانَ يَلْمَعُ فِى جَبِيْنِــه

অর্থঃ “যখন আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আঃ) কে পয়দা করলেন,তখন ঐ নূরে মোহাম্মদী [ﷺ] তাঁর পৃষ্টে স্থাপন করলেন। সে নূর তাঁর ললাটদেশে চমকাতো।”

★২১০.কাজী ইয়াজ (রহ:) এর শিফা কিতাবে বর্নিত হয়েছে:

عن عباس أن النبي صلى الله عليه وسلم كانت روحه نورا (وفي رواية كانت قريش نورا ) بين يدى الله تعالى قبل أن يخلق آدم بألفى عام يسبح ذلك النور وتسبح الملائكة بتسبيحه فلما خلق الله آدم ألقى ذلك النور في صلبه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم (فأهبطني الله إلى الأرض في صلب آدم وجعلني في صلب نوح وقذف بى في صلب إبراهيم ثم لم يزل الله تعالى ينقلني من الأصلاب الكريمة والأرحام الطاهرة حتى أخرجنى
من أبوى لم يلتقيا على سفاح قط،

হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসূল (ﷺ) এঁর রূহ মোবারক আদম (আ:) সৃষ্টি দু’হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তায়ালার সামনে নূর হিসেবে ছিল।ঐ নূর আল্লাহ তায়ালার তাসবীহ পড়তেছিল এবং তার দেখাদেখি ফেরেশতারা আল্লাহ তায়ালার তাসবীহ পড়তেছিল।অত:পর আল্লাহ তায়ালা যখন আদম (আ:) কে সৃষ্টি করলেন ঐ নূর তার মেরুদন্ডে দিয়ে দিলেন।রাসূল (ﷺ) বলেন, অত:পর আল্লাহ তায়ালা আঁমাকে আদমের মেরুদন্ডে করে দুনিয়ায় নামান এবং বংশানুক্রমে আঁমাকে নূহ (আ:) এঁর মেরুদন্ডে দেয়া হয়।এরপরে আঁমাকে ইবরাহীম (আ:) এঁর মেরুদন্ডে নিক্ষেপ করা হয়।এভাবে আল্লাহ তায়ালা আঁমাকে সম্মানিত মেরুদন্ড ও পবিত্র রেহেমের মাধ্যম করে স্থানান্তর করেন এমনকি আঁমার পিতামাতার মাধ্যমে আঁমাকে জগতে আবির্ভাব ঘটান।তারা কখনো অনাচার করেনি।”
[শরহুশ শেফা লি আলী আল কারী,১ম খন্ড,পৃ:২০৬]

✌তাফসিরে দুররে মানসুরে রয়েছে-

اخرج ابن ابى عمر العدنى عن ابن عباس ان قريشا كانت نورا بين يدى الله تعالى قبل ان يخلق الخلق بالفى عام يسبح ذلك النور وتسبح الملائكة بتسبيحه- فلما خلق الله ادم عليه السلام القى ذلك النور فى صلبه- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: فاهبطنى الله الى الارض فى صلب ادم عليه السلام وجعلنى فى صلب نوح وقذف بى فى صلب ابراهيم ثم لم يزل الله ينقلنى من الاصلاب الكريمة الى الارحام الطاهرة حتى اخرجنى من بين ابوى لم يلتقيا على سفاح قط- (الدر المنثور ص ٤/۳۲৯ لقد جاء كم رسول من انفسكم پاره ۱۱ توبه ۱۲٨ اية)

ভাবার্থ: ইবনে আবু উমর আদনী ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন নিশ্চয় তিঁনি কোরেশি বা কুরেশ বংশীয়।তিঁনি মাখলুক (আদম আলাইহি সালাম) সৃষ্টির দুই হাজার বৎসর পূর্বে আল্লাহর দরবারে নূর ছিলেন।সেই নূর তাসবিহ পাঠ করতো এবং তাঁর তাসবির সাথে ফেরেশতাগণও তাসবিহ পাঠ করতো।অতঃপর যখন আল্লাহ তা’য়ালা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করলেন,তখন আদম আলাইহিস সালাম এঁর পৃষ্টদেশে সেই নূর মোবারক স্থাপন করলেন।রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন-অতঃপর আল্লাহ তা’য়ালা আঁমাকে হযরত আদম আলাইহিস সালামের পৃষ্টদেশে থাকা অবস্থায় জমিনে পাঠালেন।অতঃপর হযরত নূহ আলাইহিস সালাম এঁর পৃষ্টদেশে আঁমাকে স্থাপন করলেন।বংশ পরম্পরায় আঁমাকে হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের পৃষ্টে থাকাকালীন নমরূদের তৈরি অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।এভাবে স্থানান্তরিত হতে হতে পবিত্র পৃষ্টদেশে থেকে পবিত্র রেহেমে স্থানান্তরিত হতে থাকি এমনকি আঁমার পিতা-মাতা পর্যন্ত।আঁমার পূর্ব পুরুষের মধ্যে কখনো জিনা সংঘটিত হয়নি।’

🌹হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহুমা বলেন,

  • ﻋﻦ ﺇﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ : ﻭﺗﻘﻠﺒﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺎﺟﺪﻳﻦ ، ﻗﺎﻝ : ﻣﻦ ﺻﻠﺐ ﻧﺒﻲ ﺇﻟﻰ ﻧﺒﻲ ﺣﺘﻰ ﺻﺮﺕ ﻧﺒﻴﺎً ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺰﺍﺭ ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﺛﻘﺎﺕ
    অর্থাৎ এক নবী থেকে আরেক নবীর পৃষ্টদেশে (অবস্থান করে) অবশেষে আঁপনি নবী হয়েছেন।
    [মাজমাউয যাওয়াইদ/কিতাবুত তাফসীর ৭ম খন্ড/ ৮৬ পৃস্টা] হাদিসটি সহীহ। 💝💞

★২১১.তাফসীরে কবীরে সূরা বাকারার ২৫৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আদম (আ:) এঁর উপর রাসূল (ﷺ) এঁর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে:

أن الملائكة أمروا بالسجود لآدم لأجل أن نور محمد عليه السلام في جبهة آدم
নিশ্চয় ফেরেশতাদেরকে আদম (আ:) কে সেজদা করতে আদেশ করা হয়েছিল। কারণ, আদম (আ:) এঁর পেশানীতে মুহাম্মাদ (ﷺ) এঁর নূর ছিল।
দলিল
*(ক.) তাফসীরে কবীর,১ম খন্ড,পৃঃ ৩১৮
*(খ.) তাফসীরে লুবাব,৩য় খন্ড,পৃ: ২৩৩
*(গ.) তাফসীরে নিশাপুরী,২য় খন্ড,পৃ১০৭

✌হযরত আব্দুল্লাহ (রা:) এঁর পেশানীতে নবী (ﷺ) এঁর নূর মোবারক ছিল।

وأخبرنا وهب بن جرير بن حازم أخبرنا أبي قال سمعت أبا يزيد المدني قال نبئت أن عبد الله أبا رسول الله صلى الله عليه و سلم أتى على امرأة من خثعم فرأت بين عينيه نورا ساطعا إلى السماء فقالت هل لك في قال نعم حتى أرمي الجمرة فأنطلق فرمى الجمرة ثم أتى امرأته آمنة بنت وهب ثم ذكر يعني الخثعمية فأتاها فقالت هل أتيت امرأة بعدي قال نعم أمرأتي آمنة بنت وهب قالت فلا حاجة لي فيك انك مررت وبين عينيك نور ساطع إلى السماء فلما وقعت عليها ذهب فأخبرها أنها قد حملت خير أهل الأرض

রাসূল (ﷺ)এঁর পিতা আব্দুল্লাহ খাসয়াম গোত্রীয় এক মহিলার নিকট গেলে সে তাঁর দু’চোখের মাঝে আকাশ পর্যন্ত একটি উজ্জল নূর দেখতে পেল।সে বলল, তোমার কি আমাতে প্রয়োজন আছে ? তিনি বললেন,হ্যাঁ।তবে আমি জামরায় পাথর মারব।অত:পর তিনি জামরায় পাথর মেরে স্বীয় স্ত্রী আমেনা বিনতে ওহাব এর নিকট গেলেন।পরে যখন খাসয়ামী মহিলার কথা মনে পড়লে তিনি তার নিকট আসলেন।সে জিজ্ঞেস করল,তুমি কি আমার সাথে দেখা করার পরে কোন মহিলার সাথে মিলিত হয়েছিলে? তিনি বললেন, হ্যাঁ।আমার স্ত্রী আমেনা বিনতে ওহাবের সাথে।সে বলল,তাহলে তোমাতে আমার কোন প্রয়োজন নাই।তুমি যখন যাচ্ছিলে আমি তোমার দু’চোখে মধ্যখানে আকাশ পর্যন্ত প্রলম্বিত একটি উজ্জল নূর দেখতে পেয়েছিলাম। আর যখন তুমি তার সাথে মিলিত হয়েছো,সে নূরটি চলে গিয়েছে।আর সে বলল, উক্ত আমেনা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে গর্ভধারণ করেছেন।এ নূরটি ছিল মহানবী (ﷺ) এঁর রূহানী নূর।দুই. মহানবী (ﷺ) এঁর দেহ মুবারক।
[তবাকাতে ইবনে সাদ,১ম খন্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা]

✌হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) এঁর পৃষ্ঠদেশ থেকে রাসূলে আকরাম (ﷺ) এঁর জীবন কণিকা হযরত আমেনা (রাঃ) এঁর গর্ভে উপস্থিত হয়েছিলো বিশুদ্ধমতানুসারে হজ্জ্বের দিনসমূহের আইয়ামে তাশরীকের মধ্যবর্তী দিবসের জুমার রাত্রিতে।এজন্যই ইমাম আহমদ বলেন, জুমার রাত্রি লাইলাতুল কদরের রাত্রির চেয়েও উত্তম।কেননা ওই রাতে মাতৃউদরে শুভাগমন করেছিলেন মহাবিশ্বের মহামমতার প্রতিভু মহানবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (ﷺ) স্বয়ং।সুতরাং অন্য কোনো রাতই এই রাতের সমতুল্য হতে পারে না।কাজেই মিলাদ শরীফের রাতকে শবে কদরের চেয়েও উত্তম মনে করতে হবে।হাদীস শরীফে এসেছে,মিলাদ শরীফের রাতে আলমে মালাকুতে এই মর্মে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিলো যে,সমগ্র বিশ্বজগতকে পবিত্র নূর দ্বারা আলোকিত করে দাও।পৃথিবী ও আকাশের সকল ফেরেশতা তখন আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠেছিলো। জান্নাতের রক্ষী ফেরেশতাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো,ফেরদৌসে আলোকে উন্মুক্ত করে দাও এবং সমস্ত জাহানকে সুরভি দ্বারা মোহিত করে দাও। আকাশ-পৃথিবীর সকল স্তরে ও স্থানে এই সুসংবাদ জানিয়ে দাও যে,নূরে মোহাম্মদী আজ রাতে মহাপুণ্যময়ী আমেনার উদরে আশ্রয় নিয়েছে।সমস্ত খায়ের ও বরকত,সম্মান,সৌভাগ্য, নূর ও রহস্যের উৎস এবং সকল জগত সৃষ্টির মূল,বণী আদমের মূল সমূহের মূল এ ধরাধামে আবির্ভূত হওয়ার সময় এখন সন্নিকটবর্তী।সুতরাং হে সৃষ্টিকুল! সম্মানিত ও আলোকিত হও।আনন্দ প্রকাশ করো।
[মাদারেজুন্নবুওয়াত,৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা: ১২৯, সেরহিন্দ প্রকাশন]

★২১২. হাদিসে পাকে আরও ইরশাদ হয়েছে

ﺭﺳﻮﻝ ﺃﻳﻦ ﻛﻨﺖ ﻭﺁﺩﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻗﺎﻝ : ﻛﻨﺖ ﻓﻲ ﺻﻠﺒﻪ ﻭﺃﻫﺒﻂ ﺇﻟﻰ ﺍﻷﺭﺽ ﻭﺃﻧﺎ ﻓﻲ ﺻﻠﺒﻪ ﻭﺭﻛﺒﺖ ﺍﻟﺴﻔﻴﻨﺔ ﻓﻲ ﺻﻠﺐ ﺃﺑﻲ ﻧﻮﺡ ﻭﻗﺬﻓﺖ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻓﻲ ﺻﻠﺐ ﺃﺑﻲ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন আমি রাসুল (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ) হযরত আদম যখন জান্নাতে ছিলেন তখন আঁপনি কোথায় ছিলেন? রাসূল (ﷺ) মুচকি হাঁসি দিলেন এতে উঁনার দাঁত মোবারক দেখা গেল।এরপর তিঁনি (ﷺ) বললেন আঁমি তখন তাঁর পৃষ্টদেশে ছিলাম।তিঁনি যখন দুনিয়ায় অবতরণ করলেন তখনো আঁমি তাঁর পৃষ্টদেশে ছিলাম।আর নুহ (আঃ) যখন কিস্তিতে আরোহন করছিলেন তখন আঁমি তাঁর পৃষ্টদেশে ছিলাম।আর যখন ইব্রাহীম (আঃ) অগ্নিকূপে ছিল তখন আঁমি তাঁর পৃষ্টদেশে ছিলাম।
[ইবনে কাসির,আলবেদায়া ওয়ান নেহায়া,২/২৫৮]

✊বেদায়া ও নেহায়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) একদিন নবী করীম [ﷺ]-এঁর খেদমতে আরয করলেন-“ইয়া রাসুলাল্লাহ! [ﷺ] হযরত আদম (عليه السلام) যখন জান্নাতে ছিলেন, তখন আঁপনি কোথায় ছিলেন”? হুযুর পুরনূর [ﷺ] মুচকি হাসি দিয়ে বললেন- “আদমের ঔরসে।তারপর হযরত নূহ (عليه السلام) তাঁর ঔরসে আঁমাকে ধারণ করে নৌকায় আরোহণ করেছিলেন। তারপর হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام)-এঁর পৃষ্ঠদেশে।তারপর পবিত্র (ঈমানদার) পিতা মাতাগণের মাধ্যমে আঁমি পৃথিবীতে আগমন করি। আঁমার পূর্ব পুরুষগণের মধ্যে কেহই চরিত্রহীন ছিলেন না”
[বেদায়া-নেহায়া,২য় খন্ড,২৫ পৃষ্ঠা]

★২১৩. হযরত আদম (আঃ) এঁর ঔরস হতে হযরত মাতা হাওয়া (আঃ) এঁর পবিত্র গর্ভে ২০ বার জমজ বাচ্চা জন্ম হয় কিন্তু শীষ (আঃ) একক ভাবে জন্মগ্রহণ তথা শুভ-আগমন করেন।কারন তিঁনি ছিলেন নুরে মুহাম্মদীর ধারক ও বাহক।এই নুরে মুহাম্মদী হযরত শীষ(আঃ) এঁর কপালে উজ্জল ও দিপ্তীমান ছিল।আল্লাহ পাক হযরত আদম (আঃ) কে নুরে মুহাম্মদীর কথা জানিয়ে দিলেন।হযরত আদম(আঃ) এঁর ওফাতের পর হযরত শীষ(আঃ) সমস্ত আদম সন্তানের অবিভাবক হলেন। অত:পর আল্লাহ ওঁনাকে ওহীর মাধ্যমে নির্দেশ দিলেন তিঁনি যেন তাঁর সন্তান “আনুশ (আঃ) “কে অবিভাবক ঘোষনা করেন।তিঁনি “আনুশ (আঃ)” কে খলিফা নিযুক্ত করে হযরত আদম (আঃ) এঁর উপদেশ অনুসারে তাঁকে বললেন,”এ নুর মুবারককে নিয়ে কখনও কোন অপবিত্র নারীর সংস্পর্শে যাবে না; বরং সব সময় যেকোন অবস্থাতে এ “নুর” মুবারক এঁর পবিত্রতা রক্ষা করে চলবে। “পরবর্তীতে প্রতিটি যুগে এ নুরের বাহকগন বংশানুক্রমে এ “ওসীয়ত” রক্ষা করেছেন।
[তথ্যসূত্র:মাওয়াহিবে লাদুনিয়াহ,সিরাতে মুহাম্মদীয়া]

★২১৪. হাদিস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ” لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ خَبَرَ آدَمُ بَنِيهِ فَجَعَلَ يَرَى فَضَائِلَ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ قَالَ : فَرَأَى نُورًا سَاطِعًا فِي أَسْفَلِهِمْ ، فَقَالَ : يَا رَبِّ مَنْ هَذَا ؟ قَالَ : هَذَا ابْنُكَ أَحْمَدُ هُوَ الأَوَّلُ ، وَهُوَ الآخِرُ ، وَهُوَ أَوَّلُ شَافِعٍ

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিঁনি ইরশাদ করেন,যখন মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করলেন, তখন উঁনার সন্তানদের দেখানো হলো।তখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উঁনার সন্তানদের পারষ্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব দেখতে থাকেন। অবশেষে তিঁনি এক চমকপ্রদ নূর মুবারক দেখতে পেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, হে আঁমার রব! এই নূর মুবারক কার? মহান আল্লাহ ইরশাদ মুবারক করলেন,তিঁনি আঁপনার আওলাদ হবেন। অর্থাৎ শেষে আগমন করবেন। উঁনার নাম আসমানে আহমদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।তিঁনি সৃষ্টিতে প্রথম, তিঁনি প্রেরনে শেষ,তিঁনি সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী।
দলিল
*(ক.) দালায়েলুন নবুওয়াত ৫/৪৮৩
*(খ.) খাসায়েসুল কোবরা ১/৭০
*(গ.) সুবহুল হুদা ওয়ার রাশাদ ১/৭১
*(ঘ.) শরহে মাওয়াহেব ১/৪৩

★২১৫. ইমাম সাইফুদ্দীন আবূ জা’ফর বিন উমর আল-হুমাইরী আল-হানাফী নিজ ‘আদ-দুররূল তানযীম ফী মওলিদিন্ নাবিই-ইল করীম’ শীর্ষক কিতাবে বলেন: আল্লাহ তাআলা যখন হযরত বাবা আদম (আ:)-কে সৃষ্টি করেন,তখন তিঁনি তাঁর মনে এই ভাবের উদয় করেন যার দরুণ তিঁনি মহান প্রভুকে প্রশ্ন করেন, ”ইয়া আল্লাহ! আঁপনি আঁমার কুনিয়া (বংশ-পরম্পরার নাম) কেন’আবূ মোহাম্মদ’(মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের পিতা) করেছেন?” আল্লাহ উত্তরে বলেন, “ওহে আদম! তোমার মাথা তোলো।” তিঁনি শির উঠিয়ে আরশে মহানবী (ﷺ)-এঁর নূর (জ্যোতি) দেখতে পান। হযরত আদম (আ:) জিজ্ঞেস করেন, “ইয়া আল্লাহ! এই নূর কোন্ মহান সত্তার?”

**আল্লাহতা’লা জবাবে বলেন, “তোমার বংশেই এই মহান নবী (ﷺ)-এঁর জন্ম তথা শুভ আগমন। আসমানে তাঁর নাম আহমদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং জমিনে মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।আঁমি তাঁকে সৃষ্টি না করলে তোমাকে বা আসমান ও জমিনকে সৃষ্টি করতাম না।”

★২১৬. হযরত ইবনে আলী ওমর আল-আদানী স্বীয় মুসনাদে হযরত ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করলেন, তখন তাঁকে তাঁর সন্তানদের পরস্পরের মধ্যে মর্যাদার তারতম্যটুকুও দেখাতে লাগলেন।তিঁনি (আদম আলাইহিস সালাম ) তাদের মধ্যে শেষপ্রান্তে একটা উজ্জ্বল নূর দেখাতে পেলেন।তখন তিনি বললেন,‘‘ হে রব! ইনি কে? ( যাকে সবার মধ্যে প্রজ্জ্বলিত নূর হিসাবে দেখতে পাচ্ছি?) উত্তরে মহান রাববুল আলামীন ইরশাদ করলেন,‘‘ ইনি হলেন তোমার পুত্র-সন্তান হযরত আহমদ মুজ্তবা (ﷺ) তিনি প্রথম,তিনি শেষ,তিনি হবেন আঁমার দরবারে প্রথম সুপারিশকারী (ক্বিয়ামতের দিনে)।
দলিল*
*(ক.) আল -খাসাইসুল কুবরা ১ম খন্ড,পৃষ্ঠা ৩৯
*(খ.) কানজুল উম্মাল ৩২০৫৬ নং হাদীস খ ১১,পৃ:১৯৭
*(গ.) বাইহাকী ৫ম খন্ড পৃ: ৪৮৩

★২১৭. হাদীয়ে বাংগাল ও আসাম নামে পরিচিত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী সাহেবের সাহেবজাদা মাওলানা আবদুল আউয়াল জৌনপুরী সাহেব আরবিতে একখানা কিতাব রচনা করেছেন।উক্ত কিতাবের নাম: عمدة النقول في كيفية ولادة الرسول

অর্থঃ- ”নবী করীম [ﷺ]-এঁর বেলাদত শরীফের ধরণ সম্পর্কে উত্তম রেওয়ায়াত ও দলীল।”
✌কিতাবের এবারত নিম্নরূপঃ-

وفى الاتحاف بحب الاشراف للعلامة عبد الله الشبراوى الشافعى رحمة الله تعالى قال فى تعليقه على قوله وإذ كنا نحكم بطهارة فضلاته صلى الله عليه وسلم الغريبة قال العلامة التلمسانى كل مولد غير الأنبياء يولد من الفرج وكل الانبياء غير نبينا مولودون من فوق الفرج وتحت السرة وأما نبينا صلى الله عليه وسلم فمولود من الخاصرة اليسرى تحت الضلوع ثم التام لوقته خصوصية له ولم يصح نقل ن نبيا من-الانبياء ولد من لفرج ولهذا افتي المالكية بقتل من قال ان النبي صلي الله عليه وسلم ولد من مجري ايول -انتها –
অর্থঃ- ”আল্লামা আবদুল্লাহ শাবরাভী শাফেয়ী (رحمة الله عليه) স্বীয় ‘আল আতহাফ বিহুব্বিল আশরাফ’-গ্রন্থে নবী করীম[ﷺ]-এঁর পবিত্র দেহ থেকে বহির্গত যাবতীয় বর্জ বস্তুর পবিত্রতা শীর্ষক আলোচনা প্রসঙ্গে আল্লামা তিলিমসানী কর্তৃক একটি ফতোয়ার উল্লেখ করে বলেন-উক্ত আল্লামা তিলিমসানী ফতোয়া দিয়েছেন যে, ”আম্বিয়ায়ে কেরাম (عليهم السلام) ব্যতীত প্রত্যেক মানব সন্তান মায়ের প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে ভূমিষ্ট হয়ে থাকে।অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরামগণ (عليهم السلام) ভূমিষ্ট তথা বেলাদত শরীফ হয়েছেন মায়ের নাভি ও প্রস্রাবের রাস্তার মধ্যবর্তীস্থান দিয়ে এবং আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা [ﷺ] ভূমিষ্ট তথা পৃথিবীতে তাশরীফ হয়েছেন বিবি আমেনার (رضي الله عنها) বাম উরুদেশ দিয়ে – যা বাম পাঁজরের হাঁড়ের নিচে অবস্থিত।তারপর উক্ত স্থান সাথে সাথেই জোড়া লেগে যায়।এই বিশেষ ব্যবস্থাধীনে ভূমিষ্ট তথা শুভ তাশরীফ হওয়া নবী করীম [ﷺ]-এঁর একক বৈশিষ্ট্য।কোন নবী(عليه السلام) মায়ের প্রস্রাবের স্থান দিয়ে ভূমিষ্ট তথা বেলাদত হওয়ার বর্ণনাটি সঠিক নয়।এ কারণেই মালেকী মাযহাবের মুফতী ও উলামাগণ ফতোয়া দিয়েছেন যে,”যে ব্যক্তি বলবে,নবী করীম [ﷺ] মায়ের প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে ভূমিষ্ট তথা পৃথিবীতে তাশরীফ হয়েছেন,তাকে কতল করা ওয়াজিব।”
[উমদাতুন নুকুল ফী কাইফিয়াতে বিলাদাতির রাসূল-মাওলানা আবদুল আউয়াল জৌনপুরী এবং মূল গ্রন্থ আল আতহাফ বি-হুব্বিল আশরাফ-আল্লামা শাবরাভী]

*উক্ত ফতোয়া উল্লেখ করে মাওলানা আবদুল আউয়াল জৌনপুরী সাহেব নিজের মন্তব্য ও ফতোয়া এভাবে পেশ করেছেনঃ-

اقول وبالله التوفيق- انه لما كان صلي الله عليه وسلم نورا كما قال الله تعالى فى القرآن المجيد قَدۡ جَآءَكُمۡ مِّنَ اللّٰهِ نُوۡرٌ وَّكِتٰبٌ مُّبِيۡنٌۙ٠ وكما روى عن ذكوان أنه لم يكن له صلى الله عليه وسلم ظل لا فى قمر رواه الحاكم الترمذى وكما قال ابن سبع كان صلى الله عليه وسلم نورا فكان إذا مشى فى الشمس أو القمر لا يظهر له ظل قال غيره ويشهد له قوله عليه السلآم فى دعائه واجعلني نورا كذا فى المواهب والذى يدل على أنه كان نورا فى يكن أمه أيضا الاخ … فأى استبعاد خروجه صلى الله عليه وسلم من غير مخرج معتاد للناس وإذا أراد الله لخلق يخلق ويبدع كيف ما يشاء إبداعا حقيقا من غير مثال سبق الأخ

অর্থঃ- আল্লাহর নিকট তৌফিক চেয়ে আমি (আব্দুল আউয়াল জৌনপুরী) বলছি-নবী করীম [ﷺ] আপাদমস্তক দেহধারী নূর।যেমন,কোরআন মাজীদে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ”তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে একজন সম্মানিত নূর ও একটি স্পষ্ট কিতাব এসেছে।”

পবিত্র হাদিসে ও রাসূল [ﷺ]কে নূর বলে প্রমাণ করা হয়েছে।যেমন-হযরত যাকওয়ান (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে এসেছে যে-চন্দ্র-সূর্যের আলোতে নবী করীম [ﷺ]-এঁর ছায়া পড়তো না।কেননা,নূরের ছায়া হয় না।উক্ত হাদীস হাকিম তিরমিজী নিজ কিতাবে সংকলন করেছেন।

হযরত ইবনে ছায়াব বর্ণনা করেন-”নবী করীম[ﷺ] ছিলেন আপাদমস্তক নূর।কেননা,যখন তিঁনি দিবাকরের আলোতে কিংবা চন্দ্রিমা নিশিতে চলাফেরা করতেন,তখন তাঁর ছায়া দেখা যেত না।”নবী করীম[ﷺ] যে মায়ের গর্ভে ও নূর হিসেবেই বিরাজমান ছিলেন,এ মর্মে আবু যাকারিয়া ইবনে ইয়াহইয়া কর্তৃক বর্ণিত হাদীস ও এটার সত্যতা প্রমাণ করে।

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(৪১ম পর্ব)

🌀অনেকে বলেন কোরআনে নূর বলা হয়েছে কিন্তু নূরের তৈরী বলা হয়নি, আবার কেউ বলেন শুধু রুহ মোবারক নূর কিন্তু দেহমোবারক নয়,আবার কেউ বলেন সাদা মাটির তৈরী (নাউযুবিল্লাহ!) আজকে ইন-শা-আল্লাহ সে বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো-[৩৩ম অংশ]

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

💟এপর্যায়ে আলোচনা করবো নূরে মোহাম্মদী (ﷺ) স্থানান্তর ও মায়ের গর্ভেও নূর ছিলেন এবং পৃথিবীতে আগমনের ধরন 2nd part:💝💝💝💝

★২১৮. রাসূলুল্লাহ(আলাইহিস সালাম) এঁর আগমনের সময় নূর বের হওয়ার হাদীস সহীহ ও এর দ্বারা তাঁর নূরের তৈরি।কয়েক জন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-“আঁমি আঁমার (জাতির)পিতা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এঁর দুয়া,ও ঈসা (আলাইহিস সালাম)এঁর সুসংবাদের ফসল।আঁমার মা আঁমাকে প্রসব করার সময় দেখলেন যে, কেমন যেন তাঁর পেট থেকে একটি নূর বের হল যা দ্বারা সিরিয়া আলোকিত হয়ে গেল(অন্য রেওয়াতে আছে, সিরিয়ার প্রসাদ গুলো আলোকিত হয়ে গেল)”।
দলিল
*১. দালায়েলুন নুবুওয়্যাহ, বাইহাক্বী খন্ড-১,পৃষ্ঠা -৮৩ হাদিসঃ৩৫
*২.জামেউল মাসানীদ ওয়াস সুনান,ইবনু কাসীর ১৫/৩০১ তরজমা-২৩৮৩৯(আমেনা বিনতে ওয়াহাব)
*৩. সিরাতে ইবনু হিশাম ১/১৬৬
*৪. তাফসিরে তাবারী ১/৫৬৬ *৫. মুসতাদরাকে হাকেম ২/৬০০, ২/৫১৯ হাঃ৪২৮৮
*৬. মুসনাদে আহমাদ ৪/১২৭-১২৮ হাদিসঃ১৬৭০০
*৭. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাইসামী খন্ড -৮,পৃঃ২২২, ,২২৩ হাদীস নং -১৩৮৪২,১৩৮৪৭
*৮.আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,ইবনু কাসির ৩/৩৮৩-৩৮৪
*৯. মুসান্নাফ,ছনআনী-কিতাবুল মাগাযি ৫/৩১৮
*১০. দুররে মানসূর,সুয়ূত্বী ১/৩৩৪ ,সুরা বাকারা, আয়াত-১২৬
*১১. সহীহ ইবনু হিব্বান ১৪/৩১২-৩১৩ হাঃ৬৪০৪
*১২. মুসনাদে আবু দাউদ ত্বয়ালিসী পৃঃ১৫৫ হাঃ১২২৪
*১৩. তাখরীজে আহাদিস ওয়াল আসার,যাইলায়ী ১/৮৩
*১৪. তারিখে দিমাশক,ইবনু আসাকীর ৩/৮২
*১৫. তারিখে ত্ববারী ২/১৫৬
*১৬. মু’জামুল কাবীর, তাবারানী ৮/১৭৫ হা;৭৭২৯

💟আরো অনেক কিতাবেই এ হাদিস আছে।হাদিসের মানঃসহিহ।একশ’র অধিক কিতাবে বিভিন্ন সনদে এ হাদিস বর্ণিত। অনেক সনদ নিয়ে মুহাদ্দিসগন আপত্তি করেছেন।আবার অনেক গুলো হাসান ও সহীহ বলেছেন।সব মিলিয়ে হাদিসটির খুলাসাতুল হুকুম হচ্ছে-সহীহ। ✌তাহক্বীক✌

**ইমাম যাহাবী(রহিমাহুল্লাহ) ইরবাজ ইবনু সারিয়াহ (রাদিঃ)এর হাদিসকে হাসান বলেছেন।(সিয়ারু আলামিন নুবালা ২৬/৪৭)
আরবী ইবারাত-

وروينا بإسناد حسن – إن شاء الله – عن العرباض بن سارية ، أنه سمع النبي صلى الله عليه وسلم يقول : ” إني عبد الله وخاتم النبيين ، وإن آدم لمنجدل في طينته ، وسأخبركم عن ذلك : دعوة أبي إبراهيم ، وبشارة عيسى لي ، ورؤيا أمي التي رأت ” . وإن أم رسول الله صلى الله عليه وسلم رأت حين وضعته نورا أضاءت منه قصور الشام .
ورواه الليث ، وابن وهب ، عن معاوية بن صالح ، سمع سعيد بن سويد يحدث عن عبد الأعلى بن هلال السلمي ، عن العرباض ، فذكره .
ورواه أبو بكر بن أبي مريم الغساني ، عن سعيد بن سويد ، عن العرباض نفسه

💟খালেদ ইবনু মা’দান একদল সাহাবীদের থেকে উল্লেখিত যে হাদিসটি বর্ণনা করেছে সেটিকে “ইমাম হাকেম” বুখারি মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ বলেছেন।তিনি বলেন-
هذا حديث صحيح على شرط مسلم ولم يخرجاه.
[মুসতাদরাকে হাকেম ২/৬০০ হাঃ৪২৮৮,ইমাম যাহাবীও তার এ কথাকে “তালখীস”-এ সমর্থন করেছেন।]

💟ইমাম হাকেম বর্ণিত সনদটি হচ্ছে-

حدثنا : أبو الحسن أحمد بن محمد العنزي ، ثنا : عمان بن سعيد الدارمي ، ثنا : حيوة بن شريح الحضرمي ، ثنا : بقية بن الوليد ، حدثني : بحير ين سعيد عن خالد بن معدان ، عن عتبة بن عبد السلمي أن رجلا سأل رسول الله…………

**ইমাম ইবনু হিব্বানের নিকট ও এ সনদ সহীহ।
(সহীহ ইবনু হিব্বান ১৪/৩১২-৩১৩ হাঃ৬৪০৪)

**আলবানী ও একে সহীহ বলেছেন।
[সিলসিলাহ আহাদীসাস সহীহাহ হাঃ১৫৪৫]

**ইমাম হাইসামী(রহিমাহুল্লাহ) সাহাবী আবু উমামা(রাদি:) বর্ণিত হাদিস যা মুজামে তাবারানী ও মুসনাদে আহমাদে উল্লেখ আছে সেটির সনদ কে হাসান বলেছেন।
তিনি বলেন-
واسناده حسن ، وله شواهد تقويه‏
(মাজমাউয যাওয়ায়েদ,হাইসামী খন্ড -৮,পৃঃ২২২, হাদীস নং -১৩৮৪২)
তিনি এ আরেকটি সনদ যা ইমাম বাযযার ও আহমাদ তাদের মুসনাদে আর তাবারানী তার মুজামে উল্লেখ করেছেন সেটিকেও সহীহ বলেছেন। তবে সে সনদের রাবী”সাঈদ ইবনু সুওয়াইদ” কে সরাসরি সিকাহ না বলে ইবনু হিব্বানের তাওসীক নকল করেছেন।

وأحد أسانيد أحمد رجاله رجال الصحيح غير سعيد بن سويد وقد وثقه ابن حبان.

(মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাইসামী খন্ড -৮,পৃঃ২২৩, হাদীস নং -১৩৮৪৭)

“সাঈদ ইবনু সুওয়াইদ” এর সনদে এ হাদিসটি ইমাম ইবনু হিব্বান নিজ সনদে এভাবে বর্ণনা করেন-
أخبرنا : علي بن الحسين بن سليمان بالفسطاط ، حدثنا : الحارث بن مسكين ، حدثنا : ابن وهب ، قال : وأخبرني : معاوية بن صالح ، عن سعيد بن سويد ، عن عبد الأعلى بن هلال السلمي ، عن العرباض بن سارية الفزاري قال : سمعت رسول الله (ص) يقول

এছাড়াও হাদীসটির আরবী মতন ও সনদ গুলো বিভিন্ন রকম,নিচে কয়েকটি ইবারাত সনদ সহ দেওয়া হলঃ
১।
حَدَّثَنَا أَبُو عَبْدِ اللَّهِ الْحَافِظُ إِمْلاءً وَقِرَاءَةً ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبُو الْعَبَّاسِ مُحَمَّدُ بْنُ يَعْقُوبَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدِ الْجَبَّارِ ، قَالَ : حَدَّثَنَا يُونُسُ بْنُ بُكَيْرٍ ، عَنِ ابْنِ إِسْحَاقَ ، قَالَ : حَدَّثَنِي ثَوْرُ بْنُ يَزِيدَ ، عَنْ خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ ، عَنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، أَنَّهُمْ قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، أَخْبِرْنَا عَنْ نَفْسِكَ ، فَقَالَ : ” دَعْوَةُ أَبِي إِبْرَاهِيمَ ، وَبُشْرَى عِيسَى ، وَرَأَتْ أُمِّي حِينَ حَمَلَتْ كَأَنَّهُ خَرَجَ مِنْهَا نُورٌ أَضَاءَتْ لَهُ بُصْرَى مِنْ أَرْضِ الشَّامِ ”
২।
عن خالد بن معدان ، عن بعض أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم أنهم قالوا : يا رسول الله ، أخبرنا عن نفسك قال : ” دعوة أبي إبراهيم ، وبشرى عيسى ، ورأت أمي حين حملت بي كأن نورا خرج منها أضاءت له قصور بصرى من أرض الشام ” .
৩।

عن العرباض بن سارية ، أنه سمع النبي صلى الله عليه وسلم يقول : ” إني عبد الله وخاتم النبيين ، وإن آدم لمنجدل في طينته ، وسأخبركم عن ذلك : دعوة أبي إبراهيم ، وبشارة عيسى لي ، ورؤيا أمي التي رأت ” . وإن أم رسول الله صلى الله عليه وسلم رأت حين وضعته نورا أضاءت منه قصور الشام .
ورواه الليث ، وابن وهب ، عن معاوية بن صالح ، سمع سعيد بن سويد يحدث عن عبد الأعلى بن هلال السلمي ، عن العرباض ، فذكره .
ورواه أبو بكر بن أبي مريم الغساني ، عن سعيد بن سويد ، عن العرباض نفسه .

৪।
حدثنا : أبو داود الطيالسي وقال فرج بن فضالة : حدثنا لقمان بن عامر ، قال : سمعت أبا أمامة ، قال قلت : يا رسول الله ، ما كان بدء أمرك ؟ قال : ” دعوة إبراهيم ، وبشرى عيسى ، ورأت أمي أنه خرج منها نور أضاءت منه قصور الشام ” . رواه أحمد في ” مسنده ” عن أبي النضر ، عن فرج .

৫। حدثنا أحمد بن القاسم بن مساور الجوهري ، ثنا عاصم بن علي ، ح .
وحدثنا محمد بن الفضل السقطي ، ثنا سعيد بن سليمان ، قالا : ثنا فرج بن فضالة ، عن لقمان بن عامر ، عن أبي أمامة قال : قيل : يا رسول الله ، ما كان بدو أمرك ؟ فقال : ” دعوة أبي إبراهيم ، وبشرى عيسى ابن مريم ، ورأت أمي أنه خرج منها نور أضاءت له قصور الشام ” .

সব গুলোর সনদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার সুযোগ এখানে নেই।কিছু সনদ উল্লেখ করা হল যারা রিজাল শাস্ত্রাজ্ঞ তারা এর বিশ্লেষন করে নিতে পারেন।আমি শুধু বলব এ সকল সনদের রাবীদের ব্যাপারে মুহাদ্দিসীন গন আপত্তি তুলেছেন (কয়েকটা বাদে)সব মিলিয়ে উসূলে হাদিসের উসুল মুতাবেক এই মতনের হাদিস গুলো সহীহ।

✌হাদিস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে।মিশকাত শরীফ ৫১৩ পৃষ্ঠায় আছে-

عن العرباض بن ساريه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال انى عند الله مكتوب خاتم النبيين وان ادم لمنجدل فى طينته وساخبركم باول امرى دعوة ابراهيم وبشارة عيسى ورؤيا امى التى رأت حين وضعتنى وقد خرج لها نور اضاءلها منه قصور الشام- رواه فى شرح السنة ورواه احمد عن ابى امامة من قوله ساخبركم الى اخره- (دلائل النبوة ومعرفة احوال صاحب الشريفة للبيهقى ص ۲/۱۳٠ (مشكوة شريف ص ۵۱۳(
হযরত ইরবাদ্ধ ইবনে সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত।তিনি রাসূল (ﷺ)থেকে বর্ণনা করেছেন: “নিশ্চয় আঁমি আল্লাহ তায়ালার নিকট নবীগনের (আঃ) পরিসমাপ্তিকারী হিসেবে লিপিবদ্ধ এবং তখন হযরত আদম(আঃ) মাটির সাথে মিশ্রীত ছিলেন।আঁমি শ্রীঘ্রই তোমাদেরকে আঁমার প্রাথমিক অবস্থা সম্পর্কে সংবাদ দেবো।আর তা হচ্ছে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এঁর দোয়া এবং হযরত ঈসা(আঃ) এঁর সুসংবাদ এবং আঁমার মহিয়সী আম্মাজানের অবলোকন যা তিঁনি আঁমাকে প্রসবকালীন দেখেছেন এবং এমন একটি নূর বের হল যা দ্বারা সিরিয়ার বা শ্যাম প্রাসাদ সমূহ আলোকিত হয়ে গেল।
*দলিল
*১.মিশকাত শরীফ ৫১৩ পৃষ্ঠা,হাদীস নং ৫৭৫৯
*২.ইবনে হিশাম: আস-সিরাতুন নববীয়্যাহ(বৈরুত: দারু ইয়াহইয়ায়িত তুরাসিল’আরবী,৩য় সং,১৪২১ হিঃ,১ম খণ্ড, ১৯৪-১৯৫ পৃঃ
*৩.ঈমাম আহমদ ঈবনে হাম্বল(রহঃ): আল মুসনাদ ৫ম খণ্ড, ২৬২ পৃঃ
*৪.মোল্লা আলী ক্বারী: মিরকাতুল মাফাতীহ,১০ম খণ্ড, ২৯ পৃঃ
*৫. ডঃ আলী মুহাম্মদ সাল্লাবী: আস- সিরাতুন নববীয়্যাহ,(কায়রুঃ দারুল ফজর লিত-তুরাস,১ম সং,১৪২৪ হিঃ/২০০৩ খৃ:) ১ম খণ্ড, ৫৯ পৃঃ
*৬. নূর তত্ব, ৬৯ পৃঃ
*৭.বায়হাকি: দালায়েলুন নবুয়ত :১/৮৩
*৮.তাফসীরে ইবনে কাসীর :৪/৩৬০
*৯.হাকেম : মুসতাদরিক: ৩/৬১৬

♦️নবীজী (ﷺ) বলেন-“আঁমার আন্মাজানের (স্বপ্নে) দেখা সেই নূর যা ওঁনার দেহ থেকে বেরিয়ে শাম দেশের প্রাসাদ সমুহকে আলোকিত করেছিল”- পর্যালোচনা:-এই হাদিসটির বিভিন্ন সুত্রঃ

*১. হযরত কা’ব আল আহবার (রাঃ)
*২. হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাঃ) এর মাতা শিফা বিনতে আমর ইবনে আউফ (রাঃ)
*৩. হযরত ইরবাদ ইবনে সারিয়া (রাঃ)
*৪. হযরত মু’য়াজ বিন জাবাল (রাঃ)
*৫. হযরত আবু উমামা (রাঃ)
*৬. হযরত উসমান ইবনে আবিল আস (রাঃ)
*৭. হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)
*৮. হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ)
*৯. হযরত ইকরামা (রাঃ)

থেকে বর্নিত রয়েছে নিচে কয়েকটি উল্লেখ করা হলঃ

রাসুলুল্লাহ صلى الله عليه و آله وسلم বলেন:- “আঁমি তোমাদের আঁমার পূর্বের কিছু কথা জানাবো! তা হলো-
আঁমি হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের দোয়া আর হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ওঁনার জাতিকে দেয়া সুসংবাদ ও আঁমার আন্মাজানের (স্বপ্নে) দেখা সেই নূর যা ওনার দেহ থেকে বেরিয়ে শাম দেশের প্রাসাদ সমুহকে আলোকিত করেছিল.. ” এই হাদীস থেকেবুঝাগেল নবীজি صلى الله عليه و آله وسلم ওঁনার মাতার মাধ্যমে দূনিয়ায় নূর হয়ে শুভাগমন করেছেন। ঐ নূরের তাজ্জালিতে মক্বা হতে শামদেশ প্রযন্ত আলোকিত হয়েগেছিলো।
তথ্যসূত্রঃ

★ মুস্তাদরেক আল হাকিম: ২য়খন্ড: পৃষ্ঠা ৬০০: হাদিস ৪১৭৫
★ ইমাম আহমদ: মুসনাদে আহমদ ৪র্থ: পৃ ১২৭ : হাদিস ১৬৭০১
★ ইমাম বায়হাকী: দালায়েলুন নবুওয়াত: ১ম খন্ড: পৃ ৮৩,পৃ ১১০
★ ইমাম ইবনে ইসহাক: সিরাতুন নবী: ১ম খন্ড: পৃ ২৮
★ ইমাম ইবনে হিশাম: সিরাতুন নবী: ১ম খন্ড: পৃ ১৫৬
★ ইমাম ইবনে সা’দ: তাবাকাত আল কুবরা: ১ম খন্ড: পৃ ১৫০
★ ইমাম কুরতুবী: জামিউল আহকামুল কুরআন: ১ম খন্ড: পৃ ১৩১
★ ইমাম তাবারী: জামি আল বয়ান: ১ম খন্ড: পৃ ৫৫৬
★ ইমাম তাবারী: তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক: ১ম খন্ড: পৃ ৪৫৮
★ ইমাম ইবনে কাসীর: তফসীরে ইবনে কাসীর: ৪র্থ খন্ড: পৃ ৩৬০
★ ইমাম আবু লাইস সমরকানী: তফসীরে সমরকানী: ৩য় খন্ড: পৃ ৪২১
★ ইমাম ইবনে হিব্বান: সহীহ ইবনে হিব্বান: ৯ম খন্ড: পৃ ১০৬
★ ইমাম বাগবী: মিশকাতুল মাসাবিহ: পৃ ৫১৩
★ ইমাম ইমাম হিন্দি: কাঞ্জুল উম্মাল:১১ম খন্ড: পৃ ১৭৩
★ ইমাম ইবনে জাওজী: আল ওয়াফা: পৃ ৯১
★ ইমাম ইবনে হাজর হায়সামী: মাজমাউল যাওয়াইদ: (৮:২২১/৪০৯)
★ ইমাম সূয়ূতী: তফসীরে দুররে মনসূর: ১ম খন্ড: পৃ ৩৩৪
★ ইমাম হালাভী: সিরাতে হালাভিয়্যাহ: ১ম খন্ড: পৃ ৭৭

Reference in English:

*Book: Miskatul Masabih
page: 513
*Book: Kanjul Ummal
Part: 11, Page: 173
*From: Ibne Hibban
Book: Shahih ibne hibban,Volume: 9
Page: 106

*From: Ibn al-Jawzi, Book: al-Wafa’
Page: 91, chapter: 21 of Bidayat nabiyyina sallallahu `alayhi wa sallam

*From: Imam Haythami, Book: Majma` al-zawa’id (8:221/409)
*From: Al Haakim, Book: Al mustadrak, Volume :002,
Page No. 615-616/ 705/724
References of Hadith number 4233
or V:3 page: 27
⬇️
Imam Hakim after narrating it said:

هذا حديث صحيح الإسناد شاهد للحديث الأول

Translation: This Hadith has a Sahih chain and is also a witness over the first hadith (which he mentioned in the chapter)

Reference: Mustadrak ala Sahihayn, Volume 2, Page No. 600, Hadith No. 4175

*From: Imam Ahamad, Book: Musnade Ahamad, volume: 4
page: 127, Hadith: 16701
*From: Ibn e Sa’d, Book: Tabqaat Al Kubra, Volume: 1, Page: 150

*From: Bayhaqi, Book: Dalaeel un Nubuwwah, Volume: 1, Page: 83
again 1:110 & 2:8
*From: Ibn e ‘Asakir
Book: Tareekh Madeenat Damishq
Volume/page : 1:170 and 3:393

*From: Qurtabi, Book: Jami’ Al Ahkaam Al quran, Volume: 2
Page: 131

  • From: Tabari, Book: jami’ Al Bayan
    Volume: 1, Page: 556

*From: Ibn e Katheer
Book: Tafseer Al Quran Al Azeem
Volume: 4, Page: 360-361
*From: Samarqani, Book: Tafseer
Volume: 3, Page : 421

*From: Tabarai, Book: Tareekh Al Umam wal Mulook, Volume: 1
Page: 458
*From: Ibn e Ishaaq, Book: Seerat An Nabwiyyah, Volume: 1
Page : 28

*From: Ibn e Hisham
Book: Seerat An Nabwiyyah
Volume: 1, Page: 156

“মুসনাদে আহমদ” কিতাবের স্ক্রীনশট দেখুন এখানে:

Book: Al-Bidaya wan Nehaya
Volume : 2
page: 321

Book: Musnade Afzar
Hadith: 2365

Book: Tafsire Dor’re Monsor
volume : 1
page: 334

Book: Maoware dul
zamman
volume:1
pagepage:512

From : Halabi
Book : Seerat Al Halabiyyah
Volume : 1
Page : 77

➡️নবী করিম (ﷺ) এঁর জননী বর্ণনা করেন,তাঁর গর্ভ সঞ্চারের পর আঁমি একটি নূর দেখলাম, যাতে সিরিয়ার বুছরা শহর এবং শাম অঞ্চলের রাজপ্রসাদ সমূহ আঁমার দৃষ্টিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।
[সিরাতে ইবনে হিশাম; সীরাতে রাসূলে আকরাম (ﷺ) পৃষ্ঠা: ১০, অনুবাদ: মুহিউদ্দীন খান; মাদারেজুন্ নবুওয়াত, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা: ১৩১, সেরহিন্দ প্রকাশন; সীরাতে খাতিমুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা: ৫, লেখক-মুহাদ্দিসে মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা, এমদাদিয়া লাইব্রেরী)।]

➡️হযরত মুহাম্মদ(ﷺ) এঁর পৃথিবীতে শুভ আগমনের সাথে সাথে হযরত মা আমেনা (রা:)বলেন“ একটি শিশু নয় একটি নুর বের হয়েছেন যেটির মাধ্যেমে আঁমি সিরিয়ার রাজপ্রসাধ দেখতে পেয়েছি।
[আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাছীর,৩য় খন্ড,৪৮৮ পৃঃ বাংলা,ই:ফা]

➡️হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এঁর পবিত্র বেলাদতের সময়ে কোন রুক্ত বের হয় নি,কেবল একটি নুর বের হয়েছে।
[আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাছীর,৩য় খন্ড,৪৮৯ পৃঃ বাংলা,ই ফা]

➡️অপর বর্ণনায় হুজুর (ﷺ) নিঁজেই তাঁর পবিত্র মিলাদের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে এরশাদ ফরমান ‘আঁমার বেলাদাতের সময় আঁমার আম্মাজান দেখলেন যে তাঁর পবিত্র দেহ মোবারক হতে একটি নূর প্রকাশিত হল,যার আলোয় সিরিয়ার মহলগুলো রওশন হয়ে গেল।
[মুসনাদে আহমাদ-১/৪৫৪,তারিখুল কবির- ৫/৩৪২]

★২১৯. ওসমান বিন আ’স এর মাতা ফাতেমা বিনতে আব্দুল্লাহ হইতে বায়হাকী বর্ণনা করেন, ফাতেমা বলিয়াছেনঃ নবী করিম (ﷺ) ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় আমি তথায় উপস্থিত ছিলাম। তিঁনি জন্ম তথা ধরাধামে আগমন হইবার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত ঘর নূরে ভরিয়া গেল। আকাশের তারকা সমূহ এত নীচে নামিয়া আসিয়াছিল যে, আমার মনে হইতেছিল উহারা হয়ত মাটিতে পতিত হইবে।
[সূত্র: বিশ্ব নবীর (ﷺ) তিনশত মোজেযা,পৃষ্ঠা: ১৭৪, মোহাম্মদী লাইব্রেরী,চকবাজার,ঢাকা- ১২১১; মাদারেজুন্ নবুওয়াত, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা: ১৩৪, সেরহিন্দ প্রকাশন]

⬇️হযরত ওসমান বিন আবুল আস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, তার মা তার কাছে বর্ণনা করেছেন,যে আমি রাসূল (ﷺ) এঁর বেলাদতের সময় সাইয়্যেদাহ আমিনা (রাঃ)-এর ঘরে ছিলাম,আমি দেখছিলাম যে তারকাসমূহ আকাশ হতে নীচের দিকে ঝুঁকে পড়ছিল।আমি উপলব্ধি করছিলাম যেনো এগুলো হয়ত আমার মাথার উপরে ভেঙ্গে পড়বে। তারপর যখন তাঁর শুভ বেলাদত হল তখন সাইয়্যেদাহ আমিনা (রাঃ) হতে এমন নূর বিকশিত হল যার আলোকে পুরো ঘর ঝলমল করতে লাগল এবং আমি প্রত্যেক বস্তুতে কেবল নূর দেখছিলাম।
দলিল
*১. মু’জামুল কবির লিত তাবরাণী-২৫/১৪৭
*২. তারিখে তাবারি-১/৪৫৫

➡️ইমাম বাইহাকী (রহ.) এর দালায়েলুন নুবুওয়্যাত কিতাবের ১ম খন্ডের ১১১ পৃষ্ঠাতে বর্নিত আছে

عن عثمان بن أبي العاص ، قال : حدثتني أمي ، أنها شهدت ولادة آمنة بنت وهب رسول الله صلى الله عليه وسلم ، ليلة ولدته . قالت : فما شيء أنظر إليه في البيت إلا نور ، وإني لأنظر إلى النجوم تدنو حتى إني لأقول : ليقعن علي

হযরত উসমান বিন আবুল আস (রাঃ) বলেন, আমি মা (ছফিয়্যা) বলেন,আমি ওহাব কন্য আমেনার কাছে রাসূল (ﷺ) এঁর জন্মের তথা শুভ আগমনের রাতে উপস্থিত ছিলাম। আমি (তাঁর জন্মের বা আগমনের সময়) দেখলাম, ঘরের মধ্যকার সবকিছু নূর হয়ে গেছে। আমি তারকার দিকে তাকালাম। দেখলাম সেগুলো আমার নিকটবর্তী হয়েছে। মনে হয় যেন, উহা আমার উপর পতিত হবে। তাছাড়াও আবু নুয়াইমের দালায়েলুন নুবুয়্যাতের ৭৬ পৃষ্ঠায় আরও আছে যখন আমেনা (রাঃ) রাসূল (ﷺ) কে
ভূমিষ্ট করলেন,একটি নূর বের হয়ে ঘর আলোকিত করল অত:পর আমি যা দেখলাম দেখি সবই নূর।

⬆️এ ব্যপারে আরও বর্ণিত হয়েছে
ﻋﻦ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺍﻟﻌﺎﺹ ﺣﺪﺛﺘﻨﻲ ﺃﻣﻲ ﺃﻧﻬﺎ ﺷﻬﺪﺕ ﻭﻻﺩﺓ ﺁﻣﻨﺔ ﺑﻨﺖ ﻭﻫﺐ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻴﻠﺔ ﻭﻟﺪﺗﻪ ﻗﺎﻟﺖ ﻓﻤﺎ
ﺷﻲﺀ ﺃﻧﻈﺮﻩ ﻓﻲ ﺍﻟﺒﻴﺖ ﺇﻻ ﻧﻮﺭ ﻭﺇﻧﻲ ﺃﻧﻈﺮ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻨﺠﻮﻡ ﺗﺪﻧﻮ ﺣﺘﻰ ﺇﻧﻲ ﻷﻗﻮﻝ ﻟﻴﻘﻌﻦ ﻋﻠﻲ

হাফেজ আবু বকর আল বায়হাকি (রহঃ) হতে বর্ণিত।হযরত উসমান বিন আবি আল আস (রঃ) উনার আম্মাজান থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি হযরত আমেনা (রাঃ) এঁর হামলের স্বাক্ষী ছিলেন।তিনি বলেন রাসূল (ﷺ) এঁর দুনিয়ায় আগমণের রাত্রিতে সব জায়গায় শুধু নূর আর নূরই ছিল।এবং আকাশের নক্ষত্র সমূহ জমীনের খুবই নিকটে চলে আসল।এটি উপলদ্ধি করা খুবই কঠিন ছিল।

[ইবনে কাসির,আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়া,২য় খন্ড,পৃঃ ১৬৪]
হাদিসখানা সহীহ।

★২২০. নবীজী (ﷺ) নিঁজেই ইরশাদ করেন-
وإن أمي رأuiت في بطنها نوراً قالت : فجعلت أتبع بصري النور فجعل النور يسبق بصري حتى أضاء لي مشارق الأرض ومغاربها

‘আঁমার আম্মাজান দেখলেন যে তাঁর পেটে নূর অবস্থান করছে। তিঁনি বলেন,অতঃপর নূরের দিকে আঁমি চক্ষু ফিরালাম,নূরের প্রখরতা আঁমার চোখের দৃষ্টিকে ম্লান করে দিচ্ছিল।এমনকি ঐ নূরের আলোতে পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম তথা সারা দুনিয়া আঁমার নিকট আলোকিত ও প্রকাশিত হয়ে গেল।’
[ইমাম যায়‘আলী, তাখরীজুল আহাদীসি ওয়াল আছার: ৮৩; ইমাম সুয়ূতী, আল-খাসায়েসুল কুবরা]

☝মা আমিনা (রাঃ) বলেন, “আমি নক্ষত্রের দিকে দৃস্টিপাত করলাম মনে হচ্ছিল যে, এগুলো যেন আঁমার উপর পতীত হবে।অতপর আঁমি যখন প্রসব করলাম এর থেকে একটি নূর বের হল(আঁমার গর্ভ হতে একটি নূর বের হল)।সে নূরের আলোতে ঘর বাড়ী উদ্ভাসিত হয়ে গেল এমনকি নূর ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না।
[খাসায়েসুল কুবরা(প্রাগুক্ত),১ম খণ্ড, ১১৩পৃঃ,নূর তত্ব ৬৮ পৃঃ]

👆এই হাদিসটি ঈমাম বায়হাক্বী (রহঃ),ঈমাম ত্বাবরানী (রহঃ) ও ইবনে আসাকির (রহঃ) ও বর্ণনা করেছেন

★২২১. আমেনা (রাঃ) বলেন “নিশ্চয় আমি যখন রাসূল(ﷺ) কে গর্ভধারন করলাম তখন বলা হলো: অতপর যখন তিঁনি দুনিয়াতে তাশরীফ আনলেন তখন আঁমাকে বলা হলো আঁপনি বলুন,আঁমি তাঁর ব্যপারে প্রত্যেক হিংসুকের অনিষ্ট থেকে এক (আল্লাহর) আশ্রয় চাই।তাঁর নাম রাখা হল মুহাম্মদ।এবং তিনি যখন তাঁকে গর্ভধারন করলেন তখন তিনি দেখলেন যে, তাঁর থেকে এমন একটি নূর বের হল যা দ্বারা তিনি সিরিয়ার প্রাসাদগুলো দেখতে পেলেন।
*দলিল
*১. দালাইলুন নবুওয়াত (ডঃ মুহাম্মদ রাওয়াস ও ‘আব্দুল বার ‘আব্বাস কর্তৃক বিশ্লেষনকৃত) (বৈরুত: দারুন নাফায়িস, ২য় সং, ১৪০৬ হি:/১৯৮৬ খৃ:) ১ম খণ্ড,১৩৫ পৃঃ
*২. নূর তত্ব, ৬৮ পৃঃ

★২২২. রাসূলুললাহ (ﷺ) এঁর প্রশংসা ও অসাধারণ মান মর্যাদা রচনায় ৮৫০-এর অধিক বৎসর পূর্বের একটি সুপ্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক কাব্য পুস্তিকা প্রচলিত আছে “কাসীদাহ বোরদাহ”। উক্ত কবিতায় দুইটি পংক্তি এই আলোচনায় লক্ষণীয়- “সম্মানিত রাসূলগণ যত বৈশিষ্ট্যের পাত্র ছিলেন বস্তুতঃ তাঁহাদের মধ্যে ঐসব বৈশিষ্ট হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)এঁর নূর হইতেই আসিয়াছিল।” পরবর্তী পংক্তিতে উল্লিখিত সত্যের সুন্দর দৃষ্টান্ত দানে বলা হইয়াছেঃ “হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) হইলেন সকল গুণের আধার-সূর্য,আর সকল নবী ঐ সূর্যকেন্দ্রিক নক্ষত্রসমূহ। ঘোর অন্ধকারে লোকদের জন্য নক্ষত্রসমূহ সূর্যেরই আলো প্রকাশ করে। (অর্থাৎ বাহ্যিক দৃষ্টিতে আলো নক্ষত্র হইতে দেখা গেলেও বস্তুতঃ ঐ আলো সূর্য হইতে।”
[সূত্র: বোখারী শরীফ,৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা:৮,হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ]

★২২৩. হযরত বারা ইবনে আযেব (রা)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো,নবী করীম (ﷺ)-এঁর চেহারা কি তলোয়ারের মতো ছিলো? তিনি বললেন, না; বরং তাঁর চেহারা ছিলো চাঁদের মতো।অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, নবী করীম (ﷺ) এঁর চেহারা ছিলো গোলাকার। তিঁনি চাঁদের চেয়েও অধিক সুন্দর। আবদুল্লাহ ইবনে কাব বলেন, যখন রাসূল (ﷺ) উৎফুল্ল হতেন তখন তার মুখ-মন্ডল ঔজ্জ্বল্যের কারণে চমকাতে থাকত।
দলিল
*১. সহীহ আল বুখারী,৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৪৩, হাদীস ৩২৯২, (আধুনিক প্রকাশনী)
*২. সহীহ মুসলিম,দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৫৯
*৩. শামায়েলে তিরমিযি
*৪. দারেমী
*৫. মেশকাত,দ্বিতীয় খন্ড,পৃষ্ঠা ৫১৭
*৬. মুসলিম শরীফ,ষষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা: ৩৪১, হাদীস ৫৮৭৪ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)।

➡️আবু ইসহাক (রাঃ) বলেন, একদা বারা’ ইবনে আযিব (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, নবী (ﷺ) এঁর চেহারা কি তরবারীর ন্যায় (চকচক) ও লম্বা ছিল? তিনি বললেন, না, বরঞ্চ চাঁদের ন্যায় স্নিগ্ধ ও উজ্জ্বল ছিল)।
[সূত্র: সহীহ আল বুখারী,৩য় খন্ড,পৃষ্ঠা ৪৪১,হাদীস: ৩২৮৮, আধুনিক প্রকাশনী; জামে আত তিরমিযী, ষষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৬৭, হাদীসঃ ৩৫৭৫, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, সন-অক্টোবর ১৯৯৮]

➡️রবী বিনতে মোয়াওয়েব (রা) বলেন,তোমরা যদি রাসূল (ﷺ) কে দেখতে,তবে মনে হতো যেন উদীয়ামান সূর্য দেখছো।
[সূত্র: মোসনাদে দারেমী; মেশকাত, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ৫১৭]

➡️শরহে শাফা গ্রন্থে উলেখ রহিয়াছে যে, স্মিত হাসির সময়ে নবীজীর দাঁত প্রকাশ পাইলে বিদ্যুৎ চমক খেলিয়া যাইতো। যেনো ওষ্ঠযুগলের ফাঁক দিয়ে সামনের দাঁত থেকে নূরের ঝিলিক বেরুচ্ছে। নবী করিম (ﷺ) এঁর কথা বলিবার সময় তাঁহার দাঁত হইতে বিশেষ রকমের জ্যোতি (নূর) প্রকাশ পাইত।
[সূত্র: মাদারেজুন্ নবুওয়াত, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ২১, সেরহিন্দ প্রকাশন; শানে মাহবুব (সাঃ), পৃষ্ঠা ৭৮, তাবলীগী কুতুবখানা, চক বাজার ঢাকা]

➡️হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন,নবী করীম (ﷺ) -এঁর সামনের দুটি দাঁত পৃথক পৃথক ছিলো। কথা বলার সময় উভয় দাঁতের মধ্য থেকে আলোকআভা বিচ্ছুরিত হতো।
[সূত্র: তিরমিযী; মেশকাত, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৫১৮)। গ্রন্থস্বত্য: আর রাহীকুল মাখতুম, রাসুলুল্লাহ (স)-এর সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনী গ্রন্থ, পৃষ্ঠা: ৫২৪-৫২৫, আল কোরআন একাডেমী লন্ডন]

➡️হযরত আবু হোরায়রা (রা) বলেন, রাসূল (ﷺ)-কে মনে হতো যেন তাঁর চেহারায় সূর্য জ্বলজ্বল করছে। এবং জাবের ইবনে সামুরা থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি বলল, তাঁর চেহারা মোবারক ছিল তলোয়ারের ন্যায় উজ্জ্বল। জাবির বললেন, ‘না’ বরং তার চেহারা ছিল চন্দ্র ও সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল।
[সূত্র: সহীহ মুসলিম, ৭ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৪১৩, হাদীস: ৫৯১০ (বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার); তোহফাতুল আহওয়াযী শরহে জামে তিরমিযী,৪র্থ খন্ড,পৃষ্ঠা ৩০৬; মেশকাত,২য় খন্ড,পৃষ্ঠা ৫১৮]

➡️হযরত কা’ব ইবনে মালেক (রা) বলেন,নবী করীম (ﷺ) যখন খুশী হতেন,তখন তাঁর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠতো। দেখে মনে হতো যেন এক টুকরো চাঁদ।
[সূত্র: সহীহ বোখারী,প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৫০২]

➡️হযরত জাবের বিন সামুরাহ একজন সাহাবী। তাঁর কাছে কেউ জিজ্ঞেস করল রাসূল পাক (ﷺ) এঁর চেহারা কি তরবারির মত উজ্জ্বল ছিল? তিনি বললেন, না; বরং সমুজ্জ্বল সূর্যের মত ছিল। তিনিই অপর এক বর্ণনায় বলেন, একরাতে আকাশ ছিল পরিস্কার। মেঘের কোন চিহ্নই ছিল না। আকাশে চাঁদ উদিত হয়েছিল। আমি রাসূল পাক (ﷺ)-এঁর দিকে তাকালাম এবং চাঁদের দিকেও তাকালাম আমার কাছে রাসূলে পাক (ﷺ) এঁর চেহারা মুবারক অধিক সুন্দর মনে হল।
[সূত্র: সিরাতুন নবী,পৃষ্ঠা ২৭৯, বাংলাদেশ তাজ কোম্পানী লিঃ]

➡️রাসূলুল্লাহ(ﷺ) এঁর দু’কাঁধের মাঝখানে পৃষ্ঠদেশে তাঁর মোহরে নবুওয়াত চন্দ্র-সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল দীপ্তিমান হয়ে শোভা পেত। তা তিনি সর্বদা ঢেকে রাখতেন। কদাচিৎ তা উন্মুক্ত করতেন। এটা ছিল খাতেমুন নাবিয়্যিনের বিশেষ নিদর্শন।
[সূত্র: সহীহ মুসলিম, ৭ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৪১৪, হাদীস: ৫৯১০]

💟হজরত আমার ইবনুল আস (রাঃ) বলেন,নবী করিম (ﷺ) এঁর চাইতে অধিক প্রিয় আমার অন্য কেহ ছিল না। আমার দৃষ্টিতে তাঁহার চাইতে অধিক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন কেহ ছিলনা। তাঁহার শ্রেষ্ঠত্ব ও ব্যক্তিত্বের কারণে আমি পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাঁহার প্রতি তাকাইতে সাহস করিতাম না কেহ যদি আমাকে নবীজীর আকৃতি বর্ণনা করিতে বলে তবে আমি পারিব না। কেননা আমি নবী করিম (ﷺ) এঁর সৌন্দর্য পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে অবলোকন করিতে পারি নাই।
[সূত্র: প্রিয় নবী (ﷺ) এঁর আদর্শ জীবন,পৃষ্ঠা ৭৯, তাবলীগী কুতুবখানা,চক বাজার ঢাকা]

⬆️রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এঁর দৃষ্টিশক্তির বিস্তৃতিঃ রাসুলুল্লাহর (ﷺ) দৃষ্টিশক্তি এমন প্রখর ছিল যে তিঁনি সম্মুখের ও পেছনের সকল বস্তু সমান দেখতে পেতেন। অনুরূপভাবে যে বস্তু তিঁনি দিনের আলোকে দেখতেন, রাতের অন্ধকারেও তা তেমনি তাঁর দৃষ্টিগোচর হত। কথিত আছে, তিনি আকাশের সপ্তর্ষিমন্ডলে এগারটি তারকা দেখতে পেতেন।
[সূত্র: শাওয়াহেদুন নবুওত, মূলঃ আল্লামা আবদুর রহমান জামী (রহঃ), অনুবাদঃ মাওলানা মুহিউদ্দিন খান। পৃষ্ঠা: ১৮২; মদীনা পাবলিকেশন্স, ৩৮/২ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০]

➡️হাকাম আল্লাহর ক্রোধের শিকারঃ একদিন রাসূলুলাহ (ﷺ) হাকাম আবুল আসের কাছ দিয়ে গমন করছিলেন। হাকামও তাঁর পিছনে পিছনে চলতে লাগল। হুযুর (ﷺ) নবুয়তের নূরের মাধ্যমে তাকে অশোভন কান্ড করতে দেখলেন। তিনি বললেনঃ এমনই হয়ে যা। সে স্থানেই তার শরীর কম্পন সৃষ্টি হল এবং সে সেখান থেকে নড়তে পারল না।
[সূত্র: শাওয়াহেদুন নবুওত, পৃষ্ঠা: ৭৭, অনুবাদঃ মাওলানা মুহিউদ্দিন খান, মদীনা পাবলিকেশন্স]

➡️আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,যে দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হিজরত করে মদীনায় প্রবেশ করেন সেদিন সেখানকার প্রতিটি জিনিস জ্যোতির্ময় হয়ে যায়। অতঃপর যেদিন তিঁনি ইন্তেকাল করেন সেদিন আবার তথাকার প্রতিটি জিনিস অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। আমরা তাঁর দাফনকার্য শেষ করে হাত থেকে ধুলা না ঝাড়তেই আমাদের অন্তরে পরিবর্তন এসে গেল।
[সূত্র: জামে আত-তিরমিযী, ষষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৫৩, হাদীস: ৩৫৫৭]

🔃তাহলে এখানে বুঝা যাচ্ছে যে,মহানবী (ﷺ) এঁর সান্নিধ্যে সাহাবায়ে কিরামের অন্তরজগত আলোকময় হয়ে যেত এবং তারা এক বিশেষ প্রশান্তি ও পারস্পরিক সহমর্মিতা অনুভব করতেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে তাদের এই বিশেষ অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে এবং তাঁর ইন্তেকালে তারা যেন সেই জ্যোতির (নূরের) স্বল্পতা অনুভব করেন।

হযরত মোহাম্মদ (ﷺ)-এঁর উম্মতের বিশেষত্ব হচ্ছে,অজুর কারণে ঔজ্জ্বল্য এবং নূরানিয়াত। মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে,হুজুর পাক (ﷺ) এরশাদ করেছেন, ললাটের ঔজ্জ্বল্য তোমরা ছাড়া অন্য কেউ পাবে না। মেশকাত শরীফে ইমাম আহমদ হজরত আবু দারদা (রাঃ) এর মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন,নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেছেন, আঁমি কেয়ামতের দিন আঁমার উম্মতকে এভাবে চিনতে পারবো, তাদের অযুর অঙ্গ সমূহ জ্বলজ্বল করতে থাকবে আর তাদের আমলনামাগুলি তাদের ডান হাতে থাকবে। হাশরের ময়দানে তাদের সামনে দিয়ে ডান দিক দিয়ে নূর দৌড়াদৌড়ি করবে।
[সূত্র: মাদারেজুন্ নবুওয়াত, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ৯১, ১০৭; শায়েখ আবদুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহ:), সেরহিন্দ প্রকাশন]

⬆️আবু নাঈম হযরত সালেম ইবনে আব্দুলাহ ইবনে ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, কা’ব আহবারকে জনৈক ব্যক্তি বললো, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে হিসাব কিতাবের জন্য মানুষ একত্রিত হয়েছে। সমস্ত নবীগনকে সেখানে ডাকা হয়েছে। সমস্ত নবীগনই আপন আপন উম্মতদেরকে নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। স্বপ্নে আরও দেখলাম যে, প্রত্যেক নবীগণের দু’টি করে নূর আর উম্মতদের একটি করে নূর তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে চলছে।এরপর হুজুরে আকরাম (ﷺ) কে আহবান করা হলো। তাঁকে দেখলাম যে, শরীরের সমস্ত পশম মুবারকে একেকটি করে নূর রয়েছে। আর তাঁর উম্মতের প্রত্যেকের কাছে রয়েছে দু’টি করে নূর। কা’ব আহবার তখন লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন,তুমি যে স্বপ্নের বৃত্তান্ত বর্ণনা করলে এরকম কি কোথাও তুমি পাঠ করেছো?লোকটি বললো, আলাহর কসম। স্বপ্নে দেখা ছাড়া এরকম আমি আর কোথাও পড়িনি। তখন কা’ব বললেন, কসম ঐ মহান সত্তার যাঁর কুদরতের হাতে কাবের প্রাণ,এই বৈশিষ্ট্য মোহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) এবং তাঁর উম্মতের। আর পূর্বে বর্ণিত অবস্থাটি হচ্ছে অন্যান্য নবী ও উম্মতগণের। কিতাবে ইলাহীর মধ্যে এরকম বর্ণনা বিদ্যমান আছে। মনে হয় তুমি যেনো তৌরাত কিতাবে তা পাঠ করেছো।
[সূত্র: মাদারেজুন্ নবুওয়াত, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৫৬, শায়েখ আবদুল হক মোহাদ্দেছ দেহলভী (রহঃ), সেরহিন্দ প্রকাশন-ঢাকা]

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(৪২ম পর্ব)

🌀অনেকে বলেন কোরআনে নূর বলা হয়েছে কিন্তু নূরের তৈরী বলা হয়নি, আবার কেউ বলেন শুধু রুহ মোবারক নূর কিন্তু দেহমোবারক নয়,আবার কেউ বলেন সাদা মাটির তৈরী (নাউযুবিল্লাহ!) আজকে ইন-শা-আল্লাহ সে বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো-[৩৪ম অংশ]

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

💟এপর্যায়ে আলোচনা করবো নূরে মোহাম্মদী (ﷺ) স্থানান্তর ও মায়ের গর্ভেও নূর ছিলেন এবং পৃথিবীতে আগমনের ধরন 3rd part:💝💝💝💝

★২২৪. ভূমিষ্ঠ তথা ধরাধামে শুভ আগমন হওয়ার পূর্বে প্রকাশিত নবী করীম (ﷺ)-এঁর বরকতে সুবহে সাদেকের বিশ্বব্যাপী আলো আর দিগন্তের রক্তিম আভা যেমনি ভাবে পৃথিবীকে সূর্যোদয়ের সুসংবাদ দান করে,তেমনিভাবে নবুওয়াতের রবি (ﷺ)এঁর উদয়কাল যখন ঘনাইয়া আসিল,তখন পৃথিবীর দিকে এমন ঘটনারাজি প্রকাশ পাইতে লাগিল,যাহা সুস্পষ্টরূপে নবী করীম (ﷺ)-এঁর শুভাগমনের সংবাদ বহন করিতেছিল।
[সূত্র:সীরাতে খাতিমুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা:২,লেখক-হযরত মাওলানা মুফ্তী মুহাম্মদ শফী সাহেব, অনুবাদক-মাওলানা আবুল কালাম এবং মোঃ আব্দুল লতিফ চৌধুরী, মুহাদ্দিস মাদ্রাসা-ই-আলিয়া,ঢাকা, এমদাদিয়া লাইব্রেরী]

★২২৫. নবী করীম (ﷺ)-এঁর শ্রদ্ধেয় জননী বিবি আমেনা (রাঃ) হইতে বর্ণিত যে,হুজুর (ﷺ) যখন তাঁহার গর্ভে স্থিতি লাভ করিলেন,তখন স্বপ্নে তাঁহাকে সুসংবাদ প্রদান করা হইল যে,“তোমার গর্ভে যে সন্তানটি রহিয়াছে তিঁনি এই উম্মতের সরদার। যখন তিঁনি ভুমিষ্ট হইবেন তখন তুমি এইরূপ প্রার্থনা করিও: আমি -তাঁহাকে এক আল্লাহর আশ্রয়ে সমপর্ণ করিলাম। আর তাঁহার নাম মুহাম্মদ (ﷺ) রাখিও।”
[সূত্র: সিরাতে ইবনে হিশাম; সীরাতে খাতিমুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা: ২, (মাদ্রাসা-ই-আলিয়া), এমদাদিয়া লাইব্রেরী, ঢাকা]

★২২৬. হালিমা সাদিয়া বর্ণনা করেছেন, সাইয়্যেদা আমেনা বলেছেন, তখন আঁমার সামনে একটি তারকা উদ্ভাসিত হলো, যার আলোকে গোটা পৃথিবী আলোকিত হয়ে গেল। তখন আমি সিরিয়া রাজ্যের প্রাসাদ সমূহও দেখতে পেলাম।
[সূত্র: মাদারেজুন্ নবুওয়াত, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা: ১৩৪, সেরহিন্দ প্রকাশন]

➡️এমনিভাবে নবী করিম(ﷺ) জননীর যে স্বপ্নের দিকে ইশারা করেছিলেন,তার অর্থ সেই স্বপ্ন, রেওয়ায়েতের বর্ণনা অনুযায়ী যাতে তিঁনি গর্ভাবস্থায় দেখতে পান যে,তাঁর উদর থেকে নির্গত এক নূরের আলোকে সিরিয়ার রাজ প্রসাদসমূহ উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে।
[সূত্র: সিরাতে ইবনে হিশাম; সীরাতে রাসূলে আকরাম (ﷺ) পৃষ্ঠা: ১০,১৮,অনুবাদ: মুহিউদ্দীন খান]

⬆️এর সুস্পষ্ট প্রমান হচ্ছে আল্লাহ পাক কোরআনে রাসূল (ﷺ)কে বলেছেন যে,“আঁপনি কি দেখেননি আঁপনার প্রতিপালক ঐ হস্তী বাহিনীর কি অবস্থা করেছেন?” এদ্বারা বুঝানো হয়েছে যে,আল্লাহ্ তায়ালা যে সময় ছোট পাখি দ্বারা কা’বা গৃহ রক্ষা করেন,সে সময়ের ৫০ দিন পর নূরনবী (ﷺ) এঁর বেলাদাত শরীফে হয়েছে।মায়ের পেট মোবারক থেকে নূরনবী (ﷺ)-এ ঘটনা দেখেছেন যার প্রমাণ এ আয়াত।
[সূত্র: সূরা ফীল,আয়াত নং ১, সূরা ১০৫]

★২২৭. হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ বর্ণনা করেছেন, আমার মায়ের নাম ছিলো শেফা। তিনি বলেছেন,যখন মহাপুণ্যবতী আমেনার সদ্যজাদ সন্তানকে আমার হাতে দেওয়া হলো,তখন দেখা গেলো,তিঁনি খত্নাকৃত।হঠাৎ তিঁনি হাঁচি দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে যেনো আওয়াজ ধ্বনিত হলো ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ তখন পূর্ব ও পশ্চিমের সমস্ত কিছুই আলোকিত হয়ে গেলো। আর আমি শাম দেশের অট্টালিকাসমূহ দেখতে পেলাম।
[সূত্র: মাদারেজুন নবুওয়াত, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা: ১৩৪, সেরহিন্দ প্রকাশন]

★২২৮. জিবরাঈল (আঃ) শিশু নবীর খেদমতেঃ হালিমা বলেনঃ মোহাম্মদ (ﷺ)-কে গৃহে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে আমি মক্কায় তিন রাত অবস্থান করলাম। তৃতীয় রাতে দেখলাম, এক ব্যক্তি সবুজ পোশাক পরিহিত। তার কপালে নূর ঝলমল করছে।সে মোহাম্মদ(ﷺ)-এঁর শিয়রে বসে তাঁকে চুমু খাচ্ছে। আমি আমার স্বামীকে এ ঘটনা বললে সে বললঃ হালিমা,এরহস্য আমি জানি না। তবে এতটুকু বুঝি যে আমাদের চেয়ে বেশী ভাগ্যবান হয়ে কেউ দেশে ফিরে যাবে না।
[সূত্র: শাওয়াহেদুন নবুওত, পৃষ্ঠা: ৪২, অনুবাদঃ মাওলানা মুহিউদ্দিন খান]

★২২৯. কাযী আয়ায (রহঃ), হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) এঁর মাতা শিফা থেকে বর্ণনা করেন;রাসুল (ﷺ) পৃথিবীতে শুভ আগমন করেন দুই হাটু দুই হাত ভর করা (সিজদার মত করে) অবস্থায়।
[আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,ইবনে কাছীর,৩য় খন্ড,৪৮৮ পৃঃ বাংলা,ইঃফা]

➡️অপর বর্ননায় রয়েছে, হযরত হাছান বিন আতিয়া (রাঃ) বর্ননা করেন: রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মায়ের উদর মোবারক হতে প্রথমে দু’পা মোবারক দিয়ে শুভ আগমন করেন মাথা মোবারক উপরের দিকে,দু’হাত মোবারক আকাশের দিকে রেখে দোয়া অবস্থায় শুভ আগমন করেন।
[সিরাতুল হালবিয়া,শেফা শরীফ ৫৪৯ পৃঃ]

★২৩০. নবিজির মাতা হযরত আমেনা (রাঃ) বলেন “যখন আমার প্রিয় পুত্র ভূমিষ্ট হলেন, তখন আমি দেখতে পেলাম-তিঁনি সিজদায় পড়ে আছেন।তারপর মাথা উদ্বগামী শাহাদাত আংগুলি দ্বারা ইশারা করে বিশুদ্ধভাবে পাঠ করছেন “আশহাদু আললা-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্নি রাসূলুল্লাহ”
[যিকরে জামীল,খাছায়েছুল কুবরা,তারিখু খামিছ]

★২৩১. হযরত সুফিয়া (রাঃ) বলেন, বিলাদাতের সাথে সাথেই তাঁর পবিত্র জবান থেকে উচ্চারিত হচ্ছিল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ আর ফেরেশেতারা যে তাঁকে ‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া রাসূল্লাল্লাহু’ বলছিল তা আমি নিজ কানে শুনেছি।
[তাফসীরে সূরাবাদী-৪১৫]

🔃লক্ষ্য করুন:অন্যান্য সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়ে ওয়া (হুয়া) করে চিৎকার দেয়। কিন্তু নবী করিম (ﷺ)ভূমিষ্ঠ তথা পৃথিবীতে শুভ আগমন করে প্রথমে সিজদা করেন এবং পরে বিশুদ্ধ আরবি ভাষায় “আশহাদু আল-লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্নী রাসুলুল্লাহ” কালেমা শরীফ পাঠ করেছিলেন।

★২৩২. হযরত সাদ (রহঃ) হযরত আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন- রাসুল(ﷺ) মাতৃগভ থাকা কালীন সময় এবং পৃথিবীতে আগমনের সময় নবিজির মাতা হযরত আমেনা (রাঃ) কোন বেদনা কিংবা প্রসব বেদনা অনুভব করেননি।
[আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাছীর,৩য় খন্ড,৪৮৮পৃঃ বাংলা।,ই ফা]

★২৩৩. আল্লাহর হাবীব দুনিয়ায় আগমনের সময় কোন প্রকার অপবিত্র বস্তু তাঁর শরীরে ছিল না।পূতপবিত্র অবস্থায় দুনিয়ায় এসেছেন।
[নেহায়াতুল আদব১/৭৬পৃঃ]

★২৩৪. হযরত আব্বাস(রাঃ) বর্ণনা করেন রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খতনা করা অবস্থায় দুনিয়ায় তাশরিফ আনেন।
[নেহায়াতুল আরব,১/৭৭পৃঃ]

⬆️অনুরুপ আরও একটি হাদিস।নবী করীম [ﷺ] এরশাদ করেছেন:

عَن أنس قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من كَرَامَتِي على رَبِّي عز وَجل أَنِّي ولدت مختونا لم ير أحد سوءتي
“আনাস রাদ্বিয়ালাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল [ﷺ] বলেছেন,আল্লাহ জাল্লা জালালুহু’র পক্ষ থেকে আমার মু’জিজা হলো আঁমি খৎনা অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছি এবং জন্মকালে তথা মহাপবিত্র বেলাদত কালীন সময়ে কেউ আমার ছতর মোবারক দেখে নি।”
[বেদায়া ও নেহায়া, ২য় খন্ড, ২৬১পৃ: পুরাতন ছাপা।]

⬆️ইমাম বায়হাকী (রঃ) সুত্রে ইবনে কাছীর বলেন- হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)উনার পিতা হযরত আব্বাস (রাঃ) থেকে বণনা করেন: প্রিয়নবী (ﷺ) পৃথিবীতে শুভ আগমন করেন খৎনাকৃত এবং নাড়িকতৃত অবস্থায়।

⬆️আবার ইবনে আসাকীর (রঃ), হযরত আনাস (রা:) এঁর সূত্রে বলেন: নবীজি ইরশাদ করেন আঁমি খৎনাকৃত অবস্থায় জম্মগ্রহন করেছি, আমার লজ্জাস্থান কেউ দেখেনি।
[আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাছীর,৩য় খন্ড,৪৮৯ পৃঃ বাংলা,ইঃফা]

⬆️হজরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহর আঁমার প্রতি সম্মান হলো,আঁমি খতনাবিশিষ্ট অবস্থায় পৃথিবীতে আগমন করেছি।যাতে আঁমার লজ্জাস্থান কেউ যেন না দেখে।
[মুজামে আওসাত,হাদিস : ৬১৪৮]

★২৩৫. রাসূলে পাক (ﷺ) ভূমিষ্ট হওয়ার পর তথা শুভ আগমন করার পর তাঁর পরনে সাদা রং এর পোষাক শোভা পেয়েছিল।যথা :পবিত্র মুকুট, টুপি,পাগড়ী, পীরহান ও যাবতীয় পোষাক মোবারক।
[খাছায়েছুল কোবরা,১ম খণ্ড,১৪২ পৃঃ]

🔃আবার দেখুন: অন্যান্য সন্তান উলঙ্গ ও খতনাবিহীন অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে,কিন্তু নবী করিম (ﷺ)বেহেস্তি লেবাছ পরিহিত,সুরমা মাখা চোখ ও খতনাকৃত অবস্থায় শুভ আগমন করেছেন।নবী করিম (ﷺ)এরশাদ করেছেন, পৃথিবীতে শুভ আগমনের সময় কেউ আঁমার ছতর দেখেনি।
[বেদায়া নেহায়া ২য় খন্ড ২৬১ পৃষ্ঠা, মাদারিজুন্নবুয়ত কিতাবে এর বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে]

★২৩৬. যে রাতে হুজুর (ﷺ) দুনিয়ায় তাশরীফ আনেন জিবরাইল (আঃ) কে আল্লাহ তায়ালা আদেশ দিলেন এক লক্ষ ফেরেশতাকে জমিনে পাঠাতে।তারা পৃথক পৃথকভাবে জমিনে ছড়িয়ে পড়লেন।কেউ পাহাড়ের চূড়ায় উঠে,কেউ বিভিন্ন উপত্যকায়, কেউবা সমুদ্রে,এভাবে জমিনের সকল প্রান্তরে, এমনকি যে সকল জীব সপ্ত জমিনের নীচে অবস্থান করছে তাদেরকে ও মহা পবিত্র বিলাদাতের শুভ সংবাদ দিতে লাগলেন।
[আন নে’মাতুল কুবরা আলাল আলাম-১৪]

★২৩৭. ইমাম বোখারী (রঃ)-এর ওস্তাতাজুল মোহাদ্দেসীন ইমাম আবূ নু’আইম আল ইস্ফাহানী (রঃ) হজরত আমর ইবনে কোতাইবা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন আমি আমার পিতার কাছে শুনেছি যিনি ছিলেন গভীর ইলমের অধিকারী তিনি বলেছেন,যখন হজরত আমিনা (রাঃ)-এর গর্ভদেশ থেকে আল্লাহর প্রিয় হাবিব (ﷺ) এঁর ইহজগতে পদার্পণের সময় ঘনিয়ে আসলো তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিলেন, আসমানের সকল দরজা খুলে দাও,আর প্রত্যেকে যেন হাযির হয়ে যায়। সুতরাং তাঁরা একে অপরকে শুভ সংবাদ দিতে দিতে অবতরণ করলেন।

এদিকে দুনিয়ার পর্বতগুলো মাথা তুলে এতে গর্ববোধ করলো। সমুদ্রগুলো উচ্চসিত হল আর সেগুলোর অধিবাসীরাও একে অপরকে সুসংবাদ দিল।সুতরাং একজন ফেরেশতাও অবশিষ্ট থাকেনি, প্রত্যেকে হাযির হলেন এবং শয়তানকে পাকড়াও করে সত্তরটি শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হল।তারপর তাকে গভীর সমুদ্রের তলদেশে তার মাথার উপর ভর করে নিক্ষেপ করা হল।আর অন্যান্য শয়তান ও অবাধ্যদেরকেও শৃঙ্খলিত করা হল। সেদিন সূর্যকে মহা নূরের পোষাকে সজ্জিত করা হল আর সেটার মাথার উপর বাতাসে সত্তর হাজার হুরকে দাঁড় করানো হল,যারা হুজুর (ﷺ) এঁর পবিত্র বিলাদাতে অভিবাদন ও শুভেচ্ছা জানানোর জন্য অপেক্ষমান ছিলো।

ওই বছর আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার মহিলাদেরকে হুজুর (ﷺ)এঁর সম্মানার্থে পুত্র সন্তান গর্ভে ধারনের নির্দেশ জারী করলেন।ওই বছর এমন কোনো গাছ ছিল না যাতে ফল হয়নি,এমন কোনো ভয়-আতঙ্ক ছিলনা যা নিরাপত্তায় পরিণত হয়নি।যখন নবীজী (ﷺ) শুভ তাশরীফ আনলেন তখন গোটা দুনিয়া নূরে নুরানী হয়ে গেল। ফেরেশতারা পরস্পরকে সু-সংবাদ দিলেন,প্রতিটি আসমানে যবরজদ ও ইয়াকুতের সারি সারি স্তম্ভ কায়েম করা হল যেগুলো দ্বারা আলোকসজ্জা করা হয়েছিল যা আসমানে প্রসিদ্ধ ছিল। রাসূল মেরাজের রাত্রে সেগুলো দেখেছিলেন। আর তাঁকে তখন বলা হল এগুলো আপনার পবিত্র জন্মোৎসব পালনের জন্য কায়েম করা হয়েছে।

হুজুরের পবিত্র তাশরীফের রাত্রে কাওসারের নহরের তীরে ৭০ হাজার মিশকে আযফার-এর গাছ লাগানো হয়েছিল। ওই গাছের ফলগুলোকে বেহেশতবাসীদের জন্য সুগন্ধিময় করা হল। আসমানের অধিবাসীরা আল্লাহর দরবারে শান্তির জন্য দোয়া করছিলেন।সমস্ত মূর্তিগুলোকে নুয়ে ফেলা হল।লাত ও ওযযা সেগুলোর অবস্থান থেকে এ কথা বলতে বলতে বেরিয়ে আসছিল_ কোরাইশদের সর্বনাশ হয়েছে। মহা আমানতদার এসে গেছেন, তাদের নিকট মহাসত্যবাদী তাশরীফ এনেছেন। তারাতো জানেনা তাদের কি ঘটতে যাচ্ছে !

আর বায়তুল্লাহর (ক্বাবা ঘর) ভেতর থেকে কয়েকদিন যাবৎ একথা বলতে শোনা গেছে, এখন আমার জ্যোতি আমাকে ফিরিয়ে দেয়া হবে, এখন আমার নিকট প্রকৃত যিয়ারতকারীরা আগমন করবে।এখন আমি অন্ধকার যুগের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হব। হে ওযযা ! তুই ধ্বংস হয়েছিস। তিনদিন তিনরাত যাবৎ কা’বাঘর খুশিতে নাচতে থাকে।এটা ছিল রাসূল (ﷺ) এঁর পবিত্র বিলাদাতের প্রথম নিদর্শন যা কোরাইশরা দেখতে পেয়েছিল।
[খাসায়েসুল কুবরা-১/৮০-৮১]

★২৩৮. হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এঁর আগমনের দিন রাত্রে মক্কার সমস্ত মূর্তিগুলো ভেঙ্গে পড়ে এবং তিঁনি হামাগুড়ি দিয়ে বের হন।
[আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাছীর,৩য় খন্ড,৪৮৯ পৃঃ বাংলা,ই:ফা]

★২৩৯. পারস্য সম্রাট কিসরার রাজ প্রাসাদের ১৪ টি গম্বুজ ভেংগে পড়ে।অন্য মতে ১৪টি পাথর খসে পড়ে।এক হাজার বছর পর্যন্ত পারস্যের অর্নিবান শিখা এক মুহূর্তের জন্য নিভেনি, অথচ রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর শুভাগমনের মুহূর্তে তা নিভে যায়।
[বায়হাকী ১২৬পৃঃ]

➡️আবার এরকম বর্ননাও রয়েছে: যে রাতে মহানবী (ﷺ) শুভ আগমন করেন, সে রাতে কিসরার রাজপ্রাসাদে কম্পন ধরে। আর সেখান থেকে ১৪টি গম্ভুজ ভেঙে পড়ল। তা দ্বারা তাদের ১৪ জন ক্ষমতাবান হওয়া বোঝানো হলো। তাদের ১০ জন চার বছরে ক্ষমতায় এলো। আর বাকিরা ওসমান (রা.) শহীদ হওয়া পর্যন্ত ছিল। আর পারস্যের আগুন নিভে গেল, যা হাজার বছর ধরে নেভেনি। আর সাওয়ার ছোট নদীর পানি শুকিয়ে গেল।
[বায়হাকি,দালাইলুন নবুয়্যাহ,১ম খণ্ড পৃষ্ঠা ১২৬]

★২৪০. রাসুল (ﷺ) এঁর আগমনের সময় ৪ জন পূববতী নবীর মাতা/স্ত্রী স্ব-শরীয়ে উপস্থিত ছিলেন।
[ইমাম যুরকানী মালেকী (র:) এর যুরকানী শরীফ]

★২৪১. ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, একসময় শয়তান আসমানে যেতে পারত। গিয়ে ফেরেশতাদের গায়েবি সংবাদ শ্রবণ করত।তা তাদের গণকদের কাছে দিত। যখন ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ তথা পৃথিবীতে আগমন করলেন, তখন তাদের তিন আসমান থেকে বিরত রাখা হলো।আর যখন মহানবী (ﷺ) পৃথিবীতে শুভাগমন করলেন, তখন তাদের সব আসমান থেকে বিরত রাখা হলো। তাই তাদের কেউ যখন কিছু শ্রবণ করার জন্য যেত, তখন তাদের আগুনের স্ফুলিঙ্গ নিক্ষেপ করা হতো।
[তাফসিরে কবির,খণ্ড ১৯,পৃ: ১৩০]

★২৪২. আবু রবি ইবনে সালিম বলেন,বাকি ইবনে মাখলাদ তাঁর তাফসিরে লেখেন, নিশ্চয়ই ইবলিশ চারবার বড় আওয়াজে চিৎকার করেছে। একবার যখন তাকে অভিশাপ দেওয়া হয়েছে।আরেকবার যখন তাকে দুনিয়ায় নামানো হয়েছে।আরেকবার যখন মহানবী (ﷺ) পৃথিবীতে আগমন করেছেন।আরেকবার যখন সুরা ফাতিহা অবতীর্ণ করেছেন।
[উইনুল আছার,১ম খণ্ড পৃষ্ঠা ৩৪]

⬆️শয়তান চারবার উচ্ছস্বরে কেঁদেছিল।যখন আল্লাহ তাআলা তাকে অভিশপ্ত আখ্যা দেন, যখন তাকে বেহেশত থেকে বের করে দেওয়া হয়,যখন রাসূল (ﷺ) এঁর পবিত্র বেলাদত তথা ধরাধামে শুভ আগমন হয় এবং যখন সূরা ফাতেহা নাযিল হয়।
[ইবনে কাসীর কৃত আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া,২য় খন্ড,১৬৬পৃঃ]

💟মোট কথা: আল্লাহর প্রিয় হাবীব (ﷺ) পিতা-মাতার মাধ্যমে নূর হিসাবেই দুনিয়াতে আবির্ভূত হয়েছেন।কিন্তু তাঁর আগমনের ধরন ছিল ভিন্ন রকম।সাধারণ মায়েরা গর্ভকালীন ব্যথা অনুভব করে থাকেন এবং প্রসবকালীন সময়ে প্রচণ্ড কষ্ট ও ব্যথা পেয়ে থাকেন।কিন্তু বিবি আমেনা (রাঃ) গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন সময়ে কোনো ওজন অথবা ব্যথা-বেদনা কিছুই অনুভব করেননি।বায়ু আক্রান্ত হন নি।বেয়াদবি মাফ করবেন,এমনকি নিয়মিত হায়েজ ও হয়েছিল।

⬆️অন্যান্য মায়ের প্রসবকালীন সময়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। কিন্তু নবীজীর মায়ের এ অবস্থা ছিলনা,বরং বের হয়েছিল একটি নূর-যা মক্কাভূমি থেকে সিরিয়া পর্যন্ত আলোকিত করেছিল।সে নূর ছিল নবী করিম (ﷺ) এ নূর মোবারক।

⬆️অন্যান্য সন্তান মায়ের নাভির মাধ্যমে গর্ভে খাদ্য গ্রহণ করে এবং ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নাভি কাটা হয়।কিন্তু নবী করিম (ﷺ) মায়ের নাভির সাথে যুক্ত ছিলেন না,বরং নাভি কর্তিত অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়েছেন তথা পৃথিবীতে শুভ আগমন করেছেন।অর্থাৎ সন্তান জমিনে আসলে মায়ের সাথে শেষ সম্পর্ক মায়ের সাথে সন্তানের নাভীর সম্পর্ক লেগে থাকে।দুনিয়ার যেকোন যন্ত্র দিয়ে সেটা কেটে দিতে হয়।কিন্তু আল্লাহর রাসূলের নাভী মোবারক কাটা অবস্থায় ছিল,এমনকি নাভী মোবারক শুকনা অবস্থায় ছিল।

⬆️অন্যান্য সন্তান রক্তমাখা অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়,কিন্তু নবী করিম (ﷺ) পবিত্র অবস্থায় ভূমিষ্ঠ তথা শুভ আগমন করেছেন।যখন সন্তান হয় মায়ের রক্ত পানি ভাংগে, সন্তানের গায়ে রক্ত পানি লেগে থাকে।মা আমেনা বলেন “আমার নূরের টুকরা যখন জমিনে আসলেন,আমার এক ফোটাও রক্ত, পানি ভাংগে নি।আমি নাপাক হয়নি।”

⬆️দুনিয়াতে সন্তান জন্মগ্রহণ করে পিতা মাতার যৌন মিলন দ্বারা।কিন্তু কিতাব প্রমান করে রাসূল (ﷺ)পিতা মাতার যৌন মিলন ছাড়াই মা আমেনার শেখমে বা গর্ভে যান।মা আমেনা (রাঃ) খাজা আব্দুল্লাহ (রা) এর কপাল মোবারকে চুমো দিলে সেখান থেকে নূরে মোহাম্মদী মা আমেনার শেখম মোবারকে চলে যায়।

🔃নূরে মোহাম্মদী (ﷺ) স্থানান্তর দেখুন: তাফসীরে নঈমী, আনোয়ারে মোহাম্মদী, বেদায়া নেহায়া,আনোয়ারে আফতাব সাদাকাত, হাকীকতে মোহাম্মদী, মাওয়াহেব,শেফা শরীফ, মাওয়াহেব লাদুন্নিয়া ইত্যাদি।

★২৪৩. অনেকে বলেন হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা মাটির তৈরি এ জন্য আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামও নাকি মাটির তৈরি।এমনকি এটিএন বাংলা চ্যানেলে মৌং আবুল কালাম আজাদ এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মাটির তৈরি।এখন প্রশ্ন হল-আল্লাহ্‌র রসূল মাটির তৈরি নাকি নূরের তৈরি? দলীল সহকারে উত্তর দিলে উপকৃত হব।

উত্তরঃ কোরআনুল করীমের বর্ণনা মতে একমাত্র সাইয়্যিদুনা হযরত আদম আলায়হিস্‌ সালাম’র শরীর মুবারক মাটির তৈরি।অন্য কোন মানব সন্তানের শরীর সরাসরি মাটির তৈরি নয়। সুতরাং মাতা আমিনাকে সরাসরি মাটির তৈরি বলা মিথ্যার অপালাপ মাত্র।হুজূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টিগতভাবে মহান আল্লাহ্‌র পবিত্র নূর থেকেই সৃষ্ট এবং অন্যান্য সকল (নূরানী) বস্তু মহানবী রসূল আকরম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র উক্ত নূরে পাক থেকে সৃষ্টি হয়েছে।

যেমন ‘মতালেয়ুল মুসররাত শরহে দালায়েলুল খয়রাত’-এ উল্লেখ আছে, মহানবী হুজূর আকরম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- اول ماخلق اللہ نوری ومن نوری خلق کل شیء অর্থাৎ সর্বপ্রথম আল্লাহ্‌ তা’আলা আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমার নূর থেকেই প্রত্যেক (নূরানী) বস্তুকে সৃষ্টি করেছেন। উক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা গেল যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টিগত দিক দিয়ে নূর এবং হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহার গর্ভেও নূর হিসেবে ছিলেন। বিধায়, হযরত আমিনার গর্ভকালীন সময়ে অন্য গর্ভবতী মহিলাদের মত ভারী বা গর্ভের বোঝা বা কোন প্রকার কষ্ট উপলব্ধি করেননি এবং প্রসবকালে কোন প্রকার ব্যাথা অনুভব করেননি এবং রসূলে পাক ও আল্লাহর প্রিয় মাহবূব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নূরানী মানব হিসেবে শুভাগমন করেছিলেন, যদ্ধারা হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা সুদূর বসরা শহরের রাজপ্রাসাদগুলো প্রত্যক্ষ করেছিলেন এবং সূর্য, চন্দ্র ও বাতির আলোতে কখনো রসূল করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র শরীর মুবারকের ছায়া প্রদর্শিত হয়নি, যা এ কথার সাক্ষ্য বহন করে যে, তাঁর আপাদমস্তক (জাহের-বাতেন) নূর ছিলেন।যেমন বিখ্যাত হাদীস বিশারদ হযরত হাকিম তিরমিযী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি ‘নওয়াদেরুল উলূম’ নামক কিতাবে হযরত যকওয়ান রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি থেকে হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন- انّ رسول اللہ ﷺ لم یکن لہٗ ظل فی الشمس ولافی القمر অর্থাৎ অবশ্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ছায়া মুবারক সূর্যের ও চন্দ্রের আলোতে দেখা যেত না।

মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়াহ্‌ ফিশ্‌ শামায়িলিল মুহাম্মদিয়্যা ও যুরকানী আলাল মাওয়াহেব গ্রন্থদ্বয়ে হযরত আবদুল্লাহ্‌ বিন মুবারক ও হাফেয ইবনে জুযীর বরাতে হযরত আবদুল্লাহ্‌ বিন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম থেকে বর্ণিত আছে- لم یکن لرسول اللہ ﷺ ظل ولم یقم مع شمس الا غلب ضوء ہ ضوء ھا ولا مع سراج الا غلب ضوء ہ ضوء ہ অর্থাৎ নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র (পবিত্র দেহ মুবারকের) কোন ছায়া ছিল না, সূর্যের রোদেও কোন ছায়া পতিত হত না, বাতির আলোতেও কোন ছায়া পড়ত না; বরং হুজূরের নূর মুবারক সূর্য ও আলোর উপর প্রভাব বিস্তারকারী ছিল।বস্তুতঃ চন্দ্র-সূর্য ও বাতির আলোর চেয়ে সরকারে কায়েনাত সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র পবিত্র নূর বেশি প্রখর ও শক্তিশালী ছিল।

আল্লামা জালাল উদ্দীন সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি খাসাইসে কুবরা শরীফে ইবনে সাবা থেকে বর্ণনা উল্লেখ করেছেন-

ان ظلہ کان لایقع علی الارض لانہ کان نورا

অর্থাৎ অবশ্য যমীনের উপর তাঁর ছায়া পতিত হত না। কেননা তিনি নূর ছিলেন।

‘আফদ্বালুল কোরা’ কিতাবে ইমাম ইবনে হাজর মক্কী রহমাতুল্লাহি তা’আলা আলায়হি এরশাদ করেন- انہ ﷺ کان نورا انہ کان اذا مشٰی فی الشمس او القمر لایظھرلہ ظل لانہ لایظھر الا لکثیف وھو ﷺ قد خلصہ اللہ تعالی من سائر الکثافات الجسمانیۃ وصیرہ نورا صرفا ولا یظھر لہ ظلہ اصلا

অর্থাৎ হুজূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আপাদমস্তক নূর ছিলেন। অবশ্য যখন তিনি সূর্যের রোদে এবং চন্দ্রের চাঁদনিতে চলতেন তখন তাঁর ছায়া প্রকাশ পেত না।কেননা ছায়া একমাত্র প্রকাশ পায় স্থুল দেহ থেকেই। আর মহান আল্লাহ্‌ প্রিয় মাহবূব সাল্লাল্লাহু তাজ্ঞআলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দৈহিক সকল স্থুলতা থেকে মুক্ত করেই প্রেরণ করেছেন এবং তাঁকে খালিস নূর বানিয়ে পাঠিয়েছেন। বিধায় তাঁর ছায়া মোটেই প্রকাশ পেত না। জ্ঞতাওয়ারীখে হাবীবে ইলাহঞ্চ কিতাবে মুফতী এনায়েত আহমদ আলায়হির্‌ রহমাহ্‌ উল্লেখ করেছেন-

آپ کا بدن نورتھا اس وجہ سے آپ کا سایہ نہ تھا অর্থাৎ তাঁর দেহ মুবারক নূর ছিল; তাই তাঁর ছায়া ছিল না।

দেওবন্দী ওহাবীদের মুরুব্বী মৌং রশিদ আহমদ গাঙ্গূহী স্বীয় কিতাব জ্ঞএমদাদুস্‌ সুলুকঞ্চ (মুদ্রিত বেলালী দুখানী প্রেস, সাডোরা)- حق تعالیٰ آں جناب سلامہ علیہ را نور فرمود وبتواتر ثابت شد کہ آنحضرت عالی سایہ ندا شتہ وظاہر است کہ بجز نور ہمہ اجسا م سایہ می دارند

এ অর্থাৎ আল্লাহ্‌ তা’আলা হুজূর পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে (কোরআনে করীমে) নূর বলেছেন এবং তাওয়াতুর বা সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রমাণিত যে, হুজূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ছায়া ছিল না।আর এ কথা স্পষ্ট যে, নূর ছাড়া সমস্ত শরীর সমূহের ছায়া থাকে।

উল্লিখিত বর্ণনাসমূহ থেকে দ্বিপ্রহরের চেয়েও পরিস্কার শগ্ধহ বৎহ যে,হুজূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আপাদমস্তক নূরই ছিলেন। অতঃপর নবীজীর দেহ মুবারককে মাটির তৈরি বলা অজ্ঞতা,পথভ্রষ্টতা ও নবীবিদ্বেষীর নামান্তর এবং তারা যে, কোরআন-হাদীস তথা দ্বীন সম্পর্কে একেবারে জাহেল ও অজ্ঞ তারই প্রমাণ বহন করে।এ ধরনের নবীবিদ্বেষী মুনাফিক্বদের চক্রান্ত হতে আল্লাহ্‌ পাক সবাইকে হিফাযত করুন। আমীন।
[সূত্র. যুগ জিজ্ঞাসা, পৃ. ৬৯-৭১]

🔃সহীহ মুসলিম শরীফের ২য় জিলদের ৩০১ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে, হযরত হাসসান (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে তাঁরই শানে আরবি কবিতা আবৃত্তি করেছেন।হযরত হাসসান বিন সাবিত (রাঃ) মিম্বরে দাঁড়িয়ে যে সমস্ত কবিতা আবৃত্তি করতেন সে কবিতাগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি শ্লোক বা কবিতা নিন্মে পেশ করা হল:
ﺍﻧﻚ ﻭﻟﺪﺕ ﻣﺒﺮﺍ ﻣﻦ ﻛﻞ ﻋﻴﺐ
ﻛﺎﻧﻚ ﺧﻠﻘﺖ ﻛﻤﺎ ﺗﺸﺎﺀ
ﻭﺿﻢ ﺍﻻ ﻟﻪ ﺍﺳﻢ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺑﺎﺳﻤﻪ
ﺍﺫﺍ ﻗﺎﻝ ﻓﻰ ﺍﻟﺨﻤﺲ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﺍﺷﻬﺪ
ﻭﺷﻖ ﻟﻪ ﻣﻦ ﺍﺳﻤﻪ ﻟﻴﺠﻠﻪ
ﻓﺬﻭ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﻣﺤﻤﻮﺩ ﻭﻫﺬﺍ ﻣﺤﻤﺪ
‏(ﺩﻳﻮﺍﻥ ﺣﺴﺎﻥ ০ ﺣﻠﺒﻰ ﺷﺮﻳﻒ )

অর্থাৎ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আঁপনি সর্বপ্রকার দোষত্রুটি হতে মুক্ত হয়েই আগমন করেছেন।আঁপনার এই সুরত মনে হয় যেন আঁপনার ইচ্ছা অনুযায়ীই সৃষ্টি করা হয়েছে।আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর নাম নিজের নামের সাথে সংযুক্ত করেছেন।এর প্রমাণ হল, যখন মুয়াজ্জিন পাঞ্জেগানা নামাজের জন্য আশহাদু আন্না মুহাম্মাাদার রাসূলুল্লাহ বলে আজান দেয়।আল্লাহ তা’য়ালা আঁপন নামের অংশ দিয়ে নবীজীর নাম রেখেছেন,তাঁকে অধিক মর্যাদাশীল করার লক্ষ্যে।এর প্রমাণ হচ্ছে আরশের অধিপতির নাম হলো মাহমুদ এবং তাঁর নাম হল মুহাম্মাদ।
[দিওয়ানে হাসসান দ্র: এবং শেষের দুটি শ্লোক সিরতে হলবী নামক কিতাবের ১ম খণ্ড ৭৯ পৃষ্ঠায় আছে]

✊স্বয়ং আল্লাহ পাক ঘোষনা দেন,হে হাবীব (ﷺ) “আঁমি আঁপনার (মর্যাদার) জন্য আঁপনার আলোচনাকে বা স্মরনকে বা জিকিরকে বা খ্যাতিকে বা সুনামকে বা মর্যাদাকে বা শান শওকতকে বা শানও মানকে সমুচ্চ/ সমুন্নত/আ’লা মাকাম/উচ্চ মর্যাদা দান করেছি।
অর্থাৎ, যেখানে আল্লাহর নাম আসে সেখানে তাঁরও (নবীর) নাম আসে।যেমন, আযান,নামায এবং আরো অন্যান্য বহু জায়গায়।(এই হিসাবে সারা বিশ্বে প্রতি মুহূর্তেই লক্ষবার তাঁর নাম উচ্চারিত হয়ে থাকে।) পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহে নবী ﷺ -এঁর নাম মোবারক এবং গুণ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা হয়েছে।ফিরিশতাদের মাঝেও তাঁর সুনাম উল্লেখ করা হয়।নবী (ﷺ) -এঁর আনুগত্যকেও মহান আল্লাহ নিঁজের আনুগত্যরূপে শামিল করেছেন এবং নিঁজের আদেশ পালন করার সাথে সাথে তাঁর আদেশও পালন করতে মানব সম্প্রদায়কে নির্দেশ দিয়েছেন।
[সূরা আল ইনশিরাহ,আয়াত: ৪]

➡️এবং আমরা আঁপনার (রাসুলে পাক ﷺ ) জিকিরকে সমুচ্চ করে দিয়েছি… হযরত আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) থেকে ঈমাম বুখারী বর্ণনা করেন, রাসুলে পাক ﷺ হজরত জিব্রাইল (আঃ) কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, বলুন উপরুক্ত আয়াতের অর্থ কি? হযরত জিব্রাইল (আঃ) বলেছিলেন, এর অর্থ, আল্লাহ পাক বলেন, যখন আঁমার নাম স্মরণ করা হবে, তখন স্মরণ করা হবে আঁপনার নামও। —তাফসীরে মাজহারী (১২ তম খন্ড)

➡️আবার এভাবেও তাফসীরের কিতাবে বর্ননা এসেছে। আল্লাহ ঘোষণা দেন: “আর(হে হাবীব ﷺ )! আঁমি আঁপনার স্মরণকে সমুন্নত করেছি।”
[সূরা ইনশিরাহ,আয়াত নং ৪]

Explain: আল্লাহ তাঁর হাবিব (ﷺ) এঁর নাম মোবারক অংকিত রেখেছেন।
—কালেমা
—আল-কুরআন
—আযান
—খুতবা
—নামাজ
—৭ আসমানের স্তরে স্তরে
—সিদরাতুল মুন্তাহার পাতায় পাতায়
—জান্নাতের প্রত্যেক দরজায়
—সকল ফেরেশ্তাদের চুখের মনিতে ওঁনার নাম মোবারাক অংকিত রেখেছেন।
[তাফসীরে কাঞ্জুল ইমান ও খাজাইনুল ইরফান]
[ইন-শা-আল্লাহ আলোচনা চলবে…..]

Leave a comment