রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?

[পরিমার্জিত সংকলন ৪৮-৫০পর্ব]

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(৪৮ম পর্ব)

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

★২৪৯. এ পর্যায় ইন-শা-আল্লাহ আলোচনা করার চেষ্টা করবো রাসূল (ﷺ) হলেন বেমেচাল সৃষ্টি,উঁনার সাথে আল্লাহ পাকের কোন সৃষ্টির তুলুনা কোনভাবেই হতে পারেনা-[1st part]

যে সকল আয়াতগুলো দ্বারা রাসূল (ﷺ) কে তারা আমাদের মত মানুষ প্রমান করতে চায় কোরআনে এরকম ১১টি আয়াত রয়েছে যার মধ্যে “বাশারুম মিছলুকুম” এবং “বাশারুম মিছলুনা” এ দুটি শব্দ রয়েছে।

✌”বাশারুম মিছলুকুম ” শব্দটি কোরআনের তিনটি আয়াতে রয়েছে যেখানে রাসূল (ﷺ) উঁনার বিনয় বা নম্রতা প্রকাশের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।আয়াত গুলো হল:

*১.সূরা ইব্রাহীম,আয়াত নং ১১ 
*২. সূরা কাহাফ,আয়াত নং ১১০
*৩.সূরা হা-মীম সেজদাহ,আয়াত নং ৬

বাশারুম মিছলুকুম শব্দের ৪টি আয়াত।আয়াত গুলো হলঃ
*১.সূরা আম্বিয়া,আয়াত নং ৩
*২.সূরা মুমিন,আয়াত নং ২৪,৩৩,৩৪।

অপরদিকে বাশারুম মিছলুনার চারটি আয়াত হলঃ
*১.সূরা ইয়াসীন,আয়াত নং ১৫
*২.সূরা আরাফ,আয়াত নং ১৫৪
*৩.সূরা ইব্রাহীম,আয়াত নং ১০
*৪.সূরা শু-আরা,আয়াত নং ১৮৬

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে,এ বিষয়ে আলোচনা আসলেই কতিপয় লোক সূরা কাহাফের ১১০ নং আয়াতের কথা তুলে ধরেন।এখন সে বিষয়েও আলোচনা করবোঃ

 ✌পবিত্র কেরআনে ইরশাদ হয়েছে

قل انما انا بشر مشلكم يوحي الي

অর্থ : হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ল! আঁপনি বলুন আঁমি তোমাদের মেছাল একজন বাশার বা মানুষ,তবে আঁমার প্রতি ওহী নাযিল হয়!”
[সূরা কাহাফ,আয়াত নং ১১০]

      ব্যাখ্যা-বিশ্লেষন

*(ক.) এখানে আরবী শব্দ بَشَرٌ (বাশার) দ্বারা তারা শুধুমাত্র মানুষ বুঝাতে চায়। অথচ সূরা মরিয়মের ১৭ নং আয়াতে بَشَرً (বাশার) দ্বারা ফেরেস্তাকে বুঝানো হয়েছে।আপনারাই দেখুন সূরা মরিয়মে কি বলা হয়েছে
فَاتَّخَذَتْ مِن دُونِهِمْ حِجَابًا فَأَرْسَلْنَا إِلَيْهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا

অর্থঃ আঁমি আঁমার রুহ (হযরত জিব্রাইল আঃ) কে তাঁর (হযরত মরিয়ম) প্রতি প্রেরণ করেছি, অতঃপর সে (জিব্রাঈল আঃ) তাঁর সামনে একজন পূনাঙ্গ সুঠোম \”বাশার\” বা মানুষ এর আকৃতিতে আত্ম প্রকাশ করেছেন।

✌তাহলে এখন কি বলা যাবে ফেরেস্তারা (হযরত জীব্রাইল আলাইহিস সালাম) আমাদের মত মানুষ? কখনও নয়।সুতরাং, এর দ্বারা বুঝা গেল بَشَرٌ (বাশার) শব্দ দ্বারা মানুষ বুঝায় না বরং মনুষ্য আকৃতি বুঝায়।

✌তার সপক্ষে আরেকখানা আয়াত লক্ষ্য করুন:

وَلَوْ جَعَلْنَاهُ مَلَكًا لَجَعَلْنَاهُ رَجُلًا وَلَلَبَسْنَا عَلَيْهِمْ مَا يَلْبِسُونَ
অর্থঃ যদি আঁমি কোন ফেরেশতাকে রসূল করে পাঠাতাম,তবে সে মানুষের আকারেই হত।এতেও ঐ সন্দেহই করত, যা এখন করছে।
[সূরা আল আনআম,আয়াত নং ৯]

*(খ.) بشر مثلكم শব্দটা উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত ” মেছাল” শব্দটা দৃষ্টান্তের জন্য ব্যাবহার হয়।এ প্রসঙ্গে আক্বায়িদের কিতাবে উল্লেখ আছে:

الرسول انسان بعثه الله تعالي الي الخلق لتبليغ الاحكام
অর্থ: শরীয়তের পরিভাষায় রাসূল এমন একজন বাশার কে বলা হয়,যাকে আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির জন্য পাঠিয়েছেন!” 
[শরহে আক্বাইদে নসফী ]

*(খ) প্রকৃতপক্ষে হাক্বীক্বী অর্থ করলে হয় “হে আঁমার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আঁপনি ওই মুশরিকদের বলে দিন যে,আঁমি তোমাদের মেছাল (ছূরতান) একজন মানুষ,(হাক্বীক্বতান আঁমি শ্রেষ্ঠতম রাসূল) আঁমার নিকট ওহী মুবারক এসে থাকে।

*(গ)কুল- বলুন, ইন্না-নিশ্চয়ই,মা -(কি,না), আনা বাশারুম- আঁমি বাশার(মানুষ),মিস্ লুকুম-তোমাদের মতো, ইউহা- ওহি করা হয়, ইলাইয়া-আঁমার দিকে, আন্নামা-যে, ইলাইকুম-তোমাদের ইলাহা, ইলাহুন-ইলাহা, ওয়াহিদুন -এক।
সম্পৃর্ণ অর্থ দাঁড়ায়- বলুন,নিশ্চয়ই আঁমি কি বাশার(মানুষ) তোমাদের মতো ? আঁমার দিকে ওহি করা হয় যে তোমাদের ইলাহাই একই ইলাহা।আদম সন্তান যে উপাদানে সৃষ্টি, তিঁনি ও সে উপাদানে সৃষ্টি  এরকম কথা এখানে বলা হয়নি।

প্রথম অংশ-নিশ্চয়ই আঁমি কি বাশার(মানুষ) তোমাদের মতো? যেহেতু বাক্যংশটুকু “হ্যাঁবোধক” তাই এর অর্থ হবে “নাবোধক”অর্থাৎ এ অংশই বলে দিচ্ছে তিঁনি আমাদের মতো নন।

এর পরের অংশে বলা হচ্ছে-আঁমার দিকে ওহি করা হয় বা আঁমার উপর ওহী অবতীর্ণ হয়।এ অংশই বলে দিচ্ছে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এঁর কাছে ওহি আসত।

*(ঘ)এখানে কুল -আমরে হাজর ওয়াহেদ,ইন্নামা হা যা কালিমায়ে হসর । এখানে কালিমায়ে হসর এসেছে একমাত্র অর্থ দেওয়ার জন্য। “কুল ইন্নামা” এর অর্থ হে নবী দরূদ ও সালাম একমাত্র আঁপনার জবানে আঁপনি বলুন,আনা-আঁমি , বাশারুম-মানে জিন্দুন।

জিন্দুন মানে চামড়া/নমুনা/সুরুত অর্থাৎ আমি নকশায় নমুনায় দেখতে,উপরের কভারের দিক দিয়ে,মিছলুকুম-তোমাদের মতই মানুষ।

✊এখানে কথাটি শুধু রাসুলের ক্ষেত্রে খাছ।দুনিয়ার অন্য কারোও জবানে একথা বলা নিষিদ্ধ।কোন কারনে,কাদের উদ্দেশ্য নাযিল করা হল।আবার এখানে একদিকে “বাশার” শব্দ,আরেক দিকে “ওহী “শব্দ কেন লাগানো হল? তা বুঝতে হবে।

*(ঙ)হে নবী আঁপনি বলুন! আঁমি তোমাদের মত।উক্ত আয়াতে আল্লাহ  রাসূল ﷺ কে জনসম্মুখে বাশার বলার উদ্দেশ্য হল বিনম্রতা প্রকাশ করার জন্য।যেমনঃ কোন রাজা তার প্রজাদের  উদ্দেশ্য যদি বলেন “আমি তো আপনাদের গোলাম,আপনাদের খেদমতে নিয়োজিত রয়েছি।” তাহলে এখন প্রজারা যদি রাজাকে গোলাম বলে ডাকে, তাহলে অবস্থা কি দাঁড়াব? একবার ভাবুন।
[তাফসীরে কবির,৫ম খণ্ড,৫১৬পৃঃ]

বিশ্ববিখ্যাত তাফসির রুহুল বয়ান ও জালালাইন শরীফ এ আর ও বলা হয়েছে,”আল্লাহ নিঁজে এই কথা বলে রাসুল কে উদারতা শিক্ষা দিয়েছেন।

*(চ)এটি আয়াতে মুতাশাবিহাত!?! আল্লামা আব্দুল হক মোহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) বলেন
قل انماانابشرمثلكم
“কুল ইন্নামা আনা…….. ” এরকম যত আয়াত আছে এগুলো হল মুতাশাবিহাত।
[মাদারেজুন নবুয়্যত,১ম খণ্ড, অধ্যায়,ওয়াচলে ইজলাতুস শুবাহাত]

*(ছ).আল্লামা জালালউদ্দীন সূয়তী (রহঃ) বলেন “আল কোরআনে যে সমস্ত আয়াতেمثلكم শব্দটি এসেছে, এইগুলি আয়াতে মুতাসাবিহাতের আওতাভুক্ত।মুতাসাবিহাত এর অর্থ আল্লাহ এবং রাসুল ছাড়া কেও জানেনা,তাই সর্বসম্মতিক্রমে এই আয়াত দ্বারা কোনো দলিল হতে পারেনা।
[আল ইতকান ফি উলুমিল কুরআন,২য় খণ্ড,৩ পৃঃ]

*(জ)আয়াতে মুতাশাবিহাতের ব্যপারে কোরআনের সতর্কবানী দেখুনঃ তিঁনি আঁপনার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছেন যাহার কিছু আয়াত “মুহকাম”এই গুলো কিতাবের মূল; আর অন্যগুলো “মুতাশাবিহ্” যাহাদের অন্তরে সত্য লংঘন করার প্রবনতা রয়েছে,শুধু তাহারাই ফিতনা ও ভুল ব্যখ্যার উদ্দেশ্য মুতাশাবিহাতের অনুসরন করে।

*আল্লাহ ব্যতীত ইহার ব্যখ্যা অন্য কেহ জানে না।আর যাহারা জ্ঞানে সুগভীর তাহারা বলে” আমরা ইহা বিশ্বাস করি,সমস্তই আমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে আগত; এবং বোধশক্তি সম্পূর্নরা ব্যতীত অপর কেহ ইহার শিক্ষা গ্রহন করে না।” 

[সূরা আল ইমরান,আয়াত নং ৭, তাফসীরে ইবনে কাসীর]

✊সুতরাং কুল ইন্নামা আনা……..কোন দলিল গ্রহন করা যাবে না।

*(ঝ.) মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী মসনবী শরীফে বলেন- কাফিররাই হজরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে বশর বলেছিল, কিন্তু তারা দেখে না যে,তিঁনি চন্দ্র কে দিখন্ডিত করেছিলেন,তারা বলেছিল “আমরা যেমন বশর নবীও আমাদের মত বশর” যেমন-ঘুমাই,পানাহার করে,তারা অজ্ঞাত ছিল যে,আমাদের এবং নবীদের মধ্য বেশুরম পার্তক্য রয়েছে।

✌মূল কথা হল: ঈসা(আ:) এঁর কিছু মোজেযা ছিল কিন্তু তাই দেখে উঁনাকে ইশ্বরের পুত্র বলা শুরু করল সবাই।রাসূল (ﷺ) কে যেন এমনকিছু না মনে করেন সেজন্য কিছু হাদিসে নবী এবং মানুষ এর বেশি না ভাবার জন্য সতর্কও করেছেন।এর মানে এটাই সীমার বাইরে গিয়ে কেউ যেন কুফরি না করেন।রাসূল (ﷺ) এঁর সারাটা জিন্দেগি ছিল অসীম মোজেযার সাগর তাই দেখে কাফিররা ফতোয়া দিল জাদুকর, রহমতের নবীকে সাধারন মানুষ ভয় পেয়ে দূরে সরতে থাকে তখন সেই পরিস্থিতিতে আল্লাহ কি ওঁনাকে শিখিয়ে দিয়ে এই আয়াত নাযিল করলেন যে: বলুন ”হে রাসূল ! আঁমিও তোমাদের মত মানুষ “।কেননা এই কথার দ্বারা রাসূলের বিনম্রতা তথা উদারতা প্রকাশ পেয়েছে।তার মানে এই নয় যে,তিঁনি আমাদের মত।(নাউযুবিল্লাহ)। কারন তিঁনি বেমেসাল মাখলুক।

*(ঞ.) এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় তাফসীরে রুহুল বায়ান শরীফে বলা হয়েছে-

قل يا محمد ما انا الا أدمي مثلكم فى الصورة ومساويكم في بعض الصفات البشرية

অর্থাৎ, বলুন হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম),আমিতো আকৃতিতে তোমাদের মতই মানুষ আর কতেক মানবীয় বৈশিষ্ট্যে তোমাদের সমান।
[রুহুল বায়ান ফি তাফসিরিল কুরআন,৫ম খন্ড,পৃষ্ঠা: ৩৫৩,ছাপা: দারুল ফিকর,বৈরুত,লেবানন]

এ বর্ণনা দ্বারা বুঝা গেল যে,নবী পাক আকৃতি ও কতেক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে মানুষের মত,কিন্তু হাকীকতে আমাদের মত নয়।

✊আর এ বিষয়টি ছিল নবী পাকের একান্ত নিজস্ব বিষয় এবং উনার জন্যই খাছ। এ কারণেই আয়াতে انما শব্দটি ব্যবহার হয়েছে।যা আরবী ব্যাকরণ অনুযায়ী সীমাবদ্ধতার অর্থে এসে থাকে। সুতরাং অর্থ হবে এই যে,হে নবী একমাত্র আঁপনি বলুন।নবীগণ নিঁজের ক্ষেত্রে বিনয় শিক্ষা দেয়ার জন্য অনেক কিছুই বলতে পারেন,যা উম্মতের জন্য বলা হারাম বরং কখনো কুফুরীও বটে।যেমন- আদম আলাইহিস সালাম বলেছিলেন- ربنا ظلمنا انفسنا অর্থাৎ, হে আ্মার রব, আঁমি আঁমার নফসের উপর যুলুম করেছি।হযরত ইউনূস আলাইহিস সালাম বলেছিলেন- لا اله الا انت سبحانك انى كنت من الظالمين অর্থাৎ, হে আল্লাহ, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই,পবিত্রতা তোমারই। নিশ্চয়ই আমি যালিমদের অন্তর্ভূক্ত।

✊অথচ উম্মতের কেহ তাদেরকে যালিম বললে কাফের হয়ে যাবে।নবীজী নিজেকে নিজে ‘বাশার’ বলেছেন এটাও নবীজীর একান্ত একক বৈশিষ্ট্য-বিনয় ছিল। এর অর্থ এ নয় যে,উম্মত তোমরাও আমাকে তোমাদের মত বল।আর নবীজীকে আমাদের মত মানুষ বলার দ্বারা দোষীই সাব্যস্ত করা হয়। কেননা-

الانسان مركب من الخطاء والنسيان

অর্থাৎ, মানুষ ভুল-ত্রুটির সংমিশ্রণেই হয়ে থাকে।কিন্তু তিনিতো সেই সত্ত্বা যিনি যাবতীয় ভুল-ত্রুটির অনেক উর্ধ্বে, স্বয়ং রবের মাহবুব।

*(ট.) এবার কোরআন শরীফের দুটি ভিন্ন আয়াতে কি বলা হয়েছে দেখুন:

ينساء النبى لستن كاحد من النساء

অর্থ: হে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম! অর্থাৎ উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম আঁপনারা অন্য কোন মহিলাদের মতো নন।
[সূরা আহযাব,আয়াত নং ৩২]

✌এখানে রাসূল (ﷺ) এঁর স্ত্রীগনকে সরাসরি বলা হয়েছে” আঁপনারা জগতের অন্য কোন মহিলার মত নন।”সেখানে উম্মতের কাণ্ডারী, রাহমাতুল্লীল আলামীন নবীজি কি করে আমাদের মত হন?? কেনই বা উঁনার সাথে তুলুনা হবে??

আবার ও লক্ষ্য করুনঃ

من اتخذ الهه هواه واضله الله على علم وختم على سمعه وقلبه وجعل على بصره غشاوة

অর্থ: “যে ব্যক্তি তার খেয়াল-খুশিকে স্বীয় উপাস্য স্থির করে নেয়, মহান আল্লাহ পাক তিঁনি জেনে শুনেই তাকে পথভ্রষ্ট করেন,তার কান ও অন্তরে মোহর মেরে দেন এবং তার চোখের উপর আবরণ বা পর্দা রেখে দেন।” 
[সূরা আল-জাসিয়াহ,আয়াত নং ২৩]

কেননা
يوحى الى
অর্থাৎ “আঁমার নিকট ওহী মুবারক এসে থাকে” এ বাক্যটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনাকে অন্য মানুষ থেকে আলাদা করে দিয়েছে। কেননা অন্য মানুষের নিকট ওহী মুবারক আসে না।

এখন জেনে শুনে, ইচ্ছা করে যদি কেউ রাসূলকে আমাদের মত মানুষকে রাসূলের সাথে তুলনা করে,তাহলে তার পরিনতি কি হবে? যা আল্লাহ তায়ালা তা সূরা জাসিয়াহর ২৩ নং আয়াতে বলে দিয়েছেন।

কোরআন শরীফে এমন অনেক আয়াত রয়েছে যেখানে আল্লাহ নবী রাসূলগনকে প্রেরন করেছেন পাঠিয়েছেন, হিদায়াতকারী,পথ-প্রদর্শক রূপে ইত্যাদি। রাসূলের বেলায় আল্লাহ কত সুন্দর উপমা ব্যবহার করে আয়াতে কারীমা নাযিল করলেন।যেমনঃ ইয়াসীন(ﷺ) আর আমাদের বেলায় কি তা হয়েছে? না হয় নি।আবার রাসূলকে স্বয়ং আল্লাহ কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন।এ কথা কেন আল্লাহ প্রকাশ করলেন? এটাতো গোপন থাকলে ও হতো। এটার হাকিকত হল “ওহে জগতবাসী! আঁমার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আঁমি আল্লাহ স্বয়ং কোরআন শিক্ষা দিয়েছি অর্থাৎ এলেম শিক্ষা দিয়েছি মানে হল আমার হাবিবের শিক্ষক স্বয়ং আঁমি আল্লাহ”।

[সূরা আর-রাহমান,আয়াত নং ২]

এখন  আমাদের ক্ষেত্রে কি তা সম্ভব? কখনো তা সম্ভব নয়।আর আমাদের বেলায় এরকম একটি উদাহরন দেখান।আল্লাহর নামে শপথ করে বলতেছি; যদি দেখাতে পারেন তাহলে সরাসরি ঘোষনা দিয়ে মেনে নিব।

মূলত:নবী রাসূল আলাহিমুস সালাম উঁনাদেরকে নিজেদের মত মানুষ বলাটা কাফের-মুশরিকদের রীতি।

 ♠♠লক্ষ্য করুন♠♠

**১. হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উঁনার ক্বওম এবং আদ ও ছামূদ গোত্রের লোকেরা হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শানে বেয়াদবী করে বলেছিলো-
ان انتم الا بشر مثلنا

অর্থাৎ আঁপনারা তো আমাদের মতোই বাশার (মানুষ)। 
[সূরা ইব্রাহীম,আয়াত নং ১০]

**২. হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উঁনার জাতির সর্দারেরা উঁনার রিসালাতকে অস্বীকার করে নিজেদের অনুসারীদের বলতো,
فقال الملؤا الذين كفروا من قومه ماهذا الابشر مثلكم
অর্থ : তাঁর জাতির সর্দারেরা তাদের অনুসারীদের বলল,”এ লোকটি তোমাদের মতই একজন মানুষ ছাড়া আর কিছু নয় !” 
[ সূরা মু’মিনুন,আয়াত নং ২৪]

**৩. হযরত হূদ আলাইহিস সালাম উঁনার সম্পর্কে কাফিরেরা বলেছিলো-

ما هذا الا بشر مثلكم ياكل مما تاكلون منه ويشرب مما تشربون

অর্থাৎ এই লোকটি তিঁনি তো আমাদের মতোই একজন মানুষ। তোমরা যা আহার করো, তিঁনিও তা আহার করেন এবং তোমরা যা পান করো তিঁনিও তা পান করেন।
[সূরা মু’মিনূন,আয়াত নং ৩৩]

✌পরের আয়াতেই সাধারণ মানুষের আনুগত্য করলে ধবংস হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে!

ﻭَﻟَﺌِﻦْ ﺃَﻃَﻌْﺘُﻢ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﻣِﺜْﻠَﻜُﻢْ ﺇِﻧَّﻜُﻢْ ﺇِﺫًﺍ ﻟَّﺨَﺎﺳِﺮُﻭﻥَ

অর্থঃ যদি তোমরা তোমাদের মতই একজন মানুষের আনুগত্য কর,তবে তোমরা নিশ্চিতরূপেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
[সূরা আল মুমিনূন,আয়াত নং ৩৪]

**৪. ফিরআউনের লোকেরা হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ও হযরত হারূন আলাইহিস সালাম উঁনাদের ব্যাপারে বলেছিলো
انؤمن لبشرين مثلنا

অর্থাৎ আমরা কি আমাদের মতোই দু’জন বাশার তথা মানুষ উঁনাদের উপর ঈমান আনবো।
[সূরা মু’মিনূন,আয়াত নং ৪৭]

**৫. কাফির সর্দাররা হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উঁনাকে বলেছিলো

ما نراك الا بشرا مثلنا
অর্থাৎ আমরা তো আঁপনাকে আমাদের মতোই (বাশার) মানুষ দেখতে পাচ্ছি।
[সূরা হুদ,আয়াত নং ২৭]

**৬. সামুদ জাতির লোকেরা হযরত সালেহ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেছিলো —
قالوا انما انت من المسحرين ما انت الا بشر مثلنا
অর্থ : তোমাকে যাদু করা হয়েছে। তুঁমি আমাদের মত মানুষ ছাড়া আর কি ? 
[সূরা আস শুয়ারা,আয়াত নং ১৫৩- ১৫৪ ]

**৭. হযরত শু’আইব আলাইহিস সালাম দাওয়াত দিতে গেলে বলা হয়েছিল কাফির-মুশরিকরা বলত

ﻭَﻣَﺎ ﺃَﻧﺖَ ﺇِﻟَّﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﻣِّﺜْﻠُﻨَﺎ ﻭَﺇِﻥ ﻧَّﻈُﻨُّﻚَ ﻟَﻤِﻦَ ﺍﻟْﻜَﺎﺫِﺑِﻴﻦَ

অর্থঃ তুঁমি আমাদের মত মানুষ বৈ তো নও। আমাদের ধারণা-তুমি মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।
[সূরা আস-শুয়ারা,আয়াত নং ১৮৬]

**৮. ইনতাকিয়া শহরের অধিবাসীরা ও ঈসা আলাইহিস সালাম উনার প্রতিনিধিদের বলেছিলো

قالوا ما انتم الا بشر مثلنا

অর্থ – তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ !” 
[সূরা ইয়াসিন,আয়াত নং ১৫]

**৯. নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার সম্পর্কে ও কাফিরেরা বলেছিলো-
هل هذا الا بشر مثلكم افتاتون السحر وانتم تبصرون.
অর্থ: “ইনি তো তোমাদের মতো ‘বাশার’ ব্যতীত কেউ নন। তা সত্ত্বেও কি তোমরা দেখে শুনে জাদুর শিকার হবে।”
[সূরা আম্বিয়া,আয়াত নং ৩]

**১০. নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার সম্পর্কে তারা আরো বলতো-

مال هذا الرسول ياكل الطعام ويمشى فى الاسواق
অর্থ: “ইঁনি কেমন রাসূল যিঁনি খাদ্য খান এবং বাজারে যান।”
[সূরা ফুরকান,আয়াত নং ৭]

**১১. মক্কার কাফির ওলীদ বিন মুগীরা সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার সম্পর্কে বলেছিলো-
ان هذا الا قول البشر

অর্থাৎ, ইহা তো মানুষের কথা ছাড়া আর কিছু নয়।
[সূরা মুদ্দাছ্ছির,আয়াত নং ২৫]

**১২. অপর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে

وَلَا تَأْكُلُوا۟ مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ ٱسْمُ ٱللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُۥ لَفِسْقٌ وَإِنَّ ٱلشَّيَٰطِينَ لَيُوحُونَ إِلَىٰٓ أَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَٰدِلُوكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ

“আর নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে ওহী করে,যেন তারা তোমাদের সাথে বিবাদ করে।যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তোমরা ও মুশরেক হয়ে যাবে।”
[সুরা-আন আম,আয়াত নং ১২১]

সুতরাং উল্লেখিত পবিত্র আয়াতে কারীমা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে,হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালামগনকে নিজেদের মতো মানুষ বলা কাফিরদের অন্যতম একটি স্বভাব।

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(৪৯ম পর্ব)

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

★২৪৯. এ পর্যায় ইন-শা-আল্লাহ আলোচনা করার চেষ্টা করবো রাসূল (ﷺ) হলেন বেমেচাল সৃষ্টি,উঁনার সাথে আল্লাহ পাকের কোন সৃষ্টির তুলুনা কোনভাবেই হতে পারেনা-[2nd part]

*(ক.) হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে

عن ابي هريرة رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم ليكم مثلي

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্নিত,হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,তোমাদের মধ্যে আঁমার অনুরূপ কে রয়েছো ?
[বুখারী শরীফ ১/২৬৩,ফতহুল বারী ৪/১৬৭]

অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে কেউই আঁমার মত নয়।বা আঁমি তোমাদের কারো মত নই। তাই জনৈক কবি বলেছেন, “হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাশার,তবে তিঁনি অন্যান্য বাশারের মত নন।যেরূপ ইয়াকুত পাথর অন্যান্য পাথরের মত নয়।”

👏হযরত মাওলানা মুহম্মদ আব্দুল আলী লখনবী “মীর যাহিদ” কিতাবে উল্লেখ করেছেন,“আল্লাহ সুবহানু তা’আলা তাঁর হাবীব হুযূর কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সমস্ত বিষয়েরই ইল্‌ম দান করেছেন,যা মহান আল্লাহ পাক এঁর মহান কুদরতী কলম বা কলমে আ’লার আওতায়ও আসেনি।যা লাওহে; মাহ্‌ফুজও আয়ত্ব করতে পারেনি। কস্মিনকালেও সৃষ্টির শুরু থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত তাঁর মত কেউ পয়দা হয়নি,কেউ তাঁর সমকক্ষ হবে না।

*(খ.) হাদীস শরীফে আরো বর্নিত আছে-

عن ابي سعيد رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم اني لست كهيتكم

অর্থ : হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) হতে বর্নিত, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,নিশ্চয়ই আঁমি ছুরতান বা আকৃতিগত ভাবেও তোমাদের মত নই।”
[বুখারী ১/২৬৩,ফতহুল বারী ৪/১৬৫]

✊হযরত আবূ সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,

عن ابي سعيد رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم اني لست كهيتكم

রাসুলে কারীম (ﷺ) ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আঁমি আকৃতিগতভাবে তোমাদের মত নই।”
[বুখারী ১/২৬৩, ফতহুল বারী ৪/১৬৫]

*(গ.) রাসূল (ﷺ) বলেন, “তোমাদের কে আছো আঁমার মত?” “আঁমি তোমাদের কারো মত না!” “তোমাদের কেহ আঁমার অনুরূপ (সাদৃশ, শামিল, এক রকম) না, আঁমি যখন রাতে ঘুমাই তখন আল্লাহ্ আঁমাকে আহার করান এবং পান করান”।
[ বুখারী শরীফ:৩/১৮২-৮৫, ১৮৭, ১৮৮; ৯/৯০/৩৪৭,৩৪৮]

*(ঘ.) খলীফাতুল মুসলিমীন,বাবুল ইলম ওয়াল হিকাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
لم ارقبله و لا بعده مثله

অর্থ: আঁমি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার পূর্বে এবং পরে উঁনার মত আর কাউকে দেখিনি !”
[তিরমীযি শরীফ,২য় খন্ড ২০৫ পৃষ্ঠা- হাদীস নং ৩৬৩৭]

*(ঙ.) হাদিস শরীফে বর্নিত হয়েছে

عن عبدالله بن عمرو رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم لست كاحد منكم
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,আঁমি তোমাদের কারো মত নই !”
[বুখারী শরীফ-কিতাবুস সিয়াম ১ম খন্ড ২৬৩ পৃষ্ঠা – হাদীস নং ১৮৪০,মুসলিম শরীফ ১৫৮৭, আবু দাউদ শরীফ/১৩৭ ]

✌আবার এরকম বর্ননা ও রয়েছে:

عن عبد الله بن عمر رضي الله عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه و سلم اني لست مثلكم
অর্থ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আঁমি তোমাদের অনুরুপ নই।”
[বুখারী শরীফঃ কিতাবুস সিয়াম-১ খন্ড ২৬৩ পৃষ্ঠ,ফতহুল বারী ৪/১৬৪]

*(চ.) সৃষ্টকুলে নবীজি (ﷺ) এঁর মত কেউ নেই

٣١-عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : ” نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الوِصَالِ ، قَالُوا : فِإِنَّكَ تُوَاصِلُ ، قَالَ : أيُّكُمْ مِثْلِي ؟ ، إِنِّي أَبِيتُ يُطْعِمُنِي رَبِّي وَيَسْقِينِ . (متفق عليه)

অনুবাদঃ হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন,নবী করীম (ﷺ) সওমে বেসাল (এমন রোজা যার কোন সেহরিও নেই ইফতারও নেই) রাখতে নিষেধ করেছেন।তখন কিছু সাহাবী নবী করীম (ﷺ) এঁর নিকট আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ! আঁপনি নিঁজেও তো সওমে বিসাল পালন করেন।নবী করীম صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ এরশাদ করলেন,তোমাদের মধ্যে কে আছ আঁমার মত? আঁমিতো এমন ভাবে রাত্রিযাপন করি যেন আঁমার রব আঁমাকে খাওয়ান এবং পান করান।
*দলিল
*১. সহিহ বোখারী,রোজা অধ্যায় ২/৬৯৩ হাঃ ১৮৬১
*২. সহিহ মুসলিম ২/৭৭৪ হাঃ ১১০২
*৩. সুনানে আবু দাউদ ২/৩০২ হাঃ ২৩৬০
*৪. সুনানে কুবরা নাসাঈ ২/২৪১ হাঃ ২৩৬৩
*৫. মুয়াত্তা ইমাম মালেক ১/৩০০ হাঃ ৬৬৭
*৬. মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ২/১০২ হাঃ ৫৭৯৫
*৭. সহিহ ইবনে হিব্বান, ৮/৩৪১ হাঃ ৩৫৭৫

*(ছ.) উম্মুল মু’মেনীন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,… তাঁরা (সাহাবীগণ) আরজ করলেন, “কিন্তু আপনি বিরতিহীন সওম পালন করছেন? তিঁনি (ﷺ) বললেনঃ তোমাদের আঁমার মতো না। (আমি যখন রাত্রি যাপন করি) আঁমার প্রতিপালক আঁমাকে খাওয়ান এবং পান করান।”
[সহিহ বুখারী: হাদিস নং ১৮৭]

🌀অসংখ্য হাদিস থেকে মূল বিষয়বস্তু একত্রে দেয়া হল:

⏩এক বর্ণনায়, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

….”তোমাদের কে আছো আঁমার মত?”

⏩অপর বর্ণনায়, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

….”আঁমি তোমাদের কারো মত না!”

⏩অপর বর্ণনায়, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

….”তোমাদের কেহ আঁমার অনুরূপ (সাদৃশ্য) না,

আঁমি যখন রাতে ঘুমাই তখন আল্লাহ্‌ তা’য়ালা আঁমাকে আহার করান এবং পান করান!“
🗻🗻🗻দলিল🗻🗻🗻
★সহিহ বুখারী,হাদিস- ৩:১৮২
★সহিহ বুখারী,হাদিস- ৩:১৮৩
★সহিহ বুখারী,হাদিস- ৩:১৮৪
★সহিহ বুখারী,হাদিস- ৩:১৮৫
★সহিহ বুখারী,হাদিস- ৩:১৮৭
★সহিহ বুখারী,হাদিস- ৩:১৮৮

💥এবার হাদিসগুলো সম্পূর্ণ দেখে নেওয়া যাক:

★১. হজরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত যে, (কোন এক) মাসের শেষভাগে নাবী বিরতিহীন সওম রাখলেন এবং আরো কতিপয় লোকও বিরতিহীনভাবে সওম রাখল।এ সংবাদ নাবী (ﷺ)-এঁর কাছে পৌঁছলে তিনি বললেনঃ যদি আঁমার এ মাস প্রলম্বিত হত,তবুও আঁমি এভাবে বিরতিহীন সওম পালন করতাম। যাতে অধিক কষ্টকারীরা তাদের কষ্ট করা ত্যাগ করে।আঁমি তো তোমাদের মত নই, আঁমার প্রতিপালক আঁমাকে আহার করান এবং পান করান।সুলায়মান ইবনু মুগীরাহ আনাস (رضي الله عنه)-এঁর সূত্রে নাবী (ﷺ) থেকে হুমায়দ-এর অনুসরণ করেছেন।

★★হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)★★
🗻🗻🗻দলিল🗻🗻🗻
*(ক.) আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭৩৪
*(খ.) ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৪৭ *(গ.) সহীহ বুখারী (তাওহীদ) / অধ্যায়ঃ ৯৪/ কামনা,হাদিস নম্বরঃ ৭২৪১

★২. আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বিরতিহীন সওম পালন করতে নিষেধ করলেন।সাহাবীগণ বললেন, আঁপনি বিরতিহীন সওম পালন করছেন? তিঁনি বললেনঃ তোমাদের কে আছ আমার মতো? আঁমি তো রাত কাটাই যাতে আঁমার প্রতিপালক আঁমাকে খাওয়ান ও পান করান।কিন্তু তারা যখন বিরত থাকতে অস্বীকৃতি জানাল,তখন তিঁনি তাদেরসহ একদিন, তারপর আর একদিন সওম পালন করলেন।তারপর তারা নতুন চাঁদ দেখতে পেলেন।তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ যদি চাঁদ আরো (কয়দিন) পরে উদিত হত, তাহলে আঁমি অবশ্যই তোমাদের (সওম) বাড়াতাম।তিঁনি যেন তাদেরকে শাসন করছিলেন।

★★হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)★★
🗻🗻🗻দলিল🗻🗻🗻
*(ক.) সহীহ বুখারী (তাওহীদ)/অধ্যায়ঃ ৯৪/ কামনা (كتاب التمنى), হাদিস নম্বরঃ ৭২৪২
*(খ.) সহীহ বুখারী (ইফাঃ), হা/নং ১৮৪১,
অধ্যায়ঃ ২৩/ সাওম বা রোজা (كتاب الصوم)
*(গ.) আধুনিক প্রকাশনী-৬৭৩৫
*(ঘ.) ইসলামিক ফাউন্ডেশন-৬৭৪৮

★৩. আবূ হুরাইরা (رضي الله عنه) হতে বৰ্ণিত।তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা ইফতার না করে লাগাতার সওম রেখো না।তখন মুসলিমদের মধ্য হতে জনৈক ব্যক্তি বলে উঠলো: হে আল্লাহর রসূল! আঁপনি তো ইফতার না করে লাগাতার সওম রাখেন। উত্তরে নাবী (ﷺ) বললেন, তোমাদের মধ্যে আঁমার মত কে আছ? আঁমি রাত কাটাই তাতেই আমার রব আঁমাকে খাওয়ান ও পান করান।কিন্তু তাঁরা লাগাতার সওম রাখা থেকে বিরত হলো না।ফলে তাদের সঙ্গে নাবী (ﷺ)ও দু’দিন অথবা (বর্ণনাকারী বলেছিলেন) দু’ রাত লাগাতার সওম রাখলেন।এরপর তারা নতুন চাঁদ দেখতে পেলেন।তখন নাবী (ﷺ) বললেন, যদি চাঁদ (আরও কয়েক দিন) দেরী করে উঠত,তাহলে আঁমিও (লাগাতার সওম রেখে) তোমাদের সওমের সময়কে বাড়িয়ে দিতাম,তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জন্য। (বিসাল অর্থ পানাহার না করেই বিরতিহীনভাবে সওম পালন করা)

★★হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)★★
🗻🗻🗻দলিল🗻🗻🗻
*(ক.) ইবনে হাজার আসকালানীঃ বুলুগুল মারাম / অধ্যায়ঃ পর্ব – ৫ঃ সিয়াম (كتاب الصيام), হাদিস নম্বরঃ ৬৬২
*(খ.) বুখারী ৬৭০১
*(গ.) মুসলিম ১৬৪২
*(ঘ.) তিরমিযী ১৫২৭
*(ঙ.) নাসায়ী ৩৮৫২,৩৮৫৩,৩৮৫৪
*(চ.) আবূ দাউদ ২৩০১
*(ছ.) আহমাদ ১১৬২৭,১১৭১৭,১২৪৭৮

★৪. ইবরাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) খেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছেন যে,তোমরা সাওমে বেসাল করবে না। তোমাদের কউ যদি সাওমে বেসাল করতে চায়,তবে যেন সাহরীর সময় পর্যন্ত করে। সাহাবাগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আঁপনি তো সাওমে বেসাল পালন করেন? তিঁনি বললেনঃ আঁমি তোমাদের মত নই। আঁমি এভাবে রাত যাপন করি যে,আঁমার জন্য একজন আহারদাতা রয়েছেন যিঁনি আঁমাকে আহার করান,একজন পানীয় দানকারী আছেন যিঁনি আঁমাকে পান করান।

★★হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)★★

[সহীহ বুখারী (ইফাঃ) / অধ্যায়ঃ ২৩/ সাওম বা রোজা (كتاب الصوم), হাদিস নম্বরঃ ১৮৪৩]

🔘🔘🔘ইমামগণের বক্তব্য🔘🔘

👉হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
والله ياسين مثلك لم يكن
في العالمين وحق من انباك

অর্থ- আল্লাহ পাক উঁনার কসম! হে ইয়াসিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,সারা জাহানে আঁপনার কোন মেছাল নাই !”
[কাসীদায়ে নু’মান লি ইমাম আবু হানীফা -৩৭ নং পংক্তি ]

👉যেমন কবি বলেছেন–

محمد بشر ليس كالبشر ياقوت حجر ليس كالحجر

অর্থ– হুজুর পাক (ﷺ) বাশার তবে তিঁনি অন্য বাশারের মত নন,যেমন ইয়াকুত পাথর, অন্য পাথরের মত নয়।”

👉হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার সাথে তুলনাতো দূরের কথা পূর্ববর্তী ইমামগন উঁনাদের বয়োজৈষ্ঠ ইমামদের প্রসংশা করে কি বলেন দেখেন!

ইমাম মুসলিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উঁনাকে লক্ষ্য করে বলেন:

اشهد انه ليس في الدني مثلك

অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, পৃথিবীতে আঁপনার মেছাল বা আঁপনার মত আরেকজন নাই !
[মীযানুল আখবার ৪৮ পৃষ্ঠা ]

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(৫০ম পর্ব)

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

★২৪৯. এ পর্যায় ইন-শা-আল্লাহ আলোচনা করার চেষ্টা করবো রাসূল (ﷺ) হলেন বেমেচাল সৃষ্টি,উঁনার সাথে আল্লাহ পাকের কোন সৃষ্টির তুলুনা কোনভাবেই হতে পারেনা-[3rd part]
⬇️
আজকে এ পর্যায়ে ইন-শা-আল্লাহ দেখানো হবে অসীম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন নূরকেও মানবরূপে বা আকৃতিতে বা সূরতে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন ও নূর বাশার সূরতে আসতে পারে কিনা?

দেওবন্দীদের গুরুরা রাসূল (ﷺ) এঁর নূর মুবারককে অস্বীকার করে,কেবল বাশার বাশার করে চিৎকার করে।

আহলে সুন্নাত ওয়াত জামাআতের আক্বীদা হল রাসূলে পাক (ﷺ) এঁর পবিত্র স্বত্ত্বা নূরানী ও বাশারীও সরকারে দু’আলম (ﷺ) এঁর জাত মুবারক বাশারিয়াতের পূর্বেও ছিল,কিন্তু দুনিয়ার মধ্যে বাশারী ছুরতে দৃপ্তি প্রকাশ করেছেন, পোশাক পরিবর্তনের কারণে হাকিক্বত পরিবর্তন হয় না।

যেমন হযরত জিবরাইল (عليه السلام) নূরের তৈরী,কিন্তু তিঁনি যখন হযরত মারিয়াম (عليه السلام)’র নিকট তাশরীফ আনতেন তখন মানব আকৃতিতে আসতেন।এর বর্ণনা মহান আল্লাহ তা’য়ালা উক্ত শব্দগুলোর মাধ্যমে করেছেন।যেমন-
فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا

“সুতরাং তিঁনি তাঁর সামনে একজন সুস্থ মানুষ রূপে প্রকাশ হলেন।”
[সূরা মারিয়াম,আয়াত নং ১৭]

মিশকাত শরীফের প্রথম হাদিস যেটির বর্ণনাকারী দ্বিতীয় খলিফা হযরত সায়্যিদুনা উমর (رضي الله عنه), তিনি বলেন-
نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ ذَاتَ يَوْمٍ إِذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ
“একদা আমরা রাসূলে কারিম (ﷺ) এঁর নিকট ছিলাম,আমাদের কাছে একজন মানুষ আসলেন।”

ইমামুল আম্বিয়া (ﷺ) হযরত ফারুকে আযম (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “এই লোকটি কে? ফারুকে আযম (رضي الله عنه) আরয করলেন, আল্লাহ তা‘য়ালা এবং তাঁর রাসূল (ﷺ) ই অধিক জানেন।সরওয়ারে (ﷺ) তখন ইরশাদ করেন,- فَإِنَّهُ جِبْرِيل -“তিনি হযরত জিবরাঈল (عليه السلام)।”🎆🎇🎇🎇দলিল🎇🎇🎇🎇

*(ক.) খতিব তিবরিযি,মিশকাতুল মাসাবীহ,পৃষ্ঠা ১১,হা/২
*(খ.) মুসনাদে আহমদ: ১/৪৩৪ পৃ. হা/৩৬৭
*(গ.) ইমাম নাসাঈ,আস-সুনান: ৮/৮৭ পৃ. হা/৪৯৯০
*(ঘ.) ইমাম আবু দাউদ,আস-সুনান, ৪/২২৩ পৃ. হা/৪৬৯৫
*(ঙ.) সহীহ মুসলিম: হাদিস নং ৮

✊সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ‘রজুল’ বলা হয় এমন পুরুষকে যার চুল কালো, পোশাক সাদা,তার দুটি চোখ, দু’হাত, দু’পা এবং দুইটি কান রয়েছে।

সম্মানিত আলেমগণ অধিক অবগত যে, সম্মানিত মুহাদ্দিসীনে কেরাম হাদিস শরীফে এমন কোন হাদিস বর্ণনা করেছেন যেগুলোতে হযরত জিবরাঈল নবুওয়াতের দরবারে অনেকবার সাহাবী হযরত দাহিয়াতুল কালবী (رضي الله عنه)’র আকৃতিতে এসেছেন।

✊ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তার মু‘জামুল আওসাত গ্রন্থে সংকলন করেন-

عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ: يَأْتِينِي جِبْرِيلُ عَلَى صُورَةِ دِحْيَةَ الْكَلْبِيِّ

‘‘হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসূল (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয় জিবরাঈল (ﷺ) রাসূল (ﷺ) এঁর সাহাবী হযরত দাহিয়াতুল কালবী (رضي الله عنه)-এর আকৃতিতে আগমন করতেন।’’
[ইমাম তাবরানী,মু‘জামুল আওসাত: ১/৭ পৃ. হা/৭]

✌যেমন: দেওবন্দীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিত্ব শায়খুল ইসলাম ও ইবনে তাইমিয়া তার স্বীয় কিতাবে, ‘আল-ফুরকান বায়না আউলিয়ার রহমান ও আউলিয়াশ শায়তান’ এই বাস্তবতাটির সত্যতা নিন্মোক্ত শব্দের মধ্যে বলেছেন:

وَقَدْ أَخْبَرَ أن المَلَائِكَةَ جَاءَتْ إِبْرَاهِيْم عَلَيْهِ السَّلَام فِي صُوْرَةِ الْبَشَرِ، وَاِنَّ المَلِكَ تَمْثِلُ لِمَرْيَمَ بَشَراً سَوِيّاً، وَكَانَ جِبْرَيْل عَلَيْه الصَّلَاةُ وَالسَّلَام يَأتِي النَّبِيَّ صَلَّى اَللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي صُوْرَةِ دَحْيَةِ الْكَلْبِي وَفِي صُوْرَةِ أَعْرَابِي -مثل حديث تعليم الناس الإسلام والإيمان والإحسان- وَيَرَاهُمْ النَّاسُ كَذَلِكَ

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘য়ালা এ সংবাদ দিয়েছেন যে, হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) এর নিকট ফেরেশতা মানব আকৃতিতে আসতেন, হযরত মারিয়াম (عليه السلام)’র নিকট সুস্থ মানব আকৃতিতে এসেছেন।আর জিবরাঈল (عليه السلام) রাসূল (ﷺ) এঁর কাছে সাহাবী হযরত দাহিয়াতুল কালবী (رضي الله عنه) এবং বেদুইনের আকৃতিতে এসেছেন মানুষগণ তাদেরকে এভাবে দেখেছেন।’’
[ইবনে তাইমিয়া,আল-ফুরকান বায়না আউলিয়ার রহমান ও আউলিয়াশ শায়তান, ৫/১৫ পৃ.]

✊ইবনে তাইমিয়া কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘য়ালা ফেরেশতাদের যেসব গুণাবলী বর্ণনা করেছেন,সেগুলো উল্লেখপূর্বক নিম্নোক্ত আয়াতগুলো লিখেছেন:

وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَدًا سُبْحَانَهُ بَلْ عِبَادٌ مُكْرَمُونَ
“তারা বললো,আল্লাহর সন্তান রয়েছে, আল্লাহ তা‘য়ালা এঁর থেকে পুঁত পবিত্র। যাদেরকে তারা সন্তান মনে করছে,তারা সন্তান নয়,বরং সম্মানিত বান্দা।”
[সূরা আম্বিয়া,আয়াত নং ২৬]

⏩হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) কে পবিত্র কুরআনে (بَشَرًا سَوِيًّا) সুস্থ মানুষ, (عبد) বান্দা বলা হয়েছে।হাদীসে পাকে (رَجُلٌ) বা পুরুষ বলা হয়েছে। হযরত দাহিয়াতুল কালবী (رضي الله عنه)’র আকৃতি ধারণ করার কথাও বলা হয়েছে, কিন্তু তিঁনি নূরেরই সৃষ্টি।

★হযরত জিবরাঈল (عليه السلام)’র মানবীয় আকৃতি ধারণ এবং মানুষ রূপে প্রকাশ হওয়ার কারণে কী সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) তাঁর নূরানীয়তকে অস্বীকার করেছেন? না, কোথাও এরূপ দেখা যায় নি।কোন আকৃতিই জিবরাঈল (عليه السلام)’র নূরের সৃষ্টি হওয়াকে অস্বীকার করেন নি।

✌রাসূল (ﷺ) এঁর খাদেম,গোলাম এবং উম্মত জিবরাঈল (عليه السلام) যখন নূরের সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও মানবীয় রূপ ধারণ করার ফলে তাঁর নূরের মধ্যে কোন ব্যবধান থাকেনা এবং কেউই তাঁর নূরকে অস্বীকার করেনা।তাহলে সেই জিবরাঈল নয় বরং সমস্ত সৃষ্টি জগতের সর্দার হুযূর পুর নূর (ﷺ) যদি মানবীয় রূপে এই ধরায় তাশরীফ আনেন তবে তাঁর মহান নূরানীয়তের মধ্যে কেনো ব্যবধান থাকবে? এমন কোন মুসলমান আছে যে, রাসূল (ﷺ) এর নূর মোবারককে অস্বীকার করবে?

💟এবার আরেকটু গভীরে জেনে নিই:

*(ক.) হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম মানব সূরতে এসেছিলেন মরিয়ম (আঃ) এর নিকট।
[সূরা মারইয়াম,আয়াত: ১৭]

*(খ.) এ ব্যক্তি কোন মানব নয়।এ তো কোন মহান ফেরেশতা।
[সূরা ইউসুফ,আয়াত: ৩১]

*(গ.) বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতা এসেছিলেন মানব সূরতে।
[সূরা আল বাকারা, আয়াত: ১০২]

👆উল্লেখ্য যে নূর যখন বাশার সূরতে আসে তখন একজন বাশার যা করতে পারেন।নূরের পক্ষেও সম্ভব।যেমন খাওয়া,দাওয়া ইত্যাদি।

*(ঘ.) তিনজন ফেরেশতা হযরত জিবরাঈল,মীকাঈল ও ইসরাফীল মানব সূরতে ইব্রাহিম (আঃ) এর স্ত্রী বিবি সারাহর নিকট আসলেন নবী ইসহাক(আঃ) জন্মের বা আগমনের সুসংবাদ নিয়ে।
[সূরা হুদ ৬৯,৭০-৭৩]

[আবার একই ঘটনা সূরা হিজর ৫২-৫৬ এবং সূরা যারিয়াত ২৪-৩০ আয়াতে বলা আছে।]

*(ঙ.) জীবরাঈল মানব সূরতে (একজন পুরষের আকৃতিতে) রাসূল(দঃ) এঁর নিকট এসেছিলেন।[হাদিসে জীবরাঈল] 💥💥💥বর্ননা💥💥💥

উমর বিন আল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একদিন আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর সাথে বসে ছিলাম,তখন আমাদের সামনে এক ব্যক্তি উপস্থিত হলেন যিনি অত্যন্ত সাদা কাপড় পরিহিত ছিলেন,তার চুল ছিল প্রচণ্ড কালো।তার মধ্যে সফরের কোন চিহ্ন দেখা যাচ্ছিলো না আর আমাদের কেউই তাকে চিনতাম না।

তিনি অগ্রসর হয়ে রাসূল (ﷺ) এঁর সামনে এসে নিজের দুই হাঁটু রাসূল (ﷺ) এঁর দুই হাঁটুর সাথে মিলিয়ে দিলেন এবং তার দুই হাতের তালু তাঁর [(সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বা নিজের ] দুই উরুর উপর রাখলেন আর বললেন, “হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম), আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন।”

রাসুল (ﷺ) বললেন,“ইসলাম (অর্থাৎ এর স্তম্ভ) হল এই যে-
(১) আপনি সাক্ষ্য দিবেন আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রসুল,
(২) সালাত কায়েম করবেন,
(৩) যাকাত আদায় করবেন,
(৪) রামাদান মাসের সিয়াম পালন করবেন এবং
(৫) আল্লাহ্‌র ঘরে হজ করার সামর্থ্য থাকলে হজ পালন করবেন।” প্রশ্নকারী বললেন, “আঁপনি সত্য বলেছেন।”

🌀উমর বিন আল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, “এই নবাগত ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করতে ও উত্তরকে সত্য ও সঠিক বলে ঘোষণা করতে দেখে আমরা খুবই অবাক হলাম।”

সেই ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, “আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন।” রাসুল(ﷺ) জবাব দিলেন, “ঈমান হল এই যে,আপনি আল্লাহ্‌কে, তাঁর ফেরেশতাদেরকে,তাঁর কিতাব সমুহকে,নবী রসুলদেরকে ও বিচার দিবসকে সত্য বলে বিশ্বাস করবেন এবং তাকদীরকে বিশ্বাস করবেন–তা ভালো বা মন্দ হোক।” সে ব্যক্তি বললেন, “আপনি সত্য বলেছেন।”

👆এরপর সেই ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করলেন, “আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন।” রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন,“ইহসান হল এটি যে,তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ।কিন্তু তুমি আল্লাহকে না দেখছ,তিঁনি তোমাকে দেখছেন এই একীন বা দৃড় বিশ্বাস থাকবে।

☝সেই ব্যক্তি এবার জানতে চাইলেন, “কিয়ামত কবে হবে আমাকে সে সম্পর্কে বলুন।”রাসুল (ﷺ) বললেন, “এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি জিজ্ঞাসাকারীর এলেম বেশী না,আমরা উভয় সমান জ্ঞান রাখি।”আগান্তুককে বললেন তুমি প্রশ্ন করেছ এব্যাপারে তুমি যতটুকু জান,আঁমি ততটুকু জানি।

তবে “আমাকে আঁপনি এর কিছু আলামত বা নিদর্শন সম্পর্কে বলুন।” রাসুল (ﷺ) বললেন, “দাসী তার নিজের কর্ত্রী (অথবা কর্তা) কে জন্ম দিবে,আর তুমি দেখবে যে নগ্নপদ বিশিষ্ট নিঃস্ব ছাগলের রাখালেরা একে অপরের সাথে বিশাল বিশাল ভবন তৈরিতে প্রতিযোগিতা করবে।”

বর্ণনাকারী (উমর বিন আল খাত্তাব) বলেন,“এরপর সে (জিজ্ঞাসাকারী ব্যক্তি) তার পথে চলে গেল কিন্তু আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে অনেকক্ষণ ধরে অবস্থান করলাম।”

পরে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন,“উমার,তুমি কি জান জিজ্ঞাসাকারী ব্যক্তিটি কে ছিলেন ?” আমি জবাব দিলাম, “আল্লাহ এবং তার রসুল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) ই সবচেয়ে ভাল জানেন।”

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,“তিনি ছিলেন জিব্রাইল। তিনি তোমাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার জন্য তোমাদের কাছে এসেছিলেন।” উপরোক্ত হাদিসটি শুধুমাত্র মুসলিমেই বর্ণিত আছে।

[উমর বিন আল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ মুসলিম শরীফ–কিতাবুল ঈমান, হাদিস ১/৮]

⏩তবে আবু হুরায়রা (রাঃ) এর বর্ণনাটি বুখারি ও মুসলিম উভয় কিতাবেই বর্ণিত আছে যা নিন্মরুপঃ

একদিন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে তার (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবারা বসে ছিলেন এমন সময় এক ব্যক্তি তার (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে আসলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, “ঈমান কি ?” রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “ঈমান হল এটা যে আপনি বিশ্বাস স্থাপন করবেন আল্লাহ, তার ফেরেশতাগণ, তার কিতাবসমূহ, তার সাথে সাক্ষাত, তার নবী-রসুলগণ এবং পরকালে পুনরুত্থানের উপর।”

সে ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, “ইসলাম কি ?” রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “ইসলাম হল এটাই যে আপনি আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করবেন না, সালাত কায়েম করবেন, যাকাত আদায় করবেন এবং রামাদান মাসে সিয়াম পালন করবেন।”

সে ব্যক্তি এরপর জিজ্ঞেস করলেন, “ইহসান কি ?” রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “ইহসান হল এটি যে, আপনি এমনভাবে আল্লাহ্‌র ইবাদাত করবেন যেন আপনি তাকে দেখতে পাচ্ছেন, যদিও আপনি তাকে (দুনিয়াতে) দেখতে পাবেন না তবে (জেনে রাখুন) তিনি আপনাকে দেখছেন।”

সেই ব্যক্তি এবার জানতে চাইলেন, “কিয়ামত কবে হবে আমাকে সে সম্পর্কে বলুন।” রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশী জানে না। তবে আমি আপনাকে এর লক্ষণগুলো বলতে পারি। এর একটি নিদর্শন হল, দাসী তার নিজের কর্ত্রী (অথবা কর্তা) কে জন্ম দিবে। এর আরেকটি নিদর্শন হল, যখন আপনি দেখবেন নগ্নপদ বিশিষ্ট লোকেরা জনগনের নেতা হবে, আর যখন কালো উটের রাখালেরা গর্ব-অহংকার আর একে অপরের সাথে সুদীর্ঘ ভবন নির্মাণে প্রতিযোগিতা শুরু করবে, এটি কিয়ামতের অন্যতম লক্ষন; এবং কেয়ামতের সময়ের ব্যাপারে জ্ঞান হল সেই পাঁচটি বিষয়ের একটি যার ব্যাপারে কেবল আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না।”

এরপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) তিলাওয়াত করলেনঃ

إِنَّ اللَّـهَ عِندَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ ۖ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًا ۖ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ ۚ إِنَّ اللَّـهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

“নিঃসন্দেহে কেবল আল্লাহ্‌রই কেয়ামত সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে, তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি তা জানেন যা জরায়ুতে আছে,কেউই বলতে পারে না আগামীকাল সে কি অর্জন করবে,না কেউ জানে যে কোন স্থানে সে মৃত্যুবরণ করবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সবই জানেন,তিনি সব বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে অবগত।”
[সূরা লুকমান: আয়াত নং ৩৪]

এরপর সেই জিজ্ঞাসাকারী ব্যক্তি চলে গেলেন এবং রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন (সাহাবীদেরকে), “সেই ব্যক্তিকে আমার কাছে নিয়ে এসো।”

কিন্তু যখন তারা সেই ব্যক্তিকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে ফিরিয়ে আনার জন্য গেলেন, তখন তারা সেই ব্যক্তির কোন চিহ্ন পেলেন না।

এরপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,“তিনি ছিলেন জিব্রাইল।তিনি লোকদেরকে তাদের দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার জন্য এসেছিলেন।”

☝আবার হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর থেকে ও বর্ণনা করা হয় [বুখারি শরীফ– কিতাবুল ঈমান, হাদিস নং ৫০; মুসলিম শরীফ–কিতাবুল ঈমান, হাদিস নং ৫/৯]

Leave a comment