রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?

[পরিমার্জিত সংকলন ৩৪-৩৬মপর্ব]

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(৩৪ম পর্ব)

অনেকে বলেন কোরআনে নূর বলা হয়েছে কিন্তু নূরের তৈরী বলা হয়নি, আবার কেউ বলেন শুধু রুহ মোবারক নূর কিন্তু দেহমোবারক নয়,আবার কেউ বলেন সাদা মাটির তৈরী (নাউযুবিল্লাহ!) আজকে ইন-শা-আল্লাহ সে বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো-[২৬ম অংশ]

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

রাসূল (ﷺ) হলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি,যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না।[10th Part]

★১৯৪. শাহ ওলি উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) তদীয় ‘ইনতেবাহ ফি সালাসিলিল আউলিয়া আল্লাহ’ নামক কিতাবের ৮২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
نور اول کہ آں نور محمدی ست صلی اللہ علیہ وسلم ونیز آں را شھود اول می گویند-

অর্থাৎ নূরে মুহাম্মদী সর্বপ্রথম সৃষ্টি। এজন্য তিঁনিই সর্বপ্রথম আল্লাহর একত্বের স্বাক্ষ্য প্রদান করেছিলেন।

✌মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) مرقاة شرح مشكوة ‘মিরকাত শরহে মিশকাত’ নামক কিতাবের ১ম জিলদের ১৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
ان اول شئ خلق الله القلم وهو غير صحيح … فا الاولية اضافيه والاول الحقيقى هو النور المحمدى على ما بينته فى المورد للمولد-

অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন।আর সেটা হচ্ছে গায়রে সহিহ বা অশুদ্ধ।অতএব আউয়ালিয়তে এজাফি বা প্রথম।আর আউয়ালিয়তে হাকিকী প্রকৃত অর্থে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হচ্ছে নূরে মুহাম্মদী।এ সম্পর্কে আমি ‘মাওরিদু লিল মাওলিদ’ নামক কিতাবে সবিস্তার বর্ণনা করেছি।

✌হুব্বে এলাহির প্রথম বিকাশ: সৃষ্টির প্রথমেই আল্লাহতা’য়ালার حب ‘হুব্ব’ اراده ‘ইরাদা’।সুতরাং তওয়াজুহে হুব্বীই অর্থাৎ মহব্বতের দৃষ্টিই হচ্ছে প্রথম সৃষ্টি যা আল্লাহ তা’য়ালা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বাকী সমস্ত মাখলুকাত সেই প্রথম সৃষ্টির শাখা এবং সমস্ত হাকিকত حب ‘হুব্ব’ এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

ইমামে জামানী কাইউমে রাব্বানী মুজাদ্দিদে আলফেসানী (রাঃ) তদীয় ‘মাকতুবাতে ইমামে রাব্বানী’ (তৃতীয় জিলদের ১৬০৭ পৃষ্ঠা ও ১৪৯ পৃষ্ঠা ১২২ নং মাকতুব) কিতাবে উল্লেখ করেন-

اور حقیقت محمدی علیہ وعلی آلہ الصلوۃ والسلام جوکہ حقیقت الحقائق ہے- مراتب ظلال طے کرنے کے بعد اس فقیر پر آخرکار جو کچھ منکشف ہوا ہے وتعین وظھور حبی ہے جوکہ تمام ظھورات کا مبدآ اور تمام مخلوقات کی پیدائش کا منشا ہے- مشھور حدیث قدسی میں آیا ہے- كنت كنزا مخفيا فاحببت ان اعرف فخلقت الخلق لاعرف (میں ایک مخفی خزانہ تھا میں نے محبوب رکھاکہ میں پہچانا جا‌ؤں پھر میں نے مخلوق کو پیدا کیا تاکہ میں پہچانا جا‌ؤں) سب سے پہلی چیز جو اس مخفی خزانہ سے ظھور کے تخت پرجلوہ گرہوئ وہ محبت تھی جو کہ مخلوقات کی پیدائش کا سبب ہوئ- اگر یہ محبت نہ ہوتی تو ایجاد کا دروازہ نہ کھلتا اور عالم عدم میں مستقل طور پر اپنا ٹھکانا رکھتا- حديث قدسى لو لاك لما خلقت الافلاك (اگر تونہ ہوتا تو میں آسمانوں کو پیدا نہ کرتا) جوکہ خاتم الرسل کی شان میں واقع ہے کا راز اس جگہ سے معلوم کرنا چاھۓ اور لو لاك لما اظهرت الربوبيت (اگر تونہ ہوتا تو میں ربوبیت کو ظاھر نہ کرتا) کی حقیقت کو اس مقام میں تلاش کرنا چاھۓ

ভাবার্থ: হাকিকতে মুহাম্মদী আলাইহি ওয়ালা আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম যিনি حقيقت الحقائق ‘হাকিকাতুল হাকাইক’ বা সমস্ত হাকিকতের হাকিকত বা মূল। সর্বশেষে প্রতিবিম্বসমূহের স্তরসমূহ অতিক্রম করার পর এ ফকিরের প্রতি যা বিকশিত হলো, তা আল্লাহ পাকের ‘হুব্ব বা মহব্বতের বিকাশ, যা সৃষ্টিজগতের উৎপত্তির কারণ এবং আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা, হাদিসে কুদসিতে মশহুর রয়েছে-

(كنت كنزا مخفيا فاحببت ان اعرف فخلقت الخلق لاعرف)

‘আঁমি গুপ্ত ধনভাণ্ডার ছিলাম। তৎপর আঁমি মুহব্বত রাখলাম যে,আঁমি পরিচিত হব এর পর আঁমি এক মাখলুক সৃষ্টি করলাম যাতে আঁমি পরিচিত হই।।

গুপ্ত ধনভাণ্ডার হতে সর্বপ্রথম যা প্রকাশ পেয়েছে তাই হলো, حب ‘হুব্ব’ বা মহব্বত। বিশ্বজগত সৃষ্টির কারণ ইহাই। যদি এ হুব্ব বা মহাব্বত না হতো তাহলে সৃষ্টির দ্বার উম্মুক্ত হত না এবং সমূহ জগত নাস্তি বা শূন্যের গর্ভে দৃঢ়রূপে চিরস্থায়ী থাকত।

এ ব্যাপারে হাদিসে কুদসিতে উল্লেখ রয়েছে-
(لو لا ك لما خلقت الافلاك)

যদি আঁপনি না হতেন তাহলে আঁমি (খোদা) আকাশাদি সৃষ্টি করতাম না, যা সর্বশেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শানে এসেছে। তাঁর হাকিকত বা রহস্য এ স্থলে অন্বেষণ করা উচিত এবং لو لاك لما اظهرت الربوبيت ‘আঁপনি না হলে আঁমি স্বীয় প্রভুত্বও প্রকাশ করতাম না।’ হাদিসের তত্ব এ স্থলে জ্ঞাত হওয়া আবশ্যক।

✌আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী(রহঃ) ‘মাদারিজুন নবুয়ত’ নামক কিতাবের দ্বিতীয় জিলদের ৭৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
(وصل در بیان سر تسمیہ وی صلی اللہ علیہ وسلم الخ)
অনুবাদ: রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম মোবারক حبيب خدا হাবিবে খোদা হওয়ার রহস্যবলীর আলোচনা এবং তাঁর নাম মোবারক মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাব্যস্ত হওয়ার কারণ।

এ সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে- আল্লাহর হাবিব বলেছেন- একদিন সাহাবায়ে কেরামগণ রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের অপেক্ষায় বসে ছিলেন।কিছুক্ষণ পর আল্লাহর হাবিব তাশরিফ আনলেন এবং সাহাবায়ে কেরামের নিকটবর্তী হলেন।শুনতে পেলেন, সাহাবিগণ পরস্পরে আলোচনা করছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালার মাখলুকের মধ্য থেকে ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে তাঁর খলিল বানিয়েছেন। অপরজন বললেন- আল্লাহ তা’য়ালা মুসা আলাইহিস সালামের সঙ্গে কথা বলেছেন।তৃতীয়জন বললেন, আল্লাহ তা’য়ালা ঈসা আলাইহিস সালামকে কালিমুল্লাহ এবং রূহুল্লাহর মর্যাদা দান করেছেন।চতুর্থজন বললেন- আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তায়ালা সফিউল্লাহ বানিয়েছেন।

রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদেরকে সালাম দিয়ে বললেন- আঁমি তোমাদের কথোপকথন শুনলাম।তোমরা বলেছো,আল্লাহ তা’য়ালা ইব্রাহিমকে খলিল, মুসাকে কালিমউল্লাহ, ঈসাকে রূহুল্লাহ এবং আদমকে সফিউল্লাহ বানিয়েছেন।তোমরা জেনে রাখ এবং হুশিয়ার হয়ে যাও যে, আল্লাহ তা’য়ালা আঁমাকে حبيب الله ‘হাবিবুল্লাহ’ উপাধীতে ভূষিত করেছেন এবং এতে আঁমার কোন অহংকার নেই।কিয়ামত দিবসে আঁমি লিওয়াউল হাম্দ বা প্রশংসার পতাকা বহনকারী হবো।এতে আঁমার কোন ফখর নেই।আমি কিয়ামতের দিন প্রথম শাফায়াতকারী হবো এবং আঁমার শাফায়াত সর্বপ্রথম কবুল করা হবে।এতে আঁমার কোন ফখর নেই। কিয়ামতের দিন আঁমিই সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজায় করাঘাত করবো, তখন আঁমার জন্য সর্বপ্রথম জান্নাতের দরজা খোলা হবে। সেদিন আঁমিই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবো।তখন আঁমার সঙ্গে থাকবে আঁমার উম্মতের ফকির দরবেশগণ।আঁমিই اولين واخرين পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের মধ্যে অধিক সম্মানিত হবো, এতে আঁমার কোন দর্প বা ফখর নেই।হাবিবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কামালাত ও সর্ব সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনায় এ হাদিসটি পূর্ণাঙ্গ দলিল হিসেবে পরিগণিত।।

✌ইমাম ইবনে হজর হাইতমী (রহঃ) (ওফাত ৯৭৪ হিজরি) তদীয় ‘আদদুররুল মনদুদ’ নামক কিতাবের ২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

قال الفخر الرازى: وقع الاجماع على ان افضل النوع الانسان نبينا سيدنا محمد صلى الله عليه وسلم لقوله صلى الله عليه وسلم- انا سيد ولد ادم ولا فخر-
ভাবার্থ: হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবজাতীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানব এর উপর ইজমা হয়েছে।আল্লাহর হাবিব নিঁজেই এরশাদ করেন-আঁমি আদম সন্তানের সরদার।এতে আঁমার কোন গর্ব নেই।

✌উপরোক্ত দলিলভিত্তিক বর্ণনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো আল্লাহ তায়ালা নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্ব সৃষ্টির শ্রেষ্টত্ব প্রদান করে তাঁকে حبيب ‘হাবিব’ নামে ভূষিত করেছেন।অতঃপর আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) مدارج النبوة ‘মাদারিজুন নবুয়ত’ কিতাবের দ্বিতীয় জিলদের ৭৮২ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করেন-

وبتحقیق گذشت بیان علو مکان ومکانت وی صلی اللہ علیہ وسلم مقصود اینجا اگاھے بسر تخصیص اوست صلی اللہ علیہ وسلم باسم الحبیب پس بدانکہ مقام حبی اعلا مقامات کمالیہ است ۔۔۔ الخ
অর্থাৎ ‘নিঃসন্দেহে ইতোপূর্বে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উচ্চস্থান এবং উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।এখানে বর্ণনা করার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য حبيب ‘হাবিব’ শব্দটি রহস্য উদঘাটন। সুতরাং গভীরভাবে হৃদয়ঙ্গম করে নাও যে, কামালাতের মাকামসমূহের মধ্যে উন্নততর মাকাম হচ্ছে مقام حبى ‘মাকামে হুব্বী’ বা মহব্বতের স্থল। به تحقيق তাহকিক সহকারে বর্ণনা করা হয়েছে।

হাদিসে কুদসিতে,আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-

كنت كنزا مخفيا فاحببت ان اعرف فخلقت الخلق وتعرف اليهم فبى عرفونى وعرفت بهم-

(আঁমি গুপ্ত ধণভাণ্ডার ছিলাম তৎপর আঁমি মহব্বত রাখলাম যে,আঁমি পরিচিত হবো,এরপর আঁমি এক মাখলুক সৃষ্টি করলাম এবং আঁমি তাদের কাছে পরিচিত হলাম।এ দ্বারা তারা আঁমাকে চিনলো আঁমিও তাদেরকে চিনলাম।

সুতরাং توجه حبى ‘তাওয়াজ্জুহে হুব্বীই’ অর্থাৎ মহব্বতের দৃষ্টিই হচ্ছে প্রথম সৃষ্টি।যা আল্লাহতা’য়ালা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।বাকী সমস্ত মাখলুকাত সেই প্রথম সৃষ্টির শাখা এবং সমস্ত হাকিকত حب ‘হুব্ব’ এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।সৃষ্টির যে প্রথম হুব্ব (ইরাদা) তা যদি না হতো, তাহলে কোন মাখলকুই পয়দা হতো না।আর যদি মাখলুক পয়দা না হতো তাহলে আসমা ও সিফাতে এলাহিকে কেউ জানতো না। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র রূহে মোবারকের ওসিলায় মাখলুক প্রকাশিত হয়েছে।মুদ্দাকথা হলো রূহে মুহাম্মদী না হলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না এবং আল্লাহ তা’য়ালাকে কেউ জানতো না। কারণ হুব্ব حب হচ্ছে ওজুদে মওজুদা বা সৃষ্টির অস্তিত্বের জন্য প্রথম ওয়াসেতা বা মাধ্যম।

(اگر روح پاک محمدی نمی بود نمی شناخت خدارا ھیچ احدی زیرا کہ پیدا نمی بود ھیچ احدی پس حب واسطہ اولی است مروجود موجودات را)
به تحقيق
তাহকিকের মাধ্যমে বর্ণিত আছে, আল্লাহ তায়ালা মে’রাজের রাত্রিতে তাঁর হাবিবকে বলেছিলেন-
لو لا ك لما خلقت الافلاك
‘লাউ লাকা লামা খালাকতুল আফলাক’ অর্থাৎ হে আঁমার হাবিব আঁপনি না হলে আঁমি কিছুই সৃষ্টি করতাম না।

✌সুতরাং স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল, রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গোপন ভাণ্ডার পরিচয়ের জন্য توجه حبى ‘তাওয়াজুহে হুব্বী’ই হলো মুল মাকসুদ।তারপর তিঁনি ব্যতিত যত কিছু সব কিছুই তাঁর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে।তিঁনিই حب الهى ‘হুব্বে এলাহি’র মূল মাকসুদ। তিঁনি ব্যতিত অন্য সব তাঁর শাখা তুল্য। সেই জন্য আল্লাহ তা’য়ালা তাঁকে حبيب ‘হাবিব’ নাম দ্বারা খাস করেছেন। তিঁনি ছাড়া অন্য কাউকে হাবিব নামে আখ্যায়িত করা হয়নি।আল্লাহর হাবিবের উম্মতের মধ্য থেকে যে তার অনুসরণ করবে, আল্লাহপাক তাকে محبوب ‘মাহবুব’ বানাবেন। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’য়ালা নিজেই ইরশাদ করেছেন-
قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله-

হে হাবিব! আঁপনি বলে দিন,তোমরা যদি আল্লাহ তা’য়ালার ভালবাসা বা মুহব্বত লাভ করতে চাও।তবে আঁমাকে অনুসরণ কর,আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদিগকে মহব্বত করবেন।

✊মাদারিজুন নবুয়ত ২য় জিলদের ৭৮৩ পৃষ্ঠায় (ফার্সি) উল্লেখ রয়েছে- ‘প্রকাশ থাকে যে, حب على الاطلاق ‘হুব্ব আলাল ইতলাক’ অর্থাৎ হুব্বে মতলাক বা সাধারণত ‘হুব্ব’ এর নয়টি স্তর রয়েছে।তন্মধ্যে একটি স্তর খালেক এর মধ্যে। আর বাকী স্তরসমূহ মাখলুকের মধ্যে বিদ্যমান।

✌প্রথম স্তর যা খালেক এর মধ্যে বিদ্যমান তার নাম হচ্ছে حب ‘হুব্ব’ তবে এ ‘হুব্ব’ এর প্রকাশের জন্য হরকত বা প্রতিক্রিয়া হওয়া জরুরি নয়।এই ‘হুব্ব’ যখন সৃষ্টি হবে তখন তাঁর মধ্যে পাওয়া যাবে اراده ‘এরাদা’ বা অভিপ্রায়। প্রকৃত পক্ষে اراده ‘ইরাদা’ হক তা’য়ালার জন্য খাস।উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তা’য়ালার আটটি সিফাতে খাসসা রয়েছে এর মধ্যে একটি হল اراده । আল্লাহ তা’য়ালার সিফাতে কামেলা হলো-

*১. حيات হায়াত বা জীবনী শক্তি
*২. قدرت কুদরত বা ক্ষমতা
*৩. علم বা জ্ঞান
*৪. كلام কালাম বা বাকশক্তি
*৫. بصر বা দর্শনশক্তি
*৬. سمع সামা বা শ্রবণশক্তি
*৭. اراده ইরাদা বা ইচ্ছাশক্তি
*৮. تكوين তাকবিন বা সৃষ্টিশক্তি।

এ সকল সিফাত আজলি এবং কাদীমী। যার আরম্ভও নেই শেষও নেই। আল্লাহ তা’য়ালার জাতের সঙ্গে বিদ্যমান।

✌হুব্ব এর নয়টি স্তর রয়েছে:-
হুব্ব এর নয়টি স্তর রয়েছে যাহা নিম্মে আলোচনা করা হলো :-

*(১.) ميلان ‘ময়লান’ মাকলুকের মধ্যে যে ‘হুব্ব’ হয়ে থাকে, তার প্রথম স্তর হচ্ছে ميل ‘ময়ল’ বা মহব্বত করা। আর ময়লান হচ্ছে মতলব বা কাম্য বস্তুর প্রতি মনে আকর্ষণ।

*(২.) رغبت ‘রগবত’ বা আকর্ষন। এই আকর্ষন যখনই বৃদ্ধি পায়, তখন তাকে বলা হয় ‘রগবত’ বা আকৃষ্ট হওয়া।

*(৩.) طلب ‘তলব’ রগবত বা আকৃষ্ট হওয়ার মাত্রা অধিক হলে তাকে বলা হয় ‘তলব’ বা তালাশ করা।

*(৪.) ولع ‘ওলা’ তলব এর মাত্রা অধিক হলে তাকে বলা হয় ‘ওলা’ বা হালকা পাতলা অবস্থায় অতিক্রম করা।

*(৫.) صابه ‘সবা’ বা বুদ্ধিহীনতা। ‘ওলা’র মধ্যে যখন কঠিন অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং সে অবস্থা স্থায়িত্ব লাভ করে, তখন তাকে বলা হয় صابه ‘সবা’ বা বুদ্ধিহীনতা।

*(৬.) ہوا ‘হাওয়া’ বা শূণ্যস্থান।এ অবস্থা যখন প্রবল হয় এবং অন্তরের গভীরে নেমে আসে এবং কাম্য বস্তুলাভে শান্তিপায় তখন বলে ‘হাওয়া’ বা শূণ্যস্থান।

*(৭.) شغف ‘শাগাফ’ বা হৈচৈ। হাওয়া যখন প্রবল আকার ধারণ করে এবং তা অন্ত:করণে আচ্ছন্ন হয়ে যায়, তখন তাকে বলে ‘শাগাফ’ বা হৈচৈ।

*(৮.) عزم ‘এযাম’ এই শাগাফ যখন প্রেমিককে ফানা করে দেয়, সেই ফানা এমনভাবে বৃদ্ধিপায় যে, নিজের সত্ত্বা থেকেও পৃথক হয়ে যায় এবং ফানা থেকেও ফানা হয়ে যায়, তখন তাকে ‘এযাম’ বা ফানার মাদ্দায় বা প্রাণপনে দৌঁড়ানোকে বলা হয় ‘এযাম’।

*(৯.) এই ‘এযাম’ যখন সুদৃঢ় ও সুপ্রতিষ্টিত হয়ে বাহ্যিকতায় অবস্থান গ্রহণ করে তখন ‘মুহিব’ ও ‘হাবিব’ ফানার মাধ্যমে দু’জনের দুসত্ত্বা থাকে না। অর্থাৎ একজন ফানা হয়ে বিলীন হয়ে যায় এবং অপর জন আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্বই একমাত্র বহাল থাকে তাকে حب مطلق হুব্বে মতলক বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ আশিক আল্লাহতায়ালার প্রেমে বিলীন হয়ে যায়, ইহাই ফানা ফিল্লাহ।।

✌উপরোক্ত ‘হুব্ব’ এর নয়টি স্তর প্রকৃত পক্ষে মাখলুকের জন্য খাস। আল্লাহ তায়ালার শানে তা ব্যবহার করা যাবে না। তবে হ্যাঁ এ সমস্ত স্তরসমূহের সৃষ্টিকারী একমাত্র আল্লাহতায়ালা।
حب ‘হুব্ব’ ও اراده
‘ইরাদা’ একমাত্র আল্লাহ তা’য়ালার জন্য খাস।এ ‘হুব্ব’ এর আর একটি স্তর আছে যা আল্লাহ তা’য়ালা ও মাখলুকের মধ্যে প্রকাশ পায় তাকে مرتبه جامعه ‘মুরাত্বাবায়ে জামিয়া’ বা সমন্বিত স্তর নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। আবার দ্বিতীয় স্তরও বলা হয়।আসমায়ে এলাহির মধ্যে একটি নাম আছে ودود ‘ওয়াদুদ’। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে চান,তাকে প্রেমদান করে থাকেন এবং বান্দা ও তাঁর সাথে আল্লাহর সাথে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। আল্লাহ তা’য়ালা কালামে পাকে এরশাদ করেন-

فسوف يأتى الله بقوم يحبهم ويحبونه-

নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা এমন এক সম্প্রদায় আনবেন যাদেরকে তিনি (আল্লাহ) মহব্বত করবেন বা ভালবাসবেন এবং তাঁরাও আল্লাহ তা’য়ালাকে মহব্বত করবেন। এখানে উভয়েই ভালবাসাকে মহব্বতের এ স্তরে পরস্পর শরিক।ভালবাসার এ স্তরটি আলমে জহুরে (প্রকাশ্য জগতে) উভয় পক্ষ থেকে হওয়ার কারণে মহব্বতের স্তরসমূহের মধ্যে সর্বশেষ মাকাম।

মাখলুকাতের জন্য ইশকে এলাহির স্তর থেকে অগ্রগামী কিছুই নেই-
اذ هو نار الله الموقدة التى تطلع على الافئدة-

যেহেতু ইহা আল্লাহ তা’য়ালার প্রজ্বলিত হুতাশ যা হৃদয়েকে গ্রাস করবে।উপরোক্ত দলিলভিত্তিক আলোচনার দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো- আল্লাহতা’য়ালা হচ্ছেন قديم ‘কাদীম’ যার কোন আরম্ভ নেই শেষও নেই। যিনি ওয়াজিবুল ওয়াজুদ- الله موجود بالذات ।

আল্লাহ তা’য়ালা সর্বপ্রথম তাঁর হাবিবের নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন হেকমতে কামেলা দ্বারা এবং এ সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহ তা’য়ালা ‘হুব্ব’ বা ইরাদা ছিল সরাসরি যার মধ্যে কোন ওয়াসেতা বা মাধ্যম ছিল না। আল্লাহ হচ্ছেন খালিক বা সৃষ্টিকর্তা এবং তাঁর হাবিব হচ্ছেন আল্লাহর সর্বপ্রথম সৃষ্টি যাঁকে আল্লাহ মহব্বতের সঙ্গে সৃষ্টি করেছেন যিঁনি সৃষ্টির মধ্যে বেনজির।

★১৯৫. তাফসিরে রুহুল মায়ানী,৩য় জিলদ,৮ম পারা,৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
(وانا اول المسلمين ۱٦۳) وقيل: هذا اشارة الى قوله عليه الصلوة والسلام- اول ما خلق الله تعالى نورى-
অর্থাৎ আলোচ্য আয়াতে কারীমার তাফসিরে রাসূলেপাক (ﷺ)-এঁর বাণী- اول ما خلق الله نورى সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’য়ালা আঁমার নূর সৃষ্টি করেছেন। এ দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
تفسير روح البيان ‘

তাফসিরে রুহুল বয়ান’ ৩য় জিলদের সূরায়ে আনআম ১২৯ পৃষ্ঠায় 
আশ শায়খ ইসমাঈল হক্কী বরছয়ী (রহঃ) (ওফাত ১১৩৭ হিজরি)

(وانا اول المسلمين) يعنى اول من استسلك عند الايجاد لامركن وعند قبول فيض المحبة لقوله (يحبهم ويحبونه) والاستلام للمحبة فى قوله يحبونه دل عليه قوله عليه السلام (اول ما خلق الله نورى)
অর্থাৎ وانا اول المسملين আঁমি সর্বপ্রথম মুসলমান এঁর অর্থ হলো সর্বপ্রথম সৃষ্টি করার সময় আল্লাহ তা’য়ালার আদেশ كن ‘কুন’ হয়ে যায়কে আঁমি সর্বপ্রথম মেনে নিয়েছি। অনুরূপভাবে মহব্বতের ফয়েজ গ্রহণ করার সময় আঁমি সর্বপ্রথম গ্রহণ করেছি। কারণ আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেন, তিঁনি তাদের মহব্বত করেন। আর তাঁরা আল্লাহকে মহব্বত করেন। এ মহব্বতে ফয়েজ গ্রহণের বেলায় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম,যা তাঁর বাণী ‘আল্লাহ তা’য়ালা আঁমার নূরকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন প্রমাণ করছে।

✊শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) বলেন-

فضيلت اعلی واکمال وی صلی اللہ علیہ وسلم وآلہ وسلم آنست کہ پرور دگار تعالی روح اورا پیشتر ازارواح خلائق پیدا کردہ وارواح سائر مکونات را از روح وے منشعب گردایندہ ہمہ را از نوروی آفریدہ ووی صلی اللہ علیہ وسلم وآلہ وسلم نبی بودہ وآدم ھنوزمیاں روح وجسد بود کما رواہ الترمذی عن ابیھریرۃ رضی اللہ عنہ ودر عالم ارواح نیز فیض بارواح انبیاء از روح او رسیدہ، (مدارج النبوت جلد ۱ ص ۱٤۳)

ভাবার্থ: নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সবচেয়ে উন্নত ও পরিপূর্ণ মর্যাদা হল এই যে,আল্লাহ তা’য়ালা রাসূল (ﷺ)-এঁর রূহ মোবারককে অন্যান্য সকল রূহ মোবারকের পূর্বে সৃষ্টি করেছেন। তারপর আল্লাহর হাবিবের রূহ মোবারক হতে সমস্ত রূহ সৃষ্টি করেছেন।হযরত আদম আলাইহিস সালাম রূহ ও জসদ বা শরিরাকৃতির মধ্যে থাকা অবস্থায় রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবী ছিলেন।যেমন তিরমিজি শরীফে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করা হয়েছে। অপরদিকে আলমে আরওয়াহ বা রূহের জগতে এমনকি সমস্ত নবীগণের রূহ মোবারকগণ ও সায়্যিদে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রূহ মোবারক হতে পূর্ণ ফয়েজ ও বরকত প্রাপ্ত হয়েছেন।। 

✌আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) তদীয় مدارج النبوة ‘মাদারিজুন নবুয়ত’ নামক কিতাবের ২/২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-

بدانکہ اول مخلوقات وواسطۂ صدور کائنات وواسطۂ خلق عالم وآدم نور محمدست صلی اللہ علیہ وسلم- چنانکہ درحدیث صحیح وارد شدہ کہ اول ما خلق اللہ نوری وسائرمکونات علوی وسفلی ازان نور وازان جوھر پاک پیدا شدہ ازارواح واشباح وعرش وکرسی ولوح وقلم وبہشت ودوزخ وملک وفلک وانس وجن وآسمان وزمین وبحار وجبال واشجار وسائر مخلوقات ودرکیفیت صدور این کثرت ازان وحدت وبروز وظھور مخلوقات ازان جوھر عبارات وتغيرات غر

يب آوردہ اند وحدیث اول ما خلق اللہ العقل نزد محققین ومحدثین بصحت نرسیدہ وحدیث اول ما خلق اللہ القلم نیزگفتہ اند کہ مراد بعد العرش والماءاست کہ واقع شدہ است وکان عرشہ علی الماء الخ-

ভাবার্থ: এ এক চিরন্তন বাস্তবতা যে,নূরে মোহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন সমগ্র সৃষ্টির প্রথম, সমস্ত কায়েনাতের ওসিলা,বিশ্বজগৎ এবং হযরত আদম আলাইহিস সালাম এঁর সৃষ্টির মাধ্যম হচ্ছে নূরে মোহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।সহিহ হাদিস শরীফে এসেছে,রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- اول ما خلق الله نورى ‘আউয়ালু মা খালাকাল্লাহু নুরী’

অর্থাৎ আল্লাহতা’য়ালা সমস্ত মাখলুক সৃষ্টির পূর্বে আঁমার নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন এবং ঊর্ধ্ব ও অধঃজগতের সবকিছুই নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর নূর মোবারক থেকে সৃষ্ট। তাঁর পবিত্র নূরী জাওহার থেকে সৃষ্টি হয়েছে রূহসমূহ, আরশ, কুরসি, লওহ, কলম,বেহেশত, দোযখ, ফেরেশতা, ইনসান, জিন, আসমান, জমিন, সাগর, পাহাড়, গাছ, বৃক্ষ এবং কুল মাখলুকাত। এ সকল কিছুর প্রকাশ ও বিকাশ ঘটেছে তাঁরই ওসিলায়।সেই হাকিকতের প্রকাশের বর্ণনায় বিজ্ঞ বিজ্ঞ আলেমগণ বিস্ময়কর ও সূক্ষ বর্ণনা পেশ করেছেন।’

✌এক রেওয়ায়েতে এসেছে-اول ما خلق الله العقل ‘আউয়ালু মা খালাকাল্লাহুল আকলু’ আল্লাহ তা’য়ালা সর্বপ্রথম আকল সৃষ্টি করেছেন।তবে এই হাদিস মুহাক্কিক ও মুহাদ্দিসগণের মতে সহিহ এর স্তরে পৌছেনি।অন্য রেওয়ায়েতে রয়েছে- اول ما خلق الله القلم ‘আউয়ালু মা খালাকাল্লাহু কলম’ সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’য়ালা কলম সৃষ্টি করেছেন।এ হাদিসটির অর্থ মুহাদ্দিসগণ এভাবে করেছেন যে,আরশ ও পানি সৃষ্টির পরে প্রথমে কলম সৃষ্টি করেছেন।আবার কোন কোন হাদিসের ব্যাখ্যায় এ রকম এসেছে যে,পানি সৃষ্টি হয়েছিল আরশের পূর্বে وكان عرشه على الماء

এর পরপরই আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী ( রহঃ) বলেন-হাদিস শরীফে এসেছে,যখন কলম সৃষ্টির পর আল্লাহ তা’য়ালা তাকে বললেন লেখ,তখন কলম বললো, কি লেখবো? আল্লাহ তা’য়ালা বললেন- ما كان وما يكون الى الابد ‘মা কানা ওয়ামা ইয়াকুনু ইলাল আবাদ’ অতীত এবং ভবিষ্যতের সবকিছু লিখ।এতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, কলম সৃষ্টির পূর্বেও কিছু সৃষ্টি হয়ে ছিল।

✌আলেমগণ বলেন-আরশ, কুরসি এবং রূহসমূহ সৃষ্টির পূর্বে নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূর মোবারক প্রকাশ্য জগতে এসেছে। ما كان ‘মা কানা’ যা কিছু হয়েছিল এ অর্থই বহন করে। তাহল নূরে মুহাম্মদীর হাল ও সিফাতসমূহ।কেননা সমগ্র জগতের মধ্যে নূরে মুহাম্মদী অগ্রগণ্যতা সুসাব্যস্ত اول ما خلق الله نورى অপরদিকে وما يكون ‘ওমা ইয়াকুনু’ এর অর্থ হলো পৃথিবীর পরবর্তীতে প্রকাশিতব্য সকল কিছু। আলমে জহুর বা বাহ্যিকজগতে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়ত প্রমাণিত ছিল। যেমন আল্লাহর হাবিব বলেছেন- كنت نبيا وادم بين الروح والجسد অর্থ- আমি ঐ সময়ও নবী ছিলাম, যখন আদম (আঃ) আত্মা ও দেহের মাঝামাঝিতে ছিলেন। [মাদারিজুন নবুয়ত- ২-৩ পৃষ্ঠা]

✌আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) হাদিসের মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন-

ودر اخبار آمدہ است کہ چون مخلوق شد نور انحضرت وبیرون آمدازوی انوار انبیاء علیہم السلام امرکرد اورا پروردگار تعالی کہ نظر کند بجانب انوار ایشان پس نظر کرد آنحضرت وپوشید انوار ایشاں را گفتندای پروردگار ما این کیست کہ پوشید نوروی انوار ما را گفت اللہ تعالی این نور محمد بن عبد اللہ است اگر ایمان آرید بوے میگرادنم شمارا انبیاء گفتند ایمان آوردیم یارب بوے وبہ نبوت وی پس گفت رب العزت جل جلالہ گواہ شدم برشمادانیست معنی قول حق سبحانہ تعالی واذا اخذ اللہ میثاق النبیین لما اتیتکم من کتاب رحکمۃ الایۃ- مدارج النبوۃ ص ۳/ ۲

ভাবার্থ: ‘হাদিস শরীফে এসেছে,যখন নূরে মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করা হলো এবং তাঁর নূর থেকে (আল্লাহর হাবিবের নূর থেকে) সকল নবীগণ আলাইহিমুস সালাম এর নূরসমূহ বের করা হল, তখন আল্লাহ তায়ালা নূরে মোস্তফা আলাইহিস সালামকে বললেন, ঐ নূরসমূহের প্রতি দৃষ্টিপাত কর।তিঁনি তাই করলেন।ফলে তাঁর নূরে সকল নূরের উপর প্রধান্য বিস্তার করল এবং অন্যান্য নূর হয়ে গেল আলোকবিহীন।তাঁরা নিবেদন করল, হে পরওয়ার দিগারে আলম! তা কার নূর যা আমাদের সকলের নূরকে ম্লান করে দিল? আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করলেন-এ নূর মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহর।তোমরা যদি তাঁর উপর ঈমান আন তবে আমি তোমাদেরকে নবুয়তের মর্জাদা দান করবো।সকলেই সমস্বরে বলল, হে আমাদের রব! আমরা তাঁর উপর ও তাঁর নবুয়তের উপর ঈমান আনলাম। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন- আমি তোমাদের এ কথার সাক্ষী রইলাম। এদিকে ইঙ্গিত করেই কোরআন মজীদের এক আয়াতে কারীমায় বলা হয়েছে-

واذ اخذ الله ميثاق النبيين لما اتيتكم من كتاب و حكمة الخ

অর্থাৎ আল্লাহ যখন নবীগণের নিকট থেকে এই মর্মে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে, আমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত দান করব। [মাদারিজুন নবুয়ত,২-৩ পৃষ্ঠা]

আহলে হাদিস ও ওহাবীদের অতি মান্যবর আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ:) স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সূরা আল-ইমরানের ৮১ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় কি বলেন;একটু দেখা যাক:

মহান আল্লাহ পাক বলেন

إِذْ أَخَذَ اللهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُمْ مِنْ كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُصَدِّقٌ لِمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنْصُرُنَّهُ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَى ذَلِكُمْ إِصْرِي قَالُوا أَقْرَرْنَا قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُمْ مِنَ الشَّاهِدِينَ-

‘আর যখন মহান আল্লাহ সকল নবীর নিকট থেকে শপথ নিলেন এই বলে যে,আঁমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত দান করেছি।অতঃপর যখন আঁমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকটে রাসূল আসবেন যিঁনি তোমাদের কাছে যা আছে তার সত্যায়ন করবেন,তখন অবশ্যই তোমরা তার উপর ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে।আল্লাহ বললেন, তোমরা কি স্বীকৃতি দিলে এবং এই কথা মেনে চলার অঙ্গীকার করলে।তারা বললেন, আমরা স্বীকৃত দিলাম।তখন আল্লাহ বললেন,তোমরা সাক্ষী থাক এবং আঁমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী থাকলাম’।
[সূরা আলে ইমরান,আয়াত নং ৮১]

✌এই আয়াত পেশ করার পর ইবনু কাছীর (রহঃ) রাঈসুল মুফাসসিরীন আবদুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ)-এঁর বক্তব্য পেশ করেছেন।তিনি বলেন,

ما بعث الله نبيا من الأنبياء إلا أخذ عليه الميثاق، لئن بَعَث محمدًا وهو حَيّ ليؤمنن به ولينصرنه، وأمَرَه أن يأخذ الميثاق على أمته: لئن بعث محمد صلى الله عليه وسلم وهم أحياء ليؤمِنُنَّ به ولينصرُنَّه-

‘আল্লাহ এমন কোনো রাসূল প্রেরণ করেননি যার কাছ থেকে এই শপথ গ্রহণ করেননি।তথা প্রত্যেক রাসূলের কাছে তিঁনি এই মর্মে শপথ নিয়েছেন যে,যদি আল্লাহ মুহাম্মাদ ﷺ কে প্রেরণ করেন এবং সেই নবী বা রাসূল জীবিত থাকে, তাহলে তারা যেন মুহাম্মাদ ﷺ-এঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ও তাকে সাহায্য করে।তাদেরকে এও নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন তাদের উম্মতের কাছ থেকে এই বলে শপথ নেয় যে, যদি মুহাম্মাদ ﷺ -কে প্রেরণ করা হয় এবং তারা জীবিত থাকে, তাহলে তারা যেন মুহাম্মাদ ﷺ -এঁর প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং তাকে সহযোগিতা করে’।
[তাফসীরে ইবনে কাছীর,আলে ইমরান ৮১ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ]

✌এরপর ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন,

فالرسول محمد خاتم الأنبياء صلوات الله وسلامه عليه، دائما إلى يوم الدين، وهو الإمام الأعظم الذي لو وجد في أي عصر وجد لكان هو الواجب الطاعة المقدَّم على الأنبياء كلهم؛ ولهذا كان إمامهم ليلة الإسراء لما اجتمعوا ببيت المقدس، وكذلك هو الشفيع في يوم الحشر في إتيان الرب لِفَصْل القضاء، وهو المقام المحمود الذي لا يليق إلا له-

‘আর মুহাম্মাদ ﷺ কিয়ামত পর্যন্ত শেষ নবী। তিঁনিই হচ্ছেন মহান ইমাম যাঁকে কোনও যুগে পাওয়া গেলে সকল নবীর উপর তাঁর আনুগত্য করা জরূরী।আর এজন্যই মি‘রাজের রাত্রে তিঁনি তাদের ইমাম ছিলেন যখন তারা বায়তুল মুকাদ্দাসে জমা হয়েছিলেন।অনুরূপই তিঁনি হাশরের ময়দানে তাদের জন্য আল্লাহকে বিচার শুরু করার সুফারিশ করবেন। আর এটাই মাকামে মাহমূদ,যা তিঁনি ব্যতীত কারো জন্য শোভা পায় না।
[তাফসীরে ইবনে কাছীর, আলে ইমরান ৮১ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ]

⏺️সুতরাং এই আয়াত স্পষ্ট প্রমাণ করছে যে, মুহাম্মাদ ﷺ-এঁর উপর ঈমান নিয়ে আসার জন্য সকল রাসূলের কাছ থেকে শপথ নেয়াটা মুহাম্মাদ ﷺ -এঁর সকল রাসূলের উপর কুল্লী বা সামষ্টিক ফযীলত। এইজন্য রাসূল ﷺ ওমর (রাঃ)-কে বলেছিলেন,যদি আজ মূসা (আ:) জীবিত থাকতেন তাহলে তাঁর জন্য আঁমার আনুগত্য করা ছাড়া তাঁর কোন গত্যন্তর থাকত না।
[আহমাদ, মিশকাত হা/১৭৭, ইরওয়াউল গালীল হা/১৫৮৯]

⏺️মূলকথা হল: রাসূল (ﷺ)‘র সৃষ্টি অন্যান্য সৃষ্টির মতো নয়।ইমাম শিহাবুদ্দীন কুস্তালানী (رحمة الله) বলেন-

اعلم أن من تمام الإيمان به- صلى الله عليه وسلم- الإيمان بأن الله تعالى جعل خلق بدنه الشريف على وجه لم يظهر قبله ولا بعده خلق آدمى مثله-

‘‘জেনে রাখুন! রাসূল (ﷺ)‘র প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান হলো-এভাবে ঈমান আনা যে,আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর শরীর মোবারককে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, তাঁর পূর্বে পরে কোন মানুষকে তাঁর মতন করে সৃষ্টি করেননি।’’
[কুস্তালানী,মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া, ২/৫ পৃষ্ঠা,মাকতাবাতুল তাওফিকহিয়্যাহ, কায়রু,মিশর।]

♻️তাই সকলের জানা উচিত মানব জাতির অনুসরণ ও অনুকরণের সুবিধার্থে আল্লাহ তাঁকে বাহ্যিকভাবে মানবীয় আকৃতি ও মানবীয় কতেক গুণাবলি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।বিভিন্ন আকায়েদের কিতাবে রয়েছে যে,হুযুরের অনুরূপ হওয়া অসম্ভব।হুযুরের বিশেষ গুণের ক্ষেত্রে কাউকে হুযুরের গুণের মতো বললে, সে কাফির।
[আল-মুতামেদ, ১৩৩পৃ. বাহারে শরীয়ত, ১/১৯পৃ.]

⏺️কেননা তিঁনিই সৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু; তাঁর উসিলায় জগত সৃষ্টিঃ আমরা যে জান্নাত লাভের প্রতীক্ষায় এবং জাহান্নামের ভয় পাই তাও নবীজি (ﷺ)‘র ওসিলায় মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন।হাদিসে পাকে রয়েছে-

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: أَوْحَى اللَّهُ إِلَى عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا عِيسَى آمِنْ بِمُحَمَّدٍ وَأْمُرْ مَنْ أَدْرَكَهُ مِنْ أُمَّتِكَ أَنْ يُؤْمِنُوا بِهِ فَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ آدَمَ وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَا النَّارَ هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ.

‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘য়ালা হযরত ঈসা (عليه السلام) এর নিকট ওহী নাযিল করলেন, হে ঈসা! তুমি মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর ঈমান আন এবং তোমার উম্মতের মধ্যে যারা তাঁর যুগ পাবে তাদেরকে ঈমান আনতে বলো। কারণ যদি মুহাম্মদ (ﷺ) না হতেন, তাহলে আমি না আদমকে সৃষ্টি করতাম, না বেহেশত,না দোযখ সৃষ্টি করতাম।’’ 
✳️✳️✳️✳️দলিল✳️✳️✳️✳️✳️
*(ক.) ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মুস্তাদরাক ২/৬৭১,পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৪২২৭ *(খ.) ইমাম তকিউদ্দিন সুবকীঃ শিফাউস সিকাম ৪৫ পৃষ্ঠা
*(গ.) জালালুদ্দীন সুয়ূতিঃ খাসায়েসুল কোবরাঃ ১/১৪ হাদিসঃ ২১
*(ঘ.) হাইসামীঃ শরহে শামায়েলঃ ১/১৪২  পৃষ্ঠা
*(ঙ.) আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানীঃ যাওয়াহিরুল বিহারঃ ২/১১৪  পৃষ্ঠা
*(চ.) ইমাম ইবনে হাইয়্যানঃ তবকাতে মুহাদ্দিসিনে ইস্পাহানীঃ ৩/২৮৭পৃ:
*(ছ.) আবু সা‘দ ইবরাহিম নিশাপুরী, শরহে মুস্তফা: ১/১৬৫ পৃষ্ঠা
*(জ.) যুরকানী,শরহুল মাওয়াহেব: ১২/২২০ পৃষ্ঠা
*(ঝ.) ইবনে কাসীর,কাসাসুল আম্বিয়া,১/২৯ পৃষ্ঠা,দারুল তা‘লিফ,কাহেরা,মিশর
★ইবনে কাসীর,সিরাতে নববিয়্যাহ: ১/৩২০ পৃষ্ঠা,দারুল মা‘রিফ,বয়রুত লেবানন
★ইবনে কাসীর,মু‘জিজাতুন্নাবী: ১/৪৪১ পৃষ্ঠা,মাকতুবাতুল তাওফিকহিয়্যাহ, কাহেরা,মিশর।
*(ঞ.) ইবনে সালেহ শামী,সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ: ১২/৪০৩ পৃষ্ঠা,দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ,বয়রুত,লেবানন।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান:

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا مَرْفُوعًا أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ النَّار

“একদা আমার কাছে হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) এসে বললেন, হে মুহাম্মদ! (ﷺ) আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, আপনাকে সৃষ্টি না করা হলে সৃজন না হতো বেহেশত আর  না দোযখ।’’ 
     ✳️✳️✳️✳️দলিল✳️✳️✳️✳️
*(ক.) দায়লামীঃ আল-মুসনাদিল ফিরদাউস: ৫/২২৭ পৃষ্ঠা,হাদিস নং ৮০৩১
*(খ.) মোল্লা আলী ক্বারী: আসারুল মারফূআ, ১/২৯৫  পৃষ্ঠা,হাদিস: ৩৮৫ মুয়াস্সাতুর রিসালা,বয়রুত,লেবানন। *(গ.) শায়খ ইউসূফ নাবহানীঃ যাওয়াহিরুল বিহারঃ ৪/১৬০ পৃষ্ঠা
*(ঘ.) মুত্তাকী হিন্দী,কানযুল উম্মাল, ১১/৪৩১ পৃষ্ঠা,হাদিসঃ ৩২০২৫।

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(৩৫ম পর্ব)

অনেকে বলেন কোরআনে নূর বলা হয়েছে কিন্তু নূরের তৈরী বলা হয়নি, আবার কেউ বলেন শুধু রুহ মোবারক নূর কিন্তু দেহমোবারক নয়,আবার কেউ বলেন সাদা মাটির তৈরী (নাউযুবিল্লাহ!) আজকে ইন-শা-আল্লাহ সে বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো-[২৭ম অংশ]

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

রাসূল (ﷺ) হলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি,যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না।[11th Part]

★১৯৬. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নূর হিসাবে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয়েছেন সে প্রসঙ্গে একটু অন্যভাবে বিশ্লেষন করা যাক:

লক্ষ্য করুন! অন্যান্য নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের বেলায় আল্লাহ পাক خلق শব্দটা সরাসরি ব্যবহার করেছেন।আরবী خلق শব্দের অর্থ হচ্ছে- শূন্যকে অস্তিত্ব দান করা,যে কিছু নয় তাকে কিছু করে দেয়া,সৃষ্টি করা ইত্যাদি।কিন্তু হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ শান মুবারক উনার জন্য কালামুল্লাহ শরীফে خلق শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি।যেমন:

  প্রথম,(بعث)=প্রেরণ করেছেন

*১. আল্লাহ পাক বলেন 

 لقد من الله علي المؤمنين اذ بعث فيهم رسولا
অর্থ: আল্লাহ পাক মু’মিনদের প্রতি ইহসান করে তাদের মধ্যে হতে একজন রাসূল প্রেরন করেছেন।”
[সূরা আল ইমরান,আয়াত নং ১৬৪]

*২. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

ﻫﻮ ﺍﻟﺬﻱ ﺑﻌﺚ ﻓﻲ ﺍﻷﻣﻴﻴﻦ ﺭﺳﻮﻻً ﻣﻨﻬﻢ ﻳﺘﻠﻮ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺀﺍﻳﺎﺗﻪ ﻭﻳﺰﻛﻴﻬﻢ ﻭﻳﻌﻠﻤﻬﻢ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻭﺍﻟﺤﻜﻤﺔ ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻣﻦ ﻗﺒﻞ ﻟﻔﻲ ﺿﻼﻝ ﻣﺒﻴﻦ } [ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ 2 : ] .

তিঁনি নিরক্ষরদের মাঝে একজন রাসূল পাঠালেন।যিঁনি তার আয়াত সমূহ থেকে পাঠ করবেন,এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন। যদিও তোমরা ইতিপূর্বে স্পস্ট গোমরাহীতে ছিলে।
[সুরা জুমুআ,আয়াত নং ২]

*৩. রাসূল (ﷺ)-ইরশাদ করেন-

ﺇﻧﻤﺎ . ﺑﻌﺜﺖ ﻣﻌﻠﻤﺎ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺑﻦ ﻣﺎﺟﺔ 229

নিশ্চয়ই আঁমাকে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে।
[ইবনে মাজাহ,২২৯]

দ্বিতীয়,(ارسلنا)=প্রেরণ করেছি

*১.আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন

كَمَآ أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولًا مِّنكُمْ يَتْلُوا۟ عَلَيْكُمْ ءَايَٰتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمْ تَكُونُوا۟ تَعْلَمُونَ

অর্থঃ যেমন,আঁমি পাঠিয়েছি তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে একজন রসূল, যিঁনি তোমাদের নিকট আঁমার বাণীসমুহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র করবেন; আর তোমাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন এমন বিষয় যা কখনো তোমরা জানতে না।
[সূরা আল বাকারা,আয়াত নং ১৫১]

*২. আল্লাহ পাক আরও বলেন

 ياايها النبي انا ارسلناك شاهدا و مبشر ونذيرا
অর্থ : হে আঁমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! নিশ্চয়ই আঁমি আঁপনাকে সক্ষীদাতা, সুসংবাদদাতা, এবং ভয় প্রদর্শনকারী রুপে প্রেরন করেছি।”
[সূরা আহযাব,আয়াত নং ৪৫]

*৩. পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে:
 وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ

অর্থঃহে রাসূল! “আঁমি আঁপনাকে সমগ্র কুল মাখলুকাতের জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি”
[সূরা আম্বিয়া,আয়াত নং ১০৭]

*৪. আরও ইরশাদ হয়েছে:

هُوَ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِۦ وَلَوْ كَرِهَ ٱلْمُشْرِكُونَ

অর্থঃ তিঁনিই প্রেরণ করেছেন আঁপন রসূলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে।
[সূরা আত-তাওবাহ্‌,আয়াত নং ৩৩]

*৫. পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে:
إِنَّآ أَرْسَلْنَٰكَ شَٰهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا

অর্থঃ আঁমি আঁপনাকে প্রেরণ করেছি অবস্থা ব্যক্তকারীরূপে, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে।
[সূরা আল ফাত্‌হ,আয়াত নং ৮]

*৬. পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে:

هُوَ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِۦ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ شَهِيدًا
অর্থঃ তিঁনিই তাঁর রসূলকে হেদায়েত ও সত্য ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে একে অন্য সমস্ত ধর্মের উপর জয়যুক্ত করেন। সত্য প্রতিষ্ঠাতারূপে আল্লাহ যথেষ্ট।
[সূরা আল ফাত্‌হ,আয়াত নং ২৮]

*৭. আরও ইরশাদ হয়েছে:

وَمَآ أَرْسَلْنَٰكَ إِلَّا كَآفَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ

অর্থঃ আঁমি আঁপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদাতা ও সতর্ককারী রূপে পাঠিয়েছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।
[সূরা সাবা,আয়াত নং ২৮]

*৮. পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে:

إِنَّآ أَرْسَلْنَٰكَ بِٱلْحَقِّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَإِن مِّنْ أُمَّةٍ إِلَّا خَلَا فِيهَا نَذِيرٌ

অর্থঃ আঁমি আঁপনাকে সত্যধর্মসহ পাঠিয়েছি সংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। এমন কোন সম্প্রদায় নেই যাতে সতর্ককারী আসেনি।
[সূরা ফাতির,আয়াত নং ২৪]

*৯. আরও ইরশাদ হয়েছে:

إِنَّآ أَرْسَلْنَآ إِلَيْكُمْ رَسُولًا شَٰهِدًا عَلَيْكُمْ كَمَآ أَرْسَلْنَآ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ رَسُولًا

অর্থঃ আঁমি তোমাদের কাছে একজন রসূলকে তোমাদের জন্যে সাক্ষী করে প্রেরণ করেছি, যেমন প্রেরণ করেছিলাম ফেরাউনের কাছে একজন রসূল।
[সূরা আল মুজাম্মিল,আয়াত নং ১৫]

তৃতীয়,(جاء)=আগমন করেছেন

*১.আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন

 قد جاءكم من الله نور

অর্থ: নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহ পাক উঁনার পক্ষ থেকে একখানা “নূর” বা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন।”
[সূরা মায়েদা,আয়াত নং ১৫]

*২. আল্লাহ পাক আরও বলেন

لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِٱلْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
অর্থঃ তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল।তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ।তিঁনি তোমাদের মঙ্গলকামী,মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল,দয়াময়।
[সূরা আত-তাওবাহ্‌,আয়াত নং ১২৮]
                      ||||
অপরদিকে লক্ষ্য করুন: অনাদি-অনন্ত মহান সত্ত্বা আল্লাহ তায়ালা একাই ছিলেন, ছিলেন গুপ্ত।ইচ্ছা করলেন নিজেকে প্রকাশ করার,সে অনুযায়ী সৃষ্টি করলেন গোটা সৃষ্টি জগত।সৃষ্টির কেন্দ্র বানিয়েছেন যাকে,যাঁকে করেছেন সকল সৃষ্টি অস্তিত্বে আসার মাধ্যম যিনি তিঁনি হলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।যেমন: আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন:

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالأِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ

‘আঁমি জ্বীন এবং মানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আঁমার ইবাদাতের জন্য।’
[সূরা যারিয়াত,আয়াত নং ৫৬]

★এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা মাহমুদ আলুসী বাগদাদী একটি হাদিসে কুদসীর উদৃতি দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:

كنت كنزا مخفيا فأحببت أن أعرف فخلقت الخلق لاعرف
‘আঁমি ছিলাম সুপ্ত গুপ্ত ভান্ডার, পছন্দ করলাম পরিচিত হতে।অতএব পরিচয়ের জন্য সৃষ্টি করলাম এক সৃষ্টিকে।’

[আল্লামা আলুসী,রুহুল মা‘আনী: ২৭ পারা, ২২ পৃষ্ঠা; শায়খ ইবনু আরাবী, ফুতুহাতে মাক্কিয়া: ১৪২; আল্লামা আবু সাউদ উমাদি, আবু সাউদ: ২/১৩০]

✌হাদিস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে
كنت كنزا مخفيا فاحببت ان اعرف فخلقت الخلقت لاعرف

অর্থ: আল্লাহ পাক বলেন,আঁমি গুপ্ত ছিলাম। আঁমার মুহব্বত হলো যে,আঁমি জাহির/প্রকাশিত হই।তখন আঁমি আঁমার ( রুবুবিয়্যত) জাহির করার জন্য সৃষ্টি করলাম মাখলুকাত”
         *****দলিল*****
*১. আল মাকাসিদুল হাসানা-৮৩৮
*২. কাশফুল খিফা-২০১৩
*৩. আসনাল মুত্বলিব-১১১০
*৪. তমীযুত ত্বীব-১০৪৫
*৫. আসরারুল মরফুয়া-৩৩৫
*৬. তানযিয়াতুশ শরীয়া,১/১৪৮
*৭. আদ্দুরুল মুন্তাসিরা-৩৩০
*৮. আত তাযকিরা ফি আহাদীসিল মুশতাহিরা-১৩৬
*৯. কানযুল উম্মাল।

✌আল্লাহ পাক হাদীসে কুদসিতে ইরশাদ করেন-
لولاك لما اظهرت الربوبية

অর্থ : হে আঁমার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আঁপনাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্যে না থাকলে আঁমি রুবুবিয়্যাতই প্রকাশ করতাম না।”[কানযুল উম্মাল]

✌বিখ্যাত তাফসির কারক, ইমামুল মুফাসসিরীন,আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:

ان الله تعالي خلق جميع الاشياء من نور محمد صلي الله عليه و سلم ولم ينقص من نوره سيء
অর্থ: এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক সকল মাখলুকাত  “নূরে মুহম্মদী” সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সৃষ্টি করেছেন।অথচ “নূরে মুহম্মদী” সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে কিঞ্চিত পরিমানও কমে নাই।” 
[তাফসীরে রুহুল বয়ান ৭ম খন্ড ১৯৭-১৯৮ পৃষ্ঠা]

      লক্ষ্য করুন
উক্ত আয়াত শরীফ সমূহে তিনটা ভিন্ন ভিন্ন শব্দ রয়েছে।প্রথম আয়াত শরীফে এসেছে بعث ,দ্বিতীয় আয়াত শরীফে আছে ارسلن তৃতীয় আয়াত শরীফে এসেছে جاء ,

✌রাসূলের শানে শব্দ মুবারকের পবিত্রতম অর্থ গুলো হচ্ছে:

 প্রথম,(بعث)=প্রেরণ করেছেন।

দ্বিতীয়, (ارسلنا)=প্রেরণ করেছি।

 তৃতীয়, (جاء)=আগমন করেছেন।

★উক্ত আয়াত গুলো বিচার বিশ্লেষন করলে দেখা যায় যে আল্লাহ তায়ালা কোরআন শরীফে জ্বীন-ইনসান, চন্দ্র-সূর্জ,আসমান-জমিনও তার ভিতরে যা কিছু আছে,হায়াত-মউত,দিবা-রাত্রি এ সকল সৃস্টির ব্যাপারে *খালাকা* শব্দ ব্যবহার করেছেন।শুধু রাসুলের ব্যাপারে “আরসালনাকা”(ارسلنا) “বা’আছা” (بعث) এবং “যা’আ”(جاء) ঘোষনা করেছেন।

★লক্ষ্য করুন পাঠকবৃন্দ,প্রেরণতো তাকেই বলা হয়,যা পূর্ব হতে নিজের কাছে মওজুদ থাকে।নিজের কাছে আগে থেকে তৈরী কোন জিনিষই কেবল মাত্র প্রেরন করা যায়।অর্থাৎ যেটা অনেক আগেই সৃষ্টি করে রাখা হয়।

✌যেহেতু হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ব থেকেই “নূর” হিসাবে সৃষ্টি হয়েই আছেন তাই উঁনার দুনিয়ায় তাশরীফ আনার ব্যাপারে প্রেরন বা আগমন শব্দটাই যাথাযথ।এবং নতুন করে خلق বা সৃষ্টি এই শব্দ প্রয়োগ কোন প্রয়োজনীয়তা বহন করে না।যেমন: হাদীস শরীফ ইরশাদ হয়েছে:
اول ما خلق الله نور

অর্থ: সর্বপ্রথম আঁমার নূর মুবারক সৃষ্টি করা হয়েছে ।”
[মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক ১৮ নং হাদীস]

[বি:দ্র: উক্ত হাদিসের সনদ ও গ্রহনযোগ্যতা এবং রাসূল (ﷺ)
সর্বপ্রথম সৃষ্টি এ নিয়ে পূর্বে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে]

কিন্তু দুনিয়াতে যখন তাশরীফ আনার বিষয় আসলো তখন আল্লাহ পাক বলে দিলেন –
قد جاءكم من الله نور

অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ পাঁক উনার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন একখানা নূর বা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
[সূরা মায়েদা,আয়াত নং ১৫]

✌আবার যখন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর জাহিরী ভাবে দুনিয়ায় তাশরীফ আনার আগেকার সংবাদ জানতে চাওয়া হলো,তখন রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন:

قالوا يارسول الله صلي الله عليه و سلم متي و جبت لك انبوة قال وادم الروح و الجسد
অর্থ: ইয়া রসূলআল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আঁপনি কখন থেকে নবী? হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন আদম আলাইহিস সালাম মাটি ও পানিতে ছিলেন।”
        *****দলিল*****
*১. তিরমীযি শরীফ ,হাদীস ৩৬০৯
*২. মুসনাদে আহমদ হাদীস ২৩৬২০
*৩. মুসতাদরেকে হাকীম, হাদীস ৪২০৯
*৪. আবী শায়বা ৩৬৫৫৩
*৫. তারীখে কবীর লি ইমাম বুখারী ৭/৩৭৪

✌সৃষ্টি ধারার সর্ব প্রথম সৃষ্টি যিনি,যাকে আবর্তন করে অন্যান্য সকল সৃষ্টি,তিঁনি কে- এ বিষয়ে প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ এবং হাদীস যাচাই-বাছাইয়ে অত্যন্ত কঠোরনীতি অবলম্বনকারী ইমাম ইবনু জাওযী বিশিষ্ট তাবেয়ী কা‘ব আহবার থেকে একটি হাদীস নকল করেছেন। তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

ﻋﻦ ﻛﻌﺐ ﺍﻻٔﺣﺒﺎﺭ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺍٔﻧﻪ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻤﺎ ﺍٔﺭﺍﺩ ﺍﻟﻠﻪ ﺳﺒﺤﺎﻧﻪ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻤﺨﻠﻮﻗﺎﺕ ﻭﺧﻔﺾ ﺍﻻٔﺭﺿﻴﻦ ﻭﺭﻓﻊ ﺍﻟﺴﻤﻮﺍﺕ ﻗﺒﺾ ﻗﺒﻀﺔً ﻣﻦ ﻧﻮﺭﻩ ﺳﺒﺤﺎﻧﻪ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ﻭﻗﺎﻝ ﻟﻬﺎ ﻛﻮﻧﻰ ﻣﺤﻤﺪﺍً ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﺼﺎﺭﺕ ﺗﻠﻚ ﺍﻟﻘﺒﻀﺔ ﻋﻤﻮﺩﺍً ﻣﻦ ﻧﻮﺭ ﻓﺴﺠﺪ ﻭﺭﻓﻊ ﺭﺍﺳﻪ ﻭﻗﺎﻝ : ﺍﻟﺤﻤﺪﻟﻠﻪ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻻٔﺟﻞ ﻫﺬﺍ ﺧﻠﻘﺘﻚ ﻭﺳﻤﻴﺘﻚ ﻣﺤﻤﺪﺍً ﻓﺒﻚ ﺍٔﺑﺪﺍٔ ﺍﻟﻤﺨﻠﻮﻗﺎﺕ ﻭﺑﻚ ﺍٔﺧﺘﻢ ﺍﻟﺮﺳﻞ
‘আল্লাহ তা‘আলা যখন সকল সৃষ্টিকে সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করলেন এবং জমিনকে নিচে ও আসমানকে উপরস্থ করতে, (তখন) তিঁনি নিঁজ নূর হতে মুষ্ঠি নূর নিলেন এবং এর উদ্দেশ্যে বললেন (স্বীয় নূরের বিচ্ছুরনকে সম্বোধন করলেন)- তুমি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হয়ে যাও। অতঃপর ঐ নূরের বিচ্ছুরন এক নূরানী সত্ত্বায় সৃষ্টি হয়ে সিজদায় পতিত হয়ে গেলেন। অনন্তর সিজদা হতে তাঁর মাথা মুবারক উত্তোলন করতঃ বললেন আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর)।অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করলেন,এজন্যইতো আঁপনাকে সৃষ্টি করলাম এবং নাম রাখলাম মুহাম্মদ (সর্বাধিক প্রশংসিত)।আঁপনার মাধ্যমে সৃষ্টি রাজির সুচনা করব এবং আপনার দ্বারাই রিসালাতের সমাপ্তি ঘটাবো।’
[ইমাম ইবনু জাওযী, আল মাওলিদুল আরুস: ১৬; ইমাম আবদুর রহমান ছাফুরী শাফেয়ী, নুজহাতুল মাজালিস: ১/২৫২, ইবনে আব্বাস হতে]

✌আবার লক্ষ্য করুন: হযরত আদম (আঃ)-এঁর অন্ধকার দেহে রুহ প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁর ললাটে হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ)-এঁর নূর মোবারকের অংশবিশেষ স্থাপন করা হয় এবং এতে দেহের ভেতরে আলোর সৃষ্টি হয়। তখনই হযরত আদম (আঃ) মানবরূপ ধারণ করেন এবং হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করেন।
আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ)-সৃষ্টি হয়েই প্রথমে পাঠ করেছিলেন আলহামদুলিল্লাহ। তাই আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির প্রথম প্রতিনিধি হযরত আদম (আঃ) এবং সমগ্র বিশ্ব জগতের প্রতিনিধি হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ)-এঁর প্রথম কালাম ‘আলহামদুলিল্লাহ’ দিয়ে কোরআন মাজিদ শুরু করেছেন (তাফসীরে নঈমী)।

এভাবে ঐ জগতের একহাজার আট কোটি বছর পর মোহাম্মদী নূর হযরত আদম (আঃ)-এঁর দেহে স্থানান্তরিত হয়। প্রথমে ললাটে, তারপর ডান হাতের শাহাদত অঙ্গুলিতে এবং পরে পৃষ্ঠদেশে সেই নূরে মোহাম্মদীকে (দঃ) স্থাপন করা হয়।এরপর জান্নাতে,তারপর দুনিয়াতে পাঠানো হয় সে নূরকে।১০৬ মোকাম পাড়ি দিয়ে তিনি অবশেষে মা আমেনার উদর মোবারক হতে মানব সূরতে ধরাধামে আত্মপ্রকাশ করেন।
[১০৬ মাকামের বর্ণনা সুন্নীবার্তা মিলাদুন্নবী সংখ্যায় দেখুন]

★১৯৭. অনাদিরূপে এক আল্লাহ তা’আলাই ছিলেন।অন্য কিছু বলিতে আর কিছুই ছিল না। আল্লাহ ছাড়া আর কিছুই নাই। এই শূন্যতার সমাপ্তি ঘটাইতে ইচ্ছা করিলেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা।যেমন, ওলীকুল শিরোমণি শায়েখ আকবর (রঃ) কর্তৃক এলহাম প্রাপ্ত এবং পূর্বাপর ওলী ও সূফী তথা আধ্যাত্মিকতায় ধন্য মহানগণ কর্তৃক গৃহীত আল্লাহ তাআলার একটি বাণীতে উলেখ আছে- “আঁমার সত্তা (জানিবার কেহ না থাকায়) অজানা ছিল; আঁমার ইচ্ছা হইল (আঁমার গুণাবলীর মাধ্যমে আঁমাকে প্রকাশ করা)-আঁমাকে জানান। সেমতে আঁমি সৃষ্টি করি জগত।”
[তথ্য সূত্র:তাফসীরে রুহুল মাআনী, পৃষ্ঠা: ১৪-২১;বুখারী শরীফ,৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ২, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী,হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ)]

* এই বাণীর মর্ম কোরআনের একটি আয়াত দ্বারাও সমর্থিত।আল্লাহ তাআলা বলিয়াছেন-“জিন এবং মানুষ এই দুইটি জাতিকে আঁমি একমাত্র আঁমার এবাদত বা গোলামী করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিয়াছি।”
[সূত্র: আল কোরআন,সূরা যারিয়াত, আয়াত নং ৫৬,সূরা নং: ৫১]

✌আল্লাহ তায়ালার এই ইচ্ছার বাস্তবায়নে জগত সৃষ্টির শুভ প্রারম্ভেই আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করিলেন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ)-এঁর সৃষ্টির মূল নূরকে।এই নূরকেই পরিভাষায় বলা হইয়া থাকে “হাকীকতে মুহাম্মদিয়া”।এই নূর বা হাকীকতে মুহাম্মদীয়া বলিতে কাহারও মতে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এঁর পবিত্র রূহ বা আত্মা উদ্দেশ্য।আর কাহারও মতে অন্য কোন বাস্তব বস্তুবিশেষ উদ্দেশ্য। অথবা ঐ পবিত্র রূহ বা আত্মারই বাহন,কিন্তু পদার্থীয় দেহ নহে,বরং হয়ত এক বিশেষ জ্যোতির্বিম্ব,যাহার প্রতিবিম্বের বিকাশ ছিল হযরত মুহাম্মদ(ﷺ)-এঁর নশ্বর দেহ।
[তথ্য সূত্র:যোরকানী,১-৩৭; বোখারী শরীফ,৫ম খন্ড,পৃষ্ঠা: ২, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী,হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ]

✌উপরোল্লিখিত আল্লাহ প্রদত্ত এলহামী বাণী ও তাহার সমর্থনে আয়াতের মর্ম ইহাই ছিল যে, “আল্লাহকে জানিবে, আল্লাহর গোলামী করিবে এই উদ্দেশেই সৃষ্ট জগতের সৃষ্টি।” সুতরাং সাধারণ নিয়ম মতেই আল্লাহ তাআলা তাঁহার প্রথম সৃষ্টি হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ)-কে ঐ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের যোগ্যতায় সকলের ঊর্ধ্বে শীর্ষস্থানের অধিকারীরূপে সৃষ্টি করিয়াছেন। বোখারী শরীফের এক হাদীস আছে,নবী (ﷺ)- ফরমাইয়াছেন- “আল্লাহকে ভয় করায় এবং আল্লাহকে জানায় আঁমি তোমাদের তথা নিখিল সৃষ্টির সকলের ঊর্ধ্বে।” আল্লাহকে যে যত বেশী ভয় করিবে,সে তাঁহার তত বেশী গোলামী করিবে।
[তথ্য সূত্র: বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৩,হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ]

✌মাওলানা আশরাফ আলী থানভী তাহার সীরাত সস্কলন ‘নশরুত্তীব’ কিতাবে নিজ সংযোজিত টীকায় নূরে মুহাম্মদীকে রূহে মুহাম্মদী সাব্যস্ত করিয়াছেন।
[তথ্য সূত্র: বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃঃ ২, হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ]

✌এই হাকীকতে মুহাম্মদীয়া হইল নিখিল সৃষ্টিজগতের সর্বপ্রথম সৃষ্টি।লৌহ-কলম, বেহেশত-দোযখ, আসমান-যমীন, চন্দ্র -সূর্য,ফেরেশতা এবং মানব-দানব সব কিছুই ঐ হাকীকতে মুহাম্মদিয়া বা নূরে মুহাম্মদীর পরে সৃষ্টি হইয়াছে।এই তথ্য সুস্পষ্টরূপে বিশিষ্ট সাহাবী জাবের (রাঃ) বর্ণিত এক হাদীসে উল্লেখ রহিয়াছে। জাবের (রাঃ) বলিয়াছেন,আমি একদা আরজ করিলাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আঁপনার চরণে উৎসর্গ হউক; সকল বস্তুর পূর্বে সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালা কোন জিনিসটি সৃষ্টি করিয়াছেন? রাসূল (ﷺ) বলিলেন, হে জাবের! আল্লাহ তায়ালা সকল বস্তুর পূর্বে সর্বপ্রথম তোমাদের নবীর নূর সৃষ্টি করিয়াছেন (যাহা) আল্লাহ (বিশেষ কুদরতে সৃষ্ট) নূর হইতে।অতঃপর সেই নূর আল্লাহর কুদরতে আল্লাহ তায়ালার নিয়ন্ত্রণাধীনে চলমান ছিল।ঐ সময় লওহ-কলম, বেহেশত-দোযখ, আসমান-যমীন, চন্দ্র-সূর্য, মানব-দানব এবং ফেরেশতা কিছুই ছিল না।”
[তথ্য সূত্র: বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৩, হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ; যোরকানী, ১-৪৬]

✌এই প্রসঙ্গে একটি কথা বলতে চাই যে, কোন শিল্পী নিজ দক্ষতায় সুন্দর গঠনের একটি জিনিস তৈয়ার করে; তাহা এতই সুন্দর হয় যে, স্বয়ং গঠনকারী শিল্পী তাহারই হাতে গঠিত জিনিসটির প্রতি আকৃষ্ট হইয়া পড়ে, সে তাহাকে আদর করে, ভালবাসে। শিল্পীর নিজ হাতে গড়া বস্তু তাহার দক্ষতায় এতই সুন্দর ও মনোরম হয় যে, স্বয়ং শিল্পী তাহার ভালবাসায় মুগ্ধ হয়। এমনকি শিল্পী প্রদর্শনী করিয়া তাহার গুণ গরিমারি প্রচার করে। আল্লাহ তাআলাও হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ)-এঁর ক্ষেত্রে তাহাই করিয়াছেন।

✌নবী (ﷺ) নূরী,তাঁর উপর যে হাদীসটি আছে যেমন: জাবের বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা আমি রাসূল (সাঃ)-কে জিজ্ঞেসা করি,হে আল্লাহর রাসূল! আঁপনার প্রতি আমার বাবা–মা কুরবান হোক, আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর আগে কী সৃষ্টি করেন? নবী (ﷺ) বলেনঃ হে জাবের! আল্লাহ তায়ালা সমস্ত বস্তুর পূর্বে তাঁর নূর দ্বারা তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেন। তারপর সেই নূর নিঁজ ক্ষমতায় আল্লাহর আদেশে যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়।সেই সময় লউহ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম, ফেরেশতা, আসমান-যমীন, সূর্য-চন্দ্র, জিন, মানুষ কোন কিছুই ছিলনা।” এই হাদীসটি বিংশ শতাব্দীর কথিত শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী বাতিল বলে আখ্যা দিয়েছেন।তিনি বলেন সৃষ্টির প্রথম বস্তু হচ্ছে কলম, নবীর নূর নয়। প্রথম সৃষ্টি নবীর নূর বলে যে হাদীস প্রচার করা হয় তা জাল কথা,হাদীস নয়।
[সূত্র: সিল সিলাতুল আহাদীছ আস স্বহীহা (সহীহ হাদীস সিরিজ), হাদীস: ৪৫৮; গ্রন্থস্বত্ত: নাবী (ﷺ) কি নূরের তৈরী, পৃষ্ঠা: ৩২, প্রণেতা: আবদুর রাকীব (মাদানী), মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ,সউদী আরব]

✌সর্বপ্রথম নাসিরুদ্দীন আলবানীর একটু পরিচয় করিয়ে দেই, তিনি হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি সউদী বংশের শাসকদের প্রস্তাব করেছেন মহানবীর পবিত্র রওযার সবুজ গম্বুজটি ভেঙ্গে ফেলার।সে বলেছে, ‘এটি আফসোসের বিষয় যে,দীর্ঘদিন হল রাসূলের কবরের উপর একটি গম্বুজ প্রস্তুত হয়েছে…আমার বিশ্বাস সউদী সরকারের একত্ববাদের দাবী যদি সত্য হয়ে থাকে তবে তাদের উচিত তা চূর্ণ করে মসজিদে নববীকে তার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
[সূত্র: তাহযীরুল মাসাজিদি মিন ইত্তিখাযিল কুবুর মাসাজিদা, আলবানী, পৃষ্ঠা: ৬৮-৬৯; ওয়াহাবীদের সৃষ্ট সংশয়ের অপনোদন (ইসলামী সেবা দপ্তর, কোম, ইরান)]

✌আমার কথা হচ্ছে,আমরা রাসূল (ﷺ) -কে দেখিনি কিন্তু তাঁর স্মৃতি নিয়ে তাঁকে ভালোবাসি,মনেপ্রানে বিশ্বাস করি।তাঁর প্রতি গভীর ভালোবাসার মারফতে তাঁর দর্শন লাভ করি।রাসূল (ﷺ)-আজ আমাদের মধ্যে প্রকাশ্যে নেই কিন্ত তাঁর রওযা শরীফ আছে আর এটাই আমাদের জন্যে আল্লাহকে পাওয়া ও সারা জাহানের মাখলুকাতকে প্রমান দেওয়ার একটি নিদর্শন।যারা রাসূল (ﷺ)-কে ভালোবাসে তাদের জন্যে রাসূলের রওজার গম্বুজতো দূরের কথা তাঁর ছায়াও একটি যিয়ারতের উৎস।তাহলে যে ব্যক্তি তার নিজের চোখে দেখা এই নিদর্শনটিকে মিটিয়ে ফেলতে চায়,তার কাছে রাসূল (ﷺ)-এঁর নূর তো অবিশ্বাসযোগ্য হবেই। আর তারা ‘রাসূল (ﷺ)-এঁর নূর সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয়েছে’ সেটা মানতে রাজি না কিন্তু ‘কলম’ ঠিকই মানতে রাজি আছেন।

পাঠকবৃন্দের কাছে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) অসংখ্য নাম সমূহের গুণাবলী থেকে শুধুমাত্র কয়েকটি নামের অর্থ তুলে ধরতে চাই।যেমন,নবীজী (ﷺ)-এঁর এই নামটি ‘সাইয়্যেদ’ অর্থ সর্দার বা প্রধান,নবীজী নিখিল সৃষ্টির প্রধান, নবী ও রাসূলগণের প্রধান। ‘মোকাফফা’ অর্থ সর্বশেষে প্রেরিত।হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) সর্বশেষ পয়গম্বর।‘সিরাজুম মুনীর’ অর্থ দীপ্ত সূর্য।নবী (ﷺ) দীপ্ত সূর্য অপেক্ষা অধিক ভাস্কর ছিলেন।
[সূত্র: বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৪৭, হাঃ ১৬৬২, হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ]

নবী করিম (ﷺ)-এঁর নূর মোবারক মাখলুকাতের মধ্যে সর্বপ্রথম সৃষ্ঠি করা হইয়াছে।যেমন হাদীস শরীফে আছে নবী করীম (ﷺ) বলেন হে জাবের আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম তোমাদের নবীর নূর পয়দা করিয়াছেন।
[তথ্য সূত্র: শানে মাহবুব (সঃ), পৃষ্ঠা ৩৮,তাবলীগী কুতুবখানা,চক বাজার ঢাকা]

✌কাজেই চাঁদ সূরুজের অস্তিত্ব,রৌশনী সবকিছুই নূর নবী হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) ফয়েজের কারণেই বিদ্যমান।নবী করিম (ﷺ) যদিও কবর শায়িত রহিয়াছেন কিন্তু তাঁহার অস্তিত্ব হইতেই চাঁদ সূরুজ আলোক লাভ করিতেছে।সমগ্র বিশ্বজগতের অস্তিত্ব তাঁহার মাধ্যমে লাভ হইয়াছে ইহা যেমন সত্য তেমন বিশ্বজগতের সচল থাকার মূলেও নবী করিম (ﷺ)-এঁর অস্তিত্ব কাজ করিতেছে। আধ্যাত্মিক সাধনা এবং রিয়াজতের মাধ্যমে যে ব্যক্তি নিজের অন্ত:করনকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করিয়া লয় সেই ব্যক্তি ফেরেশতার বৈশিষ্ঠ অর্জন করে।
[তথ্যসূত্র: শানে মাহবুব (সঃ),পৃষ্ঠা ৭১,তাবলীগী কুতুবখানা, চক বাজার ঢাকা)]

✌ইসলাম মাওলানা মোহাম্মদ কাসেম নানুতবী লিখিত কাছিদায়ে বাহরিয়া গ্রন্থের কয়েকটি কবিতার অর্থ নীচে উলেখ করা যাইতেছে।তিনি লিখিয়াছেন,আঁপনি(রাসূল (ﷺ) যমিনের সকল সৃষ্টির গৌরব।আঁপনি সকল পায়গাম্বারের মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ।অন্যান্য নবী যদি ফুল হন তবে আপনি ফুলের ঘ্রান। অন্যান্য নবী সূর্যের কিরণ হইলে আপনি হইলেন সূর্য।আঁপনি সমগ্র সৃষ্টিকুলের প্রানস্বরূপ।আঁপনি দৃশ্যমান নূর। বিশ্বজগত আঁপনার উছিলায় সৃষ্টি হইয়াছে।আঁপনার নূরের বদৌলতে অস্তিত্ব হীনতা হইতে সকল কিছু অস্তিত্ব লাভ করিয়াছে।বিশ্বজগতের সকল প্রকার পূর্ণতার সমাবেশ আপনার মধ্যে রহিয়াছে।আঁপনার মতো কামালাত ও বৈশিষ্ট অন্য কাহারো মধ্যে নাই। আঁপনার মর্তবায় অন্য কোন নবী পৌছিতে পারে নাই। মোজেযার অধিকারী নবীগণও আঁপনার তুলনায় নিশপ্রাণ।আঁপনার পূর্ববতী নবীগণ আঁপনার উম্মত হওয়ার আগ্রহ ও আকাঙ্খা ব্যক্ত করিয়াছেন। আঁপনার নূর প্রকাশ না পাইলে আল্লাহ পাক সৃষ্টির কাজে হাত দিতেন না। হযরত মুসা (আঃ) আল্লাহ পাকের দীদার পাইতে চান অথচ স্বয়ং আল্লাহ পাক আঁপনার সাক্ষাত চাহিয়াছেন।জমিন ও আসমান কখনো এক সমান হইতে পারেনা।
[তথ্য সূত্র: প্রিয় নবী (সঃ) এর আদর্শ জীবন, পৃষ্ঠা ৮৬, তাবলীগী কুতুবখানা, চক বাজার ঢাকা]

✌রাসূলুলাহ (ﷺ) বলিয়াছেন-আঁমি একটি কথা বলিতেছি; ফখর বা গর্ব করা উদ্দেশ্য নহে। ইব্রাহীম (আঃ) খলীলুলাহ (অর্থাৎ তিঁনি আলাহকে দোস্ত বানাইয়া ছিলেন), মুসা (আঃ) সফিউলাহ (অর্থাৎ তিঁনি আল্লাহ কর্তৃক বৈশিষ্ট প্রদত্ত), আর আমি হাবিবুলাহ (অর্থাৎ আমাকে স্বয়ং আল্লাহ তাঁহার দোস্ত বানাইয়াছেন ভালবাসিয়াছেন)।
[তথ্য সূত্র: মেশকাত শরীফ; বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা:৪, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী,হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ]

✌কোরআন মাজীদে উদ্ধৃত হয়েছে “ওয়ামা খালাকনাস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্ব” এই তাফসীরটি হযরত জাবেরের বর্ণনার অনুকুলে।তিনি বলেছেন, আল্লাহতায়ালা সর্বপ্রথমে আহমাদ মোস্তফার (ﷺ) রূহ সৃষ্টি করেছেন। সেই রূহ থেকে সৃষ্টি করেছেন আরশ, কুরসি, আকাশ, পৃথিবী এবং সমগ্র সৃষ্টি।
[তথ্য সূত্র: মাদারেজুন্ নবুওয়াত, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৩, শায়েখ আবদুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহঃ), সেরহিন্দ প্রকাশন, সন-জুন ১৯৯৯ ইংরেজী]

✌আল্লাহ তায়ালার একটি নাম নূর।নূর শব্দটির রয়েছে বিভিন্নরকম অর্থ।যেমন, নূর বহনকারী, নূরের স্রষ্টা. আকাশ ও পৃথিবীকে নূরের মাধ্যমে আলোকিতকারী, আরেফগণের অন্তরে হেদায়েতে ও রহস্যের আলো প্রজ্জ্বলকারী ইত্যাদী। আল্লাহ পাক মোস্তফা (ﷺ)-কেও নূর নামে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন তিনি এরশাদ করেছেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট -আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এসেছে নূর এবং সুস্পষ্ট কিতাব।” অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, “ওয়া সিরাজাম মুনিরা” অর্থাৎ তিঁনি উজ্জ্বলকারী আলোকবর্তিকা।রাসূল পাক (ﷺ) যে নূর তার কারণ হচ্ছে তিঁনি আল্লাহতায়ালার আহবানকে প্রোজ্জ্বল করেছেন, জ্বালিয়েছেন নবুয়তের নূর এবং সত্য ধর্ম ইসলামের মাধ্যমে আরেফগণের হৃদয়কে করেছেন আলোকিত।
[তথ্য সূত্র: মাদারেজুন্ নবুওয়াত,৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৩, শায়েখ আবদুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহঃ), সেরহিন্দ প্রকাশন]

✌রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেছেন,আল্লাহ তায়ালা আঁমার উপর যখন তাঁর নেয়ামতের বহিঃপ্রকাশ চাইলেন,তখন এরশাদ করলেন,হে মুহাম্মদ (ﷺ) আঁপনি যখন ভূত চতুষ্টয়ের মধ্যে ছিলেন তখন আঁমি আঁপনার নূরকে ডাক দিয়েছিলাম আর আঁপনার উম্মতকেও ডাক দিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিলো, আঁপনার উম্মতের কথা মুসা (আঃ)-কে শোনাবো।
[সূত্র: মাদারেজুন্ নবুওয়াত,২য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ৮৮, সেরহিন্দ প্রকাশন, সন-ডিসেম্বার ১৯৯৯]

✌রমযান মাস,অমাবস্যা-পূর্ব অন্ধকার, রজনী গভীর, লোকালয় হইতে বহু দূরে হেরা পর্বতের উচ্চ শৃঙ্গে নিভৃতি প্রকোষ্ঠে নবীজী (ﷺ) ধ্যানমগ্ন।এমন সময় হঠাৎ মহাসত্যের আগমন হইল। ফেরেশতা জিব্রাইল (আঃ) ঐ প্রকোষ্ঠে তাঁহার সম্মুখে উপস্থিত হইলেন এবং সালাম করিলেন। ফেরেশতারা নূরের তৈয়ারী; বহন করিয়া আনিয়াছেন আল্লাহ তায়ালার কালাম, তাঁহার নূর; এইসব নূরের আকর্ষণে নবীজী(ﷺ)-এঁর জড় দেহের আবেষ্টনে লুক্কায়িত মহানূরও পৃতিভাত হইয়াছে অসাধারণভাবে।অতএব হেরা গুহায় এখন নূর! নূর! সবই নূর।নবীজী (ﷺ)-এঁর ভিতরে বাহিরে নূরের জৌলুসে নূরই নূর হইয়া গিয়াছে। এই মহা মহূর্তে তাঁহার দেহ-মনের অবস্থা একমাত্র তাঁহারই অনুভব করার কথা। ব্যক্ত বা বর্ণনা করার আয়ত্ত
বহির্ভূত।নিভৃত গিরিগহবরের এই অভূতপূর্ব মুহুর্তটি মোস্তফার হৃদয়ে কি রেখাপাত করিয়াছিল তাহা কি কোন মানুষ নির্ণয় করিতে পারে?(ﷺ)!
[তথ্য সূত্র: বোখারী শরীফ,৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৮৩, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ; ৬৫,চক সারকুলার রোড,ঢাকা- ১২১১ যোরকানী, ১-২০৭]
[সংগ্রহকৃত]

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(৩৬ম পর্ব)

🌀অনেকে বলেন কোরআনে নূর বলা হয়েছে কিন্তু নূরের তৈরী বলা হয়নি, আবার কেউ বলেন শুধু রুহ মোবারক নূর কিন্তু দেহমোবারক নয়,আবার কেউ বলেন সাদা মাটির তৈরী (নাউযুবিল্লাহ!) আজকে ইন-শা-আল্লাহ সে বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো-[২৮ম অংশ]

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

রাসূল (ﷺ) হলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি,যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না।[12th Part]

🌀রাসূল (ﷺ) এঁর নবূয়াত অবধারিত ছিল এবং তিঁনি সৃষ্টিতে প্রথম আর প্রেরণে সর্বশেষ:

★১৯৮. রাসূল (ﷺ) এঁর নবূয়াত অবধারিত ছিল।কাহাকেও কোন পদে নিযুক্তির তিনটি পর্যায় আছে।যেমন চাকুরীর জন্য
(১) বাছাই করা।
(২) চাকুরী প্রদান করা।
(৩) কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ করা।কোন সময় দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়দ্বয় এক সঙ্গেই হয়, আর কোন সময় উভয়ের মধ্যে ব্যবধান হইয়া থাকে।সকল নবীরই নবুয়তের জন্য নির্বাচন ও বাছাই করা আদিকালে আল্লাহ তাআলার নিকট সম্পন্ন করা হইয়াছিল, কিন্তু তাহা শুধু প্রথম পর্যায়ের ছিল। অতঃপর হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) ছাড়া অন্য সকল নবীর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়দ্বয় একই সঙ্গে তাঁহাদের আবির্ভাবকালে সম্পন্ন হইয়াছে।পক্ষান্তরে আল্লাহ তায়ালা হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) এঁর ক্ষেত্রে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়া ছিলেন এবং উহা তাঁহার জন্য এক অসাধারণ গৌরব ও বৈশিষ্ট্য ছিল।তাঁহার বেলায় তৃতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান তাঁহার আবির্ভাবকালে হইয়াছিল কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান বহু বহু পূর্বে,এমনকি সারা বিশ্ব ও বিশ্বের আদি পিতা আদম (আঃ)ও সৃষ্টির পূর্বে সম্পন্ন হইয়াছিল। হযরত মোহাম্মদ (ﷺ) এঁর এই বিশ্ব-ভূবন এবং হযরত আদমেরও সৃষ্টির পূর্বে ঊর্ধ্ব জগতে নবীরূপে বিঘোষিত ছিলেন।রাসুলুলাহ (ﷺ) এঁর একক বৈশিষ্ট্য নিম্ন হাদীসে সুষ্পষ্টরূপে বর্ণিত রহিয়াছে।

**১.আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করিয়াছেন।সাহাবীগন জিজ্ঞাসা করিলেন,ইয়া রাসূলুলাহ! কোন সময় নিশ্চিতরূপে আঁপনার নবুয়ত লাভ হইয়াছিল? রাসূল (ﷺ) বলিলেন,যে সময় আদম তাঁহার আত্মা ও দেহের সম্মিলনে পয়দাও হইয়াছিলেন না।অর্থাৎ হযরত আদম (আঃ)-এর সৃষ্টির পূর্বে। এই তথ্যটি আরও কতিপয় হাদীসে বর্ণিত রহিয়াছে। যথা-ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে এবং মায়সারা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে।
[সূত্র: যোরকানী,১-৩৮; নশরুত্তীব,৬নং টীকা (উক্ত টীকাটি মূল কিতাবের সংকলক মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর নিজস্ব); বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃ:৬, হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ]

**২. আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! কখন আঁপনার নবূয়াত অবধারিত হয়েছে? তিঁনি বলেনঃ যখন আদম আলাইহিস সালামের দেহ ও আত্মা সৃষ্টি হচ্ছিল।
[সূত্র: জামে আত তিরমিযী,৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৪৭,হাদীসঃ ৩৫৪৮, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ১৯৯৮]

**৩. হযরত আদম (আঃ)-এঁর সৃষ্টিরও পূর্বে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) নবুয়ত প্রাপ্ত হইয়াছিলেন,এমনকি তাঁহার নাম এবং তিঁনি যে আল্লাহ তাআলার রাসূল তাহা ঊর্ধ্ব জগতের সর্বত্র বিঘোষিত হইতেছিল এবং মহান আরশের গায়ে তাঁহার নাম পরিচয় এবং ‘রাসূলুল্লাহ’ খেতাব লিখিত ছিল।
[সূত্র: যোরকানী, ১-৬২; বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৭, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী, হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ

**৪. ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত। আল্লাহতাআলা ঈসার (আঃ) নিকট ওহী মারফত আদেশ পাঠাইয়া ছিলেন মুহাম্মদ (ﷺ) এঁর প্রতি আঁপনি ঈমান গ্রহন করিবেন স্বীয় উম্মতকে আদেশ করিবেন, তাহারা যেন (বর্তমানে আঁপনার মুখে শুনিয়া এবং পরবর্তীতে তাঁহার আবির্ভাব হইলে) তাঁহার প্রতি ঈমান আনে। মুহাম্মদ (এর বিকাশ সাধন ইচ্ছা) না হইলে আদমকেই সৃষ্টি করিতাম না,বেহেশতও সৃষ্টি করিতাম না,দোযখও সৃষ্টি করিতাম না।
[সূত্র: যোরকানী, ১-৪৪; বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৫, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী,হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ, ৬৫, চক সারকুলার রোড, ঢাকা-১২১১]

**৫. নবী (ﷺ) ও আলীর নূরের (দীপ্তি) পরিবর্তনঃ নবী (ﷺ) ও আলী (আঃ) এঁর নূর একত্রিত হয়ে হযরত আদমের পেশানী মোবারক হতে হজরত আবদুল মুত্তালিবের পেশানীতে যেভাবে একের পর এক স্থান পরিবর্তন করেছিলেন তাই আল্লাহ তাঁকে কোরআনে এইভাবে বর্ণনা করেছেন-“হে হাবীব (ﷺ) তুমি ঐ শক্তিশালী এবং দয়াময় আল্লাহর উপর ভরসা রাখো যে ঐ সময় ও তোমায় দেখছিল যখন তুমি পয়গম্বরীর উপর কায়েম (স্থায়ী) হয়েছিলে। এবং সেজদাকারীদের মধ্যে আঁমি তোমার স্থান পরিবর্তন হওয়াকে দেখছিলাম।
[সূত্র: আল কোরআন,সূরা শোয়ারা, আয়াত: ২১৭-২১৯; গ্রন্থস্বত্ত: সঠিক পথের সন্ধানে, পৃষ্ঠা: ৬১, জনাব ইনাম মহম্মদ, কলকাতা, ভারত]

**৬.আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুলাহ (ﷺ) বলেন,আঁমি আদম সন্তানদের উত্তম যুগ গুলোতে যুগ যুগ ধরে প্রেরিত হতে থাকি।অবশেষে সে যুগে এসেই আঁমার আবির্ভাব ঘটলো,যে যুগে আঁমি বর্তমানে আছি।
[সূত্র: সহীহ আল বুখারী,৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৪৩, হাদীস: ৩২৯৩, ইমাম মোহাম্মদ ইবনে ইসমাইল বুখারী,আধুনিক প্রকাশনী]

⏩কিছু সংখ্যাক লোক বলে থাকেন যে, রাসূল (ﷺ) হচ্ছেন আদম সন্তান,হযরত আদম (আঃ) যেমন সকল মানব জাতীর পিতা,তেমনি রাসূলেরও পিতা।কিন্ত আল্লাহ বলছিলেন ‘না! মুহাম্মদ এর বিকাশ সাধন ইচ্ছা না হইলে আদমকেই সৃষ্টি করিতাম না, বেহেশতও সৃষ্টি করিতাম না, দোযখও সৃষ্টি করিতাম না। রাসূল (ﷺ) বলেছেন: যে সময় আদম তাঁহার আত্মা ও দেহের সম্মিলনে পয়দাও হইয়াছিলেন না। অর্থাৎ হযরত আদম (আঃ)-এর সৃষ্টির পূর্বে আঁমার সৃষ্টি। তাহলে রাসূল (ﷺ) এঁর পিতা হযরত আদম (আঃ) কেমন করে হলেন,আপনারা কি কখনো দেখেছেন পিতার আগে পুত্রের জন্ম হয়েছে? তাহলে রাসূলুলাহ (ﷺ) এঁর সম্মান কার উপরে শ্রেষ্ঠতা প্রকাশ পায়? আর হযরত আদম (আঃ) যদি সকলের পিতা হয়ে থাকেন তাহলে হযরত নূহ (আঃ)-ও সকল মানুষের পিতা হবেন। যেমন:

** তাফসীরে মাযহারীতে বর্ণিত যে, ‘পয়গাম্বরদের মধ্যে সর্বপ্রথম নূহ (আঃ)-এঁর উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, আদম (আঃ)-এঁর মতো তিঁনিও পরবর্তী সকল মানুষের পিতা ছিলেন।(কেননা, পাবনের কারণে সকল মানুষ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এবং যারা নূহ (আঃ)-এর কিশতীতে আরোহণ করায় বেঁচে গিয়েছিল,তাদের মধ্যে নূহ (আঃ)-এর বংশধর ব্যতীত অন্য কারো বংশ বাকী ছিল না)। আল্লাহ্ বলেন,‘আর আঁমি তার বংশধরদেরকেই বিদ্যমান রেখেছি বংশ পরম্পরায়।’
[সূত্র: আল কোরআন, সূরা সাফফাত, আয়াত: ৭৭, শুরা: ৩৭; তাফসীরে মাযহারী, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ৪৬০, আল্লামা কাযী মুহাম্মদ ছানাউল্লাহ পানীপথী (র), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, সন- মে ১৯৯৮]

✊হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) নিখিল বিশ্ব সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ তাআলার তরফ হইতে নবুয়ত প্রাপ্ত হইয়াছিলেন এবং তাঁহার আবির্ভাবের উদ্দেশেই আল্লাহ তাআলা এই বিশ্ব-ভুবন সৃষ্টি করিলেন। সেমতে এই বসুন্ধরাকে হযরত (ﷺ) এঁর আবির্ভাব ক্ষেত্ররূপে উপযোগী করার উদ্দেশে ধাপে ধাপে উহাকে মার্জিত করার জন্য এক লক্ষ বা দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী এই বিশ্বে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক প্রেরিত হন। হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-কে কেন্দ্র করিয়াই সকল নবীর আগমন।
[সূত্র: বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড,পৃ-৯, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী,হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ]
🔽
জাবির ইবনে আবদুলাহ ও আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেনঃ কিয়ামতের দিন আঁমিই হব নবীগনের ইমাম (নেতা), তাঁদের মুখপাত্র এবং তাদের সুপারিশকারী, এতে কোন অহংকার নাই।
[সূত্র: জামে আত-তিরমিযী, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৪৬, হাদীসঃ ৩৫৪৬, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ঢাকা, সন-১৯৯৮; বুখারী ও মুসলিম]

✌️শুধু তাহাই নহে, হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) সমগ্র জিন জাতিরও নবী, পবিত্র কোরআনে ইহার ভুরি ভুরি প্রমান রহিয়াছে। আবদুলাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতেও এই বিষয়টি বর্ণিত রহিয়াছে। এতদ্ভিন্ন হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) ফেরেশতাদেরও নবী।এই তথ্য মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীসের বাক্য আঁমি [হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)] সমগ্র সৃষ্টির নবী” সৃষ্টি শব্দের ব্যাপকতা উক্ত সত্যের ইঙ্গিত দানে যথার্থই বটে।
[সূত্র: মেশকাত, পৃষ্ঠা: ৫১৫; বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ১১, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী,হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ]

✊আল-মুত্তালিব ইবনে আবু ওয়াদাহ (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল-আব্বাস (রা:) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এলেন।মনে হয় তিঁনি কিছু (কুরাইশদের মন্তব্য) শুনে এসেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বারে উঠে দাঁড়িয়ে বলেনঃ আঁমি কে? সাহাবীগন বলেন,আঁপনি আল্লাহর রাসূল,আঁপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তিঁনি বলেনঃ আঁমি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব। আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেন এবং তাদের মধ্যে সর্বপেক্ষা উত্তম লোকদের থেকে আঁমাকে আবির্ভূত করেন। অতঃপর তিঁনি তাঁর সৃষ্টিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেন এবং আঁমাকে তাদের মধ্যকার উত্তম দল থেকে সৃষ্টি করেন। অতঃপর তিঁনি তাদেরকে কতক গোত্রে বিভক্ত করেন এবং আঁমাকে তাদের মধ্যকার উত্তম গোত্র থেকে পয়দা করেন। অতঃপর তিঁনি তাদেরকে কতক পরিবারে বিভক্ত করেন এবং আঁমাকে তাদের মধ্যকার সবচেয়ে উত্তম পরিবারে ও উত্তম ব্যক্তি থেকে পয়দা করেন।
[সূত্র: জামে আত-তিরমিযী, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৪৬, হাদীসঃ ৩৫৪৬, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ঢাকা, সন-১৯৯৮]।

☀হযরত মোহাম্মদ (ﷺ)-এঁর আবির্ভাবযোগ্য বিশ্ব গঠনে জরুরী পর্যায়ে কতিপয় বিশেষ গুন প্রতিভা প্রয়োজন।

(১) সত্য গ্রহণে নির্ভীক অদম্য সাহসী হওয়া; যেন সকল প্রকার প্রতিকূল অবস্থায় সৎসাহসের মদদে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ)-এঁর শিক্ষা ও আদর্শ গ্রহণ করায় নির্দ্ধিধায় অগ্রসর হইতে পারে।

(২) সত্যের উপর দৃঢ় থাকায় পর্বত অপেক্ষা অধিক অটল-অনড় হওয়া, যেন ঐ শিক্ষা ও আদর্শ আকড়াইয়া থাকায় জুলুম-অত্যাচার, ঝড় তুফান চুল পরিমাণও বিচ্যুত করিতে না পারে।

(৩) সত্য প্রতিষ্ঠাকল্পে বীরত্বের সহিত ত্যাগ তিতিক্ষা এবং আত্মোৎসর্গে অগ্রসর হইতে থাকে, যেন ঐ শিক্ষা ও আদর্শ প্রচার-প্রতিষ্ঠিত করায় বিরোধী শক্তির বাধায় প্রতিহত হইতে না হয়।

(৪) সত্যের স্থায়ী করার চেষ্টা ও পরিকল্পনায় সচেতন, বিজ্ঞ সুকৌশলী হওয়া, যেন ঐ শিক্ষা ও আদর্শ বিশ্ব বুকে কেয়ামত পর্যন্ত জারি রাখার বিরামহীন প্রচেষ্টা ও মেহনতে ব্রতী হইতে পারে।

“এই শ্রেণীর গুনাবলী ও যোগ্যতার পরিবেশেই হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) এঁর আবির্ভাব সার্থক হইতে পারে। মানব সমাজে ঐ শ্রেনীর গুণ ও যোগ্যতা আনয়ন উদ্দেশ্যে আল্লাহ্‌ তাআলা এক লক্ষ বা দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার বা আরোও বেশী নবী রসূল এই ধরায় পাঠাইয়াছেন।উল্লেখিত শ্রেনীর অসংখ্য গুণাবলী ও যোগ্যতার মূল আধার আকর বানাইয়াছিলেন আল্লাহ্‌ তাআলা হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-কে এবং তাঁহার মূল সত্তা নূরের মধ্যে ঐ সমস্ত গুনের উৎস প্রোথিত ছিল। পূর্ববর্তী সকল নবী পরম্পরা বিশ্ব-বুকে আসিয়াছেন এবং বিরামহীন প্রচেষ্ঠা ও মেহনত চালাইয়া মানব সমাজে ঐ গুণাবলী ও যোগ্যতা আনয়ন করার ধাপে ধাপে অগ্রসর হইয়াছেন। তাঁহাদেরও মূল সম্বল উক্ত নূরেরই আভা ছিল।
[সূত্র: বোখারী শরীফ, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৮, মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী,হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ]

🌼পূর্ববর্তী নবীগণের প্রচেষ্টায় মানব সমাজে ধীরে ধীরে সঞ্চারিত হয় ঐ গুণাবলীও যোগ্যতা এবং উহার সর্বোত্তম যুগ দেখা দিলে সেই যুগে হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (ﷺ) এঁর আবির্ভাব হয়। এবং তাঁর নবুওয়াতের সমাপ্তির মাধ্যমে মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা ইসলাম ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দেন। এবং মোহাম্মদ (ﷺ) ও তাঁর বংশধরগনই হয়ে আছেন আমাদের উত্তম পথ-প্রদর্শক।

🌻 তাই আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন: “আজ আঁমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম তোমাদের প্রতি আঁমার নেয়ামত পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম।”
[সূত্র: আল কোরআন, সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩,সূরা নং: ৫, পারা:৬]

**৭. আবার যখন হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর জাহিরী ভাবে দুনিয়ায় তাশরীফ আনার আগেকার সংবাদ জানতে চাওয়া হলো,তখন রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন:

قالوا يارسول الله صلي الله عليه و سلم متي و جبت لك انبوة قال وادم الروح و الجسد

অর্থ: ইয়া রাসূল্লাল্লহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আঁপনি কখন থেকে নবী ? হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,যখন আদম আলাইহিস সালাম মাটি ও পানিতে ছিলেন।”
দলিল
*(ক.) তিরমীযি শরীফ ,হাদীস ৩৬০৯
*(খ.) মুসনাদে আহমদ হাদীস ২৩৬২০
*(গ.) মুসতাদরেকে হাকীম, হাদীস ৪২০৯
*(ঘ.) আবী শায়বা ৩৬৫৫৩
*(ঙ.) তারীখে কবীর লি ইমাম বুখারী ৭/৩৭৪

✌রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন “আঁমি তখনো নবী,যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিঁনি রূহ মুবারক ও মাটিতে ছিলেন।”
[ইবনে সা’দ,কানযুল উম্মাল ৩২১১২]

রাসূল(ﷺ) বলেন “আঁমি তখনো নবী ছিলাম,যখন পানিও ছিল না, মাটিও ছিল না।”
[মিরকাত শরীফ ১১/৫৮]

রাসূল (ﷺ) বলেন “আঁমি তখনো নবী ছিলাম, যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম পানি ও মাটিতে ছিলেন।”
[মিরকাত শরীফ ১১/৫৮]

আব্দুল্লাহ বিন শাকিক থেকে বর্ণিত।রাসূল (ﷺ) কে এক লোক প্রশ্ন করল-আঁপনি কখন থেকে নবী? তিঁনি বললেন-আঁমি তখন থেকেই নবী যখন হযরত আদম (আঃ) রুহ ও শরীরের মাঝামাঝি ছিলেন।
দলিল
*(ক.) মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৭৭০৮
*(খ.) মাশকিলুল আসার লিত তাহাবী, হাদীস নং-৫২২২
*(গ.) কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল
*(ঘ.) আফআল, হাদীস নং-৩১৯১৭
*(ঙ.) জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-১৫৮৩৫

*৮. হযরত ইরবায বিন সারিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে,তিঁনি বলেছেন-নিশ্চয় আঁমি আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বশেষ নবী হিসেবে লিপিবদ্ধ ছিলাম তখন, যখন আদম (আঃ) মাটিতে মিশ্রিত ছিলেন। অপর সহিহ বর্ননায় আছে, যখন হযরত আদম (আঃ) রুহ ও দেহের মধ্যে ছিলেন। দলিল*
*১. সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬৪০৪
*২. মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৬৩
*৩. মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪১৯৯
*৪. মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১৪৫৫
*৫.শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩২২২
*৬. মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদীস নং-৫৭৫৯
*৭. আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৬৩১
🔽 🔽 🔽 🔽
**৯. আঁমি তখনও নবী ছিলাম যখন আদম (আ:) মাটি ও পানির সাথে মিশ্রিত এ ব্যাপারে ওহাবীদের আপত্তির জবাব ইন-শা-আল্লাহ তুলে ধরার চেষ্টা করবো:

ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার লিখিত “হাদীসের নামে জালিয়াতি” গ্রন্থের ৩৪৮ পৃষ্ঠায় এবং মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পাদিত ‘প্রচলিত জাল হাদীস গ্রন্থের ৫৭ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটিকে জাল বা বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছেন।ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর কোন দলীল উল্লেখ করেন নি,দলীল না দিয়ে মুখের জোরে জাল প্রমাণ করার অনেক অপচেষ্টা করেছেন।আর অপরদিকে জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেব আহলে হাদিসের ইমাম ইবনে তাইমিয়ার দলীল দিয়ে তা জোর হাদিসটিকে জাল বা বানোয়াট প্রমাণ করতে চেয়েছেন।

★উক্ত হাদিস সম্পর্কে শুধুমাত্র ইমাম আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বিরূপ মন্তব্য করে বলেন-

قَالَ السَّخَاوِيُّ لَمْ أَقِفْ عَلَيْهِ بِهَذَا اللَّفْظِ
‘‘ইমাম সাখাভী (رحمة الله) উপরোক্ত শব্দের সাথে বর্ণিত হাদিসের উপর আমি অবগত বা পরিচিত নই।’’

ক. ইমাম সাখাভী: মাকাসিদুল হাসানা: ৫২১ পৃ : হা/৮৪০, ৮৩৫
খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, আসরারুল মারফুআ,২৭১ পৃ. হা/৩৫২

★কিন্তু আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারীই তার আরেক গ্রন্থে লিখেন-

قوله كنت نبيا وآدم بين الماء والطين وفي رواية وآدم منجدل في طينته

‘‘রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,আঁমি তখনও নবী ছিলাম যখন আদম (আ.) মাটি ও পানির সাথে মিশ্রিত।অন্য বর্ণনায় এসেছে, আদম (আ.) যখন মাটির খামিরে ছিলেন তখন আমি নবী ছিলাম।’’
[আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী,শরহে শিফা, ১/৯৭ পৃ.]

✊অপরদিকে আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) উক্ত হাদিস সম্পর্কে বলেন-

لكن قال العلقمي في شرح الجامع الصغير حديث صحيح.

‘‘তবে শরহে জামেউস সগীর গ্রন্থে আল্লামা আলকামা (رحمة الله) বলেন, হাদিসটি সহীহ বা বিশুদ্ধ।’’
[আল্লামা আজলূনী: কাশফুল খাফা: ২/১২০ পৃ. হা/২০১৫, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত।]

★দেখুন সাখাভী (رحمة الله) উক্ত হাদিসের শব্দ নিয়ে মন্তব্য করেছেন উক্ত হাদিসের মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে নয় এ হল তার একক মতামত। মূল শব্দ হলো-

كُنْتُ نَبِيًّا وَآدَمُ بَيْنَ الْمَاءِ الطِّينِ

উক্ত হাদিসের দুটি শব্দ الْمَاءِ الطِّينِ নিয়ে মুহাদ্দিসগণ মন্তব্য করেছেন কিন্তু الطين মাটি শব্দের সমর্থনে নির্ভরযোগ্য সূত্রে হাদিস পাওয়া যায় যেমন,

ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

عَنِ الصُّنَابِحِيِّ قَالَ: قَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَتَى جُعِلْتَ نَبِيًّا؟ قَالَ: وَآدَمُ مُنْجَدِلٌ فِي الطِّينِ

-‘‘তাবেয়ী ছুনাবেহী (رحمة الله) হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন,রাসূল (ﷺ)-এঁর কাছে জানতে চাওয়া হল আপনি কখন নবী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন? রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করলেন: আদম (আ.) যখন মাটি ও দেহের খামিরে ছিলেন।’’
✳️✳️✳️✳️দলিল✳️✳️✳️✳️
*(ক.) ইমাম আবু নুয়াইম: হিলইয়াতুল আউলিয়া: ৭/১২২ ও ৯৫৩ পৃ.
*(খ.) ইমাম তাবরানী: মুজামুল কাবীর: ২২/৩৩৩ পৃ: হা/৮৩৫
*(গ.) ইবনে কাসীর: বেদায়া ওয়ান নেহায়া: ২/৩০৭ ও ২/৩২০ পৃ.
*(ঘ.) সূয়তী: খাসায়েসুল কোবরা: ১/৮ পৃ. এবং আল-হাভী লিল ফাতওয়া: ২/১০০ পৃ.
*(ঙ.) ইমাম তাবরানী,মুসনাদেশ শামীয়্যীন: ২/৯৮-৯৯ পৃ হা/৯৮৪
*(চ.) ইবনে কাসির,সিরাতে নববিয়্যাহ, ১/৩১৭ পৃ.
*(ছ.) ইমাম মুকরিযী,ইমতাউল আসমা, ৩/১৬৯ পৃ.
*(জ.) ইমাম ইবনে সালেহ শামী,সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১০/২৭৪ পৃ.

✳️✳️✳️✳️পর্যালোচনা✳️✳️✳️✳️

★ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন, এ হাদিসটি (مُرْسل) মুরসাল শক্তিশালী, তার কারণ হলো তাবেয়ী ছুনাবেহী (رحمة الله)-এর সাথে হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর সাক্ষাত ঘটেনি।

★ইমাম আবুল কাসেম জুনায়েদ বাজলী (ওফাত. ৪১৪ হি.) সংকলন করেন-

عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى كُنْتَ نَبِيًّا؟ قَالَ: وَآدَمُ مُنْجَدِلٌ فِي طِينَتِهِ

‘‘হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আঁপনি কখন থেকে নবী? তখন তিঁনি বললেন,যখন আদম (আ.) মাটির খামিরে অবস্থান করছিল।’’
[আল-ফাওয়াইদ, ১/২৪০ পৃ. হা/৫৮০]

★ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) সংকলন করেন-

قَالَ: أَخْبَرَنَا عُمَرُ بْنُ عَاصِمٍ الْكِلابِيُّ. أَخْبَرَنَا أَبُو هِلالٍ. أَخْبَرَنَا دَاوُدُ بْنُ أَبِي هِنْدٍ عَنْ مُطَرِّفِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الشِّخِّيرِ أَنَّ رَجُلا سأل رسول الله. ص: مَتَى كُنْتَ نَبِيًّا؟ قَالَ: بَيْنَ الرُّوحِ وَالطِّينِ مِنْ آدَمَ
‘‘তাবেয়ী মুতাররিফ বিন আব্দুল্লাহ ইবনে সাখ্খাইরী (رحمة الله) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলো,ইয়া রাসূলুল্লাহ! আঁপনি কখন নবী হয়েছেন? তিনি বলেন,যখন হযরত আদম (আ.) মাটির খামির এবং রূহের মাঝা-মাঝি অবস্থায় ছিলেন।’’

★ইমাম ইবনে সা‘দ, আত-তবকাতুল কোবরা, ১/১১৮ পৃ.,দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত,লেবানন।
★মুত্তাকী হিন্দী,কানযুল উম্মাল, ১১/৪৫০ পৃ. হা/৩২১১৫
★ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, শরফুল মোস্তফা, ১/২৯০ পৃ.
★ইমাম ইবনে সালেহ শামী,সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/২৯৩ পৃ.

✊এ হাদিসটিও মুরসাল শক্তিশালী।তবে অনেকে ‘আবূ হেলাল’ কে অনেকে যঈফ বলতে চান,আমি বলবো-
তার মূল নাম (محمد ابن سليم), ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার সম্পর্কে বলেছেন- وهو صدوق -‘‘তিনি সত্যবাদী ছিলেন।’’
[ইবনে হাজার আসকালানী, তাক্বরীবুত তাহযিব, ৪৮১ পৃ. ক্রমিক.৫৯২৩]

✌️ইমাম বায়হাকী ও ইমাম হাকেম (رحمة الله) সংকলন করেন-

عن عرباض ابن سَارِيَةَ صَاحِبِ رَسُولِ اللَّهِ – ﷺ – قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ – ﷺ يَقُولُ: إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ وَخَاتَمُ النَّبِيِّينَ وَإِنَّ آدَمَ لَمُنْجَدِلٌ فِي طِينَتِهِ

‘‘হযরত ইরবাদ ইবনে সারিয়া (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি,তিনি বলেছেন, আমি তখনই আল্লাহর দরবারে সর্বশেষ নবী হিসেবে ছিলাম যখন হযরত আদম (আ.) মাটির দেহের খামিরে ছিলেন।’’

[ইমাম ইবনে সা‘দ, আত-তবকাতুল কোবরা, ১/১১৮ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, আল-খাসায়েসুল কোবরা, ১/৭ পৃ.]

⏺️অনুরূপ উক্ত শব্দের কাছাকাছি আরও হাদিস পাওয়া যায়-

عن جابر رضى الله عنه قال: أَنَّ رَجُلا سأل رسول الله. ص: مَتَى كُنْتَ نَبِيًّا؟ قَالَ: بَيْنَ الرُّوحِ وَالطِّينِ مِنْ آدَمَ

‘‘হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ) এর কাছে জানিতে চাইলেন,আঁপনি কখন হতে নবী হিসেবে মনোনীত? রাসূল (ﷺ) বলেন,আদম যখন রুহ এবং মাটির মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলেন।’’

[ইমাম ইবনে সাদ : আত্-তবকাতুল কোবরা : ১/১৪৮ পৃ., ইমাম তকী উদ্দিন সুবকী : তাজীমে মুনতাহা : ১৫ পৃ.]

★সুতরাং উক্ত হাদিস দ্বারা الطِّينِ শব্দের প্রমাণ পাওয়া গেল এখন বাকী রইলো الماء শব্দের ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের ব্যাখ্যা।

✳️আল্লামা দিয়ার বকরী (رحمة الله) বর্ণনা করেন-

قال عليه الصلاة والسلام كنت نبيا وآدم بين الماء والطين

‘‘রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,আমি তখনও নবী ছিলাম যখন আদম (আ.) মাটি ও পানির সাথে মিশ্রিত।’’
[আল্লামা দিয়ার বকরী,তারিখুল খামিস, ১/১৯ পৃ.]

★ইমাম মুকরিযী (رحمة الله) সংকলন করেন-

وقال صلى اللَّه عليه وسلّم: كنت نبيا وآدم بين الماء والطين

‘‘রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমি তখনও নবী ছিলাম যখন আদম (আ.) মাটি ও পানির সাথে মিশ্রিত।’’
[ইমাম মিকরিযি, ইমতাউল আসমা, ৩/১১৯ পৃ.]

**১০. ওলামায়ে দেওবন্দ-এর তাফসীরক,যেমন-আল্লামা শাব্বির আহমদ ওসমানী বলেন-

عموما مفسرین وانا اول المسلمین کا مطلب یہ لیتے ہیں کہ اس امت محمدیہ کے اعتبار سے آپ اول المسلمین ہیں لیکن جب جامع ترمذی کی حدیث ’’کنت نبیاو آدم بین الروح والجسدکے موافق آپ اولا الانبیا ء ہیں تو اول المسلمین ہونے میں کیا شبہ ہوسکتاہے

অর্থাৎ- সাধারণত তাফসীরকারকগণ ‘আঁমি সর্বপ্রথম মুসলিম’-এর ব্যাখ্যা এভাবেই করে থাকেন যে,তিঁনি উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার তুলনায় সর্বপ্রথম মুসলিম; কিন্তু জামে’ তিরমিযীর হাদীস ‘‘আঁমি তখন নবী ছিলাম,যখন আদম রূহ ও দেহের মাঝামাঝি অবস্থানে ছিলেন।’’ (অর্থাৎ তাঁর সৃষ্টি হয়নি) এর আলোকে যেহেতু তিঁনি সর্বপ্রথম নবী,অতএব, তিঁনি প্রকৃত অর্থে সর্বপ্রথম মুসলিম হওয়াতে কি সন্দেহ থাকতে পারে? (অর্থাৎ তিঁনি নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম মুসলিম।)
[তরজমায়ে ক্বোরআন কৃত. মৌং মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী, হাশিয়া বা পাদটিকা,মৌং শাব্বির আহমদ ওসমানী। পাদটিকা নম্বর-২, পৃ. ১৯৪, মদীনা প্রেস-বিজনুর,ইউ,পি, ইন্ডিয়া থেকে মুদ্রিত]

**১১. অনেকেই বলে থাকেন আদম (عليه السلام) যেহেতু প্রথম সৃষ্টি মানুষ সেহেতু রাসূল (ﷺ) তারপরে আগমন করেছেন তাই তিনিও তাঁর সন্তান হিসেবে মাটির তৈরী।এ ধারণাটি চরম মিথ্যা।

🔽ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) {ওফাত. ২০৭হি.} একটি হাদিস সংকলন করেন-

أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ بْنُ عَطَاءٍ عَنْ سَعِيدُ بْنُ أَبِي عَرُوبَةَ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: وَأَخْبَرَنَا عُمَرُ بْنُ عَاصِمٍ الْكِلابِيُّ. أَخْبَرَنَا أَبُو هِلالٍ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ. صلى الله عليه وسلم : كُنْتُ أَوَّلَ النَّاسِ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ

‘‘হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, আমাদেরকে জানানো হয়েছে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এরূপ বলেছেন, সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ এবং প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।’’

★সুন্নী, ওহাবী,আহলে হাদিস সর্বজনের গ্রহণযোগ্য ইমাম এবং ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসির (رحمة الله) {ওফাত. ৭৭৪হি.} একটি হাদিস সংকলন করে লিখেন-
وَهَذَا أَثْبَتُ وَأَصَحُّ –

‘‘এই সনদটি প্রমাণিত ও অধিক সহীহ।’’

★তাই আদম (عليه السلام)-এরই পূর্বেই রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে।

**১২. আর যখন দুনিয়াই তাশরীফ আনেবেন তখন তিঁনি বলেন-
بعثت الي اناس عامة

অর্থ: আঁমি সমস্ত মানুষের জন্য প্রেরীত হয়েছি।”
দলিল*
*(ক.) বুখারী হাদীস নং ৩৩৫
*(খ.) মুসলিম শরীফ ৫২৩

✊নবিজি আরও ইরশাদ করেন
ارسلت الي الخق كافة
অর্থ: আঁমাকে সকল মাখলুকাতের জন্য প্রেরন করা হয়েছে ।”
দলিল
*(ক.) মুসলিম শরীফ,হাদিস নং ৫২৩
*(খ.) তিরমীযি শরীফ,হাদিস নং ১৫৫৩
*(গ.) মুসনাদে আহমদ,২৭৪৯৬

**১৩. হাদিস শরীফে বর্নিত হয়েছে:

عن حضرت ابي هريرت رضي الله عنه قال قال رسول صلي الله عليه
و سلم كنت اول النبين في الخلق واخرهم في البعث

অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্নিত, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, সৃষ্ট জীবের মধ্যে আঁমি সর্বপ্রথম নবী হিসাবে সৃষ্টি হয়েছি।কিন্তু আঁমি প্রেরিত হয়েছি (যমীনে প্রকাশ পেয়েছি) সব নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শেষে।”
দলিল
*(ক.) তাফসীরে বাগবী ৫/২০২
*(খ.) দূররে মানছুর ৫/১৮৪
*(গ.) শেফা শরীফ ১/৪৬৬
*(ঘ.) মানাহিলুচ্ছফা ৫/৩৬
*(ঙ.) কানযুল উম্মাল, ৩১৯১৬
*(চ.) ইমাম দায়লামী,আল-ফিরদাউস: ৩/২৮২
*(ছ.) ইমাম সুয়ূতী,খাছায়েছুল কুবরা: ১/৫
*(জ.) ইবনু কাছীর,তাফসীরে ইবনে কাছির: ৩/৪৭০
*(ঝ.) ইমাম ইবনে আদি,তারীখুল কামেল: ৩/৩৭৩
*(ঞ.) তাফসীরে রুহুল মায়ানী ২১/১৫৪
*(ট.) জাওয়াহিরুল বিহার ৪/২৩৪
*(ঠ.) সুবহুল হুদা ওয়ার রাশাদ ১/৭১

**১৪. হযরত আদম (আ:) কে সৃষ্টির ব্যপারে ফেরেস্তাদের মতামত:আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

ﻭَﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻟِﻠْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔِ ﺇِﻧِّﻲ ﺟَﺎﻋِﻞٌ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺧَﻠِﻴﻔَﺔً ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺃَﺗَﺠْﻌَﻞُ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻣَﻦْ ﻳُﻔْﺴِﺪُ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﻳَﺴْﻔِﻚُ ﺍﻟﺪِّﻣَﺎﺀَ ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﻧُﺴَﺒِّﺢُ ﺑِﺤَﻤْﺪِﻙَ ﻭَﻧُﻘَﺪِّﺱُ ﻟَﻚَ ﻗَﺎﻝَ ﺇِﻧِّﻲ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﻣَﺎ ﻟَﺎ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥ

(হে নবী) স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন আঁপনার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন, নিশ্চয়ই আঁমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করবো,তারা বললো আঁপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যারা অশান্তি সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? আমরা তো আঁপনার প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা করি।তিঁনি বললেন,আঁমি যা জানি, তোমরা তা জান না।”
[সুরা বাকারাহ,আয়াত নং ৩০]

বিঃদ্রঃ অত্র আয়াতে লক্ষ্য করুন রাসুল (ﷺ) কে ফেরেস্তাদের ঘটনা স্মরণ করতে বলছেন।তার মানে তিঁনি (নবীজি) তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

☝নবীজি(ﷺ); হযরত আদম (আ:) এঁর সৃষ্টি অবলোকন করেছেন কারণ তিঁনি তখনো নবী ছিলেন- এ ব্যপারে তাফসীরে রুহুল বয়ানে বর্নিত হয়েছে :

ﻓﺸﺎﻫﺪ ﺧﻠﻘﻪ ﻭﻣﺎ ﺟﺮﺍﻱ ﻋﻠﻴﻪ ﻣﻦ ﺍﻻﻛﺮﺍﻡ ﻭﺍﻻﺧﺮﺍﺝ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺑﺴﺒﺐ ﺍﻟﻤﺨﺎﻟﻔﺔ ﻭﻣﺎ ﺗﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﻲ ﺍﺧﺮ ﻣﺎ ﺟﺮﺍﻱ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺷﺎﺧﺪ ﺧﻠﻖ ﺍﺑﻠﻴﺲ ﻭﻣﺎ ﺟﺮﺍﻱ ﻋﻠﻴﻪ

তিঁনি দেখেছেন হযরত আদম (আঃ) এঁর সৃষ্টি,তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন,ভুলের কারণে বেহেশত থেকে তার অপসারণ এবং পরে তার তওবা গৃহীত হওয়ার যাবতীয় ঘটনাবলী।শেষ পর্যন্ত সেই আদম (আঃ) কে কেন্দ্র করে যা কিছু আবর্তিত হয়েছে,সবই তিঁনি (ﷺ) দেখেছেন। তিঁনি আরো দেখেছেন শয়তানের সৃষ্টি এবং যা কিছু তাকে কেন্দ্র করে ঘটেছে।
[তাফসীরে রুহুল বয়ান,পারা ২৬, সুরা ফত্হ এর ইন্না আরসালনাকা শাহিদান আয়াতের তাফসীর]

✌অতঃপর নবীজির আকৃতিতে আদম (আঃ) কে সৃজন করলেন মুহাম্মদ শব্দের মধ্যে মীম, হা ,মীম,দাল, মীম (মাথা),হা (হস্ত ও পৃষ্ট) , মীম (কোমর),দাল (পায়ের অংশ)।এ আকৃতিতে আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হল।এজন্যই মানুষ ( মুহাম্মদ (ﷺ) এঁর আকৃতিতে জান্নাতে যাবে।কিন্তু যারা জাহান্নামে যাবে তাদের আকৃতি (মুহাম্মদ) থাকবে না। বরং কুকুর -শুকরের আকৃতি ধারণ করবে।

☝হাদিসে কুদসীতে নবী করিম (ﷺ) এরশাদ করেছেন

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻋَﻦْ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺁﺩَﻡَ ﻋَﻠَﻰ ﺻُﻮﺭَﺗِﻪِ ﻃُﻮﻟُﻪُ ﺳِﺘُّﻮﻥَ ﺫِﺭَﺍﻋًﺎ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺧَﻠَﻘَﻪُ ﻗَﺎﻝَ ﺍﺫْﻫَﺐْ ﻓَﺴَﻠِّﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﻭﻟَﺌِﻚَ
ﺍﻟﻨَّﻔَﺮِ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﻤَﻼﺋِﻜَﺔِ ﺟُﻠُﻮﺱٌ ﻓَﺎﺳْﺘَﻤِﻊْ ﻣَﺎ ﻳُﺤَﻴُّﻮﻧَﻚَ ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﺗَﺤِﻴَّﺘُﻚَ ﻭَﺗَﺤِﻴَّﺔُ ﺫُﺭِّﻳَّﺘِﻚَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﻟﺴَّﻼﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ ﺍﻟﺴَّﻼﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﺰَﺍﺩُﻭﻩُ
ﻭَﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻜُﻞُّ ﻣَﻦْ ﻳَﺪْﺧُﻞُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻋَﻠَﻰ ﺻُﻮﺭَﺓِ ﺁﺩَﻡَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺰَﻝْ ﺍﻟْﺨَﻠْﻖُ ﻳَﻨْﻘُﺺُ ﺑَﻌْﺪُ ﺣَﺘَّﻰ ﺍﻵﻥ

“আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তার (নবীজির) আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন,তার দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত,তাকে সৃষ্টি করে বলেনঃ যাও ঐখানে বসে থাকা ফেরেশতাদের দলকে সালাম কর, এবং শ্রবণ কর তারা তোমাকে কি অভিবাদন জানায়,কারণ তা-ই হচ্ছে তোমার ও তোমার সন্তানের অভিবাদন।তিনি বললেনঃ
ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢ
তারা বলল
: ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ
তারা বাড়িয়ে বলল “ওয়া রাহমাতুল্লাহ” َসুতরাং যে কেউ জান্নাতে যাবে সে আদমের আকৃতিতে যাবে,আর তারপর থেকে মানুষ ছোট হওয়া আরম্ভ করছে, এখন পর্যন্ত তা হচ্ছে”।
দলিল
*১.সহীহ বুখারি ৬২২৭
*২. সহীহ মুসলিম ২৮৪১

*১৫. এবার দেখুন! সায়্যিদুনা আবূ যার গিফারী (رضي الله عنه)’র) আক্বিদা হল নবিজি সমস্ত জাহান থেকে উত্তম ও মর্যাদাবানঃ ইমাম দারিমী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

عَنْ أَبِي ذَرٍّ الْغِفَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ عَلِمْتَ أَنَّكَ نَبِيٌّ حَتَّى اسْتَيْقَنْتَ؟ فَقَالَ: يَا أَبَا ذَرٍّ أَتَانِي مَلَكَانِ وَأَنَا بِبَعْضِ بَطْحَاءِ مَكَّةَ فَوَقَعَ أَحَدُهُمَا عَلَى الْأَرْضِ، وَكَانَ الْآخَرُ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ، فَقَالَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهِ: أَهُوَ هُوَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ زِنْهُ بِرَجُلٍ، فَوُزِنْتُ بِهِ فَرْجَتُتهُ، ثُمَّ قَالَ: فَزِنْهُ بِعَشَرَةٍ، فَوُزِنْتُ بِهِمْ فَرَجَحْتُهُمْ، ثُمَّ قَالَ: زِنْهُ بِمِائَةٍ، فَوُزِنْتُ بِهِمْ فَرَجَحْتُهُمْ ثُمَّ قَالَ: زِنْهُ بِأَلْفٍ، فَوُزِنْتُ بِهِمْ فَرَجَحْتُهُمْ كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَيْهِمْ يَنْتَثِرُونَ عَلَيَّ مِنْ خِفَّةِ الْمِيزَانِ، قَالَ: فَقَالَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهِ: لَوْ وَزَنْتَهُ بِأُمَّتِهِ لَرَجَحَهَا

সায়্যিদুনা আবু যার গিফারী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূল (ﷺ) কে আরয করলাম যে,আঁপনি কীভাবে এবং কখন দৃঢ়ভাবে অবগত হলেন যে, আপনি আল্লাহর নবী (ﷺ)?

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় হাদ্দিসগণ বলেছেন হাদিসের মমার্থ হলো যে কখন আপনার একিন হলো আঁপনি নবুয়ত প্রচারের সময় হচ্ছে বা আসছে।ভিন্ন অর্থ গ্রহণ করলে অনেক সহীহ হাদিসের মুখালেফ হবে।ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) সংকলন করেন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتٰى وَجَبَتْ لَكَ النُّبُوَّةُ؟ قَالَ: وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالجَسَدِ
‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,সাহাবায়ে কিরাম বললেন,কখন আপনার উপর নাবুয়ত নির্ধারিত হয়? তিনি বলেন,আদম (عليه السلام) এর রুহ এক জায়গায় আর দেহ আরেক যায়গায় ছিল।’’
[ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/৫৮৫ পৃ. হা/৩৬০৯, ইমাম তিরমিযি একে হাসান বলেছেন, আর আহলে হাদিস আলবানী একে সহীহ বলে তাহকীক করেছেন।]

★ইমাম হাকিম নিশাপুরী (رحمة الله) সংকলন করেন-

عَنْ مَيْسَرَةَ الْفَخْرِ، قَالَ: قُلْتُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَتَى كُنْتُ نَبِيًّا؟ قَالَ: وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالْجَسَدِ
‘‘হযরত মায়সারা আল-ফাজর (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) এর কাছে জানতে চাইলেন যে,আঁপনি কখন নাবী হয়েছেন? তিনি বলেন, আদম (عليه السلام) যখন রুহ এবং দেহ আলাদা অবস্থানে ছিল।’’
[ইমাম হাকিম, আল-মুস্তাদরাক, ২/৬৬৫ পৃ. হা/৪২০৯, ২০/৩৫৩ পৃ. হা/৮৩৪]

তিনি (ﷺ) বললেন, হে আবু যার,আঁমি মক্কা মুকাররমার একটি উপত্যাকার মধ্যে ছিলাম। দুুজন ফেরেশতা আসলেন, একজন যমিনে অবতরণ করলেন আর অন্যজন আসমান ও জমীনের মাঝখানে ছিলেন।তাদের মধ্য হতে একজন বললেন, ওঁনিই তিঁনি? দ্বিতীয় জন বললেন, হ্যাঁ।এক ফেরেশতা বললেন, তাঁকে একজন মানুষের সাথে ওযন (পরিমাপ) করুন।

যখন আমাকে একজন মানুষের সাথে ওযন করা হল,আঁমার ওযন ভারী হল, ফেরেশতা বললেন,তাকে দশজনের সাথে ওযন করুন, তখন আঁমার ওযন ভারী হল।ফেরেশতা বললেন, তাঁকে একশত জনের সাথে ওযন করুন, তখনও আঁমার ওজন ভারী হল।ফেরেশতা পুনরায় বললেন,তাঁকে এক হাজার জনের সাথে ওযন করুন, তখনও আঁমার ওযন ভারী হল।

ফেরেশতা এই অবস্থা দেখে খুশি হলেন। এরপর উপরের ফেরেশতা বললেন,তাঁকে ওযন করা হতে বিরত থাক,কেননা, তা্কে যদি তাঁর সমস্ত উম্মতের সাথেও পরিমাপ করো তবেও তিঁনি ভারী হবে।
[খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ৩/১৬০৮পৃ: হা/৫৭৭৪, সুনানে দারমী, ১ম খণ্ড, ১৬৪ পৃ. হা/১৪, ইমাম হাইসামী, মাজমামউয যাওয়ায়েদ, ৮/২৫৬ পৃ., হা/১৩৯৩১। এ হাদিসটির সনদ সহীহ।]

★ইমাম হাইছামী (رحمة الله) বলেন-

رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَفِيهِ جَعْفَرُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ بْنِ كَبِيرٍ، وَثَّقَهُ أَبُو حَاتِمٍ الرَّازِيُّ وَابْنُ حِبَّانَ وَتَكَلَّمَ فِيهِ الْعُقَيْلِيُّ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ رِجَالُ الصَّحِيحِ.
‘‘ইমাম বায্যার (رحمة الله) সনদটি সংকলন করেছেন আর সনদে ‘জাফার ইবনে আব্দুল্লাহ বিন উসমান বিন কাবীর’ রয়েছেন; আর তাকে ইমাম আবু হাতেম, ইমাম ইবনে হিব্বান সিকাহ বলেছেন। ইমাম উকাইলী (رحمة الله) তার বিষয়ে কথাবার্তা বলেছেন। এছাড়া সনদের বাকি রাবীগণ সহীহ বুখারীর রাবী।’’ তাই বলা যায় এই হাদিসের সনদ সহীহ।}

✊মোটকথা হল: নাবী পাক (ﷺ) সমস্ত জাহান থেকে উত্তম ও মর্যাদাবান।তাঁর বরাবর কেউ নেই।যে সব মানুষ সাদৃশ্যের দাবি করে স্পষ্টত তারা বাতিল আক্বিদার উপর।

⏩কবি বলেন-
وہر ميں سے تو بڑا تجہ سے بڑى خدا كى ذات
قائم ہے تيرى ذات سے سارا نظام كائنات

‘আর সকলের মধ্যে তুমিই বড়,আর তোমার থেকে বড় হলেন আল্লাহর পবিত্র সত্তা,গোটা দুনিয়ার সকল নিয়ম কানুন তোমার সত্তার বদৌলতেই বিদ্যমান।’

✌️উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হল যে, এ বিষয় বস্তুটি সঠিক এবং শাওয়াহেদ থাকায় বিষয়টি শক্তিশালী বলে বুঝা যায়।

Leave a comment