রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?

[পরিমার্জিত সংকলন ৩১-৩৩ পর্ব]

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(৩১ম পর্ব)

অনেকে বলেন কোরআনে নূর বলা হয়েছে কিন্তু নূরের তৈরী বলা হয়নি, আবার কেউ বলেন শুধু রুহ মোবারক নূর কিন্তু দেহমোবারক নয়,আবার কেউ বলেন সাদা মাটির তৈরী (নাউযুবিল্লাহ!) আজকে ইন-শা-আল্লাহ সে বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো-[২৩ম অংশ]

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

রাসূল (ﷺ) হলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি,যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না।[7th Part]

★১৮৯. সর্বপ্রথম আল্লাহ তা‘য়ালা রাসূল (ﷺ) এঁর নূর সৃষ্টি করেছেন [বিস্তারিত আলোচনা]

গত পর্বে আলোচনা করেছিলাম সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ)-এঁর নূরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এ বিষয়ে সনদ ভিত্তিক কোনো বর্ণনা রয়েছে কিনা।তারই ধারাবাহিকতায় আজকের আলোচনা:

★২. ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী (ওফাত. ৪০৭ হি.)সহ অনেক মুহাদ্দিস ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (رحمة الله)-এর কিতাব থেকে সংকলন করেন-

وروى عبد الله بن المبارك، عن سفيان الثوري، عن جعفر بن محمد الصادق، عن أبيه، عن جده، عن علي بن أبي طالب أنه قال: إن الله تبارك وتعالى خلق نور محمد صلى الله عليه وسلم قبل أن يخلق السماوات والأرض والعرش والكرسي والقلم والجنة

‘‘বিখ্যাত হাদিসের ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (رحمة الله) হতে বর্ণিত আছে, তিনি তাঁর শায়খ সুফিয়ান সাওড়ী (رحمة الله) হতে তিনি আলে রাসূল ইমাম জাফর বিন মুহাম্মদ সাদেক (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর পিতা ইমাম বাকের (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর পিতামহ জয়নুল আবেদীন (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন,তিনি আমিরুল মু‘মিনীন হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন, নিশ্চয় মহান রব তা‘য়ালা আসমান, যমীন,আরশ,কুরসী,কলম,জান্নাত সৃষ্টি করার পূর্বে রাসূল (ﷺ)-এঁর নূর মোবারককে সৃষ্টি করেছেন।’’
[ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, শরফুল মোস্তফা, ১/৩০৮ পৃ., দারুল বাশায়েরুল ইসলামিয়্যাহ, মক্কা, সৌদি আরব, প্রথম প্রকাশ. ১৪২৪ হি.]

♥♥♥♥পর্যালোচনা♥♥♥♥
এ হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে,মহান রব সব কিছু সৃষ্টির পূর্বে তাঁর হাবিবের নূর মোবারককে সৃষ্টি করেছেন।এ হাদিসটি ইমাম ইবনে মোবারক (رحمة الله) সংকলন করেছেন এ হাদিসের সনদ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘রাসূল (ﷺ)-এঁর সৃষ্টি নিয়ে বিভ্রান্তির নিরসন’ গ্রন্থ দেখুন।

★৩. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী  তাঁর তাফসীরে সূরা যুখরুফের ৮১ নং আয়াত-

قُلْ إِنْ كَانَ لِلرَّحْمَنِ وَلَدٌ فَأَنَا أَوَّلُ الْعَابِدِينَ

‘‘হে হাবিব! আঁপনি বলুন দয়াময় আল্লাহর যদি কোন সন্তান হতো তাহলে ইবাদাতকারীদের মধ্যে আঁমিই সর্ব প্রথম হতাম।’’

✊এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উপরের হাদিসের শাওয়াহেদে মুরসাল সূত্র উল্লেখ করেন এভাবে-
قال جعفر الصادق رضى الله عنه أول ما خلق الله نور محمد صلى الله عليه وسلم قبل كل شىء
‘‘হযরত ইমাম জাফর সাদেক  বলেন, সকল কিছুর পূর্বে আল্লাহ্ ‘নূরে মুহাম্মাদী’ কে সৃষ্টি করেছেন।’’
[ইসমাঈল হাক্কী: রুহুল বায়ান: ৮/৩৯৬ পৃ., সূরা যুখরুফ,আয়াত নং ৮১]

✊এখন হয়তো কারো প্রশ্ন জাগতে পারে এ নূর থেকে যে রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে,তার ব্যাখ্যা কে দিল!

★বিশ্বের অন্যতম মুহাদ্দিস,হাফেযুল হাদিস,বিখ্যাত হানাফী ফকীহ,আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তাঁর সুবিখ্যাত গ্রন্থ ‘মিরকাত’ এ উল্লেখ করেন,

قَالَ ابْنُ حَجَرٍ: اخْتَلَفَتِ الرِّوَايَاتُ فِي أَوَّلِ الْمَخْلُوقَاتِ، وَحَاصِلُهَا كَمَا بَيَّنْتُهَا فِي شَرْحِ شَمَائِلِ التِّرْمِذِيِّ أَنَّ أَوَّلَهَا النُّورُ الَّذِي خُلِقَ مِنْهُ – عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ- -، ثُمَّ الْمَاءُ، ثُمَّ الْعَرْشُ

‘‘ইমাম ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন, আদি সৃষ্টি কোন বস্তু তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা রয়েছে,যার সার-সংক্ষেপ আমি শামায়েলে তিরমিযীর ব্যাখ্যা গ্রন্থে আলোচনা করেছি।সর্বপ্রথম সেই নূরকে মহান রব সৃষ্টি করেছেন যে নূর থেকে রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে,তারপর পানি সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে (তারপর কলম)।’’
[আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী: মিরকাতুল মাফাতীহ: ১/১৪৮ পৃ. হা/৭৯]

এ বিষয়ে ইমাম মুহাদ্দিসগণের অভিমত:

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আমি সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ) সৃষ্টি এ বিষয়ক কতিপয় হাদিসে পাক উল্লেখ করলাম,এছাড়াও হাদিসের জাবের (رضي الله عنه)সহ আরও কিছু হাদিস সামনে উল্লেখ করা হবে, ইন- শা-আল্লাহ এখানে আমি এ বিষয়ের পক্ষে বিভিন্ন মুহাদ্দিস, ইমামদের অভিমত কি তা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

*১. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-

وَأَمَّا نُورُهُ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ فَهُوَ فِي غَايَةٍ مِنَ الظُّهُورِ شَرْقًا وغَرْبًا وَأَوَّلُ مَا خَلَقَ اللَّهُ نُورَهُ وَسَمَّاهُ فِي كِتَابِهِ نُورًا وَفِي دُعَائِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي نُورً … لَكِنَّ هَذَا النُّورَ لَيْسَ لَهُ الظُّهُورُ إِلَّا فِي عَيْنِ أَهْلِ الْبَصِيرَةِ [فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الأَبْصَارُ وَلَكِنْ تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِي فِي الصُّدُور
‘‘সৃষ্টির সর্বত্র প্রিয় নবীর নূরানী সত্ত্বাই সর্বাধিক পরিচিত ও প্রকাশিত।আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাঁরই নূরানী সত্ত্বাকে সর্বাগ্রে সৃষ্টি করেছেন।পবিত্র কোরআনে তাঁকে নূর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।তিঁনি তাঁর প্রার্থনায় বলেছেন,আল্লাহ্ আঁমাকে নূরানী সত্ত্বায় প্রতিষ্ঠিত রাখুন। ….এতদ্সত্তেও তাঁর নূরানী সত্ত্বা বস্তু জগতে একমাত্র অন্তর্দৃষ্টি সম্পূর্ণ মানুষের কাছেই প্রজ্জ্বলিত।(কেবল কপালের চোখে প্রিয় নবীর নূরানী সত্ত্বার যিয়ারত সম্ভব নয়) আল্লাহ পাক বলেন,কপালের চোখ তো অন্ধ নয়,বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয় বা অন্তর্দৃষ্টি।’’
[আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী,আসরারুল মারফূআ, ৪০৪ পৃ.]

*২. আল্লামা নূর উদ্দিন মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) স্বীয় ‘শরহে শামায়েলে তিরমিযী’ গ্রন্থের (মুলতান থেকে মুদ্রিত) ১ম খণ্ডের,১৪৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,
أَنَّ أَوَّلَهَا النُّورُ الَّذِي خُلِقَ مِنْهُ – عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ-
‘‘সর্বপ্রথম সৃষ্টি সেই মহান ‘নূর’ যার দ্বারা হুযূর (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে।’’
[মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত: ১/২৪১ পৃ., হা/৭৯]

*৩. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘মিরকাতুল মাফাতীহ’ এর ১ম খণ্ডের ১৬৭ পৃষ্ঠায় ঈমান বিল-ক্বদর অধ্যায়ে সর্বপ্রথম কোন বস্তু সৃষ্টি তা সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন,

فَالْأَوَّلِيَّةُ إِضَافِيَّةٌ، وَالْأَوَّلُ الْحَقِيقِيُّ هُوَ النُّورُ الْمُحَمَّدِيُّ عَلَى مَا بَيَّنْتُهُ فِي الْمَوْرِدِ لِلْمَوْلِدِ………… وَرُوِيَ: أَنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْعَقْلُ، وَإِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ نُورِي، وَإِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ رُوحِي، وَإِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْعَرْشُ ، وَالْأَوَّلِيَّةُ مِنَ الْأُمُورِ الْإِضَافِيَّةِ فَيُؤَوَّلُ أَنَّ كُلَّ وَاحِدٍ مِمَّا ذُكِرَ خُلِقَ قَبْلَ مَا هُوَ مِنْ جِنْسِهِ، فَالْقَلَمُ خُلِقَ قَبْلَ جِنْسِ الْأَقْلَامِ، وَنُورُهُ قَبْلَ الْأَنْوَارِ- (مرقاة:১/২৭০)

‘‘বাস্তবিক পক্ষে প্রথম সৃষ্টি হচ্ছে-নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) যেমন আমি আমার ‘‘আল মাওরিদ লিল মাওলিদ’’
[১ম খণ্ড: ১৬৮ পৃষ্ঠা,হাদিস,৯৪] এ উল্লেখ করেছি।……. আর যেসব বর্ণনায় এসেছে- আল্লাহ্ প্রথমে (আমার) আকল (বিবেক) সৃষ্টি করেছেন,অন্য বর্ণনায় আল্লাহ্ প্রথমে আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন,অন্য বর্ণনায় আল্লাহ্ প্রথমে আমার রুহকে সৃষ্টিকে করেছেন,অন্য বর্ণনায় আল্লাহ্ প্রথমে আরশ সৃষ্টি করেছেন।

★এসব বর্ণনায় ‘‘প্রথমে’’ শব্দটি দ্বারা আনুপাতিক প্রথম বুঝানো হয়েছে। সুতরাং এর ব্যাখ্যা এভাবে দেয়া যাবে যে, উল্লেখিত প্রতিটি বস্তু সে জাতীয় সব বস্তুর মধ্যে প্রথমে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।যেমন,সব কলমের মধ্যে উলি­খিত কলমটি তাক্বদীর লিখন কলমটি সর্বপ্রথম সৃষ্ট হয়েছে। সুতরাং সৃষ্টিকুলের সমস্ত নূরের মধ্যে সর্বপ্রথম হুযূর (ﷺ) এঁর নূরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে।’’
[আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী: মিরকাতুল মাফাতীহ: ১/১৬৮পৃ.ঈমান বিল ক্বদর: হা/৯৪]

*৪. আল্লামা সৈয়দ শরীফ আলী বিন মুহাম্মদ আল জুরজানী (رحمة الله) শরহে মাওয়াক্কের (ইরানের কোম থেকে প্রকাশিত) এর ৭ম খণ্ডের ২৫৪ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, 
قال بعضهم وجه الجمع بينه (اول ما خلق العقل) وبين الحديثين الاخرين اول ما خلق الله القلم واول ما خلق الله نورى – ان المعلوم الاول من حيث انه مجرد يعقل ذاته ومبدأه يسمى عقلا- ومن حيث انه واسطة فى صدور سائر الموجودات ونفوس العلم يسمى قلما ومن حيث توسطه فى افاضة انوار النبوة كان نورا لسيد الانبياء-

‘‘হাদিসে পাকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হিসেবে ‘‘আকল’’, ‘‘কলম’’ এবং ‘‘আঁমার নূর’’ তিনটি বস্তুর উল্লেখ মূলত: নবীজির নূর মোবারককেই বুঝানো হয়েছে।সর্বাগ্রে নিরেট ও নির্ভেজাল অস্তিত্বময় একমাত্র তাঁরই সত্ত্বা।তাই তাকে ‘‘আক্বল’’ এবং সমগ্র সৃষ্টির অস্তিত্ব প্রাপ্তির তিনিই মাধ্যম তাই তাকে ‘‘কলম’’ এবং আনওয়ারে নবুওয়্যাতের তিনিই ফয়েয বিতরণের একমাত্র সোপান তাই তিনি ‘নূর’ হিসেবে আখ্যায়িত।’’

*৫. আরেফ বিল্লাহ ইমাম আল্লামা আবদুল ওয়াহাব শারানী (رحمة الله)اليواقيت والجواهر গ্রন্থের ২য় খণ্ডের,  ২০ পৃষ্ঠায় হাদিসে উলি­খিত اول ما خلق الله نورى এবং اول ما خلق الله العقل উভয় বর্ণনার সামঞ্জস্য বিধানে বলেন, 

ان معناهما واحد لان حقيقة محمد صلى الله عليه وسلم تارة يعبر عنها بالعقل الاول وتارة بالنور-
‘‘মানে নূর কিংবা আকল পরস্পর কোন বৈপরিত্য নেই।এগুলো হাক্বীক্বতে মুহাম্মদী (ﷺ) এর বহুমুখী পরিচিতি।’’
[আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার: ২/৪৭পৃঃ]

*৬. আল্লামা হুসাইন বিন মুহাম্মদ বিন হাসান দিয়ার বকরী (رحمة الله) স্বীয় ‘তারীখুল খামীস’ কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৫ পৃষ্ঠায় অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন-
وأهل الحقيقة على ان المراد من هذه الأحاديث شئ واحد لكن باعتبار نسبه وحيشياته تعدرت العبارات-

‘‘আহলে তাহকীক ওলামাদের অভিমত এই যে, যেই সমস্ত হাদিস হতে বস্তু (সর্বপ্রথম সৃষ্টির ব্যাপারে উদ্দেশ্য হয়েছে) সেই সমস্ত হাদিস দ্বারা একটিকে অপরটিরদিকে অনুপাতিক নেসবত করা হয়েছে।(মূলত রাসূল (ﷺ) এঁর নূরই সর্বপ্রথম সৃষ্টি)’
[আল্লামা হুসাইন বিন মুহাম্মদ বিন হাসান দিয়ার বকরী: তারীখুল খামীস: ১/২৫ পৃ]

*৭. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকায়েদের ইমাম আবুল হাসান আশ‘আরী (رحمة الله) বলেন, 
انه تعالى نور ليس كالانوار و روح النبوية القدسية لمعة من نوره والملائكة اشرار تلك الانوار وقال صلى الله عليه وسلم اول ما خلق الله نورى ومن نورى خلق الله كل شئ-

‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা নূর,তবে অন্যান্য নূরের মতো নন।আর নবী করীম (ﷺ) এঁর রুহ মোবারক হচ্ছে তার নূরের ঝলক।আর ফেরেশতাগণ হচ্ছেন তার নূরের শিখা। হুযূর (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,আল্লাহ্ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন।আর আমার নূর থেকে আল্লাহ্ প্রত্যেক কিছু সৃষ্টি করেছেন।’’

★আল্লামা ইমাম মাহদী আল ফার্সী: মাতালিউল মুর্সারাত: ২১ পৃ. মাতবায়ে মাকতুবায়ে নূরীয়া,লেবানন।
★আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার: ২/২২০ পৃ. দিল্লী থেকে প্রকাশিত।

*৮. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম জাওযী (رحمة الله) স্বীয় “মওলুদুন নববী শরীফ’ গ্রন্থে এ বিষয়ক হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-
اول ما خلق الله نورى ومن نورى خلق جميع الكائنات-
‘‘রাসূল (ﷺ) এঁর বাণী: সর্বপ্রথম আল্লাহ্ তা‘য়ালা আঁমার নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন,আর আঁমার নূর হতে কুল কায়িনাত সব কিছু সৃষ্টি করেছেন।’’
[আল্লামা ইমাম ইবনে যাওজী: বায়ানুল  মিলাদুন্নবী: ২২ পৃ. তুরস্ক হতে প্রকাশিত।]

*৯. আল্লামা ইমাম আবদুল গণী নাবলুসী (رحمة الله) হযরত জাবের (رضي الله عنه) এর সনদ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সর্বপ্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে বলেন,

قد خلق كل شئ من نوره صلى الله عليه وسلم كما ورد به الحديث الصحيح-

‘‘রাসূল (ﷺ) এঁর নূর মোবারক থেকে সব কিছু সৃষ্টি। উক্ত বর্ণিত হাদিসটির সনদ সহীহ।’’
[ইমাম আব্দুল গনী নাবলুসী: হাদীকাতুল নাদিয়া:২/৩৭৫ পৃ. মাতবাতে মাকতবায়ে নূরীয়াহ, ফয়সালাবাদ।]

*১০. বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম কাস্তাল্লানী (رحمة الله) স্বীয় উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘মাওয়াহিবুল্লাদুন্নীয়া’ গ্রন্থে ‘সর্বপ্রথম কী কলম সৃষ্টি’ তা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেন, 
ان اولية القلم بالنسبة الى ما عدا النور النبوى المحمدى صلى الله عليه وسلم-

‘‘সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি বলতে নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) এঁর পরে অন্যান্য সকল বস্তুর আনুপাতিক হিসেবে প্রথমে ইঙ্গিত করা হয়েছে।’’
[আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী: মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া: ১/৭৪ পৃ.]

*১১. ইমাম কাস্তাল্লানী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে উল্লেখ করেন-

وقد اختلف هل القلم اول المخلوقات بعد النور المحمدى؟ فقال الحافظ ابو يعلى الهمدانى: الاصح ان العرش قبل القلم-

‘‘ইমাম কাস্তাল্লানী (رحمة الله) আরও বলেন,ইমাম আবু ই’য়ালা (رحمة الله) কে প্রশ্ন করা হয় মুসলিম ইমামগণের ইখতিলাফ যে রাসূল (ﷺ) এঁর নূর মোবারকের পর প্রথম কী কলম সৃষ্টি? অতঃপর হাফেয আবু ই’য়ালা হামদানী (رحمة الله) বলেন,বিশুদ্ধ বর্ণনা হলো কলমের পূর্বে আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে।’
[ইমাম কাস্তাল্লানী: মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া: ১ম খণ্ড: ৭২ পৃ. মাকতুবায়ে ইসলামিয়্যাহ, বয়রুত।]

✌️তাই রাসূল (ﷺ)-এঁর নূর মোবারকের পরেও প্রথম সৃষ্টি কলম নয়, বরং তার পূর্বে আরও অনেক কিছুই সৃষ্টি করা হয়েছে,যেমন আরশ,তার পূর্বে পানি সৃষ্টি করা হয়েছে।

*১২. মুজাদ্দেদ তরিকার প্রবর্তক ইমামে রব্বানী মুজাদ্দিদ এ আলফেসানী শায়খ আহমদ ফারুকী সেরহিন্দী (رحمة الله) স্বীয় মাকতুবাত শরীফে বলেন,

حقيقت محمد عليه من الصلوة افضلها ومن التسليمات اكملها كہ ظهور اول است وحقيقة الحقائق است باں معنى كہ حقائق ديگر چه حقائق انبياء كرام وچہ حقائق ملائك عظام عليه الصلوة والسلام كا اظلال اندمر او واجل حقائق است قال اول ما خلق الله نورى وقال عليه الصلوة والسلام خلقت من نور الله والمؤمنون من نورى-

‘‘হাক্বীক্বতে মুহাম্মদী (ﷺ) বিকাশের দিক দিয়ে সর্বপ্রথম এবং সকল হাক্বীক্বতের হাক্বিক্বত।সকল আম্বিয়ায়ে কেরাম (ﷺ) এবং সম্মানিত সকল ফিরিশতাগণ হুযূর (ﷺ) এঁর হাক্বিক্বতের নির্যাস।রাসূলে খোদা (ﷺ) বলেছেন,সর্বপ্রথম আল্লাহ্ তা‘য়ালা যা সৃষ্টি করেছেন তা হল আঁমারই নূর।আরো বলেছেন যে,আঁমি আল্লাহর নূর হতে এবং সকল ঈমানদারগণ আঁমার নূর হতে সৃষ্টি।’’
[মুজাদ্দেদে আলফেসানী: মকতুবাত ৩য় খণ্ড: ২৩১ পৃ]

*১৩. ত্রয়োদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আল্লামা শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) স্বীয় ‘‘তাফসীরে আযিযী”তে বলেন, 
در عالم ارواح اول كسے كہ پيدا شد ايشاں بودند-
‘‘রুহ জগতে (আলমে আরওয়াহে) সর্বপ্রথম যাকে সৃষ্টি করা হয়,তিঁনি হচ্ছেন রাসূল (ﷺ)।’
[শাহ আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী: তাফসীরে আযিযী: ৩০ পারা: পৃ-২১৯]

*১৪. বিশ্বের অন্যতম মুহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) ‘মিরকাত’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন,

قَالَ ابْنُ حَجَرٍ: اخْتَلَفَتِ الرِّوَايَاتُ فِي أَوَّلِ الْمَخْلُوقَاتِ، وَحَاصِلُهَا كَمَا بَيَّنْتُهَا فِي شَرْحِ شَمَائِلِ التِّرْمِذِيِّ أَنَّ أَوَّلَهَا النُّورُ الَّذِي خُلِقَ مِنْهُ – عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ- -، ثُمَّ الْمَاءُ، ثُمَّ الْعَرْشُ

‘‘ইমাম ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন, আদি সৃষ্টি কোন বস্তু তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা রয়েছে, যার সার-সংক্ষেপ আমি শামায়েলে তিরমিযীর ব্যাখ্যা গ্রন্থে আলোচনা করেছি।সর্বপ্রথম সেই নূরকে মহান রব সৃষ্টি করেছেন যে নূর থেকে রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে,তারপর পানি সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে।’’
[আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী: মিরকাতুল মাফাতীহ : ১/১৪৮ পৃ. হা/৭৯]

*১৫. উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম মুহাদ্দিস আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) স্বীয় সিরাত গ্রন্থ ‘‘মাদারিজুন নবুয়ত’’ এর দ্বিতীয় খণ্ডের ২য় পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

بدانك اول مخلوقات وواسطہ صدور كا ئنات وواسطہ خلق عالم وادم عليه السلام نور محمد صلى الله عليہ وسلم ست چنانچہ حديث در در صحيح دار دشده كہ اول ما خلق الله نورى وسائر مكونات علوى وسفلى ازاں  نور وازاں جوهر پاك پيدا شده-

‘‘জেনে রেখো,সর্বপ্রথম সৃষ্টি এবং কুল মাখলুকাত তথা আদম عليه السلام সৃষ্টিরও একমাত্র মাধ্যম নূরে মুহাম্মদী (ﷺ)।কেননা ‘সহীহ’ হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- اول ما خلق الله نورى আল্লাহ্ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম আমার নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন এবং উর্ধ্ব ও নিম্ন জগতের সবই তাঁরই নূরে পাক ও মৌলিক সত্ত্বা থেকেই সৃষ্ট।’’
[শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী: মাদারেজুন নবুয়্যাত: ২/২ পৃ.]

★আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) উক্ত হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।আমাদের দেশের কতিপয় আলেম উক্ত হাদিসকে জাল বলে শায়খ দেহলভী (رحمة الله) থেকেও বড় মুহাদ্দিস সাজতে চান!

*১৬. আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন,
اما اول وى صلى الله عليہ وسلم اوليت درايجاد كہ اول ما خلق الله نورى اوليت در نبوت كہ كنت اويست نبيا وادم منجدل فى طينة واول در عالم در روز ميثاق الست بربكم قالوا بلى واول من امن بالله وبذالك امرت وانا واول المسلمين- 

‘‘তিঁনি সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম।রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,আল্লাহ্ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন,তাহলো আঁমারই নূর। তিঁনি নবুওয়াত প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও সর্বপ্রথম। অতঃপর ইরশাদ ফরমান,আঁমি নবী ছিলাম যখন আদম (عليه السلام) এঁর সৃষ্টি সম্পন্ন হয়নি।তিনি নবীগণের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণের দিন আল্লাহর বাণী ‘আঁমি কি তোমাদের রব নই?’ এর বেলায় সর্বপ্রথম ‘হ্যাঁ’ বলে সম্মানিত উত্তরদাতা। তিনিই সর্বপ্রথম আল্লাহ তা‘য়ালার প্রতি ঈমান স্থাপনকারী।’’
[শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী: মাদারেজুন নবুওয়াত: ১/৬ পৃ.]

*১৭. আল্লামা আব্দুল গণী নাবলূসী (رحمة الله) স্বীয় ‘হাদীকাতুন নাদিয়া’ নামক গ্রন্থে লিখেন,
كما ورد ان الله تعالى أول ما خلق نور محمد صلى الله عليه وسلم ثم خلق منه جميع الاشياء-
‘‘যেমন বর্ণিত আছে যে,নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘য়ালা যা সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন তা হল নূরে মুহাম্মদী (ﷺ)।অতঃপর ঐ নূর হতে সমস্ত বস্তু সৃষ্টি করা হয়েছে।’’
[শায়খ ইউসুফ নাবহানী,জাওয়াহিরুল বিহার: ৩/৩১২ পৃ.]

*১৮. আল্লামা ইবনুল হাজ্জ আল মালেকী (رحمة الله) [ওফাত.৭৩৭ হি.] সর্ব প্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে লিখেন,
فيه ايضا ، أى فى كتاب شفاء الصدور للخطيب أبى الربيع وَفِيهِ أَيْضًا أَنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ نُورُ مُحَمَّدٍ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – فَأَقْبَلَ ذَلِكَ النُّورُ يَتَرَدَّدُ وَيَسْجُدُ بَيْنَ يَدَيْ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ

‘‘তার মধ্যেও আছে অর্থাৎ আল্লামা খতিবে আবি রবীঈ (رحمة الله) তাঁর ‘‘সিফাউস সূদুর’’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন,নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা যা সৃষ্টি করেছেন তা হল মুহাম্মদ (ﷺ) এঁর নূর। অতঃপর ঐ নূর ভূ-কম্পিত হচ্ছিল এবং ‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালার নিকট তা সিজদা করতেছিল।’’
[আল্লামা ইবনুল হাজ্জ: আল মাদখাল: ২/৩২ পৃ.দারুল ইহইয়াউত তুরাস আল আরাবী,বয়রুত।]

*১৯. আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলূসী আল বাগদাদী (رحمة الله) সর্বপ্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে বলেন, 
وكونه صلى الله عليه وسلم رحمة للجميع باعتبار أنه عليه الصلاة والسلام واسطة الفيض الالهى على الممكنات على حسب القوابل ولذا كان نوره صلى الله عليه وسلم أول المخلوقات –
‘‘রাহমাতুলি­ল আলামিন (ﷺ) হওয়া,এটা সমস্ত সৃষ্টির যোগ্যতা অনুসারে হয়ে থাকে। আর হুযূর (ﷺ) ফয়েজে এলাহী বিতরণ করেছেন সমস্ত সৃষ্টির উপরে,তাদের যোগ্যতা অনুসারে,আর তিনি যেহেতু সমস্ত সৃষ্টির উপরে ফয়েজ বিতরণ করেন সেহেতু তার নূর মোবারক হচ্ছে সর্বপ্রথম সৃষ্টি।’’
[আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলূসী: তাফসীরে রুহুল মায়ানী: ১৭ পারা,সূরা আম্বিয়া,আয়াত:১০৭, পৃ.১০৫]

*২০. আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (رحمة الله) [ওফাত.৮৫৫ হি.] সর্বপ্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে লিখেন,

وَقيل: أَو مَا خلق الله تَعَالَى نور مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم. قلت: التَّوْفِيق بَين هَذِه الرِّوَايَات بِأَن الأولية نسبي، وكل شَيْء قيل فِيهِ إِنَّه أول فَهُوَ بِالنِّسْبَةِ إِلَى مَا بعْدهَا.

‘‘(সর্বপ্রথম সৃষ্টির বিষয়ে) কেউ কেউ বর্ণনা করেছেন,সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ)-এঁর নূরকে সৃষ্টি করা হয়েছে।আমি (আইনী) বলি,এই সমস্ত রেওয়ায়েতের সমাধান দেওয়া হয়েছে।এভাবে একটি বস্তু অন্য আরেক বস্তুর দিকে নেসবত বা সম্পৃক্ত করা হয়েছে এর মধ্যে নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) সকল সৃষ্টির প্রথমে বা পূর্বে ছিল।’’
[আল্লামা বদরুদ্দীন মাহমুদ আইনী: উমদাতুল ক্বারী: ১৫/১০৯ পৃ. দারুল ইহইয়াউত তুরাস আল-আরাবী,বয়রুত,  লেবানন।]

*২১. আল্লামা মুহাম্মদ বিন মাহদী বিন আযিবাত আল হাসানী আল-আনযারী আল-ফাসী সূফী (رحمة الله) [ওফাত.১২২৪ হি.] তাঁর তাফসীরে সূরা যুখরুফের ৮১ নং আয়াত-

قُلْ إِنْ كَانَ لِلرَّحْمَنِ وَلَدٌ فَأَنَا أَوَّلُ الْعَابِدِينَ

‘‘হে হাবিব! আঁপনি বলুন দয়াময় আল্লাহর যদি কোন সন্তান হতো তাহলে ইবাদাতকারীদের মধ্যে আঁমিই সর্ব প্রথম হতাম।’’

✊এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি একটি হাদিস উল্লেখ করেন এভাবে-

قال جعفر الصادق رضى الله عنه أول ما خلق الله نور محمد صلى الله عليه وسلم قبل كل شىء
‘‘হযরত ইমাম জাফর সাদেক (رضي الله عنه) বলেন,  সকল কিছুর পূর্বে আল্লাহ্ ‘নুরে মুহাম্মাদী’ কে সৃষ্টি করেছেন।’’
[মুহাম্মদ বিন মাহদী আল ফাসী সূফী: তাফসীরে আল-বাহারুল মুদিদ ফি তাফসীরুল কুরআনুল মাজীদ: ৫/২৭৪ পৃ., সূরা যুখরুফ,আয়াত নং ৮১]

*২২. আল্লামা আবূ আব্বাস সাভী আল-মালেকী (رحمة الله) [ওফাত.১২৪১ হি.] তাঁর কিতাবে লিখেন-
كَمَا قَالَ – ﷺ – لِجَابِرٍ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ -: أَوَّلُ مَا خَلَقَ اللَّهُ نُورَ نَبِيِّك مِنْ نُورِهِ الْحَدِيثُ

‘যেমন রাসূল (ﷺ) হযরত জাবেরকে লক্ষ্য করে বলেন হে জাবের! সর্ব প্রথম তোমার নবীর নূরকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন।’’
[ইমাম আবু আব্বাস সাভী আল-মালেকী: হাশীয়াতুল সাভী আ‘লা শরহে সগীর: ৪/৭৭৮ পৃ. দারুল,মা‘রিফ,বয়রুত।]

*২৩. ইমাম বদরুদ্দীন মাহমুদ আইনী হানাফী (رحمة الله) [ওফাত. ৮৫৫ হি.] তিনি তাঁর বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে লিখেন-
وَحكى ابْن جرير عَن مُحَمَّد بن إِسْحَاق أَنه قَالَ: أول مَا خلق الله تَعَالَى النُّور

‘‘ইমাম ইবনে জারীর আত-ত্ববারী (رحمة الله) তিনি তাবেয়ী মুহাম্মদ বিন ইসহাক (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন,আর তিনি বলেছেন, আল্লাহ্ সর্ব প্রথম (রাসূলের) নূরকে সৃষ্টি করেছেন।’’
[আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী: উমদাতুল ক্বারী: ১৫/১০৯ পৃ.]

*২৪. ইমাম দিয়ার বকরী (رحمة الله) [ওফাত. ৯৬৬ হি.] তিনি তাঁর সিরাত গ্রন্থে লিখেন-
أن الله تعالى خلق نور محمد صلى الله عليه وسلم قبل خلق السموات والارض والعرش والكرسى واللوح والقلم والجنة والنار والملائكة والانس والجنّ وسائر المخلوقات

‘‘নিশ্চয় মহান আল্লাহ্ নূরে মুহাম্মাদী (ﷺ) কে সৃষ্টি করেছেন আসমান,যমিন,আরশ, কুরসী,লাওহ,কলম,জান্নাত,জাহান্নাম, ফেরেশতা,মানব,জ্বিন এবং সমস্ত কুল মাখলুকাত সৃষ্টির পূর্বে।’’
[ইমাম দিয়ার বকরী: তারীখুল খামীস: ১/১৯ পৃ.]

*২৫. এ সম্পর্কে হাফিজুল হাদিস আল্লামা ইমাম ইবনে হাজার হায়তামী মক্কী (رحمة الله) [ওফাত ৯৭৪ হিজরী] তার সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থে লিখেন,
لكن صحّ فى حديث مرفوع: أن الماء خلق قبل العرش فعلم أن أول الأشياء على الإطلاق النور المحمدى، ثم الماء، ثم العرش، ثم القلم لما علمت من حديث أول ما خلق الله القلم

“মারফূ ছহীহ্ হাদিস হচ্ছে ‘আরশের পূর্বে পানি সৃষ্টি হয়েছে’।যেনে রেখ! প্রথম সৃষ্টি সমূদয় বস্তুর মধ্যে প্রথম সম্ভোধন হয়েছে ‘নূরে মুহাম্মদী,অত:পর পানি,অত:পর আরশ,অতঃপর কলম।যা আমরা ‘আল্লাহ প্রথমে কলম সৃষ্টি করেছেন’ এই হাদিস থেকে জানলাম।”
[ইমাম ইবনে হাজার মক্কী: আশরাফুল অছাইল,১ম খন্ড, ৩৭ পৃ:]

*২৬. আল্লামা ইমাম হাফিজ ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) আরো লিখেন,

واختلفوا فى أول المخلوقات بعد النور المحمدى، فقيل: العرش

“নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) এঁর পরে প্রথম সৃষ্টি কোনটি সেটা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে (অর্থাৎ নূরে মুহাম্মদী প্রথম সৃষ্টি)।”
[ইমাম ইবনে হাজার মক্কী: আশরাফুল অছাইল ফি শরহে শামাইল,১ম খন্ড,৩৬ পৃ:]

*২৭. আল্লামা হুছাইন ইবনে মুহাম্মদ দিয়ারবকরী (رحمة الله) (ওফাত ৯৬৬ হিজরী) তদীয় কিতাবে বলেছেন,

واختلفت الروايات فى أوّل المخلوقات ففى رواية نور رسول الله صلى الله عليه وسلم وفى رواية العقل وفى رواية القلم وفى رواية اللوح ومنشأ الاختلاف ورود الاخبار المختلفة فى أوّل ما خلق الله ففى خبر أوّل ما خلق الله نور محمد صلى الله عليه وسلم وفى الانس الجليل ان الله خلق أوّلا نور رسول الله صلى الله عليه وسلم قبل العرش والكرسى واللوح والقلم والسماء والارض والجنة والنار بألف ألف وستمائة وسبعين ألف سنة

“প্রথম সৃষ্টির রেওয়াত গুলোর মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে।এক রেওয়াতে আছে, রাসূল (ﷺ) এঁর নূর প্রথম সৃষ্টি।আরেক রেওয়াতে আছে,আকল,আরেক রেওয়াতে আছে কলম,আরেক রেওয়ায়েতে আছে লাওহ্।এভাবে আল্লাহ প্রথম কি সৃষ্টি করেছেন সেই রেওয়াত গুলোর মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে।হাদিসের মধ্যে আছে,আল্লাহ তা’য়ালা রাসূল (ﷺ) এঁর নূর সৃষ্টি করেছেন। ‘ইনছে জালিল’ এ আছে,নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা আরশ-কুরছী,লাওহ-কলম, আসমান-জমীন,জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টি করা ৭০ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর নূর সৃষ্টি করেছেন।”
[আল্লামা দিয়ারবকরী: তারিখুল খামিস, ১ম খণ্ড,১৭ পৃ:]

*২৮. অনুরূপ আল্লামা মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের ইবনে শায়েখ আব্দুল্লাহ আইদারুছ (رحمة الله) (ওফাত ১০৩৮ হিজরী) তদীয় কিতাবে বলেন,

فَعلم ان أول الْأَشْيَاء على الْإِطْلَاق النُّور المحمدي ثمَّ المَاء ثمَّ الْعَرْش ثمَّ الْقَلَم

“যেনে রেখ, নিশ্চয় প্রত্যেক কিছু প্রথম হওয়ার ব্যাপারে নিছবত হলেও প্রথম হল নবী পাক (ﷺ) এঁর নূর,অত:পর পানি, অত:পর আরশ,অত:পর কলম।”
[নূরুছ ছাফির আনিল কারনিল আশির,৮ নং পৃষ্ঠা]

*২৯. যেমন এ বিষয়ে আল্লামা ইসমাঈল হাক্বী হানাফী (رحمة الله) [ওফাত ১১২৭ হিজরী] তদীয় কিতাবে বলেন,

ان السراج الواحد يوقد منه الف سراج ولا ينقص من نوره شىء وقد اتفق اهل الظاهر والشهود على ان الله تعالى خلق جميع الأشياء من نور محمد ولم ينقص من نوره شىء

“নিশ্চয় একটি প্রদীপ থেকে হাজার হাজার প্রদীপ জ্বালালেও ঐ প্রদীপের আলো সামান্যতমও কমেনা।সকল উম্মত এ বিষয়ে একমত যে,আল্লাহ তা’য়ালা সব কিছুই মুহাম্মদ (ﷺ) এঁর নূর মোবারক দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।অথচ তাঁর নূর মোবারক সামান্যতমও কমেনি।”
[তাফছিরে রুহুল বয়ান,৭ম খণ্ড,১৯৭ পৃ:, সূরা আহযাব এর ৪৫-৪৬ নং আয়াতের তাফছিরে]

*৩০. আল্লামা হাফিজ ইবনুল হাজ্জ আল-মালেকী (رحمة الله) [ওফাত ৭৩৭ হিজরী] তদীয় কিতাবে বলেন,

وَفِيهِ أَيْضًا أَنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ نُورُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَقْبَلَ ذَلِكَ النُّورُ يَتَرَدَّدُ وَيَسْجُدُ بَيْنَ يَدَيْ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ

“অনুরূপ রয়েছে যে,নিশ্চয় সর্বপ্রথম আল্লাহ তা’য়ালা যা সৃষ্টি করেছেন তা হল মুহাম্মদ (ﷺ) এঁর নূর।অত:পর ঐ নূর ভূ-কম্পিত হচ্ছিল এবং আল্লাহ তা’য়ালার নিকট সেজদা করছিল।”
[ইবনুল হাজ্জ: আল্ মাদখাল,২য় খণ্ড,৩২ পৃ:]

*৩১. আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল ইবনে ছিলাহ ছানআনী (رحمة الله) ওফাত ১১৮২ হিজরী তদীয় কিতাবে বলেন:

(كنت أول الناس في الخلق) لأن الله تعالى خلقه نوراً قبل خلق آدم

“সৃষ্টি জগতে আঁমি প্রথম মানুষ ছিলাম’ কেননা আল্লাহ তা’লা তাঁকে নূররূপে আদমের পূর্বেই সৃষ্টি করেছেন।”
[আল্লামা সান‘আনী: আত-তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর,৮ম খণ্ড, ২৪১ পৃ: ৬৪০৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়]

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(৩২ম পর্ব)

অনেকে বলেন কোরআনে নূর বলা হয়েছে কিন্তু নূরের তৈরী বলা হয়নি, আবার কেউ বলেন শুধু রুহ মোবারক নূর কিন্তু দেহমোবারক নয়,আবার কেউ বলেন সাদা মাটির তৈরী (নাউযুবিল্লাহ!) আজকে ইন-শা-আল্লাহ সে বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো-[২৪ম অংশ]

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

রাসূল (ﷺ) হলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি,যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না।[8th Part]

★১৮৯. সর্বপ্রথম আল্লাহ তা‘য়ালা রাসূল (ﷺ) এঁর নূর সৃষ্টি করেছেন [বিস্তারিত আলোচনা]

গত পর্বে আলোচনা করেছিলাম সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ)-এঁর নূরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এ বিষয়ে সনদ ভিত্তিক কোনো বর্ণনা রয়েছে কিনা।তারই ধারাবাহিকতায় আজকে এ বিষয়ে আহলে হাদিস ও দেওবন্দী আলেমদের অভিমত তুলে ধরবো:

*৩২. দেওবন্দের অন্যতম শায়খুল হাদিস হুসাইন আহমদ মাদানী সাহেব স্বীয় গ্রন্থ ‘আস শিহাবুস সাকিব’ এর ২৭০ পৃষ্ঠায় লিখেন-
غرضيكہ حقيقت محمد صلى الله عليہ وسلم التحية واسطہ جملہ كمالات عالم عالميان ہے يہ هی معنى لولاك لما خلقت الافلاك اور اول ما خلق الله نورى اور انا نبى الانبياء كے ہیں –

‘‘মোট কথা হলো সমস্ত কায়েনাত বা আলম হাকীকতে মুহাম্মদী তথা নূরে মুহাম্মদী থেকে সৃষ্ট।যেমন হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ্  বলেন,যদি আঁপনি না হতেন তবে আঁমি আসমান যমীন কিছুই সৃষ্টি করতাম না।রাসূল (ﷺ) এঁর বাণী: মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম আঁমার নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন এবং আরও বলেন,আঁমি নবীদেরও নবী।’’
[মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী: শিহাবুস সাকীব: ২৭০ পৃ. মাকতুবায়ে থানবী,ইউ.পি,দেওবন্দ,মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী: রিসালায়ে নূর: ২২ পৃ. মাকতুবায়ে গাউসিয়া,করাচি।]

*৩৩. দেওবন্দীদের অন্যতম আলেম মুফতি শফি সাহেব (পাকিস্তান) বলেন,

اور پہلا مسلمان ہو نے سے اس طرف بهى اشاره ہو سكتا ہے كہ مخلوقات ميں سب سے پہلے رسول كريم صلى الله عليہ وسلم كا نور مبارك پيدا كياگيا ہے اس كے بعد تمام آسمان وزمين اور مخلوقات وجود ميں آے ہيں جيسا كہ ايک حديث میں ارشاد ہے اول ما خلق الله نورى -(روح المعانى)

‘‘প্রথম মুসলমান বলতে এদিকেও ইঙ্গিত করা হতে পারে যে,সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম রাসূলে করীম (ﷺ)-এঁর নূর মোবারক সৃষ্টি করা হয়েছে।তারপর সকল আসমান যমীন এবং সকল সৃষ্টি অস্তিত্ব লাভ করে।যেমন: একটি হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, সর্বপ্রথম আল্লাহ্ তা‘য়ালা আঁমার নূর সৃষ্টি করেছেন।(রুহুল মায়ানী)’’
[মুফতী শফি: তাফসীরে মারিফুল কুরআন: ৩/৫১০ পৃ ইদারাতুন মা’আরিফ: করাচী,পাকিস্তান।]

✊উক্ত তাফসীর বাংলায় অনুবাদ করে সৌদি সরকার দিচ্ছেন বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা মুহাম্মদ মহিউদ্দিন খাঁন। বাংলা মা‘রিফুল কোরআনের ৪২৮ পৃষ্ঠায় দেখুন।

*৩৪. আহলে হাদিসের অন্যতম আলেম কাযি শাওকানী বলেন

أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ أَجْمَعِينَ، لِأَنَّهُ وَإِنْ كَانَ مُتَأَخِّرًا فِي الرِّسَالَةِ فَهُوَ أَوَّلُهُمْ فِي الْخَلْقِ، وَمِنْهُ قَوْلُهُ تَعَالَى: وَإِذْ أَخَذْنا مِنَ النَّبِيِّينَ مِيثاقَهُمْ وَمِنْكَ وَمِنْ نُوحٍ
‘‘হুযূর করীম (ﷺ) সকল মুসলমানের মধ্যে সর্বপ্রথম।কেননা,তিঁনি রাসূল হিসেবে পরে আবির্ভূত হলেও সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম।আল্লাহ্ তা‘য়ালার উক্তি,স্মরণ করুন! যখন আঁমি মজবুত ওয়াদা নিয়েছি নবীগণ থেকে,আঁপনার নিকট থেকে এবং নূহ (عليه السلام) থেকে।এতে ঐ কথাই বিবৃত হয়েছে।’
[কাজী শাওকানী: ফতহুল কাদীর: ২/২১১ পৃ. দারুল হাদিস কায়রো, প্রকাশকাল ২০০২ খ্রী:]

*৩৫. দেওবন্দীদের অন্যতম আলেম রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী সাহেবকে প্রশ্ন করা হয় এভাবে

سوال: اول ما خلق الله نورى اور لولاك لما خلقت الافلاك يہ دونوں حديثيں صحيح حديثيں ہیں يا وضعى ؟ كو وضعى بلاتا ہے-

প্রশ্নঃ সর্বপ্রথম আল্লাহ্ তা‘য়ালা যা সৃষ্টি করেছেন,তা হল আঁমার নূর এবং আঁপনাকে সৃষ্টি না করলে আসমানসমূহ এবং যমীন কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না। এ মর্মে বর্ণিত হাদিসগুলো বিশুদ্ধ,নাকি জাল,যায়েদ এগুলো জাল বলছে।এ প্রশ্নের উত্তরে গাঙ্গুহী সাহেব বলেন, 

جواب: يہ حديثيں كتب صحاح ميں موجود نہيں ہيں – مگر شيخ عبد الحق رحمة الله نے اول ما خلق الله نورى كو نقل كيا ہے اور بتايا ہے كہ اس كى كچہ اصل ہے فقط و الله تعالى اعلم –
‘‘এ হাদিসগুলো সিহাহ (ছয়টি বিশুদ্ধ কিতাব) এর মধ্যে নেই।কিন্তু শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ) এঁর নূর মোবারক সৃষ্টি করা হয়েছে’’ উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করে বলেছেন যে,এ হাদিসটির ভিত্তি আছে।’’
[রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী: ফতোয়ায়ে রশিদিয়া: ১/২৭৮ পৃ.]

*৩৬. মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব এর অন্যতম গ্রন্থ নশরুত্তীব এর ২৫ পৃষ্ঠায় জাবের (رضي الله عنه) এর বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, 

اس حديث سے نور محمدى كا حقيقة سب سے پھلے پیدا ہونا ثابت ہوا كيونكہ جن چیزوں كى بارے ميں احادیث میں پھلے پیدا ھونا ایا ھے ان سب چیزوں کا نور محمدی کے بعد پیدا ھونا اس حدیث سے معلوم ھوتا ھے-

‘‘এ হাদিস (অর্থাৎ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক কর্তৃক হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত) দ্বারা বাস্তবিক পক্ষে সর্বপ্রথম নূরে মুহাম্মদী সৃষ্টি হওয়া প্রমাণিত।কেননা যেসব সৃষ্টির ক্ষেত্রে ‘প্রথম সৃষ্টি’ বলে হাদিসে বর্ণনায় এসেছে। ওইসব সৃষ্টি ‘নূরে মুহাম্মদী’ থেকে পরে সৃষ্টি হবার বিষয়টি আলোচ্য হাদিস দ্বারা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত।
[মাওলানা আশরাফ আলী থানবী: নশরুততীব ফী যিকরিনবীঈল হাবীব: পৃ. ২৫]

*৩৭. রাসূল (ﷺ) এঁর নূর মোবারক সর্ব প্রথম সৃষ্টি বিষয়ে দেওবন্দের শাইখুল হাদিস মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী‘র [ওফাত.১৩৫৩ হি.] তিনি তাঁর লিখিত তিরমিযি শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘আরফুস্-সাযী শরহে সুনানে তিরমিযি’ গ্রন্থে সর্বপ্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে লিখেন-

أن أول المخلوقات نور النبي – صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -، ذكره القسطلاني في المواهب بطريق الحاكم والترجيح لحديث النور على حديث الباب.
‘‘নিশ্চয় সর্বপ্রথম সৃষ্টি হল নূরে নাবী (ﷺ) যেটি ইমাম কাসতাল্লানী (رحمة الله) তাঁর মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া গ্রন্থে হাকেমের সূত্রে উল্লেখ করেছেন।আর তিনি সেখানে সবগুলো বর্ণনার মধ্যে (কলম/নূরে মুহাম্মদী/আক্বল সর্বপ্রথম সৃষ্টি বিভিন্ন বর্ণনার মধ্যে) নূরের হাদিসকে প্রাধান্য দিয়েছেন।’’
[মাওলানা আনোওয়ার শাহ কাশ্মীরী (১৩৫৩হি.), আরফুস সাযী শরহে সুনানে তিরমিযি, ৩/৩৯৪ পৃ. হাদিস নং. ২১৫১, দারুল তুরাসুল আরাবী,বয়রুত,লেবানন, প্রথম প্রকাশ. ১৪২৫ হি./২০০৪ ইং খৃ.]

*৩৮. রাসূল (ﷺ) নূর হওয়া প্রসঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের দেওবন্দী সুপ্রসিদ্ধ শাইখুল হাদিস আল্লামা মুফতি মনসূরুল হক যিনি অসংখ্য কওমী দেওবন্দী আলেমদের উস্তাদ।তিনি সুপ্রসিদ্ধ কওমী দেওবন্দী পত্রিকা মাসিক ‘আদর্শ নারীর’ ২০১২ ঈসায়ীর জানুয়ারী তথা রবিউল আউয়ালের সংখ্যার ‘‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সারা জাহানের জন্য রহমত’’ শিরোনামের ৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘এই ভূমণ্ডল, নভোমণ্ডল এবং এতদুভয়ের যাবতীয় বস্তুর সৃষ্টি রাসূলে কারীম (ﷺ)-এঁর সৃষ্টির বরকতমণ্ডিত।তাঁর নূরে রহমত পরশিত করেই  এসব কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে। সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ মহানবী (ﷺ) এঁর নূরকে সৃষ্টি করেন।(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক) তারপর সেই নূরকে কেন্দ্র করে অন্যান্য সকল কিছু,তথা আসমান-জমিন, চন্দ্র-সূর্য,গ্রহ-নক্ষত্র,পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা,আলো-বাতাস,সমস্ত জীন-ইনসান এক কথায় সমগ্র জগতের সৃষ্টি হয়।(ইবনে আসাকির)’’ সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আপনারাই লক্ষ করুন মনসূরুল হক সাহেব কি সুন্দর করে নবিজির সৃষ্টি বর্ণনা দিলেন।আল্লাহ তার অনুসারীদের হিদায়াত নসিব দান করুক।

*৩৯. মওলানা আমিনুল ইসলাম তার ‘‘নূরে নবী (ﷺ)’’ কিতাবে রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি মর্মে ‘নূরে মুহাম্মদী (ﷺ)’ নামক একটি অধ্যায় তৈরী করেছেন। তিনি এ অধ্যায়ের শুরুতেই উল্লেখ করলেন-‘‘এমনকি,সমগ্র সৃষ্টি-জগতের মধ্যে সর্ব প্রথম যাঁর সৃষ্টি তিঁনিই আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম।’’
[মাওলানা আমিনুল ইসলাম,নূরে নবী (ﷺ), প্রথম খণ্ড, ৫ পৃষ্ঠা,আল বালাগ পাবলিকেশন্স,ঢাকা,জুন,১৯৯৯ ইং, রবিউল আউয়াল,১৪২০ হি.]

*৪০. এ বিষয়ে বি-বাড়িয়ার বড় হুযুর নামে খ্যাত মুফতি সিরাজুল ইসলাম এর লিখিত ‘‘গাওয়াহেরে সিরাজিতে’’ ৬৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘হুযুর (ﷺ) হলেন সারা সৃষ্টির কারণ বা উসিলা।সর্ব প্রথম নবিজী (ﷺ)-এঁর নূর মোবারক সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন হুযুর (ﷺ) ইরশাদ করেন-

اول ما خلق الله نورى وكل خلائق من نورى وانا من نور الله
‘‘আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম আঁমার নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন।অতঃপর আঁমার নূর হতে সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন।আমি হলাম আল্লাহর নূর।’’বি-বাড়ীয়ার কওমী আলেমদেরকে তার থেকে শিক্ষা নিয়ার অনুরোধ রইল।

★১৯০. রাসূল (ﷺ) সর্বপ্রথম সৃষ্টি বিষয়ক হযরত জাবের (رضي الله عنه)-এর হাদিস পর্যালোচনা:

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইতোপূর্বে রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি মর্মে বিভিন্ন কোরআনের আয়াত,প্রিয় নবীর হাদিস,সাহাবী, তাবেয়ীদের বক্তব্য উল্লেখ করেছি,আরও অনেক প্রমাণ আমার লিখিত ‘রাসূল (ﷺ)-এর সৃষ্টি নিয়ে বিভ্রান্তির নিরসন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছি।এত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কতিপয় দেওবন্দী ও আহলে হাদিসগণ রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি বিষয়ক হযরত জাবের (رضي الله عنه)-এর হাদিসটি উল্লেখ করে থাকেন।তারা সাধারণ মানুষদেরকে বুঝাতে চান যে এ বিষয়ে যারা দলিল দেন তাদের এটি ছাড়া আর কোনো দলিল নেই,অথচ এটি তাদের ধোঁকার অন্যতম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।পাঠকবর্গ! তাদের এ ধোঁকা কতটুকু বাস্তব সম্মত তা আপনারা ইতোপূর্বে দলিল থেকে বুঝুন!

✊“এসব হাদীস নয়” গ্রন্থের ২২০ পৃষ্ঠায় মাওলানা মুতীউর রহমান সাহেব এ হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা প্রসঙ্গে উসূলে হাদিসের নীতিমালাকে উপেক্ষা করে লিখেছেন-‘‘উলামায়ে কেরাম তা দেখামাত্রই বুঝতে পারবেন যে, পূর্ণ রেওয়ায়েতটাই জাল ও বাতিল।’’

★সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! হাদিসের ইবারত দেখেই যদি হাদিস সহীহ যঈফ নির্ণয় করা যেতো তাহলে আর কেহ মুহাদ্দিস হওয়ার জন্য বছরের পর বছর অধ্যয়ন করতে হতো না।তিনি এ হাদিসকে জাল বলার পিছনে ১৯৩ পৃষ্ঠায় ইবনে তাইমিয়ার দলিলকে উপস্থাপন করেছে।

★ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার লিখিত আরেক ভয়ংঙ্কর গ্রন্থ ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩২৪ পৃষ্ঠা হতে ৩৪৫ পৃষ্ঠা পর্যন্ত আলোচনা করেছেন এটিকে জাল প্রমাণের জন্য।উক্ত হাদিস সম্পর্কে আলোচনা করে তা মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য তিনি কোনো গ্রহণযোগ্য দলীল বা প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পেরে দুটি অনির্ভরযোগ্য দলীল উপস্থাপন করেছেন।

★উক্ত গ্রন্থের ৩২৫ পৃষ্ঠায় আরো লিখেছেন, ‘এই হাদিসটি কোনো হাদিসের গ্রন্থে সংকলিত হয়নি।’ লেখক এ কথা বলে চরম মিথ্যা এবং মুর্খতার পরিচয় দিয়েছেন। আছে নাকি নেই তার জবাব সামনে আসছে, ইন-শা-আল্লাহ।

✊ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ৩২৫ পৃষ্ঠায় আরও লিখেছেন-‘‘যতটুকু জানা যায়,৭ম হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ আলিম মহিউদ্দিন ইবনু আরাবী সর্বপ্রথম এই কথা গুলোকে হাদিস হিসেবে উল্লেখ করেন।’’

⏺️লক্ষ্য করুন! উক্ত গ্রন্থের লেখক ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের মিথ্যা ও ধোঁকাবাজী,  এত বড় বুযুর্গ ওলীয়ে কামেল আরিফ বিল্লাহ মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী (رحمة الله) এর উপর কি রকম জঘন্য মিথ্যারোপ করেছেন।

★হযরত মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী (رحمة الله) এর কোন গ্রন্থে তা বর্ণনা করা হয়েছে তা তিনি উল্লেখও করেননি।তার কারণ হলো তিনি তার নামে এটি সাজিয়েছেন।

★উক্ত গ্রন্থের ৩২৫ পৃষ্ঠায় মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবী (رحمة الله) এর সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেন,‘‘বিশেষত মুজাদ্দিদে আলফে সানী সিরহিন্দী (رحمة الله) ইবনুল আরাবীর এ সকল জাল ও ভিত্তিহীন বর্ণনার প্রতিবাদ করেছেন বারংবার,কখনো কখনো নরম ভাষায়, কখনো কখনো কঠোর ভাষায়।
[‘মাকতুবাত শরীফ: ১/১ পৃ. মাকতুবাত নং ৩১]

✊প্রিয় পাঠক! একটু গভীরভাবে চিন্তা করুন! তিনি যে দলীল উপস্থাপন করেছেন তাও মিথ্যা।আমি অধমের কাছে মাকতুবাত শরীফ বিদ্যমান রয়েছে,তিনি মাকতুবাত শরীফ থেকে দলীল দিয়েছেন প্রথম খণ্ডের প্রথম পৃষ্ঠার ৩১ নং মাকতুবাত,এটা কী করে সম্ভব!  প্রথম পৃষ্ঠায় ৩১ নং মাকতুবাত! আমি সুনিশ্চিত লেখার সময় মনে হয় ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের লেখকের মাথা ঠিক ছিল না,হয়তো বা তিনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন। কারণ যারা ভালো কোনো আলেমও নন তারাও খুব সহজে বুঝবেন যে তিনি যে এটি ১০০% ইবনে আরাবীর বিরোদ্ধে মিথ্যা দলিল দিয়েছেন।

✌️ইমাম মুজাদ্দিদে আলফেসানী (رحمة الله) কী এ বিষয়ে ইবনে আরাবী (رحمة الله)’র তার বিরোধীতা করেছেন নাকি তার কথার সমর্থন জানিয়েছেন তা উপস্থাপন করবো।রাসূল (ﷺ) সর্বপ্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে ইমাম মুজাদ্দিদে আলফেসানী (رحمة الله) মাকতুবাত শরীফের ৩য় খণ্ড ২৩১ পৃষ্ঠায় লিখেন-

حقيقت محمد عليہ من الصلوة افضلها ومن التسليمات اكملها كہ ظهور أول است وحقيقتہ الحقائق است باں معنى كہ حقائق ديگر چہ حقائق انبياء كرام وچہ حقائق ملائك عظام عليہ الصلوة والسلام كا اظلام اند مرا او واجل حقائق است قال عليہ الصلوة السلام أول ما خلق الله نورى وقال عليہ الصلوة والسلام خلقت من نور الله والمؤمنون من نورى-
‘‘হাকিকতে মুহাম্মদ (ﷺ) বিকাশের দিক দিয়ে সর্বপ্রথম এবং সকল হাকিকতের হাকীকত।সমস্ত আম্বিয়া (عليهم الصلاة والسلام) সম্মানিত সকল ফেরেশতাগণ হুযূর (ﷺ)-এঁর হাকীকতের নির্যাস। রাসূলে খোদা (ﷺ) ইরশাদ করেন,  আল্লাহ্ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন তা হল আঁমার নূর মোবারক। আরও বলেছেন আঁমি আল্লাহর নূর হতে আর সমস্ত মুমিনগণ আঁমার নূর হতে সৃষ্টি।’’
[মুজাদ্দেদে আলফেসানী: মকবুতবাত শরীফ: ৩/২৩১ পৃ., আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার : ২/২০৮ পৃ.]

✊অতএব, প্রমাণিত হলো তার বর্ণনা মুতাবেক শায়খ মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবীর আক্বিদা ও নূরের হাদিস প্রচারে মুজাদ্দিদে আলফেসানী (رحمة الله)-এর বিরোধিতা নয় বরং সমর্থন প্রমাণিত হয়। তাই ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের বক্তব্যে মিথ্যা ও ধোঁকাবাজীর সংমিশ্রন রয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।তিনি ইমাম মুজাদ্দিদে আলফেসানী (رحمة الله)-এর কিতাবের মূল ইবারত দেননি যাতে করে তিনি ধোঁকাবাজী সহজেই করতে পারেন। সাধারণ মানুষতো মূল কিতাব গবেষণা করে না,ফলে তাদের ধোঁকাই বিভ্রান্তিতে পতিত হচ্ছে।তাই আমি সাধারণ আম জনতাকে আমার এই কিতাবের মাধ্যমে সতর্ক করছি এবং বিভ্রান্তিতে যেন না পড়ে সে জন্য ধোঁকাবাজদের বই পড়া থেকে বিরত থাকার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।

মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পাদিত ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ গ্রন্থের ১৫৭ পৃষ্ঠায় একে একক আহলে হাদিসদের ইমাম পথভ্রষ্ট ইবনে তাইমিয়ার দলিল দিয়ে একে জাল প্রমাণের অনেক চেষ্টা করেন।

⏩ইমাম আব্দুর রাজ্জাক, কাস্তাল্লানী (رحمة الله)সহ এক জামাত ইমাম সংকলন করেন-

عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي أَخْبِرْنِي عَنْ أَوَلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ اللَّهُ قَبْلَ الأَشْيَاءِ، فَقَالَ: يَا جَابِرُ! إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ قَبْلَ الأَشْيَاءِ نُورُ نَبِيِّكَ مِنْ نُورِهِ، فَجَعَلَ ذَلِكَ النُّورِ يَدُورُ بِالْقُدْرَةِ حَيْثُ شَاءَ اللَّهُ، وَلَمْ يَكُنْ فِي ذَلِكَ الْوَقْتِ لَوْحٌ وَلا قَلَمٌ وَلا جَنَّةٌ وَلا نَارٌ وَلا مُلْكٌ وِلا سِمِاءٌ وَلا أَرْضٌ وَلا شَمْسٌ وَلا قَمَرٌ وَلا جِنِّيٌ وَلا إِنْسٌ. فلما أراد الله تعالى أن يخلق الخلق قسم ذلك النور أربعة أجزاء، فخلق من الجزء الأول القلم، ومن الثانى اللوح، ومن الثالث العرش. ثم قسم الجزء الرابع أربعة أجزاء، فخلق من الجزء الأول حملة العرش، ومن الثانى الكرسى، ومن الثالث باقى الملائكة، ثم قسم الجزء الرابع أربعة أجزاء، فخلق من الأول السماوات، ومن الثانى الأرضين ومن الثالث الجنة والنار، ثم قسم الرابع أربعة أجزاء، فخلق من الأول نور أبصار المؤمنين، ومن الثانى نور قلوبهم- وهى المعرفة بالله- ومن الثالث نور أنسهم، وهو التوحيد لا إله إلا الله محمد رسول الله-

‘‘হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী (رضي الله عنه) বলেন,আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার মাতা পিতা আপনার প্রতি উৎসর্গ। আমাকে বলুন,আল্লাহ্ তা‘য়ালা সবকিছুর পূর্বে কি সৃষ্টি করেছেন? হুযূর (ﷺ) ফরমালেন,হে জাবের! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘য়ালা সবকিছুর পূর্বে তাঁর নূর হতে তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন।অতঃপর ঐ নূর খোদায়ী কুদরতে যেখানে আল্লাহর ইচ্ছা ভ্রমণ করতে থাকে।তখন লওহ, কলম,জান্নাত,জাহান্নাম,ফেরেশতা,  আসমান,যমীন,সূর্য,চন্দ্র,দানব,মানব কিছুই ছিল না।অতঃপর যখন আল্লাহ্ তা‘য়ালা অন্যান্য মাখলূককে সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করলেন তখন ঐ নূরকে চারভাগে ভাগ করলেন,প্রথমভাগ দ্বারা কলম, দ্বিতীয়ভাগ দ্বারা লওহে মাহফুয,  তৃতীয়ভাগ দ্বারা আরশ সৃষ্টি করলেন। চতুর্থ ভাগকে আবার চারভাগ করলেন,  প্রথম ভাগ দ্বারা আরশবহনকারী ফেরেশতা,দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা কুরসী,তৃতীয় ভাগ দ্বারা অপরাপর সকল ফেরেশতা সৃষ্টি করলেন,চতুর্থ ভাগকে আবার চারভাগ করলেন।প্রথমভাগ দ্বারা সপ্ত আসমান,দ্বিতীয়ভাগ দ্বারা সপ্ত যমীন,  তৃতীয় ভাগ দ্বারা জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করলেন।চতুর্থ ভাগকে আবার চারভাগ করলেন।প্রথমভাগ দ্বারা সৃষ্টি করলেন মুমিনদের চোখের জ্যোতি,দ্বিতীয়ভাগ দ্বারা তাদের অন্তরের নূর,যার মাধ্যমে তারা আল্লাহর মা‘রেফাত লাভ করে,চতুর্থ ভাগ দ্বারা সৃষ্টি করলেন তাদের সম্প্রীতি ও ভালবাসার তা হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।’’

♻️এছাড়া আরও বিস্তারিত জানতে দেখুন:

হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:) হতে বর্ণিত হাদিসের মান ও নির্ভরযোগ্যতা যাচাই এবং মুসান্নাফ কিতাবে এই হাদিস আছে এবং ছিল তার প্রমান-১৬ম পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=126350366168333&id=100063801096119

হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:) হতে বর্ণিত হাদিসের মান ও নির্ভরযোগ্যতা যাচাই এবং মুসান্নাফ কিতাবে এই হাদিস আছে এবং ছিল তার প্রমান-১৭ম পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=128144032655633&id=100063801096119

হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:) হতে বর্ণিত হাদিসের মান ও নির্ভরযোগ্যতা যাচাই এবং মুসান্নাফ কিতাবে এই হাদিস আছে এবং ছিল তার প্রমান-১৮ম পর্ব https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=131431665660203&id=100063801096119

ইমাম বুখারী (রহ:) এঁর দাদা উস্তাদ মুহাদ্দীস ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (رحمة الله) কি শিয়া পন্থী ছিলেন??-১৯ম পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=133195272150509&id=100063801096119

যারা হযরত জাবির (রাঃ) এঁর হাদিস কে জাল বলে তাদের জন্য দাঁতভাঙ্গা জবাব-২০ম পর্ব https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=135477718588931&id=100063801096119

যারা হযরত জাবির (রাঃ) এঁর হাদিস কে জাল বলে তাদের জন্য দাঁতভাঙ্গা জবাব-২১ম পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=138127611657275&id=100063801096119

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(৩৩ম পর্ব)

অনেকে বলেন কোরআনে নূর বলা হয়েছে কিন্তু নূরের তৈরী বলা হয়নি, আবার কেউ বলেন শুধু রুহ মোবারক নূর কিন্তু দেহমোবারক নয়,আবার কেউ বলেন সাদা মাটির তৈরী (নাউযুবিল্লাহ!) আজকে ইন-শা-আল্লাহ সে বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো-[২৫ম অংশ]

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

রাসূল (ﷺ) হলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি,যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না।[9th Part]
⏬⏬
★১৯১. এপর্যায়ে ইন-শা-আল্লাহ আলোচনা করার চেষ্টা করবো সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করা হয়েছে কিনা??

*১. সহীহ রেওয়াত দ্বারা স্পষ্ট জানা যায়, কলম সৃষ্টি হওয়ার বহু পূর্বে আল্লাহর আরশ সৃষ্টি হয়েছে।যেমন সহীহ হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে।“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) হতে বর্ণিত,আল্লাহর রসুল (ﷺ) বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ পাক তাকদীর সৃষ্টি করেছেন আসমান-জমীন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে,আর তখন “আল্লাহর আরশ” ছিল পানির উপরে।”
       ******দলিল******
*(ক.) সহীহ মুসলিম,হাদিস নং-২৬৫৩
*(খ.) তাফসীরে ইবনে কাসীর,৩য় খন্ড,৪৬৩ পৃঃ
*(গ.) ইমাম খারকুশীঃ শরফুল মোস্তাফা,১ম খন্ড,৩১০পৃঃ

♻️এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায়,কলম দ্বারা লিখিত “তাকদীর” সৃষ্টি করার ৫০ হাজার বছর পূর্বেও “আল্লাহর আরশ” পানির উপর ছিল।

এর সমাধান দিয়েছেন বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা “ইরশাদুস শারী ফি শরহে সহীহুল বোখারী” লেখক ইমাম ইবনে হাজর কাস্তালানী (রহঃ) (ওফাত ৯২৩ হিজরী) তাঁর তদীয় কিতাবে উল্লেখ করেন- ”হাফিজ আবু ইয়ালা হামদানী (রহ:) বলেনঃ অধিক বিশুদ্ধ মত হল,আল্লাহর আরশ সৃষ্টি হয় কলম সৃষ্টির পূর্বে।যেমনটি আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) থেকে সহীহ সূত্রে প্রমাণিত আছে যে,আল্লাহর রসুল (ﷺ) বলেছেনঃ  নিশ্চয় আল্লাহ পাক তাকদীর সৃষ্টি করেছেন আসমান-জমীন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে,আর তখন “আল্লাহর আরশ” ছিল পানির উপরে।”
[ইমাম কাস্তলানী কৃতঃ মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া,১ম খন্ড,৪৮পৃঃ]

✊সুতরাং কলমের পূর্বে আল্লাহর আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে এটাই বিশুদ্ধ অভিমত।

⏩আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন সর্ব প্রথম কি সৃষ্টি করেছেন এটা আলোচনার মূল বিষয়।যদিও পূর্ব থেকে তা আলোচনা করে আসছি; তারপরও আজকে একটু ভিন্নভাবে বিষয়টা আলোচনা করার চেষ্টা করবো।ইমাম বদরউদ্দিন আঈনী (রহঃ) বলেনঃ

روى أحمد والترمذي مصححا من حديث عبادة بن الصامت مرفوعاً أول ما خلق الله القلم ثم قال أكتب فجرى بما هو كائن إلى يوم القيامة واختاره الحسن وعطاء ومجاهد وإليه ذهب إبن جرير وابن الجوزي وحكى ابن جرير عن محمد بن إسحاق أنه قال أول ما خلق الله تعالى النور والظلمة ثم ميز بينهما فجعل الظلمة ليلاً أسود مظلماً وجعل النور نهاراً أبيض مبصراً وقيل أو ما خلق الله تعالى نور محمد قلت التوفيق بين هذه الروايات بأن الأولية نسبي وكل شيء قيل فيه إنه أول فهو بالنسبة إلى ما بعدها
ইমাম আহমদ এবং ইমাম তিরমিজি (রঃ) মারফু হাদিস সহিহ সনদ সহ ইবাদা বিন সামিত থেকে বর্ননা করে প্রমাণ করেন যে,” আল্লাহ্‌ সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন এবং একে বলল,লিখ এবং এটা বিচার দিবসের আগ পর্যন্ত সবকিছু লিখল।হাসান,আতা,­ মুজাহিদ ও এটা অবলম্বন করেছেন।ইবন জারির এবং ইবন জাউজির ও এমন মাজহাব ছিল।যেখানে ইবন জারির,মুহাম্মদ বিন ইসহাক থেকে বর্ননা করেন যে,”আল্লাহ সবকিছুর পূর্বে আলো (নূর) এবং আঁধার সৃষ্টি করেছেন। তারপর তাদের মদ্ধে পৃথকীকরণ করেন।এখানে আরও বলা আছে যে,”আল্লাহ্‌ সর্বপ্রথম মুহাম্মদ (ﷺ)-এঁর নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন। “
[Umdat ul Qari, Sharh Sahih Bukhari, Volume No:15, Page No:109]

♻️ইমাম যুরকানী (রহ:) বলেন,হাদিসে পাকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হিসেবে “আকল” “কলম” ও ” আঁমার নুর” তিনটি বস্তু মুলত নবীকুল সম্রাট এঁর নুর মোবারককেই বুঝানো হয়েছে। সর্বাগ্রে, নিরেট ও নির্ভেজাল অস্তিত্বময় একমাত্র তারই সত্ত্বা।
[শরহে মাওয়াহিব: ৭ম খন্ড-২৫৪ পৃ:]

✌ইমাম শারানী (রহ:) বলেন,”নুর কিংবা আকল পরস্পর বৈপরিত্য নেই।এগুলো হাকিকতে মুহাম্মদী (ﷺ)-এঁর বহুমুখী পরিচিতি।”
[ইমাম শারানী: ইয়াকুত ওয়াল জাওয়াহির ২য় খন্ড ২০ পৃ:]

যেমন হযরত উবাদা ইবনে ছামিত (রা:) থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে, “নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম ‘কলম’ সৃষ্টি করেছেন।অতঃপর কলমকে বললেন,লিখ।কলম বললঃ হে প্রভূ! কি লিখবো? আল্লাহ বললেনঃ লিখ ইতিপূর্বে যা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত যা কিছু হবে।“
    দলিল
*(ক.) মুসনাদে আবু দাউদ তায়লাসী: হা/নং ৫৭৮
*(খ.) মুসনাদে ইবনে জা’দ: হা/নং ৩৪৪৪
*(গ.) মুসনাদে আহমদঃ হাদিস নং ২২৭০৭
*(ঘ.) তিরমিযী শরীফ: হাদিস নং ২১৫৫।সনদ সহীহ।

✊এই হাদিসের প্রথম অংশটি দ্বারা বুঝা যায় যে,প্রথম সৃষ্টি হচ্ছে ‘কলম’।কিন্তু শেষ অংশটি দ্বারা বুঝা যায় “কলম” প্রথম সৃষ্টি নয়।কারণ হাদিসটির শেষে” আল্লাহ তাআলা বললেন: লিখ ইতিপূর্বে যা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত যা কিছু হবে।” 

✳️এই এবারত দ্বারা বুঝা যায়,কলম সৃষ্টির পূর্বেও অনেক কিছু ছিল।কারণ এখানে ( ‘মা কানা’ ) দ্বারা অতীতকালের ঘটনা বুঝায়।এখানে ‘কলম’ প্রথম সৃষ্টি যা কলমের সম্মানার্থে বলা হয়েছে, মূলত প্রথম সৃষ্টি ‘কলম’ নয়।আর আমাদের দেশের কিছু মানুষ আছে,যারা হাদিসের প্রথম অংশ দিয়ে মানুষকে বোঝায়,দেখ প্রথম সৃষ্টি কলম।অথচ হাদিসের পরের অংশ পড়লেই বুঝা যায় প্রথম সৃষ্টি কলম নয়।আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করে বলেন,লেখ।তখন কলম বলল হে আল্লাহ! কি লিখব? আল্লাহ পাক বলেন, তকদীর।তখন তা (ঐ কলম) যা কিছু হয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে সেসব লিপিবদ্ধ করে ফেলল।

⏩লক্ষ্য করুন: যা হয়েছে (মানে যা হইয়াছে = perfect tense, হল বা হয়েছিল = Past Tense)। তা লিখে ফেলল মানে কি? কি সৃষ্টি হয়েছে কলম সৃষ্টির আগে? এর জবাব একটাই নুরে মোহাম্মাদী (ﷺ)-এঁর সৃষ্টি হয়েছে।

✌️এখন মনের মধ্যে একটি প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসতে থাকবে। আসলে সর্বপ্রথম আরশ সৃষ্টি নাকি সর্ব প্রথম কলম সৃষ্টি নাকি সর্বপ্রথম নুরে মোহাম্মাদী (ﷺ)-এঁর সৃষ্টি।যেহেতু তিনটিই হাদিসে এসেছে। এখন এর ব্যাখ্যা কি হতে পারে??

      ✳️✳️✳️জবাব✳️✳️✳️
যেহেতু হাদিসেই আছে,হে রাসুল (ﷺ)- আঁপনাকে সৃষ্টি না করলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না।সুতরাং সেই রাসুল (ﷺ)-কে সৃষ্টি না করে কলমই বা কেন সৃষ্টি করবেন আরশই বা কেন সৃষ্টি করবেন??

⏺️হাদিস খানা দেখুন তাহলেই বুঝতে পারবেন: হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্নিত।

عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما أذنب آدم صلى الله عليه وسلم الذنب الذي أذنه رفع رأسه إلى العرش فقال أسألك حق محمد ألا غفرت لي فأوحى الله إليه وما محمد ومن محمد فقال تبارك اسمك لما لما خلقتني رفعت رأسي إلى عرشك فإذا هو مكتوب لا إله إلا الله محمد رسول الله فعلمت أنه ليس أحد أعظم عندك قدرا ممن جعلت اسمه مع اسمك فأوحى الله عز وجل إليه يا آدم إنه آخر النبيين من ذريتك وإن أمته آخر الأمم من ذريتك ولولاه يا آدم ما خلقتك
রাসূল (ﷺ)-ইরশাদ করেছেন,হযরত আদম (আঃ) থেকে যখন অপ্রত্যাশিত ভাবে ভুল সংঘটিত হয়, [যার দরূন তাঁকে জান্নাত থেকে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়, তখন তিঁনি সর্বদা কাঁদতে ছিলেন। আর দুই ও ইস্তেগফার পড়তে ছিলেন।]তখন তিঁনি আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন, হে আল্লাহ! মুহাম্মদ(ﷺ)-এঁর ওসীলায় আঁমি তোঁমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।তখন ওহী নাজীল হয়-মুহাম্মদ (ﷺ)-কে (তুমি কিভাবে জানলে তুমি তো তাঁকে কখনো দেখ নি)? তখন তিঁনি বলেন-যখন আঁপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন,আমার অভ্যন্তরে রুহ প্রবেশের পর মাথা তুলে  আমি আরশে লেখা দেখলাম- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।তখনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে,মুহাম্মদ (ﷺ)-এঁর চেয়ে সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিত্ব আর কেউ নেই যার নাম আঁপনি স্বীয় নামের সাথে রেখেছেন।তখন ওহী নাজীল হল-তিঁনি সর্বশেষ নবী।তোমার সন্তানদের অন্তর্ভূক্ত হবে।যদি তিনি না হতেন, তাহলে তোমাকেও সৃষ্টি করা হতো না।”
          *****দলিল*****
*১. দালায়েলুন নাবায়িয়্যাহ,৫/৪৮৯ পৃ:
*২. মুসতাদরাকে হাকেম: ২/৪৮৬ পৃ: হা: ৪২২৮
*৩. ইমাম হাকেম নিশাপুরী (রহঃ) আল মাদখাল: ১/১৫৪ 
*৪. তাবরানী-আল মুজামুল আওসাত: ৬/৩১৩,হাদিস নং-৬৫০২
*৫. তাবরানী-আল মুজামুস সগীর: ২/১৮২ : হাদীস নং-৯৯২,
*৬. তাবরানী-মুজমায়ে কবীর’
*৭. ইমাম দায়লামী-আল মুসনাদিল ফিরদাউস : ৫/২২৭
*৮. কাশফুল খাফা : ১/৪৬ ও ২/২১৪
*৯. আবূ নুয়াইম : ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া,
*১০. আল্লামা সুবকী (রহঃ) শিফাউস সিকাম
*১১. ইবনে আসাকির : নিজ ‘তারিখে দিমাশক’: ৭/৪৩৭ পৃ:
*১২. ইবনুল জাওজী : আল ওয়াফা বি আহওয়ালিল মোস্তফা : ৩৩
*১৩. ইবনুল জাওজী : বয়ানুল মিলাদুন্নবী (দরুদ ) : ১৫৮
*১৪.আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া : ১/১৮ পৃ:
*১৫. ইবনে হাজর হায়সামী : মাযমাউজ যাওয়ায়েদ : ৮/২৫৩
*১৬. শিহাবউদ্দীন খাফাজী : ‘নাসীম আর-রিয়াদ’ 
*১৭.খাসায়েসুল কুবরা :১/১২;হা:১২
*১৮.আদ দুররে মানসুর : ১/১৪২
*১৯. মাওয়াহেবুল লাদুনিয়্যাহ : ১/ ৮২ ও ২/৫২৫
*২০. শরহে মাওয়াহিব : ১/১৭২
*২১.সীরাতে হালাবিয়্যাহ : ১/৩৫৫ 
*২২. মুহাদ্দিসে শাহ আব্দুল আজিজ দেহলভী : তফসীরে আজিযী,১/১৮৩
*২৩. ইমাম নাবহানী :শাওয়াহিদুল হক : ১৩৭
*২৪. আনোয়ার-ই-মোহাম্মাদীয়া, ৯-১০
*২৫. জাওয়াহিরুল বিহার : ২/১১৪
*২৬. ইমাম নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন :৩১ পৃ: ও ৭৯৫ পৃ:
(মাকতুবাত এ তাওফিক হিয়্যাহ, কাহেরা,মিশর)
*২৭. আল্লামা শফী উকারবী : যিকরে হাসীন : ৩৭
*২৮. আশরাফ আলী থানবী : নুশরত্বীব :২৮
২৯. ফাযায়েলে আমাল, ৪৯৭,উর্দু এডিশন

♻️♻️হাদিসের মান পর্যালোচনা♻️♻️

*১. ইমাম হাকিম বলেছেন হাদিসটি সহীহ। আল মুস্তাদরাক-২/৬১৫
*২. ইমাম তকি উদ্দীন সুবকী বলেন, হাদিসটি হাসান।শিফাউস সিকাম,পৃ:১২০
*৩. ইমাম তকী উদ্দীন দামেশকী বলেন, হাদিসটি বিশুদ্ধ। দাফউ শুবহাহঃ ১/৭২

*৪. ইমাম কাস্তলানী বলেন, হাদিসটি বিশুদ্ধ।মাওয়াহিবুল লাদুনিয়াহঃ ১/১৬৫
*৫. ইমাম সামহুদী বলেন, হাদিসটি সহীহ। ওয়াফাউল ওয়াফাঃ২/৪১৯
*৬. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী বলেন, বিভিন্ন সনদে বর্ণিত এ হাদিসটি বিশুদ্ধ।আল খাসায়েসুল কুবরাঃ১/৮

*৭. সালাফীদের গুরু ইবনু তাইমিয়্যাহ এ হাদিসটি দলিল হিসাবে তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
“যদি মুহাম্মাদ না হতেন,তবে আঁমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না’-এ হাদিসটি উল্লেখ করে বলেছেন,এ হাদিসটি পূর্বের কথাকে শক্তিশালী করেছে।
[মাজমাউল ফাতাওয়াঃ২/১৫৯]
✴️✴️✴️✴️✴️✴️✴️✴️✴️✴️✴️✴️
*৮.বাতিলদের জবাবে ইমাম  ইবনু কাসীর পরিস্কার বলেছেন, এই হাদিসটি বানোয়াট নয়।এটা দ্বারা নির্দ্বিধায় দলীল প্রদান করা যাবে।
তিনি আরও বলেছেন, হাদিসের বর্ণনাকারী আব্দুর রাহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম মিথ্যাবাদী নন। এবং এ হাদীসটি ও জাল নয়। বরং হাদীসটি হাসান লিগাইরিহী। এমন হাদিস দ্বারা দলিল প্রদান করা যাবে নিঃসন্দেহে।
[আস সীরাতুন নাবাওইয়্যাহ- ১/১৯৫]

*৯. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস মুল্লা আলী কারী বলেন,এ কথাটি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ।
[আল আসরারুল মারফুআহ,১/২৯৫, মাওয়ারিদুর রাবী ফি মওলদুন্নবী; ১/১৮]

*১০. দেওবন্দের অন্যতম আলেম আশ্রাফ আলী থানভীও উক্ত হাদিস পাকের ক্ষেত্রে ইমাম হাকেমের অনুরুপ সহিহ্ হওয়ার রায়কে গ্রহণ করেছেন।
[নশরুত্তীব; পৃষ্ঠা ২৭।]

*১১. ইমাম ইবনূ হাযার হাইসামী (রহ:) স্বীয় প্রসিদ্ধ কিতাব ‘শারহে শামায়েল’ এ ইমাম হাকিমের রায় “হাদিসটি সহিহ্” হওয়াকে গ্রহণ কররেছেন।
[ইমাম ইবনূ হাযার হাইসামী (রহ:) ‘শারহে শামায়েল’; ১/১১৫]

*১২. শায়খ ইউসূফ নাবাহানী (রহ:) উক্ত হাদিস পাকের ক্ষেত্রে ইমাম হাকেমের অনুরুপ সহিহ্ হওয়ার রায়কে গ্রহণ করেছেন।
[ইমাম ইউসূফ নাবাহানী : যাওয়াহিরুল বিহার; ২/১১৪।]

তিনি তার অন্যান্য গ্রন্থেও অনুরুপ রায় গ্রহণ করেছেন:
১.হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন, পৃষ্ঠা ৭৯৫।
২.আনওয়ারে মোহাম্মাদিয়া,পৃ: ৯-১০
৩.শাওয়াহিদুল হক্ব,পৃষ্ঠা ১৩৭।
৪.আফদ্বালুস সালাত,পৃষ্ঠা ১১৭।

*১৩. রিযাল শাস্ত্রবিদদের অন্যতম আল্লামা আযলূনী (রহ:) স্বীয় ‘কাশফুল খাফা’ এর দুই স্থানে উক্ত হাদিস পাকের ক্ষেত্রে ইমাম হাকেমের অনুরুপ সহিহ্ হওয়ার রায়কে গ্রহণ করেছেন।
[কাশফুল খাফা; ১/৪৬, ২/২১৪]

*১৪. আল্লামা ইসমাইল হাক্বী (রহ:) উক্ত হাদিস পাকের ক্ষেত্রে ইমাম হাকেমের অনুরুপ সহিহ্ হওয়ার রায়কে গ্রহণ করেছেন।
[তাফসিরে রুহুল বয়ান,পৃষ্ঠা ২/৩৭০]

এবার দেখুন।হযরত জাবির (রা:) এর নুর সম্পর্কিত হাদিসে এর ব্যখ্যা রয়েছে ২টা হাদিস একত্র করলে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে,আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম তাঁর স্বীয় নুর থেকে রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এঁর নুর মোবারক সৃষ্টি করেছেন অত:পর সেই নুরের প্রথম ভাগ দিয়ে কলম সৃষ্টি করেছেন অথবা আরশ সৃষ্টি করেছেন।সর্বপ্রথম সৃষ্টি কলম নয় রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-আর ওঁনার নুর থেকে বাকি সব সৃষ্টি করা হয়।

  হাদিস খানা দেখুন

حضرت جابر بن عبد اﷲ رضی اﷲ عنہما سے مروی ہے فرمایا کہ میں نے بارگاہِ رسالت مآب صلی اللہ علیہ وآلہ وسلم میں عرض کیا : یا رسول اﷲ! میرے ماں باپ آپ پر قربان! مجھے بتائیں کہ اﷲ تعالیٰ نے سب سے پہلے کس چیز کو پیدا کیا؟ حضور نبی اکرم صلی اللہ علیہ وآلہ وسلم نے فرمایا : اے جابر! بے شک اﷲ تعالیٰ نے تمام مخلوق (کو پیدا کرنے) سے پہلے تیرے نبی کا نور اپنے نور (کے فیض ) سے پیدا فرمایا، یہ نور اللہ تعالیٰ کی مشیت سے جہاں اس نے چاہا سیر کرتا رہا۔ اس وقت نہ لوح تھی نہ قلم، نہ جنت تھی نہ دوزخ، نہ (کوئی) فرشتہ تھا نہ آسمان تھا نہ زمین، نہ سورج تھا نہ چاند، نہ جن تھے اور نہ انسان، جب اﷲ تعالیٰ نے ارادہ فرمایا کہ مخلوق کو پیدا کرے تو اس نے اس نور کو چار حصوں میں تقسیم کر دیا۔ پہلے حصہ سے قلم بنایا، دوسرے حصہ سے لوح اور تیسرے حصہ سے عرش بنایا۔ پھر چوتھے حصہ کو (مزید) چار حصوں میں تقسیم کیا تو پہلے حصہ سے عرش اٹھانے والے فرشتے بنائے اور دوسرے حصہ سے کرسی اور تیسرے حصہ سے باقی فرشتے پیدا کئے۔ پھر چوتھے حصہ کو مزید چار حصوں میں تقسیم کیا تو پہلے حصہ سے آسمان بنائے، دوسرے حصہ سے زمین اور تیسرے حصہ سے جنت اور دوزخ بنائی۔ ۔ ۔ یہ طویل حدیث ہے۔

অর্থ: হযরত জাবির (রা:) আরজ করলেন,ইয়া রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-আমার পিতা-মাতা আপনার কদম মোবারক এ কোরবানি হোক,আঁপনি বলে দিন যে আল্লাহ্‌ পাক সর্ব প্রথম কি সৃষ্টি করেছেন?
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-বললেন”হে জাবের, নিশ্চই আল্লাহ্‌ তা’য়ালা সর্ব প্রথম স্বীয় (নিঁজ) নূর হতে তোমার নবীর নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন !!”
তারপর সেই নূর আল্লাহর কুদরতে ও ইচ্ছায় ভ্রমণ রত ছিল।কেননা ঐ সময় লাওহ-কলম,জান্নাত,জাহান্নাম ফেরেশতা,আসমান-জমিন কিছুই ছিল না।তারপর আল্লাহ্‌ মাখলক সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলেন..
তখন এই নূর কে ৪ ভাগ করলেন..
প্রথম ভাগ দিয়ে কলম;দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে লৌহে-মাহফুজ;তৃতীয় ভাগ দিয়ে আরশ এবং চতুর্থ ভাগ দিয়ে
বাকি সবকিছু সৃষ্টি করলেন….।
[হযরত জাবির (রা:)-বর্নিত হাদিস খানার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছি সনদ ও গ্রহনযোগ্যতা সহ।প্রয়োজনে (১৬-২১ম) পর্ব দেখে নিতে পারেন।তাই এখানে আর বিস্তারিত আলোচনা করিনি।]

✊নিন্মের অকাট্য দলিল থেকে বিষয়টা আরও সুস্পষ্টভাবে প্রমানীত হয়- অনাদি-অনন্ত মহান সত্ত্বা আল্লাহ তায়ালা একাই ছিলেন,ছিলেন গুপ্ত। ইচ্ছা করলেন নিজেকে প্রকাশ করার, সে অনুযায়ী সৃষ্টি করলেন গোটা সৃষ্টি জগত।সৃষ্টির কেন্দ্র বানিয়েছেন যাকে,যাকে করেছেন সকল সৃষ্টি অস্তিত্বে আসার মাধ্যম যিনি তিঁনি হলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।যেমন: আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالأِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ

‘আঁমি জ্বীন এবং মানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আঁমার ইবাদাতের জন্য।’
[সূরা যারিয়াত,আয়াত নং ৫৬]

★এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা মাহমুদ আলুসী বাগদাদী একটি হাদিসে কুদসীর উদৃতি দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:
كنت كنزا مخفيا فأحببت أن أعرف فخلقت الخلق لاعرف
‘আঁমি ছিলাম সুপ্ত গুপ্ত ভান্ডার,পছন্দ করলাম পরিচিত হতে।অতএব পরিচয়ের জন্য সৃষ্টি করলাম এক সৃষ্টিকে।’
[আল্লামা আলুসী, রুহুল মা‘আনী: ২৭ পারা, ২২ পৃষ্ঠা; শায়খ ইবনু আরাবী, ফুতুহাতে মাক্কিয়া: ১৪২; আল্লামা আবু সাউদ উমাদি, আবু সাউদ: ২/১৩০]

✌হাদিস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে

كنت كنزا مخفيا فاحببت ان اعرف فخلقت الخلقت لاعرف
অর্থ: আল্লাহ পাক বলেন,আঁমি গুপ্ত ছিলাম। আঁমার মুহব্বত হলো যে,আঁমি জাহির/প্রকাশিত হই।তখন আঁমি আঁমার ( রুবুবিয়্যত) জাহির করার জন্য সৃষ্টি করলাম মাখলুকাত”
         *****দলিল*****
*১. আল মাকাসিদুল হাসানা-৮৩৮
*২. কাশফুল খিফা-২০১৩
*৩. আসনাল মুত্বলিব-১১১০
*৪. তমীযুত ত্বীব-১০৪৫
*৫. আসরারুল মরফুয়া-৩৩৫
*৬. তানযিয়াতুশ শরীয়া,১/১৪৮
*৭. আদ্দুরুল মুন্তাসিরা-৩৩০
*৮. আত তাযকিরা ফি আহাদীসিল মুশতাহিরা-১৩৬
*৯. কানযুল উম্মাল।

✌আল্লাহ পাক হাদীসে কুদসিতে ইরশাদ করেন-
لولاك لما اظهرت الربوبية

অর্থ : হে আঁমার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আঁপনাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্যে না থাকলে আঁমি রুবুবিয়্যাতই প্রকাশ করতাম না।”[কানযুল উম্মাল]

✌বিখ্যাত তাফসির কারক,ইমামুল মুফাসসিরীন,আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:

ان الله تعالي خلق جميع الاشياء من نور محمد صلي الله عليه و سلم ولم ينقص من نوره سيء
অর্থ: এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক সকল মাখলুকাত “নূরে মুহম্মদী” সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সৃষ্টি করেছেন। অথচ “নূরে মুহম্মদী” সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে কিঞ্চিত পরিমানও কমে নাই।” 
[তাফসীরে রুহুল বয়ান ৭ম খন্ড ১৯৭-১৯৮ পৃষ্ঠা]

★১৯২. “বিভ্রান্তির অবসান” গ্রন্থের ৯৯ পৃষ্ঠায় দেওবন্দী মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরীসহ আরও কয়েকজনে মিলে লিখেছেন এবং আরো কতিপয় দেওবন্দী মৌলভীগণ তাদের বইয়ে লিখেছেন যে, ‘সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করা হয়েছে’ আর এই হাদিসটি সহীহ এবং তারা তিরমিযী শরীফের হাদিস দলীল হিসেবে পেশ করেছেন অথচ সনদ বর্ণনা বা আলোচনা করেননি।

★পাকিস্তানের দেওবন্দী আলেম মাওলানা সরফরায খাঁন “নূর আওর বাশার” গ্রন্থের মধ্যেও মিথ্যা,ধোঁকাবাজির আশ্রয় নিয়েছে যার আলোচনা সামনে আসছে।তিরমিযী শরীফের হাদিসখানা হলো,হযরত ওবায়দা ইবনে সামিত (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,
إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَم

‘‘আল্লাহ্ সর্বপ্রথম (ভাগ্য নির্ধারণী) কলম সৃষ্টি করেছেন।’’ ইমাম তিরমিযী হাদিস খানা বর্ণনা করে সাথে সাথে বলেন যে,  উক্ত হাদিসটি গরীব।যেমন-
قال عيسى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ –

‘‘ইমাম তিরমিযী হাদিস খানা বর্ণনা করে বলেন,উক্ত হাদিসটি গরীব।’’
★তিরমিযী: আল জামে: ৪/৪৫৭: হা/২১৫৫
★কিতাবুল কদর,তিরমিযী: আল জামে: ৫/৪২৪:হা/৩৩১৯
★খতিব তিবরিযী: মেশকাতুল মাসাবীহ: ১/৩৪: বাবুল ইমান বিল ক্বদর,হা/৯৪

*১. মিশকাত প্রণেতা তিরমিযীর সূত্রে বর্ণনা করে বলেন, 

رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ إِسْنَادًا

‘‘ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) বলেন, উক্ত হাদিসের সনদ গরীব।’’ এমনকি আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানীও মিশকাতের ত্বাহকীকে সনদটিকে দ্বঈফ বলেছেন।
[আলবানী: দ্বঈফু মিশকাতুল মাসাবীহ: ১/৩৪: বাবুল ঈমান বিল ক্বদর,হা/৯৪, মাকতুবাতুল ইসলামী,বয়রুত,লেবানন।]

কিতাবের শুরুতেই বর্ণনা করা হয়েছে যে, গরীব হাদিস দলীলের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।কিন্তু ফাযায়েল আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।কিন্তু উক্ত হাদিসটি আমলযোগ্য বিষয়ের নয়; বরং সম্পূর্ণ আক্বিদাগত বিষয়।তাই উক্ত হাদিস গ্রহণযোগ্য নয় বা গ্রহণ করা যাচ্ছে না।

*২. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) উক্ত হাদিস সম্পর্কে বলেন-
ضعفه جماعة

‘‘এক জামাত ইমামগণ বলেছেন যে,উক্ত হাদিসটি দূর্বল।’’
[ইবনে হাজার মক্কী: ফতোয়ায়ে হাদীসিয়্যাহ: ২১৩ পৃ. মীর মুহাম্মদ কারখানা,করাচি,পাকিস্তান।]

*৩. আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) বলেন-

ضعفه جماعة

‘‘এক জামাত ইমামগণ উক্ত হাদিসকে দূর্বল বলে উল্লেখ করেছেন।’’
[আল্লামা আজলূনী: কাশফুল খাফা: ১/২৩৭ পৃ. হাদিস]

*৪. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) উক্ত হাদিস সম্পর্কে আরও বলেন,

إن أول شئ خلق الله القلم وهو غير صحيح-

‘‘নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম বস্তু সৃষ্টি কলম,উক্ত হাদিসটি সহীহ নয়।’’
[আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত: ১/২৬৯: হা/৮৮]

✊পাঠকদের কাছে অনুরোধ! মিশকাত শরীফ এর প্রথম খণ্ডের ’’কিতাবুল ঈমান বিল ক্বদর’ অধ্যায়ে সনদের ব্যাপারে কী লেখা আছে, দয়া করে খুলে দেখুন।এবার আমরা দেখবো মুহাদ্দিসগণ এ কলমের হাদিসের কি ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।

উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন,

فَالْأَوَّلِيَّةُ إِضَافِيَّةٌ، وَالْأَوَّلُ الْحَقِيقِيُّ هُوَ النُّورُ الْمُحَمَّدِيُّ عَلَى مَا بَيَّنْتُهُ فِي الْمَوْرِدِ لِلْمَوْلِدِ.

‘‘প্রথমে বলতে আনুপাতিক প্রথম, বাস্তবিক পক্ষে প্রথম সৃষ্টি হচ্ছে নূরে মুহাম্মদী (ﷺ)।যেমন আমি এ ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা করেছি আমার “আল মাওয়ারিদুলিল মওলুদ” গ্রন্থে।’’
[আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী: মিরকাত: ১/২৬৯: হা/৯৪]

✊উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন,

وحديث أول ما خلق الله القلم نيز گفتہ اندكہ مراد بعد العرش والماء است كہ واقع شده است وكان عرش على الماء- (مدارج النبوة: ٢/٣)

‘‘এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে- أول ما خلق الله القلم হাদিসে বলা হয়েছে যে আল্লাহ্ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম ভাগ্য নির্ধারণী কলম সৃষ্টি করেছেন,যা সৃষ্টি হয়েছে পানি ও আরশের পর প্রথম উক্ত হাদিসে তাই বুঝানো হয়েছে।’’

আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী (رحمة الله) উক্ত কলম সৃষ্টির হাদিস সম্পর্কে বলেন,

وقد اختلف هل القلم أول المخلوقات بعد نور المحمدى؟ فقال الحافظ ابو يعلى الهمدانى: الاصح أن العرش قبل القلم-

‘‘ইমাম হাফেয আবু ই’য়ালা হামদানী (رحمة الله) কে প্রশ্ন করা হয়,সর্ব প্রথম সৃষ্টি বিষয়ে ইখতিলাফ যে, নূরে মুহাম্মদী (ﷺ)-এঁর পরে সর্বপ্রথম কী কলম সৃষ্টি করা হয়েছে? এর উত্তরে ইমাম আবু ই‘য়ালা হামদানী (رحمة الله) বলেন,  বিশুদ্ধ বর্ণনা হলো,কলমের পূর্বে আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে।’’
[আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী: মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া: ১/৭২ পৃ. মাকতুবায়ে ইসলামিয়্যাহ,লেবানন,বয়রুত।]

✌️সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আপনারাই লক্ষ্য করুন,নূরে মুহাম্মদীর পরও সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি নয়,আর সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টিতো প্রশ্নই আসে না!

⏺️ইমাম কাস্তাল্লানী (رحمة الله) আরও বলেন,
إن أوليت القلم بالنسبة إلى ما عدا النور النبوى المحمدى صلى الله عليه وسلم-

‘‘কলম সর্ব প্রথম সৃষ্টি বলতে নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) এঁর পর অন্য সকল বস্তুর প্রথমের দিকে নেসবত বা ইঙ্গিত করা হয়েছে।’’
[ইমাম কাস্তাল্লানী: মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া: ১৮৭৪ পৃ., ইমাম জুুরকানী: শরহুল মাওয়াহেব: ১/৯৩ পৃ.]

♠ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেন-

وَقَدْ رَوَى أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَصَحَّحَهُ مِنْ حَدِيثِ أَبِي رَزِينٍ الْعُقَيْلِيِّ مَرْفُوعًا أَنَّ الْمَاءَ خُلِقَ قَبْلَ الْعَرْشِ
‘‘ইমাম আহমদ ও ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) সহীহ সনদে সাহাবী হযরত আবূ রাজীন উকাইলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন,তিনি রাসূল (ﷺ) হতে হতে বর্ণনা করেন,নিশ্চয়ই পানি আরশ সৃষ্টি করার পূর্বে সৃষ্টি করা হয়েছে।’’

★ইবনে হাজার, ফতহুল বারী, ৬/২৮৯ পৃ.
★কাস্তাল্লানী, ইরসাদুশ সারী, ৫/৫০ পৃ. এবং আল-মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ১/৫০ পৃ.
★মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী, ৮/৪২১ পৃ.

⏩কলমের  হাদিসের বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ লিখেন-

قَالَ ابْنُ حَجَرٍ: اخْتَلَفَتِ الرِّوَايَاتُ فِي أَوَّلِ الْمَخْلُوقَاتِ، وَحَاصِلُهَا كَمَا بَيَّنْتُهَا فِي شَرْحِ شَمَائِلِ التِّرْمِذِيِّ أَنَّ أَوَّلَهَا النُّورُ الَّذِي خُلِقَ مِنْهُ – عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ- -، ثُمَّ الْمَاءُ، ثُمَّ الْعَرْشُ

‘‘ইমাম ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন, আদি সৃষ্টি কোন বস্তু তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা রয়েছে,যার সার-সংক্ষেপ আমি শামায়েলে তিরমিযীর ব্যাখ্যা গ্রন্থে আলোচনা করেছি।সর্বপ্রথম সেই নূরকে মহান রব সৃষ্টি করেছেন যে নূর থেকে রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে,তারপর পানি সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে।’’
[আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী: মিরকাতুল মাফাতীহ: ১/১৪৮ পৃ. হা/৭৯]

✊উপরের আলোচনা প্রমাণিত হল যে, মহান রব তা‘য়ালা সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ)-এঁর নূর,তারপর পানি,তারপর আরশ,তারপর কলম প্রথম সৃষ্টি করেছেন।
                  
★১৯৩. সর্বপ্রথম কি আকল (বিবেক) সৃষ্টি করা হয়েছে!

★আমাদের কতিপয় লোক এ বিষয়টির হাদিসকে না জেনে সহীহ বলে থাকেন, অথচ এ বিষয়ের হাদিসের কোনো সনদই নেই।এ প্রসঙ্গে আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) বলেন-
قَالَ الصَّغَانِیۡ مَوۡضُوۡعُ بِاتَّفَاتٌ  وَتَقَدَّمُ بِابَسَطَ فِیۡ اِنَّ اللہ کَمَا خَلَقَ الۡعَقۡلُ

‘‘ইমাম সাগানী (رحمة الله) বলেন,উক্ত হাদিসটি যে জাল বা বানোয়াট এ ব্যাপারে সকল মুহাদ্দিস ঐক্যমত্য হয়েছেন।
[আল্লামা আজলূনী: কাশফুল খাফা: ১/২৩৬: হা/৮২২]

✊ইমাম সাখাভী ও ইমাম আজলূনী আরও বলেন
قَالَ : اِبۡنِ تَیۡمِیَّةُ وَتَعۡبَعَهُ غَیۡرِہُ : اِنَّه  کَذابَ مَوۡضُوۡعُ بِاتَّفَاقٌ

ইবনে তাইমিয়া কঠিনভাবে উক্ত হাদিসের প্রতিবাদ করে বলেন,নিশ্চয় এটা মিথ্যা,  বানোয়াট এই বিষয়ে সবাই ঐক্যমত্য হয়েছেন।
[ইমাম সাখাভী: মাকাসিদুল হাসানা: ১৪২ পৃ: হা/২৩৩,আল্লামা আজলূনী: কাশফুল খাফা: ১/২১১ হা/৭২২]

✌️যেহেতু আহলে হাদিসের গুরুও জাল বলেছে তাতে আর সন্দেহ রইলো না হাদিসটি জাল।

⏩আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) আরও বলেন
وَقَالَ الۡحَافِظُ اِبۡنَ حَجَرُ : وَالۡوَارَدَ فِیۡ اَوَّلُ مَا خَلَقَ اللہُ الۡقَلَمُ ، وَهُوَ اثۡبَتُ مِنَ حَدِیۡثُ الۡعَقۡلُ

“আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন: (দুটি হাদিস কলম আর আকলের) এ দুটি সৃষ্টির মধ্যে সর্ব প্রথম কলমই সৃষ্টি তা ছাবেত বা দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত অর্থাৎ আকল নয়।
[আল্লামা আজলূনী: কাশফুল খাফা: ১/২১১: হা/৭২২,আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী: আসারুল মারফুআ: ১২৪ এবং ২৮৬ পৃ., আল্লামা তাহের পাটনী: তাযকিরাতুল মওদ্বুআত: ২৮ পৃ.]

✊আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) সর্বশেষ বলেন- وَلَا اَعْلَمُ لَه اَصْلًا -“এটার কোন ভিত্তি আছে বলে আমার জানা নাই।
[আল্লামা আজলূনী: কাশফুল খাফা: ১/২১১: হা/৭২২]

✌সুতরাং রাসূল (ﷺ)-হলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি,যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না।এ ব্যাপারে কোনরুপ সন্দেহের অবকাশ নেই।

Leave a comment