রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(২৮ম পর্ব)

অনেকে বলেন কোরআনে নূর বলা হয়েছে কিন্তু নূরের তৈরী বলা হয়নি, আবার কেউ বলেন শুধু রুহ মোবারক নূর কিন্তু দেহমোবারক নয়,আবার কেউ বলেন সাদা মাটির তৈরী (নাউযুবিল্লাহ!) আজকে ইন-শা-আল্লাহ সে বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো-[২০ম অংশ]

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

রাসূল (ﷺ) হলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি,যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না।[4th Part]

★১৮৮.  (لَوْلاكَ لَمَا خَلَقْتُ الأَفْلاكِ) ‘রাসূল (ﷺ) সৃষ্টি না হলে কিছুই সৃষ্টি হত না’ হাদিসের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ:

    ♻️♻️♻️অষ্টম হাদিস♻️♻️♻️

★ইমাম বুরহানুদ্দীন হালাবী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

وذكر صاحب كتاب شفاء الصدور في مختصره عن علي بن أبي طالب ؓ عن النبي ﷺ عن الله عز وجل أنه قال: يا محمد وعزتي وجلالي لولاك ما خلقت أرضي ولا سمائي، ولا رفعت هذه الخضراء، ولا بسطت هذه الغبراء . وفي رواية عنه ولا خلقت سماء ولا أرضا ولا طولا ولا عرضا

‘শিফাউস সুদূর কিতাবের লিখক তার ‘মুখতাসার’ কিতাবে হযরত আলী ইবনে আবী তালেব (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন।তিনি নবি করীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন,মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আঁমার ইজ্জত ও জালালিয়াতের শপথ,যদি আঁমি আঁপনাকে সৃজন না করতাম,না সৃজন করতাম এ যমিন,না আসমান।আঁপনাকে সৃষ্টি না করলে আঁমি উঁচু করতাম না উর্ধ্বের ঐ নীল বর্ণের ছাদ এবং নিম্নের এ ধূসর বর্ণের পৃথিবী।উক্ত সাহাবী থেকে অপর এক বর্ণনায় এসেছে,আঁপনাকে সৃজন না করলে করতাম না এ আকাশ, না যমীন,না উঁচু এবং নিচু।’’
✳️✳️✳️✳️✳️দলিল✳️✳️✳️✳️✳️
*(ক.) ইমাম বুরহানুদ্দীন হালাবী,সিরাতে হালবিয়াঃ ১/৩১৭ পৃ.
*(খ.) আল্লামা ইবনে হাজর হায়সামী: আল-ওসায়েল, ১/১১৫ পৃ.
*(গ.) আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার: ২/১১৫ পৃ:
*(ঘ.) ইমাম ইবনে সালেহ শামী,সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৭৫ পৃ.

    ♻️♻️♻️নবম হাদিস♻️♻️♻️

★আল্লামা আব্দুর রহমান ছাফুরী (رحمة الله) সংকলন করেন-

وعن علي ؓ قلت يا رسول الله مم خلقت قال لما أوحى إلى ربي ما أوحى قلت يا رب خلقتني قال وعزتي وجلالي لولاك ما خلقت أرضا ولا سماء

‘‘হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি নবীকে সম্বোধন করে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! আঁপনাকে কি জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে? প্রিয় নবী (ﷺ) তাঁর জবাবে ইরশাদ করলেন, আল্লাহ্ পাক আঁমার কাছে যখন ওহী প্রেরণ করছিলেন তখন আঁমি আরজ করেছিলাম, ইয়া রাব্বুল আলামীন! আঁপনি আঁমাকে কি জন্য সৃষ্টি করেছেন? তখন মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, আঁমার ইজ্জত ও জালালীয়াতের শপথ! আঁপনাকে যদি সৃষ্টি না করতাম,তাহলে আঁমি না সৃষ্টি করতাম জমিন,না আসমান।’’
  ✳️✳️✳️✳️✳️দলিল✳️✳️✳️✳️✳️
*(ক.) আল্লামা আব্দুর রহমান ছাফুরী শাফেয়ী : নুযহাতুল মাযালিস: ২য় খণ্ড ৭৪ পৃ.
*(খ.) আল্লামা ইমাম মারযুক: শরহে কাসীদায়ে বুরদা: পৃ নং : ৭১

    ♻️♻️♻️দশম হাদিস♻️♻️♻️

★আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) একটি হাদিস সংকলন করেন-

(أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ النَّارَ) رواه الديلمي عن ابن عمر.

‘‘(একদা আঁমার নিকট হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) এসে বললেন, মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেছেন, হে মুহাম্মদ! আঁপনাকে যদি আঁমি সৃষ্টি না করতাম বানাতাম না বেহেশত,আর  না দোযখ।) এ হাদিসটি ইমাম দায়লামী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন।’’
[আল্লামা আজলূনী,কাশফুল খাফা, ১/৫৪ পৃ. হা/৯১]

  ♻️♻️♻️একাদশতম হাদিস♻️♻️♻️

★হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন: “আল্লাহ পাক হযরত ঈসা (আ:)- কে বলেছেন,ওহে ঈসা! মহানবী (ﷺ)-এঁর প্রতি ঈমান আনো এবং তোমার উম্মতকেও তা করতে বলো।রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-না হলে আঁমি আদমকে সৃষ্টি করতাম না,বেহেশত বা দোযখও সৃষ্টি করতাম না।”
✳️✳️✳️✳️✳️দলিল✳️✳️✳️✳️✳️
*১. আল মোসতাদরেক’ হাকিম: ২/৬৭১; হাদিস-৪২২৭
*২. আল মুসনাদিল ফেরদাউস: ৫/২৪২
*৩. ইমাম ইবনে সাদ: তানাকাতুল কোবরা
*৪. ইমাম তাকিউদ্দীন সুবকী: ‘শিফাউস্ সিকাম ৪৫
*৫. শায়খুল ইসলাম আল-বুলকিনী: ফতোওয়ায়ে সিরাজিয়া ১/১৪০
*৬. ইবনে হাজর রচিত ‘আফদালুল কোরা
*৭.আবূ নুয়াইম: ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া,
*৮. শায়খ ইউসূফ নাবাহানী:
জাওয়াহিরুল বিহার: ২/১১৪ ও ৪/১৬০
*৯. ইবনে কাসীর: কাসাসুল আম্বিয়া- ১/২৯ পৃ:
*১০. ইবনে কাসীর: সিরাতে নববিয়্যাহ: ১/৩২০
*১১. ইবনে কাসীর: মুজিযাতুন্নবী(ﷺ)- ১/৪৪১
*১২. ইবনে হাজর আসকালানি: লিসানুল মিযান: ৪/৩৫৪,রাবী, ১০৪০।
*১৩. ইবনে হাজর আসকালানী রচিত ‘আফদাল আল-কুরআন’- ১/১৮৯।
*১৪. ইমাম কুস্তালানী: মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া- ১/১৮
*১৫. ইবনে হাজার হাইসামী: শরহে শামায়েল, ১/১৪২।
*১৬. ইমাম যাহাবী: মিজানুল ইতিদাল: ৫/২৯৯, রাবী নং ৬৩৩৬
*১৭. ইবনে হাজর হায়সামী: শরহে শামায়েল: ১/৪২
*১৮. ইমাম যুরকানী: শরহে মাওয়াহিব- ১/১২/২২০
*১৯. আবু সাদ ইব্রাহীম নিশাপুরী: শরহে মোস্তফা: ১/১৬৫
*২০. খাসায়েসুল কুবরা: ১/১৪;হাদিস ২১
*২১. ইমাম ইবনে হাইয়্যান: ‘তাবকাত আল-ইসফাহানী: ৩/২৮৭
*২২. কানযুল উম্মাল-হাদীস: ৩২০২২
*২৩.মোল্লা আলী কারী: মাওজুয়াতুল কবীর: ১০১
*২৪. মোল্লা আলী কারী: মাওজুয়াতুল কবীর: ১/২৯৫, হাদিস-৩৮৫
*২৫. ইবনে শামী সালেহ: সুবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ: ১২/৪০৩

হাদিসের মান পর্যালোচনা

*(ক.) ইমাম হাকিম তাঁর ‘মোসতাদরেক’ গ্রন্থে তাঁর তাহকিকে হাদিসটিকে সহিহ্ সাব্যস্থ করেছেন।
[আল মোসতাদরেক’ হাকিম: ২/৬৭১; হাদিস ৪২২৭]

*(খ.) ইমাম দায়লামী: হাদিসটির মান সনদের দিক থেকে হাসান।
[আল মুসনাদিল ফেরদাউস: ৫/২৪২]

*(গ.) অারও অসংখ্য ইমাম, ইমাম হাকিম (রহ.) এঁর রায়কে গ্রহণ করেছেন।অপরদিকে, কেবলমাত্র ইমাম যাহাবী (রহ:) উক্ত রায়ের বিপরীত বলেছেন।তিনি বিপরীত বলার কারন স্বরুপ বলেন: উক্ত হাদিসের একজন রাবী ‘আমর ইবনূ আউস আল আনসারী’ ‘অপরিচিত’।

★একজন রাবী অপরিচিত হওয়াতে একটি হাদিস জাল কোনভাবেই হতে পারে না।উক্ত রাবী ইমাম যাহাবী (রহ:)এর দৃষ্টিতে অপরিচিত।অথচ তাঁর চেয়ে উঁচু স্তরের ইমামগণ উক্ত হাদিসকে সহিহ্ ও উক্ত রাবী (আমর ইবনূ আউস) কে সিকাহ্ বলেছেন।

*(ঘ.) বিশ্ববিখ্যাত রিযাল গ্রন্থ ‘তাহযিবুল কামাল ফি আসমাউর রিযাল’ এ বলা হয়েছে, উক্ত রাবী সিকাহ্ বা বিশ্বস্থ।

*(ঙ.) ইমাম ইবনে হিব্বান,ইমাম বুখারি, ইমাম আবু নুআইম (রহ:)ও তাঁকে সিকাহ্ বলেছে।
[ইমাম মিযযী: তাহযিবুল কামাল ফি আসমাউর রিযাল; ১৪/১৭৭, রাবী নং : ৪৯১৩]

*(ঙ.) তদুপরি,আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) উক্ত রাবীকে সিকাহ্ বা বিশ্বস্থ বলেছেন।
[ইবনু হাজর আসকালানী: তাকরীবুত তাহযীব; ১/৪৩৬]

✊বুঝা গেল ইমাম যাহাবী (রহ:) এর নিকট উক্ত রাবী অপরিচিত হলেও আর কারো নিকট পরিচিত হবেন না এমন নয়।আর ইমাম যাহাবী (রহ:) উক্ত রাবীকে মিথ্যাবাদী বলেন নি; বলেছেন, অপরিচিত।

★সুতরাং হাদিসটি নি:সন্দেহে সহিহ্ এর মান রাখে।আর হাদিসটি যেহেতু আমল ও আহকাম সম্পর্কিত নয়,সেহেতু ‘হাসান’ বলে মানতে ও বিশ্বাস করতে সমস্যা নেই।

  ♻️♻️♻️দ্বাদশ তম হাদিস♻️♻️♻️

★তাবেয়ী হযরত কাবুল আহবার (রা:) থেকে বর্নিত,(বিশাল বর্ননার পর)…. যদি তিঁনি [রাসুল (ﷺ)] না হতেন তাহলে আঁমি না তোমাকে [আদম (আ:)] সৃষ্টি করতাম, না আসমান,জমীন সৃষ্টি করতাম।
✳️✳️✳️✳️✳️দলিল✳️✳️✳️✳️✳️
*(ক.) ইমাম কুস্তালানী: আল মাওয়াহেব: ১/৩৩
*(খ.) ইমাম নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার: ৩/৩৫২
*(গ.) ইমাম যুরকানী: শরহে মাওয়াহিব: ১/৭৮
*(ঘ.) আল্লামা শফী উকারবী: যিকরে হাসীন: ৩১
*(ঙ.) ইমাম তুগরিব: আল মাওলুদ শরীফ: ১৪২

⏩এবার আমি তাবলীগ জামাতের ‘ফাজায়েলে আমল’ গ্রন্থ থেকে একটি প্রমান দিব।সেখানে একটি শিরোনাম দেওয়া হয়েছে কোন ‘আমালে আদাম (আ:)-এঁর তাওবাহ কবূল হলোঃ

“হযরত ওমর (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, হুজুরে পাক (ﷺ) বলেন, যখন হযরত আদম (আঃ) হইতে কিছুটা পদস্খলন হইয়া গেল যাহার দরুণ তিনি বেহেশত হইতে দুনিয়াতে প্রেরিত হইলেন,তখন তিঁনি সব সময় কান্নাকাটি ও এস্তেগফার করিতে থাকেন।একদিন তিঁনি আসমানের দিকে মুখ উঠাইয়া আরজ করিলেন হে আল্লাহ! মোহাম্মাদ (ﷺ)-এঁর উছিলায় আঁমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি।ওহী নাজিল হইল, মোহাম্মদ (ﷺ) কে? যাহার উছিলায় তুমি ক্ষমা চাহিতেছ? হযরত আদম (আঃ) বলিলেন- যখন আঁপনি আমাকে সৃষ্টি করেন তখন আমি আরশের উপর লিখিত দেখিয়াছিলাম ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মোহাম্মাদুর রাছুলুল্লাহ’, তখনই আমি বুঝিতে পারিয়াছিলাম মোহাম্মদ(ﷺ) হইতে অধিক মর্যাদাশীল আর কেহই হইবে না,যেহেতু আঁপনি তাহার নাম নিঁজের নামের সঙ্গে রাখিয়াছেন।ওহী হইল হে আদম! তিঁনি আখেরী নবী এবং তিঁনি তোমার আওলাদভূক্ত হইবেন অথচ তিনি না হইলে তোমাকেও পায়দা করতাম না”-।
[মৌ:মোহম্মদ জাকারিয়া,ফাজায়েলে আমল; খণ্ড ‘ফাজায়েলে জিকির’, পৃষ্ঠা ৩১৫ (বাংলা), পরিবেশনায় তাবলিগী কুতুবখানা / ফাউণ্ডেশন।
তাবারানী; সাগীর,২/৮২,২০৭]

✊উপরের আলোচনা থেকে এ কথা সুস্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, শব্দগতভাবে হাদিসটি প্রমাণিত না হলেও মমার্থ বিশুদ্ধতার পক্ষে অনেক সূত্রে হাদিসে পাক বর্ণিত থাকায়, এ বিষয়ক হাদিসকে মুতাওয়াতির বলা যায়।এ ধরনের হাদিসে পাককে অস্বীকার করা কুফুরীর ন্যায়।মহান আল্লাহ যেন আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(২৯ম পর্ব)

অনেকে বলেন কোরআনে নূর বলা হয়েছে কিন্তু নূরের তৈরী বলা হয়নি, আবার কেউ বলেন শুধু রুহ মোবারক নূর কিন্তু দেহমোবারক নয়,আবার কেউ বলেন সাদা মাটির তৈরী (নাউযুবিল্লাহ!) আজকে ইন-শা-আল্লাহ সে বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো-[২১ম অংশ]

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

রাসূল (ﷺ) হলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি,যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না।[5th Part]

★১৮৮.  (لَوْلاكَ لَمَا خَلَقْتُ الأَفْلاكِ) ‘রাসূল (ﷺ) সৃষ্টি না হলে কিছুই সৃষ্টি হত না’ হাদিসের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ:

ইন-শা-আল্লাহ এপর্যায়ে আপনাদের সামনে বিভিন্ন মুহাদ্দিস,মুফাস্সিরদের মমার্থ তুলে ধরার চেষ্টা করবো:

হাদিস (لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاكَ) ‘আঁপনাকে সৃজন না করলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না’ মমার্থ বর্ণনার স্বপক্ষে বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিস,ফুকাহা,মুফাসসিরগণের বক্তব্য এবং এটিকে তাদের গ্রন্থে মমার্থ হাদিস হিসেবে উল্লেখ করেছেন কিনা তার তথ্য সূত্র:

*১. ইমাম শরফুদ্দীন বুছুরী (رحمة الله) এর লিখিত ‘কাসীদায়ে বুরদায়’ লিখেছিলেন, 

لولاه لم تخرج الدنيا من العدم

‘‘যদি তিঁনি [রাসূল (ﷺ)] না হতেন দুনিয়া নাস্তির অন্ধকার হতে অস্তির আলোতে আসতো না।’’

★উক্ত কাসিদার ব্যাখ্যায় আল্লামা ইমাম খরপূতী (رحمة الله) ‘শরহে কাসীদায়ে বুরদা’ নামক গ্রন্থের ৭১-৭২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,

فى هذا البيت تلميح الى ما نقل فى الحديث القدسى لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاكَ  والمراد من الافلاك جميع المكنونات اطلاقا لاسم الجزء على الكل واشارة على ما وقع له صلى الله ﷺ فى ليلة الاسراء فانه عليه السلام لما سجد لله تعالى فى سدرة المنتهى قال الله تعالى له عليه الصلوة و السلام انا و انت و ما سوى ذلك خلقته لاجلك-
‘‘এই চরণে ইঙ্গিত হল এ হাদিস-ই-কুদসীর প্রতি যা হল لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاكَ আর الْأَفْلَاكَ এর মমার্থ হল আল্লাহর সমগ্র জগৎ।কেননা অংশ দ্বারা সমষ্টিকে বুঝানো হয়েছে।এতে শবে-ই-মি‘রাজে সংঘটিত ঘটনার প্রতিও ইঙ্গিত বর্তমান। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সিদরাতুল মুনতাহার নিকট আল্লাহর দরবারে সিজদায় পতিত হলেন,তখন আল্লাহ্ তাঁকে বললেন, এখানে আঁমি ও আঁপনি, এ ছাড়া যা কিছু আছে,সমুদয়কে আমি সৃষ্টি করেছি আঁপনারই নিমেত্তে।’’
[আল্লামা খরপূতি: শরহে কাসীদায়ে বুরদা, ৭১ পৃ.]

✊ইমাম শরফউদ্দীন আবূ মোহাম্মদ বুসিরী তাঁর কৃত ‘কাসিদা-এ-বুরদা’ কাব্য-পুস্তকে লেখেন: “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) না হলে দুনিয়া অস্তিত্বশীল হতো না।”

ইমাম বুসিরী (রহ:)-এর কাব্যের ব্যাখ্যামূলক পুস্তকে ইমাম শায়খ ইবরাহীম বাইজুরী লেখেন: “হুযূর করীম (ﷺ) অস্তিত্বশীল না হলে বিশ্বজগত-ই অস্তিত্বশীল হতো না। হযরত আদম (আ:)-কে আল্লাহ বলেন,‘মহানবী (ﷺ) অস্তিত্বশীল না হলে আঁমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না।হযরত আদম (আ:) হলেন মনুষ্যজাতির আদি পিতা,আর পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই মানুষের জন্যে সৃষ্ট। তাই হযরত আদম (আ:)-কে যেহেতু রাসূলে খোদা (ﷺ)-এঁর অস্তিত্বের কারণে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেহেতু সমগ্র জগতই মহানবী (ﷺ)-এঁর কারণে সৃষ্ট বলে প্রতীয়মান হয়।অতএব, সকল অস্তিত্বশীল সত্তার সৃষ্টির কারণ হলেন বিশ্বনবী (ﷺ)।”

কাসিদা-এ-বুরদা কাব্য সম্পর্কে আল্লামা খালেদ আযহারী মন্তব্য করেন: “রাসূলে পাক (ﷺ) এঁর কারণেই দুনিয়া অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব পেয়েছে।”

*২. আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) ‘মাদারেজুন নবুয়ত’ সিরাত গ্রন্থে ১ম খণ্ডে উল্লেখ করেন,

مخلوق كا ظهور روح مظهر محمد كے واسط سے هے اگر روح محمدى نه هوتى خدا تعالى كو كوئى نه جانتا كيونكه كسى كا وجود هى نه هوتا- مدرج النبوة: جلد الاول

“সৃষ্টি জগতের বিকাশ হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এঁর পবিত্র রূহ মুবারকের ওসীলায় হয়েছে।যদি রূহে মুহাম্মদী (ﷺ) না হতেন তবে আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে কেউ জানত না। কেননা তিঁনি না হলে সৃষ্টির মধ্যে কারো অস্তিত্বও হত না।

✊ভারতীয় উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম মুহাদ্দিস আল্লামা আব্দুল হাক্ব দেহলভী (রহ:)স্বীয় গ্রন্থে একখানা হাদিস উল্লেখ করেন, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনূ আব্বাস (রা:) ক্বুরআ’নুল কারিমের উক্ত আয়াত

وما كنت بجانب الطور  الخ

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন, হযরত মূসা (আঃ) তাওরাত প্রাপ্তির মুহুর্তে আল্লাহর সাথে আলোচনার এক পর্যায়ে আল্লাহ্ বলেন: অর্থাৎ “(হে মূসা!) যদি মুহাম্মাদ (ﷺ) এবং তাঁর উম্মত না হতো তবে বেহেশ্ত,দোযখ,চন্দ্র,সূর্য্য,রাত,দিন, নৈকট্যবান ফিরিশ্তা,নবী-রাসূল সৃষ্টি করতাম না এবং তোমাকেও সৃষ্টি করতাম না।[গ্রন্থ সূত্র :প্রাগুক্ত, খণ্ড ২]

আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (রহ:) ‘লাওলাকা লামা খালাকতুল আফলাক’ হাদিস শরিফটি স্বীয় গ্রন্থে উদ্ধৃত করে তা থেকে প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) এঁর সত্ত্বা সৃষ্টি না হলে কিছুই সৃষ্টি না হওয়ার দলীল পেশ করেছেন।

**তিনি বলেন ; অর্থাৎ : “অধিকাংশ মুহাদ্দিসগণ ‘الافلاق’ শব্দটি নিয়ে মন্তব্য করেছেন।প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم) এঁর একটি উপাধি হলো ‘সাহেবে লাওলাক’।
‘الافلاق’
শব্দটি فلاق এর বহুবচন।
মূলত فلاق শব্দের অর্থ হলো মণ্ডল। গ্রীক দার্শনিকদের মতে فلاق বা মণ্ডল বারটি।বারি মণ্ডল,বায়ু মণ্ডল, অগ্নিমণ্ডল, সাত আসমান সাতটি মণ্ডল, আরশ মণ্ডল, কুরসী মণ্ডল।
এই সব মণ্ডলকে ‘الافلاق’ বলা হয়ে থাকে।

(তিনি এই আলোচনার পূর্বে সে হাদিসের সূত্রগুলো আলোচনা করেছিলেন যেগুলোতে সরাসরি ‘الافلاق’ শব্দটি ব্যবহার না হয়ে বারটি মণ্ডলের কথা বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে) তিনি বলেন, উপরের হাদিস গুলোতে আমি উল্লেখ করেছি এতে সরাসরি ‘الافلاق’ শব্দটি ব্যবহার না হয়ে বারটি মণ্ডলের কথা বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।

সেকারনে মুহাদ্দিস সাগানী (রহ:) তাঁর ‘খুলাসা’ গ্রন্থে ‘الافلاق’ শব্দটি সহিহ্ বা বিশুদ্ধ নয় বলেছেন।আর একমাত্র ইমাম সাগানী (রহ:)-ই এই শব্দটি মন্তব্য করেন।আর তাঁর এই রায়কেই অনেকে তাঁদের গ্রন্থে সংকলণ করেছেন।

সমস্ত জগৎকে ‘الافلاق’ বলা হয়। এখন এই ‘الافلاق’ শব্দসহ বর্ণিত কিছু হাদিসও আমি উপস্থাপন করবো”।তিনি ‘الافلاق’ শব্দসহ বর্ণিত কিছু হাদিস পেশ করতে গিয়ে বলেন, অর্থাৎ : “সৃষ্টি জগতের বিকাশ প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (ﷺ)-এঁর পবিত্র রুহ্ মুবারাকের ওসীলায় হয়েছে। যদি রুহে মুহাম্মাদী (ﷺ)-না হতেন তবে আল্লাহ্ তা’আলাকে কেউ জানতো না।কেননা তিনি না হলে সৃষ্টির মধ্যে কারো অস্থিত্বও হতো না”।
[গ্রন্থ সূত্র :শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী : মাদারিজুননুবূয়্যত; প্রথম খণ্ড]

*৩. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) এর শ্রদ্ধেয় বাবা ও উস্তাদ আল্লামা শাহ আব্দুর রহিম মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) ‘আনফাসে রহিমিয়্যা’তে উল্লেখ করেন, 

از عرش تا بفرش وملائكة علوى و جنس سفلى همہ ناشى ازاں حقيقته محمديہ صلى الله عليہ وسلم  است وقول رسول مقبول اول ما خلق نورى وخلق الله من نورى وقول الله تعالى لو لاك لما خلقت الافلاك وقوله لولاك لما اظهرت الربوبيتى-

‘‘আরশ থেকে ফরশ পর্যন্ত উর্ধ্ব জগতের সকল নূরানী ফেরেশতা,নিম্নজগতের সকল সৃষ্টি হাকিকতে মুহাম্মাদিয়্যা থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে।নবী করীম (ﷺ) বাণী,  সর্ব প্রথম আল্লাহ্ তা‘য়ালা আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমার নূর থেকেই সকল বস্তুকে সৃষ্টি করেছেন।আল্লাহ্ তা‘য়ালা প্রিয় মাহবুব (ﷺ) কে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেছেন, (হে মাহবুব)! আঁপনি না হলে আঁমি কোনো কিছুই সৃষ্টি করতাম না এবং আঁপনি না হলে আঁমি আঁমার প্রভুত্ব প্রকাশ করতাম না।’’
[আল্লামা শাহ আব্দুর রহিম মুহাদ্দিস দেহলভী: আনফাসে রহিমিয়্যাহ-১৪০ পৃ.]

✊অতএব এতবড় একজন সম্মানিত মুহাদ্দিস উক্ত হাদিসটিকে হাদিসে কুদ্সী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করলেন। আল্লামা শাহ আব্দুর রহিম মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) এর উপরে খ্যাতনামা মুহাদ্দিস ভারতীয় উপমহাদেশে আর হবে কী না সন্দেহ আছে।শাহ আব্দুর রহিম (رحمة الله) এর চেয়ে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, মাওলানা মুতীউর রহমান,মাওলানা জাকারিয়া হাসনাবাদী এবং মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সবাই কি বড় মুহাদ্দিস! হাদিস বিশারদ! বাহ্! বাহ!

*৪. ইমাম আযম আবু হানিফা (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত কাব্য গ্রন্থ ‘কাসীদায়ে নুমানে’ একটি কাসীদা বর্ণনা করেন এভাবে-

انت الذى لولاك ما خلق امرء●  كلا و لا خلق الورى لولاك-
‘‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! আঁপনি না হলে কোন ব্যক্তিই সৃষ্টি হতো না কখনই এবং আঁপনি না হলে কোন মালূককে সৃষ্টি করা হতো না।’’ (কাসীদায়ে নু‘মান) দেখুন ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) একজন তাবেয়ী ও হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা, তিনি নিজে নবীর রওযা মোবারকের সামনে এই কাসীদাটি সহ কাসীদায়ে নুমানের সবগুলো কাসীদা শুনিয়েছিলেন রাসূল (ﷺ) কে।আর তিনি ১৮ জন সাহাবীর দর্শন লাভ করেছেন।লক্ষ্য করুন ইমাম আযমের মত ইমামের আক্বীদা হল কি, আর তথাকথিত নামধারী আলেমদের আক্বিদা কি।তাহলে কি তারা ইমামে আযমের চেয়ে বড় ইমাম সেজে গেলেন?

*৫. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

كما قال تعالى: لولاك لما خلقت الافلاك

‘‘যেমন মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, হে হাবিব! আঁপনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছু সৃষ্টি করতাম না।’’
[মোল্লা আলী ক্বারী,শরহে শিফা: ২/১২৭পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত,লেবানন।]

✊মোল্লা আলী কারী (রহঃ) লেখেন: ”রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এঁর আশীর্বাদ ও মহত্ত্ব ছাড়া সমগ্র এই বিশ্বজগত অস্তিত্ব পেতো না এবং আল্লাহ ছাড়া কিছুই অস্তিত্বশীল থাকতো না।”

★তিনি অন্যত্র বলেন : “যেমন বর্ণিত আছে আল্লাহর বাণী: প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (ﷺ)-কে সৃষ্টি না করলে কোনো কিছুই সৃষ্টি হতো না,হাদিসটি সহিহ্”।
[আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ:)- শরহে শিফা; ১/১৩পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব, ইলমিয়্যাহ্, বৈরুত, লেবানন]

✊বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন, 

كما روى لولاك لما خلقت الافلاك فانه صحيح-

-‘‘যেমন বর্ণিত আছে আল্লাহর বাণী, রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হত না,কথাটি অবশ্যই বিশুদ্ধ।’’
[আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী: শরহে শিফা: ১/১৩ পৃ, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন]

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থে ‘লাওলাকা লামা খালাক্বতুল অাফলাক’ হাদিস সম্পর্কে বলেন:
অর্থাৎ: “ইমাম সাগানী রহ. বলেন, ‘লাওলাকা লামা খালাক্বতুল অাফলাক’ এই হাদিসটি শব্দগত মওজু।(কিন্তু অর্থগত মওজু নয়) আমি (মোল্লা আলী ক্বারী রহ:) বলি, এর মর্মার্থ বা বিষয়বস্তু সহিহ্ বা সঠিক।

**কেননা ইমাম দায়লামী (রহ:) হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনূ আব্বাস (রা:) এঁর সূত্রে ‘মরফূ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যে,রাসূল (ﷺ)-ইরশাদ করেন : অর্থাৎ “আঁমার কাছে জিব্রাইল (আ:) এসে বলেন,আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,আঁপনি যদি না হতেন,আঁমি বেহেশ্ত সৃষ্টি করতাম না এবং দোযখও সৃষ্টি করতাম না।আবার ইমাম ইবনূ আসাকির (রহ:) এঁর বর্ণনায় যা হযরত সালমান ফার্সী (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে,সেখানেও বলা হয়েছে; আঁপনি যদি না হতেন আঁমি দুনিয়া সৃষ্টি করতাম না”।
[গ্রন্থ সূত্র :আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ:) : মওদ্বুআতুল কাবীর,পৃষ্ঠা ১০১]

✌অনুরুপ আল্লামা আযলূনী শাফেয়ী (রহ:) বলেন :অর্থাৎ : “ইমাম সাগানী (রহ:) বলেন, হাদিসটি শব্দের দিক দিয়ে’মওদ্বু’, তবে আমি বলি যে উক্ত হাদিসটির মর্মার্থ বা বিষয়-বস্তু সহিহ্ বা বিশুদ্ধ; কারণ এ প্রসঙ্গে অনেক হাদিস রয়েছে”।
[গ্রন্থ সূত্র :আল্লামা আযলূনী (রহ:)- কাশফুল খাফা; ২/১৪৮, হাদিস ২১২১]

⏩তবে কিছু লেখক মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.) এর নামে মিথ্যা অপবাদ রটানোর চেষ্টা করেছেন।মোল্লা আলী ক্বারী নাকি জাল বলেছেন।তাই তাদের উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা দেখার জন্য অনুরোধ রইলো।★★

*৬. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকীহ ইমাম ফার্সী (رحمة الله) তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘মাতালিউল মুর্সারাত ফি শরহে দালায়েলুল খায়রাতে’র ২৫৩ পৃষ্ঠায় লিখেন-

كذالك هو صلى الله عليه و سلم روح الاكوان و حياتها وسر وجودها ولولاه لم يكن لها نور ولا دلالة لذهبت و تلاشت ولم يكن لها وجود-

‘‘এরূপে নূরে খোদা (ﷺ) সকল রূহ এর জীবনী শক্তি ও সকল অস্তিত্বের নিগুঢ় তত্ত্ব।তিঁনি যদি না হতেন বা না থাকতেন সকল সৃষ্টিই অস্তিত্বহীন হয়ে যেত। ’’

✊আল্লামা মাহদী আল ফাসী (رحمة الله) (ওফাত. ১২২৪ হিজরী.) বলেন,

لولاك ما خلقت الكون

-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাঁর হাবিব (ﷺ) কে সৃষ্টি না করলে কোন জগতই সৃষ্টি করতেন না।’’ (মাতালিউল মার্সারাত)

*৭. বিশ্ব-বিখ্যাত মুফাসসির,মুহাদ্দিস এবং ফকীহ,সূফী আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাফসীরে রুহুল বয়ানে লিখেন, 

وقال حكاية عن الله (لولاك لما خلقت الكون)

‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালার বাণী,আঁপনাকে সৃষ্টি না করলে কুল কায়েনাত সৃষ্টি করতাম না।’’
[আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী: তাফসীরে রুহুল বয়ান, ৩/২৫৫ পৃ, সূরা আরাফ,আয়াত নং-১৫৬]

✊”প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم)  ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ তা’আলা সর্বপ্রথম আঁমার রুহ মুবারাক সৃষ্টি করেন এবং আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, আঁপনাকে সৃষ্টি না করলে কুল কায়েনাত সৃষ্টি করতাম না”।
[গ্রন্থ সূত্র :প্রাগুক্ত, সূরা আরাফ, আয়াত ১৫৬ এর তাফসীর; ৩/২৫৫।]

আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাফসীরে ‘রুহুল বায়ানে’ সূরা সফ এর ৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় এক পর্যায়ে লিখেন,
القوله تعالى: لولاك لما خلقت الافلاك

‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা বলেন, হে হাবীব আঁপনাকে সৃষ্টি না করা হলো কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’
[আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী: রুহুল বায়ান- ১০/৮৮০ পৃ.]

আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাঁর তাফসীরে উল্লেখ করেন,

ورد بلسان القدس ( لولاك لما خلقت الافلاك)

“মহান আল্লাহর কুদরতের জবানের কথা, হে মাহবুব! আঁপনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’
[তাফসীরে রূহুল বায়ান,১/২৭ পৃ. সূরা বাক্বারা,আয়াত নং ১]

তিনি তাফসীরের অন্য স্থানে বর্ণনা করেন এভাবে-

ان الله العظيم هو فضل الله عليك ورحمته كما انك فضل الله ورحمته على العالمين ولهذا قال (لولاك لما خلقت الافلاك) 

“দয়াময় ‘আল্লাহ্ তাঁর হাবিব সর্ম্পকে বলেন হে হাবিব! আঁপনাকে সৃষ্টি না করা হলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না।
[তাফসিরে রূহুল বায়ান,২/২৮৩ পৃ. সূরা নিসা,আয়াত নং-১১৩ ও ব্যাখ্যা]

আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে আরও উল্লেখ করেন-

ان اصل الكون كان النبي عليه السلام لقوله لولاك لما خلقت الكون

“নিশ্চয় রাসূল হলেন সমস্ত সৃষ্টি জগতের মুল এজন্যই মহান ‘‘আল্লাহ্ হাদিসে কুদসীতে বলেন, হে হাবিব! আঁপনাকে সৃষ্টি না করা হলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’
[তাফসীরে রূহুল বায়ান, ৫/১৯৯ পৃ. সূরা বনি ইসরাইল আয়াত-৮৫]

অন্যত্র তিনি বর্ণনা করেন-

كما قال عليه السلام (انا من الله والمؤمنون من فيض نورى) فهو الغاية الجليلة من ترتيب مبادى الكائنات كما قال تعالى (لولاك لما خلقت الافلاك)
‘‘রাসূল  বলেন,আঁমি আল্লাহ্ হতে আর মু‘মিনগণ আঁমার নূরের ফয়জ থেকে সৃষ্টি …..মহান আল্লাহ্ তাঁর হাবিব সর্ম্পেকে বলেন, হে হাবিব! আঁপনাকে সৃষ্টি না করা হলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’
[তাফসিরে রূহুল বায়ান, ৫/৫২৯ পৃ., সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং ২১]

উক্ত তাফসীরে আরও উল্লেখ করেন,

قوله تعالى فى الحديث القدسي خطابا للنبى عليه السلام (لولاك لما خلقت الافلاك)

‘‘মহান আল্লাহ্ হাদিসে কুদসীতে তার রাসূল (ﷺ) কে খেতাব করে বলেন,  হে হাবিব! আঁপনাকে সৃজন না করা হলে কিছুই সৃজন করতাম না।
[তাফসিরে রূহুল বায়ান,৬/১৫৪ পৃ. সূরা নুর আয়াত-৩৫]

উক্ত তাফসীর কারক তার তাফসীরে অন্য স্থানে উল্লেখ করেন,

ذكر النبي عليه السلام والله تعالى خاطبه بقوله :لولاك يا محمد ما خلقت الكائنات

“মহান আল্লাহ্ তাঁর রাসূল (ﷺ) এঁর দিকে খেতাব করে বলেন, হে হাবিব! আঁপনাকে সৃষ্টি না করা হলে আঁমি কুল কায়েনাত সৃষ্টি করতাম না।’’
[তাফসিরে রূহুল বায়ান, ৬/১৯২ পৃ. সূরা ফুরকান আয়াত নং ৮]

*৮. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী (رحمة الله) তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেন, 

قوله تعالى : ولولاه لم  تخلق الافلاك و لا الاملاق

‘‘মহান ‘‘আল্লাহ্ বলেন, হে প্রিয় হাবীব! আঁপনাকে সৃষ্টি না করলে আঁমি কোন কিছুই করতাম না।এমনকি কোন রাজ্য সৃষ্টি করতাম না।’’
[আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার,৩/৩৬৩ পৃ.]

*৯. কুতুবে রব্বানী,ইমাম শেখ মুজাদ্দেদ আলফে সানী আহমদ ফারুক সেরহন্দী (رحمة الله) ৪৪ নং মাকতুবাতে বলেন, 

ولولاه صلى الله عليه و سلم لما خلق الله سبحانه الخلق و لما اظهر الربوبية و كان و ادم بين الماء و الطين –

‘‘যদি হুযূর (ﷺ) কে সৃষ্টি না করা হতো তাহলো আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা কোন সৃষ্টিকেই সৃষ্টি করতেন না এবং তাঁর রবুবিয়্যাত প্রকাশ হতো না,আর রাসূল (ﷺ) তখনও ছিলেন যখন আদম (عليه السلام) মাটি ও পানির মাঝখানে ছিলেন।’’
[আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার: ২/২০৮ পৃ.]

*১০. আল্লামা শরীফ সৈয়দ আহমদ বিন আব্দুল গণী বিন উমর দামেস্কী (رحمة الله) বলেন, 

كما قال تعالى فى الحديث القدسى لولاك ما خلقت الافلاك

‘‘যেমন আল্লাহ্ তা‘য়ালা হাদিসে কুদসীতে বলেন,হে হাবীব! আঁপনাকে সৃষ্টি না করলে আঁমি কোনো কিছুই সৃজন করতাম না।’’
[আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার: ৩/৩৯৮ পৃ.]

*১১. ইমাম শেহাবউদ্দীন ইবনে হাজর আসকালানী(রহ:) বলেন,“এই সকল বর্ণনা ব্যক্ত করে যে মহানবী (ﷺ)-কে সৃষ্টি করা না হলে আল্লাহ তাআলা আসমান-জমিন,বেহেশ্ত-দোযখ,চন্দ্র-সূর্য কিছুই সৃষ্টি করতেন না।”
[ইবনূ হাজার আসকালানী: লিসানুল মিযান; ৪/৩৫৪ ও অন্যান্য গ্রন্থগুলো দ্রষ্টব্য]

*১২. ইমাম আরিফ বিল্লাহ সায়্যেদ শরীফ আব্দুল্লাহ মীরগীনানী (رحمة الله) তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ الاسئلة النفيسة এর ৩২ তম প্রশ্নের জবাবে  বলেন, 

كما صرح بذلك الحديث فى الخطاب الحضرة لادم عليه السلام، ولولاه ما خلقتك ولا خلقت سماء ولا ارضا…الخ

‘‘হযরত আদম (عليه السلام) এঁর খিতাব তথা ভূষণের হাদিস দ্বারা এই কথা স্পষ্ট হয়েছে যে,আল্লাহর বাণী হে আদম! মুহাম্মদ (ﷺ) কে সৃষ্টি না করা হলে তোমাকে সৃষ্টি করতাম না,তিঁনি না হলে না সৃজন করতাম আসমান না যমিন।’’
[আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার: ৪/১১৪, পৃ.]      

*১৩. আল্লামা ইমাম আরিফ বিল্লাহ শায়েখ আলী দুদাহ বুসূনবী (رحمة الله) তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থكتاب خلاصة الاثر  এর ১৪৯ পৃষ্ঠায় লিখেন-

ان اصل الكون نبينا محمد صلى الله عليه و سلم لقوله تعالى فى الخبر القدسى: لولاك لما خلقت الافلاك، فهو اولى ان يكون اصلا-

‘‘নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) সকল সৃষ্টির মূল হওয়া আল্লাহ্ তা‘য়ালার এই হাদিসে কুদসীই যথেষ্ট যেমন বর্ণিত আছে, হে হাবীব (ﷺ)! আঁপনাকে সৃষ্টি না করলে আঁমি কোনো কিছুই সৃজন করতাম না। আর এটিই রাসূল (ﷺ)! এঁর সকল সৃষ্টির মূল হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’’
[আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার: ৪/১৯৮ পৃ.]

*১৪. ইমাম শায়খ আব্দুল করিম জলিলী (رحمة الله) (ওফাত ৮০৫ হি.) তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ رسالته المسماة مدارج الوصول এ লিখেন,

وقد ورد عنه صلى الله عليه وسلم انه قال : ان الله تبارك و تعالى قال له فى ليله المعراج لولاك لما خلقت الافلاك-

‘‘যেমন বর্ণিত আছে,নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘য়ালা মিরাজের রজনীতে আঁমাকে বলেন,হে হাবীব! আঁপনাকে সৃষ্টি না করলে আঁমি কোনো কিছুই সৃজন করতাম না।’’
[আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার : ৪/২৫৮ পৃ.]

*১৫. আল্লামা মুহাম্মদ জামালিদ্দীন বিন মুহাম্মদ সাঈদ বিন কাসেম আল হালাক আলকাসেমী (رحمة الله) তাঁর উসূলে হাদিসের কিতাব قواعد التحديث من فنون مصلح الحديث  গ্রন্থের (যা দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ,বয়রুত হতে প্রকাশিত) ১/১৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,

كحديث:لولاك ما خلقت الافلاك

‘‘যেমন হাদিসে কুদসীতে রয়েছে-হে হাবিব! (ﷺ) আঁপনাকে সৃষ্টি না করলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’

*১৬. ইমাম আবুল কাসেম আব্দুর রহমান বিন সুহাইলি (رحمة الله) (ওফাত. ৫৮১ হি.) তার কিতাব الروض الانق فى السيرة النبوية এর ১/১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

ان الله قال لمحمد لولاك ما خلقت الافلاك

‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাঁর হাবিব (ﷺ) কে লক্ষ্য করে বলেন,আঁপনাকে সৃষ্টি না করা হলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’

*১৭. ইমাম সাইফুদ্দীন আবূ জা’ফর বিন উমর আল-হুমাইরী আল-হানাফী নিজ ‘আদ-দুররূল তানযীম ফী মওলিদিন্ নাবিই-ইল করীম’ শীর্ষক কেতাবে বলেন: আল্লাহ তাআলা যখন হযরত বাবা আদম (আ:)-কে সৃষ্টি করেন,তখন তিঁনি তাঁর মনে এই ভাবের উদয় করেন যার দরুণ তিঁনি মহান প্রভুকে প্রশ্ন করেন, ”ইয়া আল্লাহ! আঁপনি আমার কুনিয়া (বংশ-পরম্পরার নাম) কেন ’আবূ মোহাম্মদ’ (মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের পিতা) করেছেন?” আল্লাহ উত্তরে বলেন, “ওহে আদম! তোমার মাথা তোলো।” তিঁনি শির উঠিয়ে আরশে মহানবী (ﷺ)-এঁর নূর (জ্যোতি) দেখতে পান। হযরত আদম (আ:) জিজ্ঞেস করেন, “ইয়া আল্লাহ! এই নূর কোন্ মহান সত্তার?” আল্লাহতা’লা জবাবে বলেন, “তোমার বংশেই এই মহান নবী(ﷺ)-এঁর জন্ম তথা শুভ আগমন। আসমানে তাঁর নাম আহমদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং জমিনে মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।আঁমি তাঁকে সৃষ্টি না করলে তোমাকে বা আসমান ও জমিনকে সৃষ্টি করতাম না।”

*১৮. সাইয়্যেদ আবূল হুসাইন হামদূনী শাযিলী তাঁর ‘কাসিদায়ে দা’লিয়া’তে লেখেন: “প্রিয়নবী (ﷺ) হলেন সারা বিশ্বজগতের মধ্যমণি এবং সকল সৃষ্টির কারণ (ওসিলা)। তিনি না হলে কিছুই অস্তিত্ব পেতো না।”

*১৯. আল্লামা আবূল আয়াশ আবদুল আলী লাখনৌভী নিজ ‘ফাওয়াতিহ আর-রাহমূত শরহে মোসাল্লাম আস্ সুবূত’ পুস্তকে লেখেন: “রাসূলে খোদা (ﷺ)
অস্তিত্বশীল না হলে সৃষ্টিকুল আল্লাহর রহমত-বরকত (আশীর্বাদ)-ধন্য হতো না।”

**প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ)-আদম সন্তানদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সৃষ্টির মধ্যে তিনি সবচেয়ে উত্তম সৃষ্টি এবং সম্মানিত ব্যক্তি।আর প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে সৃষ্টি করা না হলে আল্লাহ্ পাক আরশ সৃষ্টি করতেন না।কুরসী সৃষ্টি করতেন না, আসমান, যমীন, চন্দ্র, সূর্য্য, কিছুই সৃষ্টি করতেন না। (আমার দৃষ্টিতে) উক্ত হাদিসটি প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (ﷺ)-এঁর হাদিস হিসেবে সহিহ্ পর্যায়েরও নয়, আবার দ্বয়ীফ বা দূর্বল পর্যায়েরও নয়।
[ইবনে তাইমিয়া: ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া; ১১/৮৬।
তাহলে বুঝা যায়,হাদিসটি হাসান।]

**কেননা,হাদিস ৩ প্রকারের; যাকে প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (ﷺ)-এঁর হাদিস বলা হয়।

**প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (ﷺ) এঁর কোনো হাদিসকে জাল বলা বা অস্বিকার করা দ্বীনহীনতা তথা বেদ্বীনী।আর ‘জাল হাদিস’ শব্দিটি একটি পরিভাষা মাত্র।

*২০. রশিদ আহমদ গাঙ্গুহীর সুপ্রসিদ্ধ ফাওয়ার কিতাব ‘ফাতওয়ায়ে রশিদিয়াহ’। দেখুন! সেখানে তিঁনি রাসূল (ﷺ)’র সৃষ্টির বিষয়ে কী লিখেছেন।একজন প্রশ্ন করেন-

سوال: اول ما خلق الله نورى اور لولاك لما خلقت الافلاك يہ دونوں حديثيں صحيح حديثيں ہیں يا وضعى ؟ كو وضعى بلاتا ہے-

প্রশ্ন: “সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালা যা সৃষ্টি করেছেন,তা হল আঁমার নূর এবং আঁপনাকে সৃষ্টি না করলে আসমানসমূহ এবং যমীন কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না।”

এ মর্মে বর্ণিত হাদিসগুলাে বিশুদ্ধ নাকি জাল, যায়েদ নামক ব্যক্তি এগুলাে কে জাল বলছে।এ প্রশ্নের উত্তরে গাঙ্গুহী সাহেব বলেন

جواب: يہ حديثيں كتب صحاح ميں موجود نہيں ہيں – مگر شيخ عبد الحق رحمة الله نے اول ما خلق الله نورى كو نقل كيا ہے اور بتايا ہے كہ اس كى كچہ اصل ہے فقط و الله تعالى اعلم –
“এ হাদিসগুলাে সিহাহ (ছয়টি বিশুদ্ধ কিতাব) এর মধ্যে নেই কিন্তু,শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) “সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ) এঁর নুর মােবারক সৃষ্টি করা হয়েছে” উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করে বলেছেন যে,এ হাদিসটির ভিত্তি আছে।”
[রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী,ফতােয়ায়ে রশিদিয়া: ১/২৭৮পৃ. মাকতাবায়ে থানবী, সাহারানপুর,ভারত, প্রকাশ,সালবিহীন]

*২১. দেওবন্দের অন্যতম শায়খুল হাদিস হুসাইন আহমদ মাদানী সাহেব স্বীয় গ্রন্থ ”আস্শিহাবুস সাকিব এর ৫০ পৃষ্ঠায় লিখেন,
غرضيكہ حقيقت محمد صلى الله عليہ وسلم التحية واسطہ جملہ كمالات عالم عالميان ہے يہ هی معنى لولاك لما خلقت الافلاك اور اول ما خلق الله نورى اور انا نبى الانبياء كے ہیں –

“মােট কথা হলাে,সমস্ত কায়েনাত বা অলিম হাকীকতে মুহাম্মদী তথা নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) থেকে সৃষ্ট।যেমন হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন,যদি আঁপনি না হতেন তবে আঁমি সকল আসমান যমীন কিছুই সৃষ্টি করতাম না।রাসূল (ﷺ) এঁর বাণী: মহান আল্লাহ তা’য়ালা সর্বপ্রথম আঁমার নূর মােবারক সৃষ্টি করেছেন এবং আরও বলেন,আঁমি নবীদেরও নবী।”
★মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী: শিহাবুস সাকীব: ৫০ পৃ. কুতুবখানায়ে রহিমিয়্যাহ,সাহারানপুর,ভারত,
★মুফতি মাহমদ ইয়ার খান নঈমী: রিসালায়ে নূর: ২২ পৃ. মাতুবায়ে গাউসিয়া, করাচি।

✊সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! রাসূল (ﷺ) এঁর নূর সম্পর্কে আমরা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না; কী চমৎকার করে বলে দিলেন দেওবন্দের মুহতারাম শায়খুল হাদিস!

*২২. মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী তার “প্রচলিত জাল হাদীস” গ্রন্থে উক্ত হাদিসটিকে মিথ্যুকদের বানানো কথা বলে উল্লেখ করেছেন।অথচ তার উস্তাদ ও মুরব্বীব মাওলানা আহমদ শফী তার “সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়” নামক গ্রন্থের ১৬৪ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটিকে তাগিদ দিয়ে বর্ণনা করেছেন এবং সহীহ বলেই গ্রহণ করেছেন।তিনি লিখেন-‘‘ওহাবীগণ নবী (ﷺ) এঁর শানে নিতান্ত গোস্তাখি ও বেয়াদবী মূলক শব্দ ব্যবহার করেন এবং নিজেকে স্বয়ং ঐ সত্ত্বার [রাসূল (ﷺ)] এঁর সমকক্ষ ধারণা করেন।অথচ তিঁনি না হলে সমগ্র সৃষ্টি জগত অস্তিত্ব লাভ করত না।’’

✊সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আহমদ শফীর উক্ত বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হয় তিনি নিজে সম্পূর্ণ বিশ্বাস নিয়েই এই কথা দৃঢ়ভাবে লিখেছেন।মহান রব তা‘য়ালা তাঁর প্রিয় হাবিবের শান-মান অস্বীকারকারীদের খপ্পর থেকে আমাদেরকে হিফাজত করুন, আমিন।

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(৩০ম পর্ব)

অনেকে বলেন কোরআনে নূর বলা হয়েছে কিন্তু নূরের তৈরী বলা হয়নি, আবার কেউ বলেন শুধু রুহ মোবারক নূর কিন্তু দেহমোবারক নয়,আবার কেউ বলেন সাদা মাটির তৈরী (নাউযুবিল্লাহ!) আজকে ইন-শা-আল্লাহ সে বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো-[২২ম অংশ]

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

রাসূল (ﷺ) হলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি,যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না।[6th Part]

★১৮৯. সর্বপ্রথম আল্লাহ তা‘য়ালা রাসূল (ﷺ) এঁর নূর সৃষ্টি করেছেন [বিস্তারিত আলোচনা]

ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার লিখিত ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩৪১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘সংক্ষেপে আমরা বলতে পারি যে, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নূর দ্বারা সৃষ্ট’ এ অর্থে বর্ণিত ও প্রচলিত সকল হাদীসই বানোয়াট।’’ এবার আমরা সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ)-এঁর নূর মোবারক সৃষ্টি সম্পর্কিত সনদসহ কোনো বর্ণনা আছে কীনা তা অনুসন্ধান করে দেখবো, কারণ মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব তার তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ১৭২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘নূরের বর্ণনাটাই তো নির্জলা জাল।’’

তাহলে এখন প্রশ্ন জাগে যে উনার আক্বিদা কি এবং এ বিষয়ের কোন মতের হাদিস সহীহ! তিনি ১৮৪ পৃষ্ঠায় লিখেন-‘‘তারপর তাঁর (আদম عليه السلام এর) বংশধরের (যার মধ্যে নবী ওলীগণও রয়েছেন) প্রত্যেককেই একফোঁটা পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন।কাজেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সৃষ্টিও এভাবেই হয়েছে।’’

আফসোস! তিনি যদি রাসূল (ﷺ)-এঁর কে নুতফার তৈরী করার পক্ষে একটি দলিলও উপস্থাপন করতে পারলেন না বলে, শুধু মুখের বুলি উড়ানো ছাড়া আর তিনি কোনো প্রমাণই উপস্থাপন করতে পারলেন না।সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল আবদুল মালেক এবং তার সহচর মাওলানা মুতীউর রহমানের কথায় একটাই যুক্তি এবং ভিত্তি, তাহলো, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) আদম (عليه السلام)-এঁর অনেক পরে দুনিয়ায় এসেছেন,তাই তাঁর সৃষ্টিও অন্যান্য মানবের ন্যায় নুতফার দ্বারা সৃষ্টি হওয়ায়ই বিবেক সম্মত।অথচ কোরআন সুন্নাহ বলে এ আক্বিধা ধারণকারী নিজে গোমরাহ এবং অপরকে গোমরাহকারী।এবার আসল কথায় আশা যাক, পাঠকবর্গ! এ যুক্তি তখনই কার্যকর হবে যখন রাসূল (ﷺ)-এঁর শেষে প্রেরণ হওয়ার সাথে সাথে সৃষ্টিও শেষে হতো, কিন্তু বাস্তবতা তার বিপরীত; কেননা তিঁনি সৃষ্টিতে সকল মানবের প্রথম এবং নবী হিসেবে মননীত হওয়ার দিক থেকেও প্রথম, যদিও প্রেরিত হয়েছেন সবার শেষে।রাসূল (ﷺ) সমস্ত নবীর মধ্যে সৃষ্টিতে প্রথম নবী এবং এমনকি আদম (عليه السلام) মাটি পানির সাথে মিশ্রিত থাকাকালীন সময়েও তিনি সৃষ্টিগত দিক থেকে নবী, এ বিষয়ে ইতোপূর্বে আলোকপাত করা হয়েছে, পাঠকবৃন্দের সেখানে আবার নজর দেবার অনুরোধ থাকবে। এবার আমরা প্রমাণের রাসূল (ﷺ) আদম عليه السلام এর আগে না পরে সৃষ্টি সে) আলোচনায় আসি।

★ইমাম বুখারী (رحمة الله)’র উস্তাদ ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) [ওফাত. ২৩০ হি.] একটি হাদিস সংকলন করেন-

أَخْبَرَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ بْنُ عَطَاءٍ عَنْ سَعِيدُ بْنُ أَبِي عَرُوبَةَ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: وَأَخْبَرَنَا عُمَرُ بْنُ عَاصِمٍ الْكِلابِيُّ. أَخْبَرَنَا أَبُو هِلالٍ عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ. صلى الله عليه وسلم : كُنْتُ أَوَّلَ النَّاسِ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ

‘‘হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) হতে দুই ধারায় বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, সৃষ্টির মধ্যে আঁমিই প্রথম মানুষ এবং যদিও প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।’’
✳️✳️✳️✳️✳️দলিল✳️✳️✳️✳️✳️
*(ক.) ইমাম ইবনে সা‘দ,আত্-তবকাতুল কোবরা, ১/১৯৯ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত,লেবানন।
*(খ.) ইবনে কাসির,বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/৩৯৩ পৃ.দারু ইহ্ইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন।
*(গ.) শিফা শরীফ,১/১১৪ পৃ.
*(ঘ.) কাসতাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/৪২ পৃ.।

সনদ পর্যালোচনা

★আহলে হাদিসদের এবং জনাব মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক সাহেবের ইমাম,ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসির (رحمة الله) [ওফাত. ৭৭৪ হি.] এ হাদিস সংকলন করে লিখেন- وَهَذَا أَثْبَتُ وَأَصَحُّ -‘‘এই সনদটি অধিক দৃঢ় ও অধিক বিশুদ্ধ।’’
[ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/৩৯৩ পৃ.]

✊আপনারাই দেখুন ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) এই হাদিসটির দুটি ধারায় বর্ণনা করেছেন আর প্রত্যেকটিই সনদই অনেক শক্তিশালী।হযরত কাতাদা (رضي الله عنه)-এর আরেকজন ছাত্রও এই হাদিসটি তার থেকে বর্ণনা করেছেন।

★ইমাম ইবনে সালেহ শামী (رحمة الله) সংকলন করেন-

وروى ابن إسحاق عن قتادة مرسلا قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم، كنت أول الناس في الخلق وآخرهم في البعث

‘‘ইমাম ইবনে ইসহাক (رحمة الله) তিনি কাতাদা (رضي الله عنه) হতে মুরসাল হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, সৃষ্টির মধ্যে আঁমিই প্রথম মানুষ এবং যদিও প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।’’
[ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৬৮ পৃ.]

★ইবনে ইসহাক সহীহ মুসলিমের রাবী এবং সত্যবাদী।
[ইবনে হাজার, তাক্বরীবুত তাহযিব, ৪৬৭ পৃষ্ঠা, ক্রমিক. ৫৭২৫]

✊বুঝা গেল কাতাদা (رضي الله عنه) থেকে এই হাদিসটি তিনটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।

★হযরত কাতাদা (رضي الله عنه)-এর চতুর্থ সূত্রটি ইমাম ইবনে আদি (رحمة الله) মারফূ মুত্তাসিল সনদে উল্লেখ করেন এভাবে-
حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ عَاصِمٍ، حَدَّثَنا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنا الوليد، حَدَّثَنا خُلَيْدُ بْنُ دَعْلَجٍ وَسَعِيدٌ، عَن قَتادَة عَنِ الْحَسَنِ، عَن أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وسَلَّم قَال: كُنْتُ أَوَّلَ الناس فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ.

‘‘তিনি যথাক্রমে…জাফর ইবনু আহমাদ ইবনে আসেম থেকে তিনি হিশাম ইবনু আম্মার তেকে তিনি ওয়ালীদ থেকে তিনি তার দুই উস্তাদ খুলাইদ ইবনু দা‘লাজ এবং সাঈদ ইবনে বাশীর থেকে তিনি তাবেয়ী কাতাদা (رحمة الله) থেকে তিনি হাসান বসরী (رحمة الله) থেকে তিনি হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, সৃষ্টির মধ্যে আঁমিই প্রথম মানুষ এবং যদিওবা প্রেরিত হয়েছি (নবীদের ক্ষেত্রে) সবার শেষে।’’
[ইমাম ইবনে আদি, আল-কামিল, ৩/৪৮৮-৪৮৯ পৃ. ক্রমিক. ৬০৬]

  সনদ পর্যালোচনা
এই সনদটিও সহীহ লিগাইরিহী; কেননা এই সনদের তাবেয়ী কাতাদার দুই ছাত্র খুলাইদ এর হাদিসের মান ‘হাসান’ এবং সাঈদ ইবনে বাশীর এর হাদিসের মান ‘সহীহ’ পর্যায়ের।

⏺️খুলাইদ ইবনে দা‘লাজের গ্রহণযোগ্যতা:

★ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

وَقَالَ أَبُو حَاتِمٍ: هُوَ صَالِحٌ.

‘‘ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সৎ ব্যক্তি।’’

★যাহাবী,সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/১৯৬ পৃ.
★যাহাবী,মিযানুল ই‘তিদাল, ১/৬৬৩ পৃ. ★যাহাবী,তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৫৪ পৃ. ★ইমাম মিয্যী,তাহযিবুল কামাল, ৮/৩০৯ পৃ.

✊ইমাম মিয্যী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

وَقَال أَبُو حاتم الرازي  : صالح.

‘‘ইমাম আবু হাতেম বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় একজন সৎ ব্যক্তি।’’

তার হাদিসের মান ‘হাসান’ বলে বুঝা যায়।
[ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ৮/৩০৯ পৃ.]

✊তবে ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) তার দুটি সনদ সংকলন করেন; আর দুটোকেই সহীহ বলেছেন।যেমন-

حَدَّثَنَا مُكْرَمُ بْنُ أَحْمَدَ الْقَاضِي، ثنا أَحْمَدُ بْنُ عَلِيٍّ الْأَبَّارُ، ثنا إِسْحَاقُ بْنُ سَعِيدِ بْنِ أَرْكُونُ الدِّمَشْقِيُّ، ثنا خُلَيْدُ بْنُ دَعْلَجٍ أَبُو عَمْرٍو السَّدُوسِيُّ، أَظُنُّهُ عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا …… هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ، وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ

‘‘…খুলাইদ ইবনু দা‘লাজ তিনি কাতাদা (رحمة الله) থেকে তিনি আবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে……….ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) বলেন,এই সনদটি সহীহ।’’
[ইমাম হাকেম,আল-মুস্তাদরাক, ৩/১৬২ পৃ. হা/৪৭১৫, তিনি তার আরেকটি হাদিসকে সহীহ বলেছেন।দেখুন-ইমাম হাকেম,আল-মুস্তাদরাক, ৪/৮৫ পৃ. হা/৬৯৫৯]

⏺️কাতাদার দ্বিতীয় ছাত্র সাঈদ ইবনে বাশিরের গ্রহণযোগ্যতা:  হযরত কাতাদার অপর ছাত্র ‘সাঈদ ইবনু বাশীর বাছরী’ এর হাদিস সর্বনিম্ন ‘সহীহ’ পর্যায়ের।কেননা তিনি হাফেযুল হাদিস ছিলেন।

★ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

الإِمَامُ، المُحَدِّثُ، الصَّدُوْقُ، الحَافِظُ

‘‘তিনি হাদিসের ইমাম,মুহাদ্দিস,সত্যবাদী, হাফেযুল হাদিস ছিলেন।’’

★ইমাম যাহাবী,সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩০৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৭
★যাহাবী,তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৭৩ পৃ. ★ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.

✌️তিনি আরও উল্লেখ করেন-

وَقَالَ أَبُو حَاتِمٍ: مَحَلُّهُ الصِّدْقُ.

‘‘ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) বলেন, তার স্থান হচ্ছে সত্যবাদী বলা।’’

★ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩০৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৭
★যাহাবী,তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৭৩ পৃ. ★ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.

✌️তিনি আরও উল্লেখ করেন-

وَقَالَ بَقِيَّةُ: سَأَلْتُ شُعْبَةَ عَنْ سَعِيْدِ بنِ بَشِيْرٍ، فَقَالَ: ذَاكَ صَدُوْقُ اللِّسَانِ.

‘‘বাকিয়্যাত তিনি ইমাম শুবা (رحمة الله) কে সাঈদ ইবনে বাশীর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,তিনি সত্যবাদী।’’

★ইমাম যাহাবী,সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩০৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৭
★যাহাবী,তারিখুল ইসলাম, ৪/৩৭৩ পৃ. ★ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.

✊তবে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

قال بقية عن شعبة ذاك صدوق اللسان وفي رواية صدوق اللسان في الحديث

‘‘তার থেকে অন্য বর্ণনায় রয়েছে,তিনি হাদিস বর্ণনায় সত্যবাদী।’’
[ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.]

♻️তিনি আরও উল্লেখ করেন-

قال عثمان الدارمي سمعت دحيما يوثقه

‘‘হযরত উসমান দারেমী (رحمة الله) বলেন, আমি আমি দুহাইম (رحمة الله) কে তাকে সিকাহ বলতে শুনেছি।’’
[ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.]

♻️তিনি আরও উল্লেখ করেন-

وقال أبو بكر البزار هو عندنا صالح ليس به بأس.
‘‘ইমাম আবু বকর বাজ্জার (رحمة الله) বলেন, আমাদের নিকট তিনি সৎ হাদিস বর্ণনাকারী, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’
[ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.]

✊ইমাম যাহাবী  আরও উল্লেখ করেন-

وَقَالَ مَرْوَانُ الطَّاطَرِيُّ: سَمِعْتُ ابْنَ عُيَيْنَةَ يَقُوْلُ: حَدَّثَنَا سَعِيْدُ بنُ بَشِيْرٍ، وَكَانَ حَافِظاً. وَقَالَ دُحَيْمٌ: يُوَثِّقُونَهُ، كَانَ حَافِظاً.

‘‘মারওয়ান আত-তাতারী বলেন, আমি সুফিয়ান ইবনে উয়ানাকে বলতে শুনেছি, সাঈদ ইবনে বাশীর হাফেযুল হাদিস ছিলেন। ইমাম দুহাইম (رحمة الله) বলেন, তিনি সিকাহ, হাফেযুল হাদিস।’’

★ইমাম যাহাবী,সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩০৪ পৃ. ক্রমিক. ৯৭
★যাহাবী, তারিখুল ইসলাম,৪/৩৭৩ পৃ. ★ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/৯ পৃ.

✳️✳️আল্লামা মুগলতাঈ (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

ولما ذكره ابن شاهين في الثقات قال: قال شعبة بن الحجاج: هو مأمون خذوا عنه. وذكره الحاكم في الثقات وخرج حديثه في مستدركه، وقال: كان إمام أهل الشام في عصره إلا أن الشيخين لما يخرجاه.

‘‘ইমাম ইবনে শাহীন (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন। ইমাম শু‘বা ইবনে হাজ্জাজ (رحمة الله) বলেন, তিনি নেককার আমরা তার থেকে হাদিস গ্রহণ করতাম, ইমাম হাকেম (رحمة الله) তাকে সিকাহ তে রেখেছেন এবং মুস্তাদরাকে তার হাদিস সংকলন করেছেন এবং বলেছেন, তিনি শাম দেশের তৎকালিন যুগের ইমাম ছিলেন যদিও বুখারী, মুসলিমে তার হাদিস সংকলন হয়নি।’’

★ইমাম ইবনে শাহীন,তারিখু আসমাউ সিকাত, ১/৯৭ পৃ. ক্রমিক. ৪৩২ ★মুগলতাঈ,ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৫/২৬৪ পৃ. ক্রমিক. ১৯১০

✳️✳️তিনি আরও উল্লেখ করেন-
وقال البزار: سعيد بن بشير عندنا صالح ليس به بأس حسن الحديث

‘‘ইমাম বাজ্জার বলেন, সাঈদ ইবনে বাশার আমাদের নিকট সৎ ব্যক্তি,তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই। তার হাদিস ‘সুন্দর’ পর্যায়ের।’’
[ইমাম মুগালতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৫/২৬৪ পৃ. ক্রমিক. ১৯১০]

♻️তিনি আরও উল্লেখ করেন-

ولما ذكره ابن خلفون في الثقات

‘‘ইমাম ইবনে খালফুন (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’ 
[ইমাম মুগালতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৫/২৬৪ পৃ. ক্রমিক. ১৯১০]

⏺️ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) তার একটি হাদিস সংকলন করেন লিখেন-

حَدَّثَنَا أَبُو النَّضْرِ مُحَمَّدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ يُوسُفَ الْفَقِيهُ، ثنا عُثْمَانُ بْنُ سَعِيدٍ الدَّارِمِيُّ، ثنا أَبُو الْجُمَاهِرِ مُحَمَّدُ بْنُ عُثْمَانَ التَّنُوخِيُّ، ثنا سَعِيدُ بْنُ بَشِيرٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ سَمُرَةَ، قَالَ….. هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ، وَسَعِيدُ بْنُ بَشِيرٍ إِمَامُ أَهْلِ الشَّامِ فِي عَصْرِهِ إِلَّا أَنَّ الشَّيْخَيْنِ لَمْ يُخَرِّجَاهُ [التعليق – من تلخيص الذهبي]  صحيح

‘‘…সাঈদ বিন বাশীর তাবেয়ী কাতাদা থেকে তিনি হাসান বসরী হতে তিনি সামুরা ইবনে জুনদুব (رضي الله عنه) হতে তিনি বলেন,…..।ইমাম হাকেম  বলেন, এই হাদিসটির সনদ সহীহ।সাঈদ ইবনে বাসীর শাম দেশের তার সময়ের হাদিসের ইমাম ছিলেন,যদিও শাইখাইন তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেননি।ইমাম যাহাবী (رحمة الله) একমত পোষণ করে বলেন,এটি সহীহ।’’

[ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ১/৪০৩ পৃ. হা/৯৯৫, তিনি এ হাদিসকে সহীহ বলেছেন আর ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার সাথে একমত পোষণ করেছেন। আল-মুস্তাদরাক লিল হাকিম, ২/১২৫ পৃ. হা/২৫৩৬, ২/১৬২ পৃ. হা/২৫১, ৩/১৩০ পৃ. হা/৪৬১৭, ৩/৭৪৫ পৃ. হা/৬৭০৯, ৪/১৪১পৃ. হা/৭১৬২, ৪/১৭৭ পৃ. হা/৭২৭৯, হা/৮১০৪, ৪/৫০৬পৃ. হা/৮৪২১]

⭕এ বিষয়ে আরেকটি হাদিসে পাক বর্ণিত হয়েছে এভাবে, ইমাম তাবরানী, বাগভী (رحمة الله)সহ একজামাত মুহাদ্দিগণ সংকলন করেন-

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ حَمْزَةَ، ثَنَا أَبُو الْجُمَاهِرِ، ثَنَا سَعِيدُ بْنُ بَشِيرٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ، أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ ﷺ قَالَ كُنْتُ أَوَّلَ النَّبِيِّينَ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ

‘‘তাবেয়ী হাসান বসরী (رحمة الله) হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন।তিনি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন, আঁমি সৃষ্টিতে সমস্ত নবীদের পূর্বে এবং প্রেরণের দিক দিয়ে নবীদের শেষ।’’
     দলিল
*(ক.) ইমাম তাবরানী,মুসনাদিশ শামেয়্যীন, ৪/৩৪ পৃ. হা/২৬৬২
*(খ.) ইমাম দায়লামী: আল ফিরদাউস- ৩/২৮২ পৃ. হা/৪৮৫০,৭১৯৫
*(গ.) ইমাম বাগভী: মাআলিমুত তানজীল: ৩/৫০৮ পৃ.
*(ঘ.) আল্লামা  ইবনে কাসীর: তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৩/৪৭০ পৃ.
*(ঙ.) আল্লামা আলূসী: তাফসীরে রুহুল মায়ানী: ১২/১৫৪ পৃ.
*(চ.) আল্লামা ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতি,তাফসিরে দুররুল মানসূর: ৬/৫৭০ পৃ.
*(ছ.) ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা: ১/৫পৃ. হা/১
*(জ.) ইমাম ইবনে আদি: আল কামিল: ৩/৩৭৩ পৃ.

✌️উপরের হাদিসে এবং এ হাদিসে কোনো প্রার্থক্য নেই, কেননা সকল নবীই মানব জাতিতে দুনিয়ায় এসেছেন। এ হাদিসের সনদও সহীহ, সনদে রাবী ‘সাঈদ বিন বশীর’ রয়েছেন তার গ্রহণযোগ্যতা ইতোপূর্বে আলোকপাত করেছি।

পর্যালোচনা
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উপরের সহীহ হাদিসের আলোকে দীবালকের ন্যায় স্পষ্ট প্রমাণিত হয়ে গেল যে,মহান রব তা‘য়ালা সমস্ত নবী-রাসূল এবং মানবের মধ্যে প্রথম যাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি হচ্ছেন রাসূল (ﷺ)।তাই তাঁর সৃষ্টিকে আদম (عليه السلام)-এঁর পরে আগমনকরা বণী আদমের ন্যায় নাপাক নুতফার তৈরী বলা গোমরাহী ছাড়া আর কিছুই নয়,যেমনটি মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক সাহেবের মত কতিপয় দুনিয়াধারী জাহেল আলেমগণ করেছেন।এবার আমরা মূল আলোচনায় আসবো যে,সর্বপ্রথম রাসূল (ﷺ)-এর নূরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এ বিষয়ে সনদ ভিত্তিক কোনো বর্ণনা রয়েছে কিনা।

★১. ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

أَخْبَرَنَا أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ سِيمَاءَ الْمُقْرِئُ، قَدِمَ عَلَيْنَا حَاجًّا، حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ الْخَلِيلُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ الْخَلِيلِ الْقَاضِي السِّجْزِيُّ، أَنْبَأَنَا أَبُو الْعَبَّاسِ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ الثَّقَفِيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو عُبَيْدِ اللهِ يَحْيَى بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ السَّكَنِ، حَدَّثَنَا حَبَّانُ بْنُ هِلَالٍ، حَدَّثَنَا مُبَارَكُ بْنُ فَضَالَةَ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ، عَنْ خُبَيْبِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَمَّا خَلَقَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ آدَمَ خَيَّرَ لِآدَمَ بَنِيهِ، فَجَعَلَ يَرَى فَضَائِلَ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ، قَالَ: فَرَآنِي نُورًا سَاطِعًا فِي أَسْفَلِهِمْ، فَقَالَ: يَا رَبِّ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا ابْنُكَ أَحْمَدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخَرُ وَهُوَ أَوَّلُ شَافِعٍ

‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,যখন আল্লাহ্ তা‘য়ালা হযরত আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করলেন,তখন তাঁকে তাঁর সন্তান-সন্ততি দেখালেন।হযরত আদম (عليه السلام) তাদের পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিরীক্ষা করতে থাকেন।অবশেষে তিঁনি একটি চমকদার নূর দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন: হে পরওয়ারদিগার! এ কার নূর? তিঁনি ইরশাদ করলেন, এ তোমার আওলাদ আহমদ (ﷺ)।তিঁনি (সৃষ্টিতে) প্রথম এবং প্রেরণের দিক থেকে (সকল নবীদের) শেষে,হাশরের ময়দানে তিনিই সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী হবেন।’’
   ✳️✳️✳️✳️দলিল✳️✳️✳️✳️✳️
*(ক.) ইমাম বায়হাকী,দালায়েলুল নবুয়ত, ৫/৪৮৩ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত।
*(খ.) ইমাম সুয়ূতী: খাসায়েসুল কোবরা: ১/৭০ পৃ. হা/১৭৩।
*(গ.) আল্লামা ইমাম ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক : ৭/৩৯৪-৩৯৫ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন। *(ঘ.) ইমাম জুরকানী,শারহুল মাওয়াহেব, ১/৪৩ পৃ., দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত,লেবানন।
*(ঙ.) মুত্তাকী হিন্দী: কানযুল উম্মাল: ১১/৪৩৭ পৃ. হা/৩২০৫৬।
*(চ.) আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, শরফুল মুস্তফা,৪/২৮৫ পৃ.।
*(ছ.) ইমাম কাস্তাল্লানী,মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া,১/৪৯ পৃ.।
*(জ.) ইমাম দিয়ার বকরী,তারীখুল খামীস, ১/৪৫ পৃ.।
*(ঝ.) র্সারাজ,হাদিসাহ,হাদিস নং.২৬২৮। *(ঞ.) ইবনে হাজার আসকালানী,  আল-মুখালি­সিয়্যাত,৩/২০৭ পৃ.হা/২৩৪০।
*(ট.) সালিম র্জারার,আল-ইমা ইলা যাওয়াইদ,৬/৪৭৮ পৃ. হা/৬০৮৩।
*(ঠ.) ইবনে সালেহ শামী,সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ,১/৭১ পৃ.।
*(ড.) ইফরাকী,মুখতাসারে তারীখে দামেস্ক,২/১১১ পৃ.।

  পর্যালোচনা
এ হাদিস থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হল স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা মহান রব্বুল আ‘লামীন রাসূল (ﷺ)-এঁর কে সৃকল সৃষ্টির প্রথম বলে ঘোষণা দিয়েছেন,তারপরও যারা এর বিপরীতমুখি আক্বিদা অন্তরে ধারণ করেন তাদের আক্বিদা-ঈমান কতটুকু গ্রহণযোগ্য তার চিন্তার বিষয়, পাঠকবর্গ! যারা আল্লাহর বিপরীত কথা বলে সহজেই বুঝা যায় সৃষ্টিকর্তাকেও তারা ভয় করে না, যে আলেম দাবীদার অথচ আল্লাহকে ভয় করে না সে কি নিজেকে আলেম দাবী করতে পারে!

✊এ বিষয়ে মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ

‘‘আলেমগণই কেবল আল্লাহকে ভয় করেন।’’
[সূরা ফাতির,আয়াত নং ২৮]

✌️এ হাদিস থেকে আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হলো যে,হযরত আদম (عليه السلام) রাসূল (ﷺ) কে নূর রূপেই দেখেছিলেন,আজ উনার কতিপয় মানব রূপী সন্তানগণ তাঁর বিপরীত আক্বিদা পোষণ করেন।

  ♻️♻️♻️সনদ পর্যালোচনা♻️♻️♻️
এ হাদিসটির সনদটি সহীহ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।এমনকি আহলে হাদিসদের ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী (১৯৯৯ খৃ.) এ সনদটি প্রসঙ্গে লিখেন-

قلت: وهذا إسناد حسن؛ رجاله كلهم ثقات رجال البخاري

‘‘আমি (আলবানী) বলছি,এই হাদিসের সনদ ‘হাসান’, এর সকল বর্ণনাকারীগণ সহীহ বুখারীর বর্ণনাকারী ন্যায়।’’
[আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্ দ্বঈফাহ, হা/৬৪৮২]

★আলবানী প্রথমে এ সনদটিতে রাবী ‘মোবারক বিন ফাদ্বালাহ’ এর কারণে যঈফ বলতে চেয়েছেন। আমি বলবো, এ রাবী সিকাহ এবং তার হাদিস গ্রহণযোগ্য।

✊ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

وقال عثمان الدارمي سألت بن معين عن الربيع فقال ليس به بأس

‘‘উসমান দারেমী (রহ.) এ রাবী সম্পর্কে ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله)‘র কাছে জানতে চান তিনি তার শায়খ রুবীঈ থেকে বর্ণনা করেন,তিনি বলেছেন,তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’
[ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ১০/৩০ পৃ. ক্রমিক নং.৪৯]

★উক্ত ইমাম আরও উল্লেখ করেন-

وقال عمرو بن علي سمعت عفان يقول كان مبارك معتبرا

‘‘হযরত আমর বিন আলী বলেন,আমি শায়খ আফ্ফান ইবনে মুসলিম (رحمة الله) কে বলতে শুনেছি,মোবারকের তিনি হাদিস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য।’’
[ইবনে হাজার আসকালানী,তাহযিবুত তাহযিব, ১০/৩০ পৃ. মিয্যী,তাহযিবুল কামাল, ২৭/১৮৪ পৃ.]

✊ইমাম ইবনে হাজার  আরও উল্লেখ করেন- وذكره بن حبان في الثقات -‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান  তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন।’’
[ইবনে হাজার আসকালানী,তাহযিবুত তাহযিব, ১০/৩০ পৃ. ক্রমিক নং. ৪৯]

★★উক্ত ইমাম আরও উল্লেখ করেন-

وقال العجلي لا بأس به. وقال أبو زرعة يدلس كثيرا فإذا قال حدثنا فهو ثقة

‘‘ইমাম ইজলী  বলেন,তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।ইমাম আবু যারওয়া  বলেন,তিনি অনেক হাদিসে তাদলীস করতেন,তবে তিনি হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে যখন (حدثنا) বলে বর্ণনা করবেন অর্থাৎ তাদলীস করবেন না তখন তিনি সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’
[ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ১০/৩০ পৃ. ক্রমিক নং. ৪৯]

★তাই প্রমাণিত হল এ হাদিস সহীহ, কেননা তিনি এ হাদিসে তাদলীস করেননি।

✌️এমনকি আলবানীও লিখেছে-

والذي عليه المحققون أنه صدوق لا بأس به؛ إذا صرح بالتحديث

‘‘তাঁর বিষয়ে মুহাক্কিকগণ বলেছেন, নিশ্চয় তিনি সত্যবাদীর অর্ন্তভুক্ত,তার হাদিস গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই, তবে যখন তিনি তাদলীসবিহীন বর্ণনা করবেন।’’
[আলবানী,সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্ দ্বঈফাহ, ১৩/১০৮৩ পৃ. হা/৬৪৮২]

⏺️ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী  আরও উল্লেখ করেন-

وقال بن أبي خيثمة عن بن معين ثقة

‘‘মুহাদ্দিস ইবনে আবি খায়ছামা তিনি ইমাম ইবনে মাঈন থেকে বর্ণনা করেন যে, মোবারাক সিকাহ বা বিশ্বস্ত রাবী।’’
[ইবনে হাজার আসকালানী,তাহযিবুত তাহযিব, ১০/৩০ পৃ. ক্রমিক নং. ৪৯]

✊তাই প্রমাণিত হল সনদটি সহীহ তাতে কোন সন্দেহ নেই।ধোঁকাবাজদের চিনে রাখুন!

★‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ২১৮ পৃষ্ঠায় মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মালেক আমার বিরোদ্ধে লিখতে গিয়ে এক চরম পর্যায়ের মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করেন,তিনি লিখেন-‘‘এ ক্ষেত্রে তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত হাওয়ালা দিয়েছেন তার সবগুলোই সনদহীন।’’

★সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তার যদি একটুও আল্লাহর ভয় থাকতো এবং লজ্জা থাকলে তিনি কি এ কথা লিখতে পারতেন! ইতিহাস সাক্ষী এ পৃথিবীতে যত ধর্ম ব্যবসায়িক ছিল তাদের কারোই আল্লাহর ভয় এবং লজ্জা কোনোটিই ছিল না।

Leave a comment