রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?

[পরিমার্জিত সংকলন ২৫-৩০পর্ব]

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(২৫ম পর্ব)

অনেকে বলেন কোরআনে নূর বলা হয়েছে কিন্তু নূরের তৈরী বলা হয়নি, আবার কেউ বলেন শুধু রুহ মোবারক নূর কিন্তু দেহমোবারক নয়,আবার কেউ বলেন সাদা মাটির তৈরী (নাউযুবিল্লাহ!) আজকে ইন-শা-আল্লাহ সে বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো-[১৭ম অংশ]

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

রাসূল (ﷺ) হলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি,যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না।[1st Part]

★১৮৭. সর্ব প্রথম আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় রাসূলের নূর মোবারক সৃষ্টি করেন।হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে:

عن جابر رصي الله عنه قال قلت يا رسول صلي الله عليه و سلم بابي انت و امي اخبرني عن اول شييء خلق الله تعالي قبل الاشياء قال يا جابر ان الله تعالي قد خلق قبل الاشياء نور نبيك من نوره فجعل ذالك النور يدور بالقدرة حيث شاء الله تعالي ولم يكن في ذالك الوقت لوح ولا قلم ولا جتة ولا نار ولا ملك ولا سماء ولا ارض ولا شمس ولا قمر ولا جني ولا انسي ….الي اخر

অর্থ:হযরত জাবের (রাঃ) হতে বর্নিত।তিনি বলেন,আমি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনাকে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা, মাতা আঁপনার জন্য কুরবানি হোক, আঁপনি আমাকে জানিয়ে দিন যে, আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেছেন?

তিঁনি বলেন, হে জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু! নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম সব কিছুর পূর্বে আঁপনার নবীর নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর সেই নূর মুবারক আল্লাহ পাক উঁনার ইচ্ছা অনুযায়ী কুদরতের মাঝে ঘুরছিলো।আর সে সময় লওহো,ক্বলম,জান্নাত, জাহান্নাম,ফেরেশতা,আসমান,জমিন,চন্দ্র,সূর্য,মানুষ ও জ্বিন কিছুই ছিলো না।
    ✳️✳️✳️✳️দলিল✳️✳️✳️✳️
*১. মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক ১/৯৯, হাদীস নং ১৮ 
*২.দালায়েলুন নবুওয়াত ১৩/৬৩ 
*৩. মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া ১/৯ 
*৪. মাদারেজুন নবুওয়াত ২/২ 
*৫. যুরকানী ১/৪৬
*৬. রুহুল মায়ানী ১৭/১০৫ 
*৭. সিরাতে হালবীয়া ১/৩০ 
*৮. মাতালেউল মাসাররাত ২৬৫ পৃ:
*৯. ফতোয়ায়ে হাদীসিয়া ১৮৯ পৃ:
*১০. নি’মাতুল কুবরা ২য় পৃ:

*১১. হাদ্বীকায়ে নদীয়া ২/৩৭৫ 
*১২. দাইলামী শরীফ ২/১৯১ 
*১৩. মকতুবাত শরীফ, ৩য় খন্ড, ১০০ নং মকতুব 
*১৪. মওজুয়াতুল কবীর ৮৩ পৃ:
*১৫. ইনছানুল উয়ুন ১/২৯
*১৬. নূরে মুহম্মদী ৪৭ পৃ:
*১৭. আল আনোয়ার ফি মাওলিদিন নবী ৫ পৃ:
*১৮. নশরুতত্বীব ৫ পৃ:
*১৯. তারীখুল খমীস ১/২০ 
*২০. নুজহাতুল মাজালিস ১ম খন্ড

*২১. দুররুল মুনাজ্জাম ৩২ পৃ: 
*২২. কাশফুল খফা ১/৩১১ 
*২৩. তারিখ আননূর ১/৮ 
*২৪. আনোয়ারে মুহম্মদীয়া ১/৭৮ 
*২৫. আল মাওয়ারিদে রাবী ফী মাওলীদিন নবী ৪০ পৃষ্ঠা ।
*২৬. মজমুয়ায়ে ফতোয়া ২/২৬০
*২৭.  দেওবন্দী আজিজুল হক অনুবাদ কৃত বুখারী শরীফ ৫/৩ 
*২৮. আপকা মাসায়েল আওর উনকা হাল ৩/৮৩ 
*২৯.  শিহাবুছ ছাকিব ৫০ 
*৩০.মুনছিবে ইছমত ১৬ পৃ :
*৩১. রেসালায়ে নূর ২ পৃ:
*৩২. হাদীয়াতুল মাহদী ৫৬পৃ :
*৩৩. মা’ য়ারিফে মুহম্মদী 
*৩৪. আনফাসে রহীমিয়া
*৩৫. আফদ্বালুল ক্বোরা 
*৩৬. তাওয়ারীখে মুহম্মদ

    হাদিসের সনদ
১. হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম 
                    ⏬
২. হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু 
                    ⏬ 
৩. মুহাম্মাদ বিন মুনকাদার রাহমাতুল্লাহি আলাইহি 
                     ⏬
৪. মা’মার বিন রাশীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি 
                     ⏬
৫. আব্দুর রাজ্জাক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।

বর্নিত হাদীস শরীফের রাবীদের সম্পর্কে মুহাদ্দীগণের মন্তব্য দেখুন:

*(ক.) হাফিজে হাদীস,তাবে তাবেয়ীন ইমাম আব্দুর রাজ্জাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে:  আহমাদ ইবন সালীহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আমি একবার আহমাদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি হাদীস শাস্ত্রে আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে নির্ভরযোগ্য আর কাউকে পেয়েছেন? আহমাদ বিন হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, না”। 
[তাহজিবুত তাহজিব লি হাফিয ইবনে হাজর আসক্বলানী ২/৩৩১]

*(খ.) অপর রাবী মা’মার বিন রাশীদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে: উনার সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি বাসরার সকল হাদীস শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞের থেকে মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাকে মা’মার বিন রাশীদ এর সূত্রে পাওয়া হাদীসগুলো পছন্দ করি।

*ইবনে হাজর আসকলানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে প্রখর স্বরনশক্তি সম্পন্ন এবং নির্ভরযোগ্য বলেন। 
[তাহজিবুত তাহজিব ১/৫০৫,  আসমাউর রেজাল।]

*উক্ত মা’মার বিন রাশীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে বর্ণিত বুখারী শরীফের হাদীস সংখ্যা প্রায় ২২৫ টি এবং মুসলিম শারীফে বর্ণিত হাদীস সংখ্যা প্রায় ৩০০ টি।

*(গ.) হাদীসটির আরেক রাবী হলেন মুহাম্মাদ বিন মুকদার রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে:  ইমাম হুমায়দি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,মুকদার রহমতুল্লাহি আলাইহি একজন হাফিজ, ইমাম জারাহ তাদীলের ইমাম ইবন মা’ঈন রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উনি নির্ভরযোগ্য। 
[তাহজিবুত তাহজিব ০৯/১১০৪৮,
আসমাউর রেজাল।]

*হযরত মুকদার রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা বুখারী শারীফে ৩০টি এবং মুসলিম শারীফে ২২টি।

*(ঘ.) আর মূল বর্ননাকারী হলেন হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু একজন সুপ্রসিদ্ধ সাহাবী। বুখারী ও মুসলিম শরীফের উনার থেকে বর্ণিত অনেক হাদীস আছে।

✌সুতরাং হাদীসটির সকল রাবীই নির্ভরযোগ্য এবং উনাদের সূত্রে বুখারী ও মুসলিম শরীফেও হাদীস বর্ণিত আছে। সুতরাং বলা যায়, ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহমাতুল্লাহি উভয়ের হাদীস শর্তানুসারে হাদীসটি সহীহ।

✊এবার দেখুন জগৎবিখ্যাত মুহাদ্দিস, ইমামগন কি বলেছেন!!

★১. জগৎবিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম, আল্লামা বায়হাক্বী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে বর্ননা করেন

ان الله تعالي خلق قبل الاشياء نور نبيك

“….. নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম উঁনার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার “নূর” মোবারক সৃষ্টি করেন।”
[দালায়েলুন নবুওয়াত লিল বায়হাক্বী,১৩ তম খন্ড, ৬৩ পৃষ্ঠা]

★২. অনাদি-অনন্ত মহান সত্ত্বা আল্লাহ তায়ালা একাই ছিলেন,ছিলেন গুপ্ত।ইচ্ছা করলেন নিজেকে প্রকাশ করার,সে অনুযায়ী সৃষ্টি করলেন গোটা সৃষ্টি জগত।সৃষ্টির কেন্দ্র বানিয়েছেন যাঁকে, যাকে করেছেন সকল সৃষ্টি অস্তিত্বে আসার মাধ্যম যিনি তিঁনি হলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

যেমন: আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالأِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ

‘আঁমি জ্বীন এবং মানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আঁমার ইবাদাতের জন্য।’
[সূরা যারিয়াত,আয়াত নং ৫৬]

★এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা মাহমুদ আলুসী বাগদাদী একটি হাদিসে কুদসীর উদৃতি দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:

كنت كنزا مخفيا فأحببت أن أعرف فخلقت الخلق لاعرف

‘আঁমি ছিলাম সুপ্ত গুপ্ত ভান্ডার,পছন্দ করলাম পরিচিত হতে।অতএব পরিচয়ের জন্য সৃষ্টি করলাম এক সৃষ্টিকে।’
[আল্লামা আলুসী,রুহুল মা‘আনী: ২৭ পারা,২২ পৃষ্ঠা; শায়খ ইবনু আরাবী, ফুতুহাতে মাক্কিয়া: ১৪২; আল্লামা আবু সাউদ উমাদি, আবু সাউদ: ২/১৩০]

✌হাদিস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে
كنت كنزا مخفيا فاحببت ان اعرف فخلقت الخلقت لاعرف

অর্থ: আল্লাহ পাক বলেন,আঁমি গুপ্ত ছিলাম। আঁমার মুহব্বত হলো যে, আঁমি জাহির/প্রকাশিত হই। তখন আঁমি আঁমার ( রুবুবিয়্যত) জাহির করার জন্য সৃষ্টি করলাম মাখলুকাত”
         *****দলিল*****
*১. আল মাকাসিদুল হাসানা-৮৩৮
*২. কাশফুল খিফা-২০১৩
*৩. আসনাল মুত্বলিব-১১১০
*৪. তমীযুত ত্বীব-১০৪৫
*৫. আসরারুল মরফুয়া-৩৩৫
*৬. তানযিয়াতুশ শরীয়া,১/১৪৮
*৭. আদ্দুরুল মুন্তাসিরা-৩৩০
*৮. আত তাযকিরা ফি আহাদীসিল মুশতাহিরা-১৩৬
*৯. কানযুল উম্মাল।

✌আল্লাহ পাক হাদীসে কুদসিতে ইরশাদ করেন-
لولاك لما اظهرت الربوبية

অর্থ : হে আঁমার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আঁপনাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্যে না থাকলে আঁমি রুবুবিয়্যাতই প্রকাশ করতাম না।”[কানযুল উম্মাল]

★৪. বিখ্যাত তাফসির কারক, ইমামুল মুফাসসিরীন,আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:

ان الله تعالي خلق جميع الاشياء من نور محمد صلي الله عليه و سلم ولم ينقص من نوره سيء
অর্থ: এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক সকল মাখলুকাত “নূরে মুহম্মদী” সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সৃষ্টি করেছেন। অথচ “নূরে মুহম্মদী” সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে কিঞ্চিত পরিমানও কমে নাই।” 
[তাফসীরে রুহুল বয়ান ৭ম খন্ড ১৯৭-১৯৮ পৃষ্ঠা]

★৫. আবার বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ইসমাইল হাক্কী (রহ:) সুরা যুখরুফ ৮১ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় একটি হাদিস উল্লেখ করেন,ইমাম জাফর সাদেক (রহ:) বলেন, আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম নুরে মুহাম্মাদী (ﷺ) কে সৃষ্টি করছেন।
[ইসমাইল হাক্কী : রুহুল বয়ান : ৮/৩৯৬ পৃ: সুরা যুখরুফ : ৮১]

★৬. আল্লামা আলূসী বাগদাদী (রহঃ) উক্ত হাদীস শরীফকে নির্ভরযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি উনার কিতাবে লিখেন:
ولذا كان نوره صلي الله عليه و سلم اول المخلوقات ففي الخبر اول ما خلق الله تعالي نور نبيك ياجابر

অর্থ : সকল মাখলুকাতের মধ্যে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হলো, নূরে মুহম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।যেমন-হাদীস শরীফে বর্নিত আছে, হে জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু! আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আঁপনার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন।”
[রুহুল মায়ানী ১৭ তম খন্ড ১০৫ পৃষ্ঠা]

★৭. ইমামুল মুহাদ্দিসীন মোল্লা আলী কারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:

وامانوره صلي الله عليه و سلم فهو في غاياة من الظهور شرقا و غربا واول ما خلق الله نوره وسماه في كتابه نورا

অর্থ: হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার নূর মুবারক পূর্ব ও পশ্চিমে পূর্নরুপে প্রকাশ পেয়েছে। আর মহান আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম উঁনার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন। তাই নিঁজ কিতাব কালামুল্লাহ শরীফে উনার নাম মুবারক রাখেন ‘নূর’।” 
[আল মওযুআতুল কবীর ৮৩ পৃষ্ঠা]

★৮. বিখ্যাত মুহাদ্দিস,আরেফ বিল্লাহ, সাইয়্যিদিনা আব্দুল গনী নাবলুসী (রহ:) উক্ত হাদীস শরীফকে সরাসরি সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন:

قد خلق كل شيي من نوره صلي الله عليه و سلم كما ورد به الحديث الصحيح

অর্থ: নিশ্চয়ই প্রত্যেক জিনিস হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি হয়েছে, যেমন এ ব্যাপারে ‘সহীহ’ হাদীস শরীফ বর্নিত রয়েছে।”
[হাদীক্বায়ে নদীয়া,২য় অধ্যায়,৬০ তম অনুচ্ছেদ-২য় খন্ড ৩৭৫ পৃষ্ঠা]

★৯. শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী (রহঃ) তিনি উক্ত হাদীসে জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বা নূর সংক্রান্ত হাদীস শরীফকে সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন।তিনি উনার কিতাবে লিখেন:

درحديث صحيح وارد شد كه اول ما خلق الله نوري
অর্থ: “সহীহ হাদীস শরীফে” বর্নিত হয়েছে যে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম আঁমার নূর মোবারক সৃষ্টি করেন!”
[মাদারেজুন নবুওয়াত ২য় খন্ড ২ পৃ:]

★১০.বিখ্যাত মুহাদ্দিস,আল্লামা আবুল হাসান বিন আব্দিল্লাহ আল বিকরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:

قال علي رضي الله عنه كان الله ولا شيء معه فاول ما خلق نور حبيبه قبل ان يخلق الماء والعرش والكرسي واللوح والقلم والجنة وانار والحجاب

অর্থ: হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম বলেন, শুধুমাত্র আল্লাহ পাক ছিলেন, তখন অন্য কোন অস্তিত্ব ছিলো না।অতঃপর তিঁনি পানি,আরশ, কুরসী,লওহো,ক্বলম,জান্নাত,জাহান্নাম ও পর্দা সমূহ ইত্যাদি সৃষ্টি করার পূর্বে উঁনার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার নূর মোবারক সৃষ্টি করেন।”
[আল আনওয়ার ফী মাওলিদিন নাবিয়্যিল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৫ পৃষ্ঠা]

★১১.ইমাম বদরউদ্দিন আঈনী (রহঃ) বলেনঃ

روى أحمد والترمذي مصححا من حديث عبادة بن الصامت مرفوعاً أول ما خلق الله القلم ثم قال أكتب فجرى بما هو كائن إلى يوم القيامة واختاره الحسن وعطاء ومجاهد وإليه ذهب إبن جرير وابن الجوزي وحكى ابن جرير عن محمد بن إسحاق أنه قال أول ما خلق الله تعالى النور والظلمة ثم ميز بينهما فجعل الظلمة ليلاً أسود مظلماً وجعل النور نهاراً أبيض مبصراً وقيل أو ما خلق الله تعالى نور محمد قلت التوفيق بين هذه الروايات بأن الأولية نسبي وكل شيء قيل فيه إنه أول فهو بالنسبة إلى ما بعدها

ইমাম আহমদ এবং ইমাম তিরমিজি (রঃ) মারফু হাদিস সহিহ সনদ সহ ইবাদা বিন সামিত থেকে বর্ননা করে প্রমাণ করেন যে,” আল্লাহ্‌ সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন এবং একে বলল, লিখ এবং এটা বিচার দিবসের আগ পর্যন্ত সবকিছু লিখল।হাসান,আতা,­ মুজাহিদ ও এটা অবলম্বন করেছেন।ইবন জারির এবং ইবন জাউজির ও এমন মাজহাব ছিল।যেখানে ইবন জারির, মুহাম্মদ বিন ইসহাক থেকে বর্ননা করেন যে,”আল্লাহ সবকিছুর পূর্বে আলো (নূর) এবং আঁধার সৃষ্টি করেছেন। তারপর তাদের মদ্ধে পৃথকীকরণ করেন।এখানে আরও বলা আছে যে,”আল্লাহ্‌ সর্বপ্রথম মুহাম্মদ (ﷺ)-এঁর নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন। “
[Umdat ul Qari, Sharh Sahih Bukhari, Volume No:15, Page No:109]

★১২. ইমাম যুরকানী (রহ:) বলেন,হাদিসে পাকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হিসেবে “আকল” “কলম” ও ” আঁমার নুর” তিনটি বস্তু মুলত নবীকুল সম্রাট এঁর নুর মোবারককেই বুঝানো হয়েছে। সর্বাগ্রে, নিরেট ও নির্ভেজাল অস্তিত্বময় একমাত্র তারই সত্ত্বা।
[শরহে মাওয়াহিব : ৭ম খন্ড : ২৫৪ পৃ]

★১৩. ইমাম শারানী (রহ:) বলেন, “নুর কিংবা আকল পরস্পর বৈপরিত্য নেই।এগুলো হাকিকতে মুহাম্মদী (ﷺ)-এঁর বহুমুখী পরিচিতি।”
[ইমাম শারানী :ইয়াকুত ওয়াল জাওয়াহির: ২য় খন্ড ২০ পৃ:]

★১৪.বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, আল্লামা ইমাম মুহম্মদ মাহদ ইবনে আহমদ ফার্সী (রহ:) আলাইহি উক্ত হাদীস শরীফকে সহীহ বলে নিজের কিতাব মুবারকে উল্লেখ করেছেন।তিনি বর্ননা করেন:

اول ما خلق الله نوره ومن نوري خلق كل شءي
অর্থ : মহান আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আঁমার নূর মোবারক সৃষ্টি করেন এবং আঁমার নূর মোবারক থেকে সবকিছু সৃষ্টি করেন।”
[মাতালেউল মাসাররাত ২৬৫ পৃষ্ঠা]

★১৫. ইমাম আবুল হাসান আশআরী (রহ:) বলেন: আল্লাহ পাক নুর তবে অন্যান্য নুরের মত নন। আর নবী করিম (ﷺ)-এঁর রুহ মুবারক হচ্ছে তার (আল্লাহর) নুরের ঝলক। আর ফেরেশতাগন হচ্ছেন তাঁর (রাসুলের) নুরের শিখা।যেমন রাসুল (ﷺ) ইরশাদ করেন,”আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আঁমার নুর সৃষ্টি করেছেন আর আঁমার নুর থেকে আল্লাহ প্রত্যেক কিছু সৃষ্টি করেছেন।
[ইমাম মাহদী আল ফার্সী : মাতালিউল মুসাররাত : ২১ পৃ:]

★১৬. শাইখ আব্দুল কাদির জিলানী (রহ:) [পিরে পিরানী,মিরে মিরানী,গাউসে সামাদানী, মাহবুবে সুবহানী,গাউসুল আযম দস্তগীর (রহ:), ওফাত ৫৬১ হিজরি]

তিঁনি তাঁর বিখ্যাত [Sirr al-asrar fi ma yahtaju ilayh al-abrar (P. 12-14 of the Lahore edition)] কিতাবে বলেন, আঁমি (রাসুল) আল্লাহর (নুর) থেকে সৃষ্টি আর আঁমার (নুর) থেকে সমস্ত বিশ্বাসীগন (ও সমস্ত কিছু) সৃষ্টি।তিনি আরো বলেন, রাসুল (ﷺ)-এঁর নুর থেকে আল্লাহর আরশ সৃষ্টি এবং এমন আরো কিছু (যা হাদিসে প্রথম) সৃষ্টি যেমন কলম, বুদ্ধিমত্তা [The Secret of Secrets (Cambridge: Islamic Texts Society, 1994)]

★১৭. হযরত কাব আহবার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন যখন সৃষ্টি জগত সৃজন করার ইচ্ছা করলেন তখন মাটিকে সস্প্রসারিত করলেন,আকাশকে উঁচু করলেন এবং আপন নূর হতে এক মুষ্ঠি নূর গ্রহন করলেন।তারপর উক্ত নূরকে নির্দেশ দিলেন‘ তুঁমি মুহাম্মাদ হয়ে যাও।’অতএব সে নূর স্তম্ভের ন্যায় উপরের দিকে উঠতে থাকল এবং মহত্বের পর্দা পর্যন্ত পৈাছে সিজদায় পরে বলল,‘আলহামদুলিল্লাহ্’ তখন আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে ইরশাদ হল,এজন্যই তোঁমাকে সৃষ্টি করেছি আর তোঁমার নাম মুহাম্মাদ রেখেছি। তোঁমার হতেই সৃষ্টি কাজ শুরু করব এবং তোঁমাতেই রিসালাতের ধারা সমাপ্ত করব ।
[সিরাতুল হালাভিয়া ১ম খন্ড,পৃঃ ৫০]

★১৮. ইবনে জাওজী (রহ:) বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এঁর বানী : “আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আঁমার নুর মোবারক সৃষ্টি করেছেন আর আঁমার নুর থেকে কুল কায়িনাত সৃষ্টি করেছেন।
[ইবনে জাওজী: বয়ানুল মীলাদুন্নবী (ﷺ)- ২২ পৃ:]

★১৯. হযরত আব্দুল কাদীর জিলানী (রহ:) বলেন, পরম গৌরবান্বিত ও মহিমান্বিত আল্লাহ পাক বলেছেন, আঁমি আঁমার নিঁজ জাতের কুদরতী জামালের নুর হতে মুহাম্মদ (ﷺ)-এঁর রুহ সৃষ্টি করেছি। এর প্রমান হল রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এঁর হাদিস আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন তা হল আঁমার নুর মুবারক।
[ইমাম শাতনুফী : বাহজাতুল আসরার: ১২ পৃ:]

★২০. মাওলানা সাইয়্যেদ হুসাইন আহমদ মাদানী বলেন-

غرضیکہ حقیقت محمد صلی الله علیه وسلم التحیۃ واسطہ جملہ کمالات عالم عالمیہ ہے یہ ھی معنی لولاک لما خلقت الافلاک اور اول ما خلق اللہ نوری اور انا نبی الانبیاء کے ہیں

মোট কথা হলো সমস্ত কায়েনাত বা আলম হাকীকতে মুহাম্মদী তথা নূরে মুহাম্মদী থেকে সৃষ্ট।যেমন হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, যদি আঁপনি না হতেন তবে আঁমি সকল আসমান-যমীন কিছুই সৃষ্টি করতাম না।রাসূল صلی الله علیه وسلم এর বানী, মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম আঁমার নূর সৃষ্টি করেছেন এবং আরও বলেন আঁমি নবীদেরও নবী।
[আশ শিহাবুস সাক্বিব-পৃ: ৫০।কুতুবখানায়ে রহিমিয়্যাহ, সাহানপুর,ভারত থেকে প্রকাশিত]

রাসুল (ﷺ)-এঁর নূর সম্পর্কে আমাদের নতুুুন করে বলার অবকাশ রাখে না কী চমৎকার করে বলে দিলেন দেওবন্দের মুহতারাম শায়খুল হাদিস! সবচেয়ে বড় কথা হল হুসাইন আহমদ মাদানী ওহাবীদের গুরু “আহমদ শফীর” পীর সাহেব!  ওহাবীরা কি নিজেদের পীরের কথাও মানবে না?

★২১. আশরাফ আলী থানবী নিজেই উক্ত হাদীস শরীফকে তার কিতাব “নশরুত তীব” উল্লেখ করেছেন। তিনি সেখানে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন, তার নাম দিয়েছেন ” নূরে মুহম্মদীর বিবরন”। তাছাড়াও প্রথমে তিনি যা লিখেছেন তা হলো: “আব্দুর রাজ্জাক তাঁর সনদসহ হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ননা করেছেন যে, আমি আরজ করলাম : ইয়া রসূল্লাল্লাহ আমার পিতা মাতা আঁপনার জন্য কোরবান হউক, আমাকে এই খবর দিন যে, আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম কোন বস্তুটি সৃষ্টি করেছেন?

জবাবে আশরাফ আলী থানবী তার কিতাবে লিখেছেন

يا جابر ان الله تعالي قد خلق قبل الاشياء نور نبيك
অর্থ: হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ মুবারক করেন,হে জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু! নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সব কিছুর পূর্বে আঁপনার নবীর নূর মুবারক সৃষ্টি করছেন।”
[ নশরুততীব ৫ পৃষ্ঠা]

✌এবার আসুন।একটু গভীর থেকে দেখা যাক; রাসুল (ﷺ)-এঁর সৃষ্টি বিষয়ে মাওলানা আশরাফ আলী থানবী’র দৃষ্টিভঙ্গি কি রকম??

দেওবন্দের ওলামাগণ অর্থাৎ ওহাবীরা যাকে হাকিমুল উম্মত উপাধিতে ভূষিত করে থাকেন তিনি হলেন মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (মৃতঃ১৩৬২ হি.)।মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব এর অন্যতম সিরাত গ্রন্থ “ নশরুত্তীব ফি যিকরেন্নাবিয়িল হাবিব” এর ২৫ পৃষ্টায় রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি মর্মে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন।এই কিতাবটি বাংলা অনুবাদও করেছে বেহায়া ওহাবীরা, নাম দিয়েছে “যে ফুলের খুশবুতে সারা জাহান মাতোয়ারা” অনুবাদ করেছেন সাবেক ইমাম ও খতিব লালবাগ শাহী মসজিদ, মাওলানা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম।

✌যাক আশরাফ আলী থানবী অধ্যায়টির নাম দিয়েছেন, “নূরে মোহাম্মদী (ﷺ)-এঁর বর্ণনা”।

তারপর মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব হযরত জাবের (রা:) এর হাদিস এভাবে বর্ণনা শুরু করেন-

“প্রথম বর্ণনাঃ জাবের رضي الله عنه হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি আরজ করলাম ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার মাতা পিতা আপনার প্রতি উৎসর্গ।আঁমাকে বলুন, আল্লাহ তা’আলা সবকিছুর পূর্বে কি সৃষ্টি করেছেন? হুজুর (ﷺ) ফরমালেন, হে জাবের! নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সবকিছুর পূর্বে তাঁর নূরের ফয়েজ হতে তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন।অতঃপর ঐ নূর খোদায়ী কুদরতে যেখানে আল্লাহর ইচ্ছা ভ্রমণ করতে থাকে।তখন লওহ,কলম,জান্নাত,জাহান্নাম,ফেরেশতা, আসমান,জমীন,সূর্য,চন্দ্র,দানব,মানব কিছুই ছিল না।অতঃপর যখন আল্লাহপাক বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করলেন,তখন ঐ নূরকে চারভাগে বিভক্ত করেন।একভাগ দ্বারা কলম সৃষ্টি করলেন,দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা লওহ,আর তৃতীয় ভাগ দ্বারা আরশ সৃষ্টি করেন……….” এরপর সুদীর্ঘ হাদিস রয়েছে।“
[আশরাফ আলী থানবী,নশরুত্তীব ফি যিকরেন্নাবিয়িল হাবিব,২৫ পৃঃ, মারকাযে মা’রিফ হাকিমুল উম্মত, বায়তুশ শরফ,থানাবন,মুজাফফর নগর,ইউপি, ভারত থেকে প্রকাশিত]

✌হযরত জাবের رضي الله عنه এর বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনা করে তিনি এর ব্যাখ্যায় লিখেন-“এ হাদিস দ্বারা বাস্তবিক পক্ষে সর্বপ্রথম নূরে মুহাম্মদী (ﷺ)-সৃষ্টি হওয়া প্রমাণিত।কেননা যেসব সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রথম সৃষ্টি বলে হাদিসে বর্ণনায় এসেছে।ওইসব সৃষ্টি ‘নূরে মুহাম্মদী’ থেকে পরে সৃষ্টি হবার বিষয়টি আলোচ্য হাদিস দ্বারা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত।“
[নশরুত্তীব ফি যিকরেন্নাবিয়িল হাবিবঃ ২৫ পৃঃ]

✌শুধু তাই নয়, আশরাফ আলী থানবীকে সর্মথন করে তার বরাত দিয়ে দেওবন্দী ইউসুফ লুদইয়ানবী তার কিতাবে লিখেন:

اپ صلي الله عليه و سلم نے فرمايا-اءے جابر اللہ تعالي نے تمام اشیاء سے پھلے تیرے نبي كا نور اپنے نوسے… اس حديث سے نور محمدي صلي الله عليه و سلم كا اول الخلق هونا باوليت حقيقت ثابت هوا

অর্থ: হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, হে জাবের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ! আল্লাহ পাক সব কিছুর পূর্বে আঁপনার নবীর নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন। এ হাদীস শরীফ দ্বারা হাক্বীক্বী ভাবে প্রমানিত হলো যে , নূরে মুহম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন প্রথম সৃষ্টি !”
[ আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল ৩ খন্ড ৮৩ পৃষ্ঠা]

★২২. বাংলাদেশের দেওবন্দীদের গর্ব শায়খুল হাদিস আজিজুল হক বুখারী শরীফে অনুবাদ করতে গিয়ে লিখেছেন: “নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম আল্লাহ পাক আঁপনার নবীর নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন।”
[আজিজুল হক অনুদিত বুখারী শরীফ ৫ম খন্ড, ৩-পৃষ্ঠা]

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(২৬ম পর্ব)

অনেকে বলেন কোরআনে নূর বলা হয়েছে কিন্তু নূরের তৈরী বলা হয়নি, আবার কেউ বলেন শুধু রুহ মোবারক নূর কিন্তু দেহমোবারক নয়,আবার কেউ বলেন সাদা মাটির তৈরী (নাউযুবিল্লাহ!) আজকে ইন-শা-আল্লাহ সে বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো-[১৮ম অংশ]

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

রাসূল (ﷺ) হলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি,যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না।[2nd Part]

★১৮৮.  (لَوْلاكَ لَمَا خَلَقْتُ الأَفْلاكِ) ‘রাসূল (ﷺ) সৃষ্টি না হলে কিছুই সৃষ্টি হত না’ হাদিসের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ:

মাওলানা মুতীউর রহমান ‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ১৬৩ পৃষ্ঠায় এ হাদিস নিয়ে লিখেছেন-‘‘এটা লোকমুখে হাদীসে কুদসী হিসেবে যথেষ্ট প্রসিদ্ধ।অথচ হাদীস বিশেষজ্ঞগণ এ ব্যাপারে একমত যে,এটা একটা ভিত্তিহীন রেওয়ায়েত।রাসূল (ﷺ)-এঁর হাদিসের সঙ্গে এর সামান্যতম সম্পর্কও নেই।’’

★উক্ত গ্রন্থের ১৬৪ পৃষ্ঠায় আরও লিখেছেন-“আল্লাহ তা‘আলা এই দুনিয়া ও সমগ্র জগৎ কেন সৃষ্টি করলেন তা জানার একমাত্র উপায় ওহী।ওহী শুধু কুরআন ও হাদীসেই সীমাবদ্ধ।যতক্ষণ পর্যন্ত কুরআনের আয়াত বা সহীহ হাদিসের মাধ্যমে এ কথা প্রমাণিত না হবে যে, একমাত্র তাঁর খাতিরেই সবকিছু সৃষ্টি করা হয়েছে, ততক্ষণ এই আক্বীদা রাখার সুযোগ নেই।’’

★অথচ উক্ত বইয়ে সে কোন মুহাদ্দিসের রায় ইবারত সহ উপস্থাপন করতে পারে নি।

★★অপরদিকে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পাদিত ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ ৫৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘‘এ বাক্যটি হাদীসে কুদ্সী হিসেবে অনেক মহলে প্রসিদ্ধ।অথচ হাদীস শাস্ত্রের বিজ্ঞ ইমামগণ বাক্যটিকে মাওজু এবং ভিত্তিহীন রেওয়ায়েত বলে অভিহিত করেছেন।’’

★তথাকথিত আরেক লেখক ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের ঈমান বিধ্বংসীকারী পুস্তক “হাদীসের নামে জালিয়াতি” এর ৩০৪ পৃষ্ঠায় এ হাদিস উল্লেখ করার পূর্বে লিখেছেন-‘‘এ ধরনের বানোয়াট কথাগুলোর একটি।’’

তিনি আরও একটু অগ্রসর হয়ে ৩০৫ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেন-‘‘মুহাদ্দিস একবাক্যে কথাটিকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন।কারণ এ শব্দে এ বাক্য কোনো হাদীসের গ্রন্থে কোনো প্রকার সনদে বর্ণিত হয়নি।’’

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এই জালিয়াতীকারী ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তো বললেন এ হাদিসটির কোন সনদই নেই; কিন্তু অন্যতম শীষ্য ড. মুহাম্মদ মানজুরুর রহমান তার লিখিত ‘মাউযু’ হাদীস বা প্রচলিত জাল হাদীস’ গ্রন্থের ১০৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘হাদীসটির সনদ মিথ্যা, বানোয়াট,আপত্তিকর ও অত্যন্ত দুর্বল বলে সাব্যস্ত।’’

★আরেক আহলে হাদিস ড. খ ম আব্দুর রাজ্জাক এর লিখা জালিয়াতী গ্রন্থ ‘প্রচলিত ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন’ এর ৫১ পৃষ্ঠায় এ হাদিস সম্পর্কে লিখেন-‘‘হাদীস বিশারদগণ উল্লেখিত হাদীসটিকে একবাক্যে এটিকে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন।’’

আহলে হাদিসদের তথাকথিত ইমাম নাসীরুদ্দীন আলবানী তার ‘সিলসিলাতুল আহাদিসিদ-দ্বঈফাহ’ গ্রন্থে এ হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-

موضوع. كما قاله الصغاني في  الأحاديث الموضوعة
‘‘হাদিসটি জাল বা বানোয়াট,যেমনটি আল্লামা সাগানী তার মাওদ্বু হাদিসের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।’’
[আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ১/৪৫০ পৃ. হা/২৮২]

✊এবার আমরা দেখবো বিভিন্ন এখতিলাফী সমাধান সংক্রান্ত হাদিসের কিতাবসমূহে এ হাদিস সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণ কী বলেছেন, আর বাস্তবতাই এ বিষয়টি প্রমাণিত কিনা।

*(ক.) দেওবন্দী ও আহলে হাদিসদের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি আল্লামা আবুল হাসানাত আব্দুল হাই লাখনৌভী লিখেন-

لَكِن مَعْنَاهُ صَحِيح فقد روى الديلمي عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ مَرْفُوعًا: أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ، قَالَ اللَّهُ يَا مُحَمَّدُ! لَوْلاكَ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَوْلاكَ مَا خَلَقْتُ النَّارَ
‘‘তবে এ হাদিসটির মমার্থ সহীহ বা বিশুদ্ধ। কেননা, ইমাম দায়লামী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে মারফূ সূত্রে বর্ণনা করেন,রাসূল (ﷺ)  ইরশাদ করেন, আঁমার নিকট একদা হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) আগমন করে বললেন,আঁপনার মহান রব বলেছেন, হে মুহাম্মদ! আঁমি যদি আঁপনাকে সৃজন না করতাম না বানাতাম জান্নাত,না জাহান্নাম।
[লাখনৌভী, আছাররুস সুনান, ৪৪ পৃ.]

✌️বুঝা গেল ইতোপূর্বের একজন মৌলভীও এ হাদিসটির বিষয়ে মাওলানা লাখনৌভির এ অভিমত উল্লেখ করেননি, উল্লেখ না করার কারণ হলো তাদের কাজই রাসূল (ﷺ)-এঁর শান ও মানকে গোপন করা,আর তাদের গোপন করার পিছনে রয়েছে এক বিশাল কালো শক্তির মদদ।

*(খ.) দশম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তাঁর লিখিত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মওদ্বুআতুল কাবীর’ এ উক্ত হাদিস  لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاك সম্পর্কে বলেন, 

قَالَ الصَّغَانِيُّ إِنَّهُ مَوْضُوعٌ كَذَا فِي الْخُلَاصَةِ لَكِنَّ مَعْنَاهُ صَحِيحٌ فَقَدْ رَوَى أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ النَّارَ وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ عَسَاكِرَ لَوْلَاكَ مَاخلقت الدنيا-
‘‘আল্লামা সাগানী বলেন, لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاك এই হাদিসটি শব্দগতভাবে مَوْضُوعٌ বা জাল (কিন্তু অর্থের দিক দিয়ে مَوْضُوعٌ নয়), আমি (মোল্লা আলী ক্বারী ) বলি, এর মর্মার্থ বা বিষয়বস্তু সঠিক।কেননা,ইমাম দায়লামী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে মারফূ সূত্রে বর্ণনা করেন,রাসূল (ﷺ)  ইরশাদ করেন,আঁমার নিকট একদা হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) আগমন করে বললেন, আঁপনার মহান রব বলেছেন,হে মুহাম্মদ! আঁমি যদি আঁপনাকে সৃজন না করতাম না বানাতাম জান্নাত,না জাহান্নাম।ইমাম ইবনে আসাকির (رحمة الله) এর বর্ণনায় [হযরত সালমান ফারসী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত] এসেছে, আপনাকে সৃজন না করলে আমি দুনিয়া সৃষ্টি করতাম না।’’
[মোল্লা আলী ক্বারী,আসরারুল মারফুআ, ২৯৬ পৃ. হা/৩৮৫]

*(গ.) অনুরূপ আল্লামা আজলূনী আশ-শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন,

قال الصغانى موضوع ، واقول لكن معناه صَحِيحٌ
‘‘ইমাম সাগানী (رحمة الله) বলেন,  হাদিসটি শব্দগতভাবে বানোয়াট,তবে আমি বলি উক্ত হাদিসের মর্মার্থ বা বিষয়বস্তু সহীহ বা বিশুদ্ধ (কারণ এ প্রসঙ্গে অনেক হাদিস রয়েছে)।
[আল্লামা আজলূনী: কাশদুল খাফা: ২/১৪৮ পৃ. হা/২১২১]

★আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-
كما قال رسول الله ﷺ : أول ما خلق الله روحي وسائر الأرواح، إنما خلق ببركة روحه ونور وجوده كما روي لولاك لولاك لما خلقت الأفلاك فإنه صحيح
‘‘এমনিভাবে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, সমস্ত রূহ সমূহের মধ্যে মহান আল্লাহ আঁমার রূহকে প্রথমে সৃজন করেছেন। আর সবকিছু আঁমার রূহ এবং নূরের বরকতের পরশে সৃষ্টি ও অস্তিত্ব লাভ করেছে।যেমন বর্ণিত আছে,মহান রব ইরশাদ করেছেন,হে পিয়ারা হাবীব! আঁপনাকে সৃজন না করলে আঁমি কোনো কিছুই সৃষ্টি করতাম না। নিশ্চয়ই এ কথা বিশুদ্ধ…..।’’
[আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী,শরহে শিফা, ১/১৩ পৃ.]

★আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) ‘মাদারেজুন নবুয়ত’ নামক সিরাত গ্রন্থের হাদিস হিসেবে, لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاك-‘আঁপনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না’ উল্লেখ করেছেন।তিনি আরও বলেন,অধিকাংশ মুহাদ্দিসগণ الْأَفْلَاك নিয়ে মন্তব্য করেছেন। রাসূল (ﷺ) এঁর একটি উপাধি হল সাহেব-ই-লাওলাক। الْأَفْلَاك শব্দটি فَلَكٌ এর বহুবচন। মূলত فلك  শব্দের অর্থ হল মন্ডল।গ্রীক দার্শনিকদের মতে মন্ডল বারটি।বারি মন্ডল,বায়ু মন্ডল,অগ্নিমন্ডল, সাত আসমান সাতটি মন্ডল,আরশ মন্ডল, কুরসি মন্ডল।এ সব মন্ডলকে الْأَفْلَاك বলা হয়ে থাকে।

★আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-
(الأفلاك) أي انهدامها وتغيرها وانتقالها من أوضاعها بالكلية

‘‘বস্তুর মূল উপাদান থেকে স্থানান্তরযোগ্য, পরিবর্তনশীল এবং ধ্বংসযোগ্যই হলো الْأَفْلَاك তথা মহাবিশ্ব।’’
[মোল্লা আলী ক্বারী,শরহে শিফা, ২/৫২২ পৃ.]

(الأفلاك) শব্দের ব্যাখ্যায় আনোওয়ার শাহ কাশ্মীরী লিখেন-
قال الشيخ الأكبر: إن الأفلاك إحدى عشر

‘‘শাইখে আকবর মহিউদ্দিন ইবনে আরাবী (رحمة الله) বলেন, নিশ্চয়ই الْأَفْلَاك (মহাবিশ্ব) এর সংখ্যা ১১ টি।’’
[আনোওয়ার শাহ কাশ্মীরী,আরফযু সাযী, ৪/৫৬ পৃ. হা/২৪৩০-এর আলোচনায়]

★নিম্নের আমি কতিপয় হাদিসে পাক আমি উল্লেখ করবো যেখানে সরাসরি الْأَفْلَاك শব্দটি ব্যবহার না হয়ে বার মন্ডলের কথা বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এজন্য মুহাদ্দিস আল্লামা সাগানী তার খুলাসা গ্রন্থে الْأَفْلَاك শব্দটি বিশুদ্ধ নয় বলেছেন।আর একমাত্র আল্লামা সাগানীই এই শব্দটি মন্তব্য করেন,আর তার এ রায়কেই অনেকে তাদের গ্রন্থে নকল করেছেন।

✊সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইতোপূর্বে যে সমস্ত আলেমদের উদ্ধিৃতি দিয়েছে তাদের একজনও এ হাদিসটিকে শব্দগতভাবে প্রমাণিত না হলেও মমার্থ বিশুদ্ধ নয় বলেননি, আমি আশ্চর্যিত হয়ে যাই তখন যখন দেখি (মমার্থ বিশুদ্ধ বলেছে এমন মুহাদ্দিসদের) কিতাবের হাওয়ালা তাদের টীকায় দৃষ্টিগোচর হয়,এ সমস্ত ধোঁকাবাজ এ কিতাব পড়া সত্ত্বেও তারা এভাবেই সত্য গোপন করে যাচ্ছে অবিরত।তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য একটি-ই,কিভাবে রাসূল (ﷺ)-এঁর শান-মানকে ছোট করা যায়।মহান রব যেন আমাদেরকে এ সমস্ত ধোঁকাবাজদের থেকে আমাদের ঈমান ও আমলকে হিফাযত করেন।আমিন।

⏺️এবার আমি আলোচনা করবো এ হাদিসটির সমর্থনে হাদিসের কিতাবে সনদসহ বর্ণনা রয়েছে কীনা।
    
           ♻️♻️♻️১ম হাদিস♻️♻️♻️
★১. ইমাম হাকেম (رحمة الله) সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ عَمْرُو بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ مَنْصُورٍ الْعَدْلُ، ثنا أَبُو الْحَسَنِ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ بْنِ إِبْرَاهِيمَ الْحَنْظَلِيُّ، ثنا أَبُو الْحَارِثِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُسْلِمٍ الْفِهْرِيُّ، ثنا إِسْمَاعِيلُ بْنُ مَسْلَمَةَ، أَنْبَأَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ؓ ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ :  لَمَّا اقْتَرَفَ آدَمُ الْخَطِيئَةَ قَالَ: يَا رَبِّ أَسْأَلُكَ بِحَقِّ مُحَمَّدٍ لَمَا غَفَرْتَ لِي، فَقَالَ اللَّهُ: يَا آدَمُ، وَكَيْفَ عَرَفْتَ مُحَمَّدًا وَلَمْ أَخْلُقْهُ؟ قَالَ: يَا رَبِّ، لِأَنَّكَ لَمَّا خَلَقْتَنِي بِيَدِكَ وَنَفَخْتَ فِيَّ مِنْ رُوحِكَ رَفَعْتُ رَأْسِي فَرَأَيْتُ عَلَىَ قَوَائِمِ الْعَرْشِ مَكْتُوبًا لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ فَعَلِمْتُ أَنَّكَ لَمْ تُضِفْ إِلَى اسْمِكَ إِلَّا أَحَبَّ الْخَلْقِ إِلَيْكَ، فَقَالَ اللَّهُ: صَدَقْتَ يَا آدَمُ، إِنَّهُ لَأُحِبُّ الْخَلْقِ إِلَيَّ ادْعُنِي بِحَقِّهِ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكَ وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُكَ –
‘‘হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,হযরত আদম (عليه السلام) যখন অপ্রত্যাশিতভাবে (ইজতেহাদি) ভুল করলেন তখন হযরত আদম (عليه السلام) আল্লাহর দরবারে আবেদন করলেন,হে পরওয়ারদিগার! হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এঁর হকের উসিলায় আমাকে মার্জনা করুন।আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,তুমি মুহাম্মদ (ﷺ) কে কিভাবে চিনেছ? জবাবে আদম (عليه السلام) আরজ করলেন, হে আল্লাহ! আঁপনি স্বীয় কুদরতি হাত দ্বারা আমাকে সৃষ্টি করে আমার দেহের অভ্যন্তরে যখন আত্মা প্রবেশ করিয়ে ছিলেন,তখন আমি মাথা তুলে আঁপনার আরশের পায়ায় লেখা দেখেছিলাম, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ আমি বুঝতে পারলাম, আঁপনি আঁপন নামের সাথে এমন একটি নাম মিলিয়ে রেখেছেন যেটি সমগ্র সৃষ্টি জগতে আঁপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয়।আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, হে আদম! তুমি সত্য বলেছো। নিশ্চয় ঐ নাম সমগ্র জাহানে আঁমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়।যেহেতু তুমি সেই নাম নিয়েই আমার কাছে প্রার্থনা করেছ,  সেহেতু আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। হে আদম! যদি মুহাম্মদ (ﷺ) না হতেন, আমি তোমাকেও সৃজন করতাম না।’’
    দলিল
*১. ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মুস্তাদরাকঃ ২/৬৭২ পৃ. হা/৪২২৮
*২. ইমাম তাবরানীঃ মু’জামুল আওসাত: ৬/৩১৩ হাদিসঃ ৬৫০২, তাবরানীঃ মু’জামুস সগীর: ২/১৮২ হাদিসঃ ৯৯২
*৩. ইবনে হাজার হায়সামীঃ মাযমাউদ যাওয়াইদ: ৮/২৫৩ : পৃ.
*৪. ইমাম ইবনে আসাকিরঃ তারিখে দামেস্ক: ৭/৪৩৭
*৫. আল্লামা ইবনে কাসীর,বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ১/১৮ পৃ.
*৬. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি,খাসায়েসুল কোবরা, ১/১২ হাদিসঃ ১২
*৭. ইমাম বুরহান উদ্দিন হালবীঃ সিরাতে হালবিয়্যাহ ১/৩৫৫ পৃ.
*৮. ইমাম কাস্তাল্লানীঃ মাওয়াহেবে লাদুনীয়া, ১/৮২ পৃ.
*৯. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতিঃ তাফসীরে দুররে মানসুর, ১/১৪২ পৃ.
*১০. ইমাম বায়হাকীঃ দালায়েলুল নবুয়তঃ ৫/৪৮৯ পৃ.
*১১. ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মাদখালঃ ১/১৫৪ পৃ.
*১২. ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানীঃ হিলইয়াতুল আউলিয়া
*১৩. আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী: শাওয়াহিদুল হক্ব: পৃ নং: ১৩৭, আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী: আনোয়ার-ই-মুহাম্মদিয়া: পৃ নং: ৯-১০ *১৪. আল্লামা শাহ আ: আজীজ মুহাদ্দিস দেহলভী: তাফসীর-ই-আযীযী: প্রথম খণ্ডঃ পৃ-১৮৩
*১৫. আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী: আফযালুস্ সালাত: পৃ-১১৭
*১৬. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী: তাফসীরে রুহুল বায়ান: ২/৩৭০ পৃ. সূরা মায়েদা: আয়াত নং-১৫
*১৭. আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী: শরহে শামায়েল: ১/১১৫ পৃ.
*১৮. আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার: ২/১১৪ পৃ:
*১৯. ইমাম জুরকানীঃ শরহে মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/১৭২ পৃ.
*২০. শায়খ ইউসুফ নাবহানী: হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন: ৭৯৫ পৃ. এবং ৩১ পৃ.,মাকতুবাতুত- তাওফিকহিয়্যাহ্, কায়রু, মিশর।
*২১. আল্লামা শফী উকাড়বীঃ যিকরে হাসীন,৩৭ পৃষ্ঠা
*২২. মাওলানা আশরাফ আলী থানবী: নশরত্তীবঃ পৃষ্ঠা নং- ২৮

সনদ পর্যালোচনা

*(ক.) ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) এ হাদিসটি সংকলন করেন তিনি লিখেন-

هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ وَهُوَ أَوَّلُ حَدِيثٍ ذَكَرْتُهُ لِعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ فِي هَذَا الْكِتَابِ
‘‘এ হাদিসটির সনদ সহীহ।’’
[ইমাম হাকেম নিশাপুরী,আল মুস্তাদরাক, ২/৬৭২ পৃ. হা/৪২২৮]

★ইমাম হাকিম (رحمة الله) এর এ অভিমতকে বহু ইমামগণও গ্রহণ করেছেন,কেউ কোনো প্রতিবাদ করেননি। এর মধ্যে রয়েছেন ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله), শায়খ ইউসুফ নাবহানী (رحمة الله), শাহ্ আবদুল আযিয মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله), কাস্তালানী (رحمة الله), জুরকানী (رحمة الله), ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله),  ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله), ইবনে কাসীর (رحمة الله), বুরহানউদ্দীন হালাবী (رحمة الله), মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله), এমনকি দেওবন্দের অন্যতম আলেম আশরাফ আলী থানবীরও।ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) এ বিষয়ে লিখেন-

رواه الحاكم فى صحيحه أن آدم- عليه السّلام- رأى اسم محمد- صلى الله عليه وسلم- مكتوبا على العرش، وأن الله تعالى قال لآدم لولا محمد ما خلقتك
‘‘ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) সহীহ সূত্রে সংকলন করেন যে,নিশ্চয় হযরত আদম (عليه السلام) আরশের পায়ায় মুহাম্মদ (ﷺ)-এঁর নাম দেখতে পেয়েছিলেন এবং তখন মহান আল্লাহ হযরত আদম (عليه السلام) কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, হে আদম! যদি মুহাম্মদ (ﷺ) না হতেন,তাহলে আঁমি তোমাকেও সৃজন করতাম না।’’
[ইমাম কাস্তালানী,মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ১/৪৭ পৃ.]

★ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) এ গ্রন্থের আরেক স্থানে স্পষ্ট লিখেছেন-

وصح أن رسول الله- صلى الله عليه وسلم- قال لما اقترف آدم الخطيئة قال: يا رب

‘‘রাসূল (ﷺ) থেকে সহীহ সনদে এসেছে যে, তিনি বলেছেন, হযরত আদম (عليه السلام) যখন অপত্যাশিত ভাবে ভুল করলেন তখন তিনি বললেন হে আমার রব…….।’’
[ইমাম কাস্তালানী,মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ৩/৬০৫ পৃ.]

★★সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের মত আলেমগণ ইমাম কাস্তালানীর ৫০০ শত বছর পরে এসে উনাদের তাহকীকে ভুল ধরতে এসেছেন, উনারা শতশত বছর পূর্বে হাদিসের সনদ বুঝেননি।ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৩০৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘ইমাম বাইহাকী হাদীসটি অত্যন্ত দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন।’’ এবার আমরা তার কথার বাস্তবতা দেখবো।

✊ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) এটি সংকলন করেন লিখেন-

تَفَرَّدَ بِهِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ مِنَ هَذَا الْوَجْهِ عَنْهُ، وَهُوَ ضَعِيفٌ، وَاللهُ أَعْلَمُ

‘‘এ হাদিসটি একক ‘আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ বিন আসলাম’ বর্ণনা করেছেন।সে দুর্বল হাদিস বর্ণনাকারী,মহান রবই এ বিষয়ে অধিক জ্ঞাত।’’
[দালায়েলুন নবুয়ত, ৫/৩৭৪ পৃ:]

✳️দেখুন কতবড় মিথ্যাচার। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব-

✦ হাফিজুল হাদিস আল্লামা ইবনে কাসির (رحمة الله) স্বয়ং ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)-এর অভিমত এভাবে উল্লেখ করেছেন-

قَالَ الْبَيْهَقِيُّ تَفَرَّدَ بِهِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَهُوَ ضَعِيفٌ

“ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বলেন, ‘আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ আসলাম’ হতে এটি একক বর্ণনা,আর তিনি যঈফ।”
[হাফিজ ইবনে কাছির: আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ২য় খণ্ড, ৬২৯ পৃ:]

✊শুধু তাই নয় উক্ত রাবীকে সে জাহেল প্রমাণ করতে গিয়ে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৩০৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘আব্দুর রহমান ইবনু যাইদ ইবনু আসলাম (ওফাত. ১৮২ হি.) খুবই দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী ছিলেন।মুহাদ্দিসগণ তাঁর বর্ণিত হাদিস গ্রহণ করেন নি।কারণ তিনি কোনো হাদীস ঠিকমত বলতে পারতেন না,সব উল্টোপাল্টা বর্ণনা করতেন।’’

★সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তার এ সামান্য বক্তব্যের মধ্যে কয়েকটি মিথ্যাচার রয়েছে।

*এক. রাবী আব্দুর রহমানকে কেউ অত্যন্ত দুর্বল কেউ বলেনি।যেমনটি ইতোপূর্বে বায়হাকী এবং ইবনে কাসিরের অভিমত দেখলাম।উদাহরণ স্বরূপ দেখুনঃ

✦ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-
وَفِيْهِم لِيْنٌ –
‘সে কিছুটা নরম অর্থাৎ সামান্য দুর্বল প্রকৃতির।’’
[ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৮/৩৪৯ পৃ. ক্রমিক.৯৪]

✊বুঝা গেল সামান্য দুর্বল রাবীকে জাহাঙ্গীর সাহেব ইচ্ছা করেই দুর্বলতা বাড়িয়ে দিলেন তার নিজের গুপ্ত ভাণ্ডার থেকে!

✦দ্বিতীয়ত. তিনি বক্তব্যে বলেছেন যে, কোন মুহাদ্দিস তার হাদিস গ্রহণ করে নি, সে কতবড় জাহেল দেখুন, সুনানে ইবনে মাযাহ এবং সুনানে তিরমিযিতে তার হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
[সুনানে ইবনে মাযাহ, হা/২৩৮, হা/৫১৯, হা/১১৮৮, হা/২৪৪৩, হা/২৭৬৬, হা/৩২১৮, হা/৩৩১৪, হা/৪০৬০, সুনানে তিরমিযি, হা/৪৬৫, হা/৪৬৬, হা/৬৩১, হা/৬৩২, হা/৭১৯, হা/৮৫২]

✦ ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) তাঁর চেয়েও আরেকজন শক্তিশালী রাবীর সাথে তুলনা দিতে গিয়ে লিখেও ছিলেন-
وَهَذَا أَصَحُّ مِنْ حَدِيثِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ.
‘‘এ হাদিসটি ‘আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ বিন আসলাম’ এর বর্ণনা হতে অধিক বিশুদ্ধ।’’
[সুনানে তিরমিযি, ২/১৯ পৃ. হা/৬৩২]

★★বুঝা গেল, দুজনের হাদিসটই সহীহ, তবে আব্দুর রহমানের হাদিস তুলনামূলভাবে কম সহীহ।

★★★তৃতীয়ত. জাহাঙ্গ্রীর সাহেব উক্ত রাবীর বিষয়ে দাবী করেছেন যে, হাদিস পড়ার তাঁর কোন ইলমী যোগ্যতা ছিল না,

★অথচ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তাঁর জীবনীতে লিখেন-
وَكَانَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ صَاحِبَ قُرْآنٍ وَتَفْسِيْرٍ، جَمَعَ تَفْسِيْراً فِي مُجَلَّدٍ، وَكِتَاباً فِي النَّاسِخِ وَالمَنْسُوْخِ.
‘‘হযরত আব্দুর রহমান (رحمة الله) তিনি কুরআনের ক্বারী এবং মুফাস্সির ছিলেন, তিনি কয়েক খণ্ডে কুরআনের তাফসিরও লিপিবদ্ধ করেছিলেন, তিনি ইসলামের গূরুত্বপূর্ণ বিষয় নাসেখ মানসুখ বিষয়ে কিতাব লিপিবদ্ধ করেছিলেন।’’
[ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৮/৩৪৯ পৃ. ক্রমিক.৯৪]

♠সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! বর্তমানে উক্ত গ্রন্থের লিখক বেঁচে থাকলে আমি অবশ্যই জিজ্ঞাসা করতেন একজন রাবীর নামে মিথ্যাচার করে তার কি লাভ!

★ইমাম নুরুদ্দিন হায়সামী (رحمة الله) বলেন,
عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، وَفِيهِ كَلَامٌ، وَقَدْ وَثَّقَهُ ابْنُ عَدِيٍّ.

“রাবী ‘আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম’ সম্পর্কে অনেক কথা রয়েছে, তবে ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন।”
[ইমাম হায়সামী: মাযমাউয যাওয়াইদ, হা/৪৪১০]

★ইমাম মিযযী (رحمة الله) বলেন,

وَقَال أَبُو أَحْمَد بْن عدي: له أحاديث حسان. وهو ممن احتمله الناس، وصدقه بعضهم. وهو ممن يكتب حديثه.

“ইমাম আবু আহমদ ইবনে আদী (رحمة الله) বলেন, তার অনেক হাদিস ‘হাসান’ রয়েছে।সে এমন ব্যক্তি যার রেওয়াত লোকেরা গ্রহণ করেছেন এবং অনেকে তাকে সত্যবাদী বলেছেন এবং সে ব্যক্তির হাদিস লিখেছেন।”
[ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩৮২০]

✦ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন: وهو صاحب حَدِيثِ -“সে ছাহেবুল হাদিস অর্থাৎ মুহাদ্দিস ছিলেন।”
[ইমাম যাহাবী: তারিখে ইসলামী, ৪/৯০৪ পৃ. রাবী নং ২০১]

✊তবে আফসোসের বিষয় হল, কাঠ মিস্ত্রী নাসিরুদ্দিন আলবানী তার ‘সিলসিলাতুল আহাদিসুদ দ্বঈফাহ’ এর (১ম খণ্ডের ৮৮ পৃষ্ঠায়) ২৫ নং হাদিসের আলোচনায় এ হাদিসকে এতজন ইমাম গ্রহণ করার পরও হাদিসটিকে জাল বলেছেন।আল্লাহ তার উপর লানত বর্ষণ করুন, যে একা সমস্ত ইমামদের বিরোদ্ধে গিয়ে নিজেকে বড় ইমাম বানাতে চেয়েছিল।আর প্রিয় নবীজি (ﷺ) এঁর শান-মানের ব্যাপারে ইহা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হাদিস।

✳️সর্বশেষ এ হাদিসের বিষয়ে আমার বক্তব্য হলো এ হাদিসের আরেকটি সূত্র রয়েছে:

ইমাম আবু সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী (ওফাত. ৪০৭ হি.) এ হাদিসটির আরেকটি সূত্র হযরত মূসা (عليه السلام)-এর ঘটনার মাধ্যমে এভাবে উল্লেখ করেছেন-

وعن ابن عباس رضي الله عنهما……. قال موسى عليه السّلام: ومن محمد يا رب؟ قال: الذي كتبت اسمه على ساق العرش قبل أن أخلق السماوات والأرضين بألفي عام، محمد رسولي وحبيبي وخيرتي من خلقي. قال: يا رب فإن كان محمد أكرم عليك من جميع خلقك فهل في قوله: ولولا محمد ما خلقتك

‘‘হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন…….তখন মহান মূসা (عليه السلام) বললেন, হে মহান রব! মুহাম্মদ কে? মহান রব বললেন,তাঁর নাম আমি আরশের পায়ায় লিখেছি আদম (عليه السلام) সৃজন করার হাজার বছর পূর্বে, হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) হলেন আঁমার রাসূল, আঁমার হাবীব এবং আঁমার সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সর্বোত্তম।হযরত মূসা (عليه السلام) বললেন, হে আমার রব! মুহাম্মদ (ﷺ) হলেন আঁপনার সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি।অতঃপর মহান আল্লাহ মূসা (عليه السلام) কে লক্ষ্য করে বলেন, যদি আঁমি তাঁকে না বানাতাম (হে মূসা!) আঁমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না।’’
[আবূ সা‘দ খরকুশী,শরফুল মোস্তফা, ১/১৬৬ পৃ.]

পর্যালোচনা

★প্রমাণিত হলো রাসূল (ﷺ) সৃষ্টি কে করা না হলে মূসা (عليه السلام) কেও সৃষ্টি করা হতো না,অপর বর্ণনায় দেখলাম হযরত আদম (عليه السلام) কথা এসেছে। সুতরাং আদম (عليه السلام) না হলে হয়তো আমাদের কোন মানবের জাতির উৎপত্তিও হত না।

⏺️আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-
(ولو لاه ما خلقتك) ويقرب منه ما روي لو لاك لما خلقت الأفلاك

‘‘(হে আদম! যদি আমি মুহাম্মদ (ﷺ) কে সৃষ্টি না করতাম তোমাকেও সৃজন করতাম না) এটি এ হাদিসের অর্থের নিকটবর্তী, যেমন বর্ণিত আছে, হে হাবিব! আঁপনাকে সৃজন না করলে আমি বানাতাম না কোনো কিছু।’’
[মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা,১/৩৮২ পৃ.]
   
        ♻️♻️♻️২য় হাদিস♻️♻️♻️
★২. ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) সংকলন করেন-

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حَمْشَاذَ الْعَدْلُ، إِمْلَاءً، ثنا هَارُونُ بْنُ الْعَبَّاسِ الْهَاشِمِيُّ، ثنا جَنْدَلُ بْنُ وَالِقٍ، ثنا عَمْرُو بْنُ أَوْسٍ الْأَنْصَارِيُّ، ثنا سَعِيدُ بْنُ أَبِي عَرُوبَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: أَوْحَى اللَّهُ إِلَى عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا عِيسَى آمِنْ بِمُحَمَّدٍ وَأْمُرْ مَنْ أَدْرَكَهُ مِنْ أُمَّتِكَ أَنْ يُؤْمِنُوا بِهِ فَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ آدَمَ وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَا النَّارَ وَلَقَدْ خَلَقْتُ الْعَرْشَ عَلَى الْمَاءِ فَاضْطَرَبَ فَكَتَبْتُ عَلَيْهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولٌ اللَّهِ فَسَكَنَ-
‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন,আল্লাহ্ তা‘য়ালা হযরত ঈসা (عليه السلام) এঁর নিকট ওহী নাযিল করলেন, হে ঈসা! তুমি মুহাম্মদ (ﷺ) এঁর উপর ঈমান আন এবং তোমার উম্মতের মধ্যে যারা তাঁর যুগ পাবে তাদেরকে ঈমান আনতে বলো।কারণ যদি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) না হতেন,তাহলে আঁমি না আদমকে সৃষ্টি করতাম,না বেহেশত,না দোযখ সৃজন করতাম।আঁমি (আল্লাহ) যখন পানির উপর আরশ তৈরী করেছিলাম,তখন তা এদিক সেদিক কম্পন করতে লাগল।তখন আঁমি তার উপর কালেমা শরীফ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ লিখে দিলাম অতঃপর আরশ স্থির হয়ে গেল।’’
   ✳️✳️✳️✳️দলিল✳️✳️✳️✳️✳️
*(ক.) ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মুস্তাদরাক,২/৬৭১ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৪২২৭, *(খ.) আল্লামা ইমাম তকিউদ্দিন সুবকী, শিফাউস সিকাম, ৪৫ পৃ.
*(গ.) আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী, আফজালুল র্কুরা
*(ঘ.) আল্লামা সিরাজুদ্দীন বলকীঃ ফতোয়ায়ে সিরাজিয়া, ১/১৪০ পৃ.
*(ঙ.) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারীঃ মাওদ্বুআতুল কাবীর, ১০১ পৃ.
*(চ.) ইমাম ইবনে সা’দঃ আত্-তবকাতুল কোবরা
*(ছ.) ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া
*(জ.) আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতিঃ খাসায়েসুল কোবরাঃ ১/১৪ পৃ. হাদিসঃ ২১
*(ঝ.) আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামীঃ শরহে শামায়েলঃ ১/১৪২ পৃ.
*(ঞ.) আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী,জাওয়াহিরুল বিহার, ২/১১৪ পৃ.
*(ট.) ইমাম যাহাবীঃ মিযানুল ইতিদাল: ৫/২৯৯ পৃ. রাবী: ৬৩৩৬
*(ঠ.) আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানীঃ লিসানুল মিযানঃ ৪/৩৫৪ পৃ.
*(ড.) ইমাম ইবনে হাইয়্যানঃ তবকাতে মুহাদ্দিসিনে ইস্পাহানীঃ ৩/২৮৭ পৃ.
*(ণ.) আবু সা‘দ ইবরাহিম নিশাপুরী, শরহে মুস্তফা: ১/১৬৫ পৃ.
*(ত.) জুরকানী,শরহুল মাওয়াহেব: ১২/২২০ পৃ.
*(থ.) ইবনে কাসীর, কাসাসুল আম্বিয়া, ১/২৯ পৃ. দারুল তা‘লিফ, কায়রু, মিশর, ইবনে কাসীর, সিরাতে নববিয়্যাহ: ১/৩২০ পৃ. দারুল মা‘রিফ, বয়রুত, লেবানন, ইবনে কাসীর, মু‘জিজাতুন্নাবী: ১/৪৪১ পৃ. মাকতুবাতুল তাওফিকহিয়্যাহ, কায়রু, মিশর।
*(দ.) ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ: ১২/৪০৩ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।

✳️✳️হাদিসটির সনদ পর্যালোচনা✳️✳️

✦ইমাম হাকেম (رحمة الله) এ হাদিসটিকে সংকলন করে লিখেন-

هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ

‘‘এ হাদিসটির সনদ সহীহ, যদিওবা ইমাম বুখারী (رحمة الله) ও মুসলিম (رحمة الله) সংকলন করেননি।’’
[ইমাম হাকেম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ২/৬৭১ পৃষ্ঠা, হা/৪২২৭]

✦ইমাম হাকিম (رحمة الله) এর এ সমাধানকে ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله),  ইমাম সুবকী (رحمة الله),  ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله), মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)সহ এক জামাআত মুহাদ্দিসগণ মেনে নিয়েছেন যে হাদিসটির সনদ সহীহ বলেছেন।

★ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩০৮ পৃষ্ঠায় উক্ত সনদের অন্যতম রাবী ‘আমর ইবনু আউস আল-আনসারী’ সম্পর্কে লিখেন-‘‘এ লোকটি মূলত একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি। তার কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না।………এটি ইবনু আব্বাসের নামে বানানো জাল হাদীস।’’ অথচ তিনি নির্ভরযোগ্য কোন আসমাউর রিজালের আলোকে উক্ত রাবীকে অজ্ঞাত পরিচায়ক প্রমাণ করতে পারেননি।

✦অথচ ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله) ও আল্লামা নূরুদ্দিন আলী ইবনে আহমদ ছামহুদী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে হাদিসটি সহীহ্ হওয়ার কথা এভাবে লিখেছেন-
وَأخرج الْحَاكِم وَصَححهُ -“ইমাম হাকেম  (رحمة الله) হাদিসখানা সংকলন করেছেন, সহীহ্ বলে মত প্রকাশ করেছেন।”
[ইমাম সুয়ূতি: খাসায়েসুল কোবরা, ১/২৯ পৃ:; আল্লামা সামহুদী: ওফাউল ওফা, ৪/২২৪ পৃ:]

✦ বিখ্যাত আসমাউর রিজালবিদ আল্লামা মুগলতাঈ (رحمة الله) রাবী ‘আমর বিন আউস’ এর বিস্তারিত জীবনী আলোচনা করেছেন তিনি তাকে মাজহুল বলেননি।
[মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১০/১৩৩ পৃ. ক্রমিক.৪০৬৩]

পর্যালোচনা

★এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ পাক হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে সৃষ্টি করেছেন। এ হাদিস থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হল যে রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা না হলে না আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করা হতো, না জান্নাত, না জাহান্নাম সৃষ্টি করা হতো।

✊এবার এই হাদিসের ২টা সনদ সহকারে উল্লেখ্য করা হল:
         **১ম সনদ**
হযরত ইমাম হাকিম নিসাপুরী 
                 ↓
হযরত আলী বিন হামশাদ আদল ইমলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি। 
                 ↓
হারূন বিন আব্বাস হাশেমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। 
                 ↓
জানদাল বিল ওয়াকিল রহমাতুল্লাহি আলাইহি
                 ↓
হযরত আমর বিন আউস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্নিত,

          ২য় সনদ 
ইমাম হাকিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি 
                  ↓
হযরত সাঈদ বিন আবু উরূবাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি , তিনি 
                  ↓
হযরত ক্বাতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি,
                  ↓
সাঈদ বিন মুসাঈয়িব রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি
                  ↓
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত,

-حدثنا علي بن حمشاد العدل املاء هرون بن العباس الهاشمي ثنا جندل بن والق ثنا عمرو بن أوس الانصاريحدثنا سعيد بن ابي عروبة عن قتادة عن سعيد بن المسيب عن ابن عباس رضي الله عنه قال اوحي الله الي عيسي عليه السلام يا عيسي امن بمحمد صلي الله عليه و سلم وامر من ادركه من امتك ان يؤمنوا به فلو لامحمد صلي الله عليه و سلم ما خلقت ادم عليه السلام ولولا محمد صلي الله عليه و سلم ما خلقت الجنة و النار ولقد خلقت العرش علي الماء فضطرب فكتبت عليه “لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه وسلم فسكن. هذا حديث صحيح الاسناد

” মহান আল্লাহ পাক উঁনার রাসূল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উঁনাকে ওহী করলেন। হে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ! আঁপনি হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার প্রতি ঈমান আনুন এবং আঁপনার উম্মতের মধ্যে উনাকে যারা পেতে চায় তাঁদের নির্দেশ করুন,তাঁরা যেন উঁনার প্রতি ঈমান আনে। 
যদি মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না হতেন হতেন তবে আদম আলাইহিস সালাম উঁনাকে সৃষ্টি করতাম না,যদি মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি না হতেন তবে জান্নাত এবং জাহান্নাম সৃষ্টি করতাম না।আর যখন আঁমি পানির উরর আরশ সৃষ্টি করলাম তখন তা টলমল করছিলো,যখনই আরশের মধ্যে
لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم
লিখে দেই তৎক্ষণাৎ আরশ স্থির হয়ে যায়।”
  ✳️এই হাদীস শরীফের সনদ সহীহ✳️
             ****দলিল*****
*(ক.) মুসতাদরাক আলাছ ছহীহাঈন লিল হাকীম নিশাপুরী (রহ:),কিতাব: তাওয়ারীখিল মুতাক্বাদ্দিমীন- যিকরু আখবারী সাইয়্যিদুল মুরসালীন ওয়া খাতামুন নাব্যিয়িন মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব মুছতাফা ছলাওয়াতুল্লাহিআলাইহি ওয়া আলিহীত ত্বহীরিন খন্ড: ৪র্থ খন্ড ১৫৮৩ পৃষ্ঠা
*(খ.) মুখতাছারুল মুসতাদরাক: ২য় খন্ড ১০৬৭ পৃষ্ঠা

♦রাসূল (ﷺ) কে “আল্লাহর নূর বা আল্লাহর যাতি নূর বা যাতি নূরের তাজাল্লী বা আল্লাহর যাতি নূরের জ্যোতি” বলা যাবে কি না?(২৭ম পর্ব)

অনেকে বলেন কোরআনে নূর বলা হয়েছে কিন্তু নূরের তৈরী বলা হয়নি, আবার কেউ বলেন শুধু রুহ মোবারক নূর কিন্তু দেহমোবারক নয়,আবার কেউ বলেন সাদা মাটির তৈরী (নাউযুবিল্লাহ!) আজকে ইন-শা-আল্লাহ সে বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো-[১৯ম অংশ]

⏹️⏹️⏹️আজকের আলোচনা⏹️⏹️⏹️

রাসূল (ﷺ) হলেন সর্বপ্রথম সৃষ্টি,যাঁকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হতো না।[3rd Part]

★১৮৮.  (لَوْلاكَ لَمَا خَلَقْتُ الأَفْلاكِ) ‘রাসূল (ﷺ) সৃষ্টি না হলে কিছুই সৃষ্টি হত না’ হাদিসের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ:

♻️♻️♻️তৃতীয় ও চতুর্থ হাদিস♻️♻️♻️

★ইমাম দায়লামী (رحمة الله)সহ একজামাত ইমামগণ সংকলন করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ؓ مَرْفُوعًا أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ النَّار
“একদা আমার নিকট হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) এসে বললেন, মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেছেন, হে মুহাম্মদ! আঁপনাকে সৃষ্টি না করলে আঁমি সৃজন করতাম না বেহেশত,আর  না দোযখ।’’
     দলিল
*(ক.) ইমাম ইবনে সালেহ শামী,সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ: ১/৭৫ পৃ.
*(খ.) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী: আসরারুল মারফুআ: ১/২৯৫ পৃ. হা/৩৮৫
*(গ.) আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী, জাওয়াহিরুল বিহার, ৪/১৬০ পৃ.
*(ঘ.) ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১/৮৬ পৃ.
*(ঙ.) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৪৩১ পৃ. হা/৩২০২৫

  সনদ পর্যালোচনা

★এ হাদিসটির সনদ ‘হাসান’ পর্যায়ের।★

✊এ হাদিসটির সনদ স্বয়ং আহলে হাদিস আলবানী দায়লামী শরীফ থেকে এভাবে সংকলন করেন-

عبيد الله بن موسى القرشي حدثنا الفضيل بن جعفر بن سليمان عن عبد الصمد بن علي بن عبد الله ابن عباس عن أبيه عن ابن عباس به.

‘‘উবাইদুল্লাহ বিন মূসা কুরশী তাকে হাদিস বর্ণনা করেছেন ফযাইল বিন জাফর বিন সুলাইমান তিনি হাদিস বর্ণনা করেছেন আব্দুস সামাদ বিন আলী বিন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে তিনি তার পিতা আলী ইবনে আব্দুল্লাহ হতে তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন।…..।’’
[আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ ওয়াল মাওদ্বুআহ, ১/৪৫১ পৃ. হা/২৮২]

★আলবানী এই সনদটিকে জোর করে উসূলে হাদিসের নিয়মকে উপেক্ষা করে যঈফ প্রমাণের অনেক অপচেষ্টা চালিয়েছিলেন।এতে সর্বশেষে দাবী করেছেন যে,সনদের অন্যতম রাবী আব্দুস সামাদের হাদিসের বিষয়ে ইমাম উকাইলী (رحمة الله) বলেছেন-غير محفوظ ولا يعرف الا به. “তার হাদিস সংরক্ষিত নয়,তার এ সূত্র ছাড়া আর অন্য কোনো ভাবে তাকে চেনা যায় না।”
[আলবানী,সিলসিলাতু আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ, ১/৪৫১ পৃ. হা/২৮২]

★যদি আলবানী বর্তমানে জীবিত থাকতো তাহলে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতাম যে,ইমাম উকায়লীর এই উক্তি কোথায় হতে নকল করেছেন!

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উকাইলীর শুধু غير محفوظ অভিমত উল্লেখ করেছেন; কিন্তু আলবানী দেখুন আরেকটু তার নামে সংযোজন করে দিলেন।আমি বর্তমান আহলে হাদিসদেরকে বলবো যে,আপনারা ইমাম উকাইলীর একক উক্তি ছাড়া আর কোন মুহাদ্দিসের অভিমত পেশ করুন যে,কেউ তাকে দুর্বল বলেছেন।

★ইমাম সাখাভী (رحمة الله) তার একটি সনদকে এক স্থানে শুধু গরীব বলেছেন, কোন দুর্বলতা আছে বলে উল্লেখ করেননি।
[ইমাম সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, ১৪৪ পৃ. হা/১৫৪]

★ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) তার জীবনী উল্লেখ করে কোন সমালোচনা করেননি।
[ইমাম আবু হাতেম,জারহু ওয়া তা’আদীল, ৬/৫০ পৃ. ক্রমিক: ২৬৬]

★আল্লামা ছালাহ উদ্দিন খালীল ছাফকী (ওফাত ৭৬৪ হি.) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন- وكان كبير القدر معظمًا-‘‘তিনি ছিলেন বড় সম্মানিত,মর্যাদাবান ব্যক্তিদের একজন।’’
[ছাফকী, (ناكث الهميان) নাকসুল হামীয়ান, ১/১৭৬ পৃ.]

★ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-

وما عبد الصمد بحجة ولعل الحفاظ

‘‘আব্দুস সামাদ তিনি হুজ্জাত (চার লক্ষেরও বেশী হাদিসের হাফেয) পর্যায়ের রাবী নন,সম্ভবত তিনি হাফেজ (১ লক্ষ হাদিসের মুখস্তকারী) ছিলেন।’’
[ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, লিসানুল মিযান, ৫/১৮৭পৃ. ক্রমিক. ৪৭৮৭]

✊সুবহানাল্লাহ! এটা রাবীর গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে এটাই অনেক কিছু।

  ✳️✳️এ বিষয়ের দ্বিতীয় বর্ণনা✳️✳️

★ইমাম দায়লামী (رحمة الله) আরেকটি সনদ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
يَقُول الله عز وَجل وَعِزَّتِي وَجَلَالِي لولاك مَا خلقت الْجنَّة ولولاك مَا خلقت الدُّنْيَا

“আঁমার মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালা বলেন, আমার ইজ্জত ও জালালিয়াতের শপথ! যদি আঁপনি না হতেন তাহলে আঁমি না জান্নাত সৃজন করতাম না দুনিয়া।”
[ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৫/২২৭ পৃ. হা/৮০৩১, মুসনাদিল ফিরদাউস, ২/২২ পৃ. হা/৮০৩১]

★এই হাদিসটির সনদ নিয়ে আলবানী থেকে শুরু করে কেহই কলম ধরার সাহস করেনি।হাদিস শরীফে অপর একটি বর্ননায় এসেছে।

عن ابن اباس رضي الله عنهما انه قال قال رسول الله صلي عليه و سلم اتاني جبريل عليه السلام فقال يا رسول الله صلي عليه و سلم لولاك ما خلقت الجنة ولولاك ما خلقت النار
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্নিত, নিশ্চয়ই হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম আঁমার নিকট আগমন করে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক তিঁনি আমাকে এই বলে পাঠিয়েছেন যে, আঁপনি যদি না হতেন তবে আঁমি জান্নাতও জাহান্নাম কিছুই সৃষ্টি করতাম না। ”
            *******দলিল*******
*১.কানযুল উম্মাল- হাদীস ৩২০২২
*২.ইমাম দায়লামী: ‘মুসনাদ আল- ফিরদাউস, ২/২৪২
*৩. শায়খ ইউসূফ নাবাহানী : যাওয়াহিরুল বিহার; ৪/১৬০।
*৪.আল আসরারুল মারফুআহ- ১/২৯৫।

         সনদের মান যাচাই
*(ক.) ইমাম দায়লামী বলেন, হাদিসটি সনদের দিক থেকে ‘হাসান’।
[দায়লামী; মুসনাদ আল ফিরদাউস, ২/২৪২]

*(খ.) বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস মোল্লা আলী ক্বারী বলেন,একথাটি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ।
[আল আসরারুল মারফুআহ- ১/২৯৫]

  ♻️♻️♻️পঞ্চম ও ৬ষ্ঠ হাদিস♻️♻️♻️

প্রথম সূত্র: ইমাম ইবনে আসাকীর (رحمة الله) দীর্ঘ হাদিস সনদসসহ হযরত সালমান ফারসী (رضي الله عنه) হতে সংকলন করেন,হাদিসের শেষের অংশ হল-
وَلَقَدْ خَلَقْتُ الدُّنْيَا وَأَهْلَهَا لأُعَرِّفَهُمْ كَرَامَتَكَ عَلَيَّ وَمَنْزِلَتَكَ عِنْدِي وَلَوْلاكَ يَا مُحَمَّدُ مَا خَلَقْتُ الدُّنْيَا
“আঁমি পৃথিবী এবং পৃথিবীবাসীকে সৃষ্টি করেছি আঁমার নিকট আঁপনার মর্যাদা ও সম্মান কতটুকু তা দেখানোর জন্য।হে আঁমার হাবিব! যদি আঁপনি না হতেন তাহলে আঁমি এ দুনিয়া বানাইতাম না।”
    দলিল
*(ক.) ইমাম ইবনে আসাকীর,তারিখে দামেস্ক, ৩/৫১৮ পৃ. ক্রমিক: ৮০১
*(খ.) ইমাম ইবনে জাওযী,কিতাবুল মাওদ্বুআত, ১/২৮৯ পৃ.
*(গ.) ইমাম সুুয়ূতি,লা-আলিল মাসনূূ, ১/২৪৯ পৃ. কিতাবুল মানাকেব
*(ঘ.) আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী: আনোয়ার-ই-মুহাম্মাদিয়া: পৃষ্ঠা নং : ১১, *(ঙ.) ইমাম ইবনে আসাকীরঃ তারীখে দামেস্ক ৩/৫১৭ পৃষ্ঠা
*(চ.) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী, আসরারুল মারফুআ, ১০১ পৃষ্ঠা
*(ছ.) আল্লামা ইমাম জুরকানী,শরহে মাওয়াহেব, ১/১২১ পৃ. এবং ৭/১৮৬ পৃ. *(জ.) ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবেল্লাদুনিয়্যাহ, ১/৫৫ পৃ.
*(ঝ.) শায়খ ইউসূফ নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার: ১/২৮৯ পৃষ্ঠা
*(ঞ.) ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, ৪/৩৩১ পৃ.
*(ট.) ইমাম ইবনে সালেহ শামী,সবলুল হুদাদ ওয়ার রাশাদ, ১/৭৫ পৃ.
*(ঠ.) ইমাম সুয়ূতি,খাসায়েসুল কোবরা, ২/৩৩০ পৃ.
*(ড.) ইমাম কাজী আয়াজঃ শিফা শরীফঃ ২/১০৫ পৃ.

✊ইবনে আসাকির (রহ:) উদ্ধৃত করেন হযরত সালমান ফারিসী (রা:)-কে, যিনি বলেন: “হযূর পূর নূর (ﷺ)-এঁর কাছে জিবরীল আমীন (আ:) এসে পৌঁছে দেন আল্লাহর বাণী, ‘(হে রাসূল) আঁপনার চেয়ে অধিক সম্মানিত আর কাউকেই আঁমি সৃষ্টি করিনি।আঁমি বিশ্বজগতও এর মধ্যে যা কিছু আছে তার সবই সৃষ্টি করেছি যাতে তারা জানতে পারে আঁপনার মহান মর্যাদা সম্পর্কে। আঁমি এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করতাম না, যদি আঁপনাকে সৃষ্টি না করতাম’।”
             ******দলিল******
*(ক.) ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক: ৩/৫১৭
*(খ.) মোল্লা আলী কারী: মাওজুয়াতুল কবীর: ১০১
*(গ.) ইমাম যুরকানী: শরহে মাওয়াহিব: ১/১৮২
*(ঘ.) ইমাম নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার: ২/২৮৯
*(ঙ.) কাজী আয়াজ: শিফা শরীফ: ২/১০৫

✊ইবনে আসাকির উদ্ধৃত করেন হযরত সালমান ফারিসী (রা:) থেকে।তিনি বলেন : “হযূর পূর নূর প্রিয় নাবী রাসূলুন কারিম (صلى الله عليه و آله وسلم)  এঁর কাছে জিবরীল আমীন (আ:) এসে পৌঁছে দেন আল্লাহর বাণী : ‘আঁমি যদিও ইব্রাহিম (আঃ) কে খলিল বানিয়েছি, কিন্তু আঁপনাকে বানিয়েছি ‘হাবীব’।আঁমি যদিও মূসা (আঃ) এঁর সাথে দুনিয়াতে কথা বলেছি, আঁপনার সাথে কথা বলেছি আসমানে।আঁমি ঈসা (আঃ) কে রুহুল কুদ্দুস থেকে সৃষ্টি করলেও আঁপনাকে করেছি সমগ্র সৃষ্টিজগতের ২০০০ হাজার বছর পূর্বে।আঁপনার কদম এমন জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে আঁপনার পূর্বে কারো কদম পৌঁছেনি, ভবিষ্যতেও পৌঁছবে না।আঁমি আদম (আঃ) কে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করলেও আঁপনার মাধ্যমে ঘটিয়েছি নাবুয়্যাত ক্রমধারার পরিসমাপ্তি।(হে রাসূল) আঁপনার চেয়ে অধিক সম্মানিত আর কাউকেই আঁমি সৃষ্টি করি নি।ক্বিয়ামাত দিবসে আঁমার আরশের ছায়া আঁপনার উপর প্রসারিত হবে। প্রশংসার জয়মুকুট আঁপনার নূরানী মস্তকে শোভা পাবে। আঁমি আঁপনার নাম আঁমার নামের সাথে মিলিয়ে রেখেছি।আঁমি বিশ্বজগতও এর মধ্যে যা কিছু আছে তার সবই সৃষ্টি করেছি যাতে তারা জানতে পারে আঁপনার মহান মর্যাদা সম্পর্কে।আঁমি এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করতাম না,যদি আঁপনাকে সৃষ্টি না করতাম’।”
         *******দলিল********
*(ক.) ইবনূ আসাকির: তারীখে দামেস্ক; ৩/৫১৭।
*(খ.) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী: মওদ্বুআতুল কবীর; পৃষ্ঠা ১০১।
*(গ.) ইমাম যুরকানী: শরহে মাওয়াহিব; ১/১৮২।
*(ঘ.) শায়খ ইউসূফ নাবাহানী: যাওয়াহিরুল বিহার; ১/২৮৯।
*(ঙ.) ইমাম কাজী আয়াজ: শিফা শরিফ; ২/১০৫।

⏺️⏺️⏺️সনদ পর্যালোচনা⏺️⏺️⏺️ আহলে হাদিস আলবানী ইমাম ইবনুল জাওযীর কট্টর ভুল সিদ্ধান্তের অনুসরণ করে হাদিসটিকে জাল বলেছেন।
[আলবানী, সিলসিলাতু আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ, ১/৪৫১ পৃ. হা/২৮২]

★যারা ইলমে হাদিস নিয়ে গবেষণা করেন তারা অনেকেই জানেন যে,ইমাম ইবনুল জাওযী  (رحمة الله) হাদিস সমালোচনায় কট্টর।উনার অভিমত যাচাই বাছাই ছাড়া গ্রহণ করা বৈধ নয়।তাই এবার দেখবো তিনি কোন দৃষ্টিকোনে এই সনদকে জাল বানোয়াট বলেছেন।

✦ ইমাম ইবনুল জাওযী (رحمة الله) এই হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-

هَذَا حَدِيثٌ مَوْضُوعٌ لَا شَكَّ فِيهِ، وفى إِسْنَاده مَجْهُولُونَ وضعفاء والضعفاء أَبُو السكين وَإِبْرَاهِيم من اليسع. قَالَ الدَّارَقُطْنِيُّ: أَبُو السكين ضَعِيف وَإِبْرَاهِيم وَيحيى الْبَصْرِيّ مَتْرُوكَانِ.
“এই হাদিসটি জাল,তাতে কোন সন্দেহ নেই।এই সনদে অপ্রসিদ্ধ ও যঈফ রাবী আবুল সাকীন এবং ইবরাহিম ইবনে আল ইয়াছাঈ দুর্র্বল রাবী।ইমাম দারাকুতনী বলেন,আবুল সাকীন যঈফ রাবী। ইবরাহিম এবং ইয়াহইয়া বসরী দুজন পরিত্যাক্ত রাবী।”
[ইমাম ইবনুল জাওযী,কিতাবুল মাওদ্বুআত, ২/২৮৯ পৃ. কিতাবুল ফাযায়েল ওয়াল মানাকিব।]

★সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তিনি যে আপত্তি এ হাদিসের সনদের বিষয়ে করেছেন তাতে এই সনদ যঈফ প্রমাণ হয় জাল নয়।এবার তিনি এই সনদের যে ৩ জন রাবীকে দোষী করেছেন আসলে আসমাউর রিজালবিদগণ তাদের বিষয়ে বা তাদের হাদিস গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে কী বলেছেন আমরা এখন তা গবেষণা করে দেখবো:

  ★★প্রথম আপত্তিকর রাবী★★

এই সনদের প্রথম আপত্তিকর রাবী দাবী করা হয়েছে محمد بن عيس بن حيان (মুহাম্মদ বিন ঈসা বিন হাইয়্যান) নামক রাবী যার উপনাম হল আবুল সাকীন।

✦ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে শুরুতেই লিখেন- المحدث المقرئ الامام -“তিনি একজন বিখ্যাত মুহাদ্দিস ছিলেন, ক্বারী ছিলেন,হাদিসের ইমাম ছিলেন।”

★ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১৩/২১ পৃ. ক্রমিক: ১২ এবং তারিখুুল ইসলাম, ৬/৬১৭ পৃ. ক্রমিক: ৪০৫
★ইবনে হাজার আসকালানী,লিসানুল মিযান, ৭/৪২৮ পৃ., ক্রমিক: ৭২৮৬

✳️তিনি আরও উল্লেখ করেন- قال البرقانى لا بأس به -‘‘ইমাম বারকানী (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’
[ইবনে হাজার আসকালানী,লিসানুল মিযান, ৭/৪২৮ পৃ., ক্রমিক: ৭২৮৬]

✳️ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন-

وكذا ذكره ابن حبان فى الثقات-

“ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’

★ইবনে হাজার,লিসানুল মিযান,৭/৪২৮ পৃ.
★ইবনে হিব্বান,কিতাবুস-সিকাত, ৯/১৪৩ পৃ. ক্রমিক: ১৫৬৫১

✳️তিনি আরও উল্লেখ করেন,ইমাম লালকায়ী (رحمة الله) বলেন- صالح তিনি হাদিস বর্ণনায় সৎ ব্যক্তি ছিলেন।

★ইবনে হাজার,লিসানুল মিযান,৭/৪২৮ পৃ.
★ইবনে হিব্বান,কিতাবুস-সিকাত, ৯/১৪৩ পৃ. ক্রমিক: ১৫৬৫১

✊তবে তিনি কেরাতের প্রতি বেশী মনযোগের কারণে অনেকে তাকে দুর্বলতার ইঙ্গিত করেছেন যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।তাই একক ইমাম দারাকুতনীর অভিমত দিয়ে তাকে যঈফ বলা মানে অধিকাংশ মুহাদ্দিসের অভিমতকে হেয় করা।

  ★★দ্বিতীয় আপত্তিকর রাবী★★

এই সনদের দ্বিতীয় আপত্তিকর রাবী হিসেবে ইমাম ইবনুল জাওযী ابراهيم بن اليسع (ইবরাহিম বিন আল-ইয়াছঈ) যার উপনাম হল ইবনে আবি হায়াত।তার হাদিস ‘হাসান’ পর্যায়ের।

✳️ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-

ونقل عثمان بن سعيد الدارمى عن يحيى بن معين أنه قال شيخ ثقة كبير

“উসমান বিন সাঈদ দারেমী (رحمة الله) তিনি ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,উক্ত রাবী হাদিসের শায়খ, উঁচু মানের বিশ্বস্ত মুহাদ্দিস ছিলেন।”
[ইবনে হাজার,লিসানুল মিযান, ১/২৭১ পৃ. ক্রমিক: ১১৬]

✳️ইমাম মুগলতাঈ (رحمة الله) বলেন,

وفى قول المزى: ذكره ابن حبان فى كتاب الثقات
ইমাম মিয্যী (رحمة الله) তার আসমাউর রিজাল গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে,ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে বিশ্বস্ত রাবীদের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

★মুগলতাঈ,ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১২/৩০২ পৃ. ক্রমিক: ৫১১৮
★ইবনে হিব্বান,কিতাবুস্-সিকাত,৭/৫৯৭ পৃ.
★ইমাম মিয্যী,তাহজিবুল কামাল, ৩১/২৮৯ পৃৃ.

✊তবে যা তার জীবনী থেকে বুঝা যায় তা হল তিনি তাদলিস করতেন বলেই তাকে অনেকে কেউ কেউ দুর্বলতার ইঙ্গিত করেছেন।

★মুগলতাঈ,ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১২/৩০২ পৃ. ক্রমিক: ৫১১৮
★ইবনে হিব্বান,কিতাবুস্-সিকাত,৭/৫৯৭ পৃ.
★ইমাম মিয্যী,তাহজিবুল কামাল, ৩১/২৮৯ পৃৃ.

✳️তবে ইমাম ইবনে হিব্বান বলেন-
كان يدلس على الثقات –

‘‘তিনি সিকাহ রাবীর নামে তাদলিস করতেন।’’
[মুগলতাঈ,ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১২/৩০২ পৃ. ক্রমিক: ৫১১৮]

★তাই অন্যান্যের তাদলিসের ন্যায় তার তাদলীস অবস্থা নয়।যেমনঃ

মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহইয়া যুহালী তিনি ইয়াযিদ ইবনে হারুন থেকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন
-كان صدوقا ولكن يدلس

‘‘তিনি সত্যবাদী ছিলেন,তবে তিনি তাদলীস করতেন।’’
[ইমাম মিয্যী,তাহজিবুল কামাল, ৩১/২৮৬ পৃ. ক্রমিক: ৬৮১৭]

✳️ইমাম মিয্যী (রহ.) আরও উল্লেখ করেন-
قال أبو نعيم: كان ثقة وكان يدلس

‘‘ইমাম আবু নুয়াইম বলেন,তিনি সিকাহ রাবী,তবে তিনি তাদলীস করতেন।
[ইমাম মিয্যী,তাহজিবুল কামাল, ৩১/২৮৬ পৃ. ক্রমিক: ৬৮১৭]

✳️তিনি আরও উল্লেখ করেছেন ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله) বলেন- صدوق তিনি সত্যবাদী ছিলেন।তিনি অন্য বর্ণনায় এনেছেন ليس به بأس -তার হাদিস গ্রহন করতে কোন অসুবিধা নেই।’’
[ইমাম মিয্যী, তাহজিবুল কামাল,৩১/২৮৬ পৃ. ক্রমিক: ৬৮১৭]

✳️ইমাম ইজলী (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন এবং বলেছেন, كان يدلس لا بأس به -‘‘তিনি তাদলীস করতেন। তার হাদিস গ্রহণে কোনো অসুবিধা নেই।’’
[ইমাম ইজলী,তারিখুস্-সিকাত, ২/৩৫০ পৃ. ক্রমিক: ১৯৭৩]

✊তাই বুঝতে পারলাম এই রাবীকে যঈফ বলা মানে অসংখ্য ইমামদের অভিমতকে হেয় করা।

  ★★★তৃতীয় আপত্তিকর রাবী★★★

ইমাম ইবনুল জাওযী (رحمة الله) এই সনদের তৃতীয় আপত্তিকর রাবী হিসেবে ইয়াহইয়া বসরী রাবীকে দায়ী করেছেন। যার মূূল নাম হল (يحيى بن ميمون بن عطاء) ইয়াহইয়া ইবনে মায়মুন বিন আতা।

✳️বিখ্যাত হাদিসের ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।

★ইমাম ইবনে হিব্বান,কিতাবুস্-সিকাত, ৭/৬০৩ পৃ.
★আল্লামা মুগলতাঈ,ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১২/৩৭২ পৃ. ক্রমিক: ৫২০৮

✊তবে তাকে ইমাম আহমদ থেকে শুরু করে আরও অনেকে যঈফ রাবী বলেছেন।তাই সর্বোপরি আমরা বলতে পারি যে,উক্ত হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের, কখনই জাল হতে পারে না।অপরদিকে উপরের আরেক সনদ দ্বারা এই হাদিস শাহেদ প্রমাণিত হওয়ায় এই হাদিস গ্রহণযোগ্য তাতে কোন সন্দেহ নেই।তাই আমাদের দেশের কাট মোল্লা যারা এই হাদিসকে জাল বলেন,বুঝতে হবে যে, তারা আসমাউর রিজাল কখনই পড়েইনি।

     ⏺️⏺️⏺️পর্যালোচনা⏺️⏺️⏺️

এ হাদিস থেকে বুঝা গেল যে,আমরা যে দুনিয়ায় বসবাস করছি সে দুনিয়াও সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহর পিয়ারা হাবীবের উসিলায়।

  দ্বিতীয় সূত্র

ইমাম দায়লামী (رحمة الله) এ শব্দে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন,রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-

يَقُول الله عز وَجل وَعِزَّتِي وَجَلَالِي لولاك مَا خلقت الْجنَّة ولولاك مَا خلقت الدُّنْيَا

‘‘মহান আল্লাহ বলেন,আঁমার ইজ্জত ও জালালিয়াতের শপথ! হে আঁমার পিয় হাবীব! যদি আঁমি আঁপনাকে সৃষ্টি করতাম না বানাতাম জান্নাত,না বানাতাম দুনিয়া।’’
[ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৫/২২৭ পৃ. হা/৮০৩১, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।]

    পর্যালোচনা

এ হাদিস থেকে বুঝা গেল যে,আমরা যে দুনিয়ায় বসবাস করছি সে দুনিয়া এবং যে জান্নাতের আশায় ইবাদতের মগ্ন থাকি সে জান্নাতও সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহর পিয়ারা হাবীবের উসিলায়।রাসূল (ﷺ)-এঁর প্রতি যাদের প্রেম নেই এ কথা তাদের কানে বিষের চেয়েও ভয়ংকর লাগবে এটাই স্বাভাবিক।

  ♻️♻️♻️সপ্তম হাদিস♻️♻️♻️

★ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله)সহ একজামাত ইমামগণ সংকলন করেন-

ويرى أنه لما خلق الله تعالى آدم، ألهمه أن قال: يا رب، لم كنيتني أبا محمد، قال الله تعالى: يا آدم ارفع رأسك، فرفع رأسه فرأى نور محمد في سرادق العرش فقال: يا رب، ما هذا النور؟ قال: هذا نور نبي من ذريتك اسمه في السماء أحمد، وفي الأرض محمد، لولاه ما خلقتك ولا خلقت سماء ولا أرضًا.
‘‘হযরত আদম (عليه السلام) আল্লাহ্ পাকের দরবারে আবেদন করেছিলেন,হে আল্লাহ! আঁপনি আমাকে ‘আবূ মুহাম্মদ’ উপনামে কেন ভূষিত করেছেন? আল্লাহর পক্ষ হতে হুকুম আসলো,হে হযরত আদম (عليه السلام)! তোমার মাথা তুলে দেখ। আদম (عليه السلام) মাথা উঠিয়েই দেখতে পেলেন তাঁর চোখের সামনে আরশের পর্দায় নূরে মুহাম্মদী ভেসে ওঠল।হযরত আদম (عليه السلام) আরজ করলেন,হে আঁমার প্রতিপালক! এই নূর মোবারক কার? জবাবে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, এই নূর হলো ঐ নবীর যিঁনি তোমার বংশধরে নবী হিসেবে আগমন করবে,আসমানে যার নাম হবে আহমদ, আর যমীনে মুহাম্মদ।যদি তিঁনি না হতেন, তাহলে আঁমি না তোমাকে সৃষ্টি করতাম, না আসমানকে,আর না যমীন কে।’’
     দলিল
*(ক.) ইমাম শিহাবুদ্দীন কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া,১/৩৩ পৃ.
*(খ.) আল্লামা জুরকানী,শরহুল মাওয়াহেব, ১/৭৮ পৃ.
*(গ.) আল্লামা শফী উকাড়ভী,যিকর ই হাসীন, ৩১ পৃ.
*(ঘ.) আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী,জাওয়াহিরুল বিহার, ৩/৩৫২ পৃ.

✳️✳️✳️✳️পর্যালোচনা✳️✳️✳️✳️

ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) লিখেন-

ويشهد لهذا، ما رواه الحاكم في صحيحه أن آدم عليه الصلاة والسلام رأى اسم محمد مكتوبًا على العرش

‘‘এ হাদিসটির শাহেদ পাওয়া যায় যা ইমাম হাকেম (رحمة الله) সহীহ সূত্রে সংকলন করেছেন,নিশ্চয়ই হযরত আদম (عليه السلام) আরশের পায়ায় হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এঁর নাম মোবারক লিপিবদ্ধ দেখতে পেয়েছিলেন।’’
[ইমাম কাস্তালানী,মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ১/৪৭ পৃ.]

★ইমাম জুরকানী (رحمة الله) এ হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-
أي: يقويه، ما رواه الحاكم في صحيحه المستدرك عن عمر رفعه

‘‘এ হাদিসকে আরও শক্তিশালী করেছে ইমাম হাকেম (رحمة الله) এর আল-মুস্তাদরাকের সহীহ সূত্রের হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর বর্ণনা (যা আমি ইতোপূর্বে প্রথম হাদিস হিসেবে উল্লেখ করেছি)।’’
[ইমাম জুরকানী,শারহুল মাওয়াহেব, ১/৮৬ পৃ.]

✊বুঝা গেল এ হাদিসটি শাওয়াহেদ থাকায় শক্তিশালী বলে প্রমাণিত।

Leave a comment